
আনজীর লিটন খ্যাতিমান ছড়াকার-শিশু সাহিত্যিক। তার রচনাশৈলী সরস সরল এবং আধুনিক। নিরীক্ষাধর্মী নতুন বিষয় বৈচিত্রগুণে সমৃদ্ধ তার ছড়া । শিশু সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এ বছর পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (শিশু সাহিত্য)।
তাঁকে সম্মান জানাতে ‘ম্যানগ্রোভ সাহিত্য’র আয়োজন

আনজীর লিটনের ছড়া, প্রিয় ছন্দে নতুন দোলা

আহমেদ সাব্বির

ছড়া শুনতে কার না ভালো লাগে? ছড়ার ছন্দে কান নাচে। প্রাণ নাচে। ছড়া ছড়িয়ে যায়
মুক্ত হাওয়ায়। ছন্দের ঘোড়ায় চেপে ভাষার প্রান্তর মাড়িয়ে ছড়া ছুটে চলে টগবগ টগবগ।
জন্মের পর মায়ের মুখে ছড়া শোনেনি, শব্দমিলের জাদুতে ছড়া বানাতে বসেনি এমন মানুষ খুঁজে
পাওয়া দুস্কর। বহুকাল আগে যখন লেখার উপকরণ ছিল না, কথ্য ভাষাই ছিল ভাব প্রকাশের
একমাত্র মাধ্যম তখন থেকেই ছড়ার প্রচলন। প্রাচীন পুঁথিতে, শাস্ত্রে, উপকথায় ছড়িয়ে
আছে ছড়া। লোকশ্রুতির লতায় পাতায় জড়িয়ে আছে ছড়া। ছড়া বাংলা ভাষার প্রধান ও
প্রাচীনতম সমৃদ্ধ শাখা।
লোকজ ঐতিহ্যের রঙে আঁকা ঝংকারময় পদ্যকেই আমরা ছড়া বলে জানি। ছড়া মুখে
মুখে ছড়িয়ে বেড়ায়। ছড়ার শরীর ছিপছিপে। প্রায় অলংকারহীন । পলকা শরীরে ভাবের সৌন্দর্য
দূত্যি ছড়ায়। ছড়ার স্বর কষ্টকল্পিত নয়, উচ্ছ্বাস প্লাবিত। প্রকাশে চটুল অথচ ভাবনার
বিদ্যুৎ ডানায় ছড়া ভেসে বেড়ায় দেশে দেশান্তরে।
স্বাধীনতা উত্তর লাল সবুজের বাংলাদেশে যে সব কবি, ছড়াকার বিষয়ে বৈচিত্রে ও
নিজস্বতায় খ্যাতি লাভ করেছেন তাদের মধ্যে আনজীর লিটন অন্যতম। সংখ্যার প্রাচুর্যে
নয়, শিল্পগুণ বিচারে তিনি পাঠকপ্রিয়। নানাগুণে তার ছড়াগুচ্ছ স্বতস্ফূর্ত ও সমৃদ্ধ।
নিজস্বতা ও আধুনিকতা পাশাপাশি হাত ধরে হাঁটে সবসময়। একটি অন্যকে ছড়া চলতে পারে না।
সেই হাত ছাড়িয়ে নিলে পথচলা বাধাগ্রস্থ হয়। আনজীর লিটনের ছড়ায় নিজস্বতা ও আধুনিকতা
সবসময় সাবলীলভাবে উপস্থাপিত। তিনি তার ছড়াজীবনে ছড়া নিয়ে নিরন্তর নিরীক্ষা করেছেন।
নিরীক্ষাধর্মী ছড়া সবসময় সফল নাও হতে পারে। কিন্তু চিরচারিত প্রথা ভেঙে নতুন পথ
তৈরিতে নিরীক্ষাই একমাত্র অস্ত্র। আনজীর লিটনের ছড়া পাঠকালে নানামুখী জিজ্ঞাসার
আলো বর্তমানকে ছাপিয়ে আগামীতে প্রতিফলিত হয়। ছড়ার নিজস্ব স্বর ও সুর বিনির্মাণে
আনজীর লিটন অভিনব ও আধুনিক। তাঁর রচিত অধিকাংশ ছড়ারা শিশুমনস্ক হলেও কাব্যিক
বাকভঙ্গি ও বিষয়বৈচিত্রের কারণে সকল বয়সী পাঠকের কাছে সমান আকর্ষণীয়। তেমন
একটি ছড়া :
সোনার মতো ছেলে
মা’কে সেদিন ফেলে
অস্ত্র হাতে
আঁধার রাতে
লড়তে গেল, লড়তে গেল
সাহস নিয়ে বুকে
শত্রুসেনা রুখে।
বেশ করেছে
শেষ করেছে
দেশ করেছে মুক্ত
তাইতো তো দেশের নামের আগে
স্বাধীন কথা যুক্ত। (স্বাধীন দেশ)
ছড়া চলে দুলকি চালে। ফুলকির খই ফোটানোতেই খাঁটি ছড়ার মহাত্ম। সেই ফুলকির
ঝিলিক পাঠকের মনে সঞ্চারিত হয়। আনজীর লিটনের ছড়া পাঠকালে একধরণের দুলকি তালের :
বাদ্য বাজে পাঠকমনে।
এক ছক্কায় মতিঝিল
ব্যাটে বলে দারুন মিল
দুই ছক্কায় দিলকুশা
লাগলে নাকে কিলঘুষা।
তিন ছক্কায় বল হাওয়া
যাচ্ছে না আর তল পাওয়া
ছক্কা ছক্কা তিন ছক্কা
খোঁজো ডানে বামে
বলটা নাকি আটকে গেছে
গুলিস্তানের জ্যামে। (তিন ছক্কা)
ছড়ার শক্তি সরলতায়, মুক্তি সাবলীলতায়। আনজীর লিটনের ছড়াগুলি সহজ ছন্দমিলে
পরিপুর্ণ। জোর করে মিল দেওয়ার পদ্যমুখী চেষ্টা তার ছড়ায় তেমন পাওয়া যায় না। প্রতিটি
ছড়ায় একটা সরল গল্প থাকে। থাকে আবেগ-আকুল কবিতাও। সেইসব গল্পকে তিনি ছড়ায়
রুপান্তির করেছেন কবিতার স্নিগ্ধ রসে। সার্থক ছড়া রচনার কৃতিত্ব সেখানেই। আনজীর
লিটনের ছড়া প্রকরণ গল্প ও কবিতার মায়াবী মিশ্রণ :
আমি যদি হই পৃথিবী, মা যে আমার আকাশ
মা বলেছে, কষ্ট পেলে আমার দিকে তাকাস।
সত্যি আমি কষ্ট পেয়ে তাকাই মায়ের মুখে
লক্ষ তারা-চন্দ্র-সুরুয মারত ঝিলিক সুখে।
সুখের আলোয় মুখটা যেন আকাশ ভরা রোদ
কেমন করে এমন রোদের মেটাই দেনা শোধ?
এখন আমি কষ্ট পেলে রোদ দেখি না আর
কষ্টে শুধু ভিজতে থাকি মুখটা ভাসে মা’র।
রোদভরা সেই আকাশ আমার হারায় মেঘের ফাঁকে
মায়ের মতন সবার মা কি দূরে দূরেই থাকে?
এখন আমি মা’কে খুঁজি সকাল থেকে রাত
খুঁজতে খুঁজতে খোদার কাছে করছি মোনাজাত
ডাকটা শুনে আল্লাহ বলেন- আমার ঘরে আছে
লা-ইলাহা পড়তে থাকো মা’র কবরের কাছে। (আমার মা)
প্রতিদিন অসংখ্য ছড়া লেখা হয়। ছাপা হয়। গ্রন্থ আকারে বিক্রিও হয়। গতানুগতিক
ছন্দের মিল নির্ভর পদ্যের স্তুপ চারিদিকে। ছড়া রচনা যেন একটি বিস্কুট তৈরির বেকারি।
সুস্বাদু নির্যাস আর কাঁচা উপকরণ নির্দ্দিষ্ট ছাঁচে বাসয়ে দিলেই বিস্কুট তৈরি হয়। তেমনি
ছন্দের ছাঁচে শব্দ বসিয়ে তৈরি ছড়া সাময়িক আনন্দ দিলেও তার স্থায়ীত্ব অল্প সময়।
সময়ের সাথে সাথে বহতা নদীর মতো ভাষার বিবর্তন ঘটে। ভাষার এই গতি পরিবর্তন
ছড়া সাহিত্যেও প্রভাব ফেলে। তখন ছড়ার নতুন বিনির্মানের দাবী হঠে। আনজীর লিটন ছড়ার
আঙ্গিক নিয়ে নানামুখী নিরীক্ষা করছেনে। ছড়ার ভাষা কেমন হওয়া উচিত? ছন্দের বিন্যাস
কতটা মৌখিক ভাষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ? এসকল পর্যবেক্ষণ তার ছড়ায় পাওয়া যায়। তিনি
পংক্তির ভাংচুর করে ছন্দের আধুনিক উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন অবিরত। ফলে অহেতুক
মিলের প্রচেষ্টা ছাপিয়ে তার ছড়া হয়ে উঠেছে স্বতঃস্ফুর্ত সুন্দর।
বাংলাদেশের গাছ। গাছের সবুজ পাতা। পাতার উপর চাঁদ
চাঁদ ছড়াল আলো।
সেই আলোটা গায়ে মেখে আমরা থাকি ভালো। (বাংলাদেশের ছবি) :
(২)
‘বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদে এল বান’
চর জেগেছে চোর এসেছে কাড়ল নদের প্রাণ।
একটা চোর দখল নিল একটার অভিমান
একটা চোর নদীর বুকে প্লট বেচিয়া খান (প্রিয় ছন্দে নতুন খেলা)
ছড়ার রঙ হাজারটা। বিষয়ের বৈচিত্রে নানান রঙে রঞ্জিত। ছড়া কখনো প্রতিবাদী,
কখনো পরিহাসপ্রবণ, কখনো অন্তর্মূখী। আবহমানকালের লোকজ ছড়াগুলো পাঠকালে সেই
সময়ের জীবন বাস্তবতার ছবি ফুটে ওঠে। ছেলেভুলানো হোক আর বড়দের হোক নানামুখী
সামাজিক অসঙ্গতি, বঞ্চনা, নিপীড়নের করুণ রোদন চিত্রিত হয়েছে কালজয়ী সেই সকল
ছড়ায়। আনজীর লিটনের ছড়ায় চিরায়ত বিষয়ের নতুন বিন্যাস দারুনভাবে লক্ষ্য করা যায়।
তিনি সমকালের নানা ঘটনা সফলভাবে এঁকেছেন তার ছড়ায়। বিশেষণের অতিকথন না থাকয় তার
ছড়া মন্ত্রের মতো ঘোর তৈরি করতে সক্ষম।
লোকজ ছড়া বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। খাঁটি ছড়ার আস্বাদ একমাত্র
লোকছড়াতেই পাওয়া যায়। আনজীর লিটনের ছড়ায় লৌকিক ছড়ার একটা নতুন নির্যাস পাওয়া
যায়। নিবিড় পাঠে ভেসে ওঠে সেই চেনা সুরের নতুন ছবি। খাঁটি ছড়ার শর্ত বাজায় রেখে তার
আধুনিক উপস্থাপন নতুন একটা পথ তৈরি করে দেয়। সেই পথ আগামীর। ভবিষ্যত
ছড়াপ্রজন্মের।
ছড়া চিরন্তন, শিশুদের প্রিয় বিষয়। শুনতে সরল হলেও সার্থক শিশুতোষ ছড়া লেখা যথেষ্ঠ
সাধনার বিষয়। আনজীর লিটনের শিশুতোষ ছড়াগুলো অসম্ভব মিষ্টি। শৈশবের রঙিন এ্যালবাম
যেন। শিশুদের মনোজগতের নানা উপকরণঠাসা তার ছাড়ারা। যা পাঠকালে শৈশব রাঙানো টকুরো
টুকরো ছবি গান হয়ে বাজে। শিশুদের শিক্ষা, বিজ্ঞান পরিচিতি, খেলাধুলা, ঝগড়াঝাটি, খুনসুটি
কি নেই লিটনের ছড়ায়? তিনি খেলার আনন্দে শিশুদের সরল মনে পুঁতে দিতে চেয়েছেন নৈতিক
শিক্ষা ও আদর্শের বীজ :
অ বলল,
Aদূর বিদেশি
বন্ধুরে তুই
বাংলা ভাষা নে।
A বলল অ
শুনতে বড়ই মধুর লাগে
তোর ভাষাতেই ক।
অ বলল হেসে
বর্ণমালার আলোয় বাঁচি
বাংলা ভালোবেসে। (অ এবং A )
২
ফুল ফুটেছে বুকের ভেতর
ফুল ফুটেছে প্রাণে
ফুলের গন্ধ মাখিয়ে দিলাম
বাংলাদেশের গানে।
গানের সুরের ঝরনাধারায়
প্রাণ করে আকুল
একাত্তরের বাগান থেকে
এনেছি সেই ফুল। (বিজয় ফুল)
আনজীর লিটনের ছড়ায় দেশপ্রেম নিবিড়ভাবে মিশে আছে। আছে মানবিকতাও। ভাষা
আন্দোলন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মহাত্ম, ইতিহাস, ঐতিহ্য,
সামাজিক প্রথা, পালা পার্বন সকল কিছুই তিনি ছড়ায় ছন্দে ছড়িয়ে দিয়েছেন শিশুমনে।
ছড়া নিয়ে তিনি নানা রকম নিরীক্ষা করেছেন। গদ্য ছড়া রচানার প্রতিও তার প্রচেষ্টা
পাওয়া যায়। ছড়াকে কখনো তিনি গদ্যের মতো, কখনো আঁকাবাঁকা ব্লকের মতো করে
সাজিয়েছেন যা দেখতেই ভালো লাগে। তিনি লিখেছেন ত্রিমাত্রিক ছড়া, গণিতের ছড়া, দেশের
ছড়া, খেলার ছড়া, বর্ণমালার ছড়া ইত্যাদি। ছড়ার নামকরণ ও পংক্তিতেও তিনি অভিনব। কিছু
উদাহরণ, যেমন-ছড়ার নাম করণ: ছুটি নিয়ে ছোটাছুটি, ক্রিং ক্রিং ক্রিং, আয়রে পড়া আয়, বিনামূল্যে মেঘ, ড্রইং খাতায় পাখি, আগে গেলে বাঘে খায়, শ্রাবণের খেলা, নদীর দেশের মানুষ, হ্যালো জলপরি,
আম কাঁঠালের ছুটি, গুডবয় ব্যাডবয়, জগৎ চেনার সহজ ভাষা, দুপুর নাচে টাপুরটুপুর, রুটিভাজি
চাঁদ, ছড়া আছে সবখানে, তিন কথার ছড়া, এক পৃথিবীর একটা জাতি, ও ছড়া তুই যাস কই?,
জোনাকির রেল ভ্রমণ, অক্সিজেনের গল্প, আমি তোমার হৃদয় ইত্যাদি।
তার ছড়ায় নতুন কথার ফুলঝুরি। যেমন :
(১)
খুশি খুশি মনটা নিয়ে কদিন না হয় ঘুরিফিরি
পাতা ঝরার শব্দ শুনি, বইছে বাতাস ঝিরিঝিরি।
(২)
আকাশ ভবন থেকে হঠাৎ ফ্যাক্স পাঠাল মেঘ
আজ সারাদিন বৃষ্টি হবে সঙ্গে ঝড়ের বেগ।
(৩)
রোদ গিয়েছে হাসপাতালে তার নাকি নেই আলো
শরীরজুড়ে বিজলি চমক রং হয়েছে কালো।
(৪)
ওই দেখা যায় কম্পিউটার ওই আমাদের ঘর
কম্পিউটর জুড়ে যেন স্বপ্ন জীবনভর।
(৫)
ঢাকার বৃষ্টি ফুটপাত চেনে, চিনেছে হাতির ঝিল
রিকশা-গাড়ির টেম্পু-বাসের খিঁচুড়ি পাকানো মিল।
ঝমঝম সুখে ঢাকার বৃষ্টি তোলে না ছন্দ তাল
ঢাকার বৃষ্টি দুঃখ ছড়ানো নিরস বর্ষাকাল।
(৬)
বুবু গেছে শ্বশুর বাড়ি গান কি এখন গায়?
নবান্ন আজ ডাক দিয়েছে আয় রে বুবু আয়।
(৭)
বাবা আমার কত্ত ভালো কত্ত আদর করে
এই পৃথিবীর সেরা বাবা আছে আমার ঘরে।
(৮)
১ ভালো না ২ ভালো, ২ ভালো না ৩
ভাবতে ভাবতে কেটে গেল ৪,৫টা দিন।
(৯)
মুজিব ছাড়া বাংলা বলো কেমন করে মানতে পারি?
একটা জাতির একটা মুজিব কোত্থেকে আর আনতে পারি?
মুজিব মানে বঙ্গবন্ধু যে চেতনার নেই তো শেষ
সেই চেতনার অগ্নিমশাল মুজিব মানেই বাংলাদেশ।
(১০)
ওহে্
আনজীর লিটন কহে-
ব্যথা পেয়ে উঁহ্ না বলেও
যন্ত্রণা যে সহে
শান্তিতে সে রহে।
এরকম অগণিত কাব্যিক মাধুরিমাখা সমৃদ্ধ আনজীর লিটনের ছড়া। মুখের ভাষার
সাদামাটা স্বরকে তিনি ছড়ার ছন্দে বাঙ্ময় করেছেন। গিটারের টুংটাং, বৃষ্টির রিমঝিম, তবলার
ধিনতাক, বাঁশির পিপ্ পি্প্ ধ্বনিঝংকার অনবরত বাজয়েছেন তিনি ছড়ায়।
ছড়ার ভাব অসীম হলেও পরিসরটা কিন্তু ছোট্টই। অর্থাৎ একজন ছড়াশিল্পীকে
খেলতে হয় এক টুকরো ক্যানভাসে। পরিশীলিত কিছু পংক্তির মধ্যেই পৃথিবী সমান বিপুল
ভাবকে প্রকাশ করতে হয় ছন্দে। দূর থেকে মনে হয় ছড়া খুবই সহজ এবং সাদামাটা শিল্প।
কিন্তু লিখতে গেলে শিক্ষাভিমান ত্যাগ করে সরলতার আতসীকাঁচে ছড়াকে সাজাতে হয়।
স্বতঃস্ফুর্ত না হলে ছড়ার দাম থাকে না। আনজীর লিটন ছড়ার সকল কৌশলকে রপ্ত করে
নতুন আঙ্গিকে ছড়া লিখতে সমর্থ হয়েছেন। পেয়েছেন তারকা খ্যাতি, পাঠক-শ্রোতা হৃদয়ের
পাকাপোক্ত আসন। প্রথা ভেঙে গড়েছেন নিজস্ব ধারা। নতুনত্বই তার শক্তি। তার নিরীক্ষক
মন ছড়ার নতুন দিগন্ত উন্মোচনে আকুল। জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে আনজীর
লিটন দুর্নীতি বিরোধী একটি প্যারোডি গান লিখেছিলেন- ‘তুতু তু তুতু তারা / মর্জিনার বাপ
মার্কা মারা’। সেই ছড়াগানটি বিপুল জনপ্রিয় হয়েছিল। দর্শক-স্রোতাদের মনে সেই গানটি
আজও কালজয়ী হয়ে টিকে আছে। থাকবে আগামীতেও।
ছড়ার গন্তব্য কোথায়? প্রাচীনকার থেকে উৎসারিত ছড়া আজ পর্যন্ত কত দুর
অগ্রসর হলো? কত দুর যাবে আনজীর লিটনের ছড়ার গাড়ি? এই সকল প্রশ্নের উত্তর
আমাদের অজানা। তবে হালজয়ী তিনি। আনজীর লিটন বর্তমান প্রজন্মের কাছে এক উচ্ছ্বল
প্রাণশক্তির নাম। আগামী দিনের ছড়া চর্চায় নতুন পথ খুঁজে পেতে তার প্রিয় ছন্দের নতুন
দোলা কড়া নাড়বে ছড়ার দরজায়।

