
তারেক আহসান

পথ ও পথস্রষ্টা
পায়ের তলায় পিষ্ট হতে হতে দগ্ধ যে পথটিকে দেখছ
তারও স্রষ্টা আছে!
দৈবাৎ দেখা হয় সেই ঈশ্বরের সঙ্গে!
এ পথ, ও পথ- নারীর সিঁথির মতো কাব্যময় সব পথেই
তাঁর অবাধ বিচরণ।
কখনো কখনো চিরকালীণ ব্যাপ্তির অপার অনুভবে ভিন্নতা আসে
এবং ভিন্নতা আসে কবিতার উপল-বিকীর্ণ
পথের জন্ম-সৃষ্টির রহস্যেও।
ব্যপ্ত হাহাকার কিংবা প্রাণান্তকর সেই পথের ডাকে
কেউ হাঁটেন, কেউ দৌড়ান, কেউ বা আবার রেসে নামেন।
সর্বত্র ইঁদুর-দৌড়; কোথাও বিনয় নেই!
সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষায়-
ভূতগ্রস্ত পাহাড়চূড়া থেকে নেমে আসছে যে জলরাশি
তা-ও পথের সন্ধানেই!

তরুণ কবির প্রতি
তরুণ কবিকে সবিনয় জিজ্ঞাসা : ফুটেছ কোন্ বনে?
সন্ধ্যামালতী নাকি জারুলে?
মেতেছ কী কারণে? জীবনমন্থন বিষ কেন করেছ পান?
সর্বনাশের নেশায়? তীর্থের কাক হয়ে অপেক্ষা কর
ঐশী বাণীর আশায়? নাকি-
বোশেখ ফুরালেই যাবে চলে, ভূষণ্ডীর কাক?
অতীত পতিত নাকি জ্যান্ত, হৃদয়ে মুদ্রিত?
আত্নতত্ত্বে বিত্তশালী- প্রচারপটু?
চর্চা চলবে কীভাবে- বালখিল্যতায় নাকি পরচর্চায়?
শব্দের রাখাল?
বিশদে কী আবাদ করো- দেহতত্ত্ব না কাব্যতত্ত্ব?
কোন্ দলের সমর্থক?
তত্ত্ব কপচানো কাব্যবিশারদ নাকি ছন্দবিশারদ?
মুখ্যত-
মায়ের আঁচল ছাড়ার বয়স হয়েছে?
এখনই-যে কবিতাবৌয়ের কাঁচুলি খোলার সাহস দেখাও!

আমার অক্ষমতা ও সক্ষমতার গল্প
বিদ্যা-বুদ্ধিতে খারাপ ছিলাম না কোনও কালেই
ভাগ্য-বিড়ম্বনা ও শকুনি মামা-র বদান্যতায়
বেকারত্বের অভিশাপ তবু পিছু ছাড়ে নি!
মায়ের পীড়াপীড়ি সত্ত্বেও, আরামপ্রিয় এই আমি
বাবার কৃষিজমিতে নামতে পারিনি-
এমনকি দেখেও রাখতে পারিনি
উৎপাদিত শস্যপণ্য!
মনঃসংযোগে ঘাটতি ছিল অনেক অনেক…
একদিন বাবার প্রচণ্ড রাগ হলো আমার উপর
অনন্যোপায় হয়ে,
আমাকে বসিয়ে দিলেন ছাদনাতলায়;
আমিও মহাখুশি, ব্যস বসে গেলাম।
আর সেই থেকে-
মানুষ উৎপাদনেই মনোযোগী হলাম!
এখন আমার ঘরভরতি
মানুষ আর মানুষ
এখন তাদের চোখে-চোখে দেখে রাখতেই
উড়ে যায় প্রিয় আরামের ফানুস!

অকাল প্রয়াত কবিদের স্মরণে
অসম্ভব কিছুই না-
একদিন আমিও অকাল প্রয়াত তরুণ কবির খাতায়
নাম লেখাতে পারি!
কানামাছি খেলার পাঠ চুকিয়ে
ভাগ্যগুণে হয়েও যেতে পারি কীট্স-সুকান্তের
সহ-বাসিন্দা!
খুব জানতে ইচ্ছে হয়-
কীট্স-ফ্যানির কি এখনও প্রেমের চিঠিতে কিংবা
উড়োমাধ্যমে কথা হয়?
আর-
ওয়েব ক্যামেরায় কি সুকান্ত দেখেন
পূর্ণিমার চাঁদ কীভাবে গণতন্ত্রের ঝলসানো রুটি
হয়ে যাচ্ছে?
ঔৎসুক্য মেটাতে, আত্মজিজ্ঞাসুর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে
একটু আগেভাগেই জেনে রাখা ভাল!

আত্নসমালোচনা
কবিতার ব্যবচ্ছেদ করতে করতে কখন-যে
কবিতার সতিচ্ছেদ করে ফেলেছি বুঝে ওঠিনি।
সময়ের ধারাপাত খুলে দেখি সব বয়ে গ্যাছে
মিনিট-সেকেন্ডের কাটারা সব অবসাদগ্রস্ত ;
শূন্য সব শূন্য- পড়ে আছে রতিহীন ঋতুবর্ষে।
স্বরচিত কারাবাস শেষে পাখা মেলে প্রজাপতি
মন। ওড়ে আসে মূর্ত বন্দনার বিনয়-সারস;
জল-তরঙ্গে প্রবল নাচে রঙ্গীলা নারীর বুকে।
উৎসব শেষে কানে বাজে সৃষ্টির শুভ্র বৈভব
বিষাদের ভায়োলিন বেজে বেজে ক্লান্ত-শান্ত হয়
সাতরঙা আকাশের গায়ে কেবলই শাদা শোক
জানতে চাই না আজকাল, মনে যেন সুপ্ত ভয়।
কবির তৃষ্ণার কাছে পরাজিত জল ও জৌলুশ
বোধিভ্রম-ক্ষণে শুধু হয়ে যায়- কবিতাভ্রমর।

মানুষ
অন্তঃসারশূন্য এ সমাজে
সর্বত্র মানস দেখি, মানুষ দেখি না কোথাও!
মসজিদে গেলাম, বললো জিন্দা হুজুর-
মানুষ দেখিনা কোথাও!
মন্দিরে গেলাম, বললো যজ্ঞেশ্বর-
মানুষ দেখিনা কোথাও!
অতঃপর-
মসজিদ থেকে বেরিয়ে এলো যে লোকটি
তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম : কে তুমি?
উত্তরে বললেন- মুসুল্লি।
মন্দির থেকে বেরিয়ে এলো যে লোকটি
তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম : কে তুমি?
উত্তরে বললেন- পূজারী।
কেউ বলে না আমি ‘মানুষ’
সবাই উড়ায় ‘ধর্মের ফানুস’
আফসোস… আহা, আফসোস…
পাহাড় পর্বত ফুল ফল তরুলতা,
কেউ ভাঙেনা নিরবতা;
কেউ বলে না- দেখেছি, আমি দেখেছি
ওই মানুষটিকে-
যে মানুষটি কাঁদে না, শুধু হাসে
মানুষকে ভালোবেসে।
অতঃপর আমিই আমাকে জিজ্ঞেস করলাম
- কে আমি?
- আমি কি মানুষ?
– নাকি ধর্মের ফানুস?
আমার আমি উত্তরে বলে- জানিনা…!
- আমি কি মানুষ?

মেধাবী আপনি কবিতার উজানে
oDCRtQkrF
arHEwYbBFm
APaDEjlUHL
HnOZfeCD
YVupNRCd