আনন্দ পাঠে প্রেম প্রকৃতি : দিলরুবার কবিতা
শুভ্র আহমেদ


এক
কবি দিলরুবার জন্ম ১৯৭১ সালের আগুনঝরা মার্চের ১৩ তারিখ, পশ্চিম বঙ্গের বসিরহাট মহকুমার ছোট্ট অথচ প্রাচীন ঐতিহ্যময় গ্রাম ধান্যকুড়িয়া’য়। ইছামতীর শাখা নদী বিদ্যাধরী ছিল কবির ছোটকালের সহচর। কবিতার পাশাপাশি ছোটগল্পেও কবি সমান সাবলীল পারদর্শী। নিরন্তর সাহিত্য পাঠের পাশাপাশি বিবিধ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে তার আজন্ম বসবাস। ‘ডায়েরির ছেড়া পাতা, বাতিল লণ্ড্রী বিলের পিছনে জমে ওঠা টুকরো টুকরো’ কথার বুদবুদ আর মান-অভিমানের কণ্টক-পুষ্প একসময়ে কবিতার অটবি হয়ে ছড়িয়ে পড়াই দিলরুবার কবিতা।
দুই
গ্রিক গীতিকাব্য রচয়িতা স্যাফো (আনু ৬৩০-৫৭০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ) ছিলেন প্রথম নারী যিনি কবিতা লিখে সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। খনা, বামী রজকিনী, মাধবী প্রমুখ নারী প্রাচীন বাংলায় সাহিত্য চর্চা করলেও যে নারী অস্তিত্বে, প্রতিভায় কাব্যশক্তির ছড়িয়ে পড়া আলোয় সন্দেহাতীতভাবে আজ কবি হিসেবে খ্যাতিমান তিনি হচ্ছেন দ্বীজ বংশী দাস ও সুলোচনা কন্যা সোমেশ্বরী কিশোরগঞ্জের চন্দ্রাবতী।এরপর দীর্ঘ বিরতি। উনিশ শতকে সিরীন্দ্র মোহিনী দাসী ‘র (১৮৫৮-১৯২৪) পর বিশ শতকে যে সকল নারী কবিখ্যাতি অর্জনে সক্ষম হয়েছিলেন তাদের মধ্যে কামিনী রায় (১৮৬৪-১৯৩৩), রাধা রাণী দেবী (১৮৬৩-১৯৪২) মান কুমারী দেবী (১৮৬৪-১৯৪৩), কুসুম কুমারী দাশ (১৮৮২-১৯৪৮), সরল বালা সরকার (১৮৭৫-১৯৬১), সরোজিনী নাইডু (১৮৭৯-১৯৪৯), মাহমুদা খাতুনসিদ্দিকা (১৯০৬-১৯৭৯), সুফিয়া কামাল (১৯১১-১৯৯৯) প্রমুখ। শক্তি, সাহস, প্রতিভার দীপ্তি মনন-মানসে মানুষ হয়ে উঠে নারী পুরুষের বিভাজিত চত্বরকে দু’পায়ে মাড়িয়ে কবিতার চির রহস্যময়তাকে ধরতে ভাব প্রকাশে প্রথম থেকে যারা কুণ্ঠাহীন তাদের মধ্যে দেবারতি মিত্র, কৃষ্ণা বসু, কবিতা সিংহ, নবনীতা দেবসেন, বিজয়া মুখোপাধ্যায়, বীথি চট্টোপাধ্যায়, রুবি রহমান, সুরাইয়া খানম, কাজী রোজী, দিলারা হাফিজ, নাসরীন নঈম, শামীম আজাদ, লিলি হক, স্বপ্না গঙ্গোপাধ্যায়, শুচিস্মিতা সেনগুপ্তর, বীথি চট্টোপাধ্যায়, মল্লিকা সেনগুপ্ত, তসলিমা নাসরীন, শেলী নাজ, সাকিরা পারভিন, প্রমুখের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
তিন
চিন্তক, সমালোচক গাজী আজিজুর রহমান কবিতার নদীতে বহমান দুই বিপরীত স্রোতের ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘কবিতা মূলত দু’রকম, এক. গভীর ধ্যানি কবিতা, গোপন ও দূরান্বয়ী কবিতা, অতল ও দর্শন সমৃদ্ধ কবিতা, অশরীরী আত্মা ও বোধের কবিতা দুই. হৃদয়বেদ্য ও জীবনবেদ্য, দেশ-কাল সচেতন, মুখর আটপৌরে অনেকটা শরীরী লিরিক উদ্ভাসিত কবিতা’। কবি দিলরুবার কবিতায় আমরা এই দুই ভাবের অনুরণন লক্ষ করি।বিশেষত অশরীরী আত্মা ও বোধের সাথে হৃদয় এবং জীবনবেদ্য মুখর আটপৌরে ভাবের উচ্ছ্বাস দিলরুবার কবিতাকে নিয়ে যায় স্বতন্ত্র ধারায়, কবিতার উচ্চতর মাপতার কাছে।
আধুনিকতার সব প্রকরণ ও প্রবনতার বিজয় ঘোষণার পর দেশ-কাল-সমাজ, সাহিত্য -সংস্কৃতি -রাজনীতি ইত্যাদি সকল দশায় যে বিজয় কেতন আজ উড়তে দেখা যায় তা খুব বেশিদিন আগের কথা নয়।গত শতকের ৬০-এর দশকে এর সূত্রপাত প্রধানত নগর কলকাতাকে ঘিরে আর তা এপার বাংলাদেশে পূর্ণতা পেয়েছে প্রধানত গত শতকের ৭০-এর দশকে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং এর সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি অর্জিত বিজয়ের প্রেক্ষিতে।
আর এ সবের অনস্বীকার্য ফলাফল এখন নারীর প্রথম পরিচয় সে মানুষ। সে আর শুধু পুরুষের দীর্ঘদিনের লেপ্টে দেয়া পরিচিত পরিচয়ের রক্ত মাংসের বিগ্রহ মাত্র নয়। নারীর এই পরিচয় অর্জনের দীর্ঘপথ কতটা কণ্টকিত, কতটা সংগ্রামী ছিল তা খুব ভালই জানেন কবি দিলরুবা। নারীকে দীর্ঘদিন ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় শৃঙ্খলিত থাকতে হয়েছে পুরুষতন্ত্র, প্রথা ও ফতোয়া, ধর্ম ও ধর্মব্যবসায়ী, নষ্ট সমাজ ও শোষকশ্রেণির স্বার্থ রক্ষক আইন আদালতের লম্বা হাতের কাছে। নারীর সেই সংগ্রাম শেষ হয়েছে এমনটা কি বলা যায়? চারপাশের বাস্তবতা, সংগ্রাম যে আজও চলছে বরং তারই ছবি খুঁজে পাওয়াই অনেক সহজ।সামনের সারির একজন হিসেবে কবি দিলরুবার অংশগ্রহণ সেই সংগ্রামে। সম্পূর্ণ কবিতাটি তুলে ধরা যাক :
‘কোন পুরুষের বাম পাঁজরের হাঁড়ে গড়া এ শরীর
সে চুলচেরা হিসেব কষে সময় নষ্ট করুক কোনো ধর্ম পণ্ডিত
যখন জানি মনে মনে আমি বহুবল্লভা
তখন কী আসে যায় ওই মনভোলানো স্ত্রোকবাক্যে
তারচেয়ে ডাহুক কিংবা জলপিপি হয়ে সারাবিকেল
সাঁতার কাটি কলমিদামে
চড়ুইদের খুনশুটি দেখি গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে
তারপর ইচ্ছে হলে উড়াল দেবো পূবে অথবা পশ্চিমে
ক্লান্ত হলে জিরিয়ে নেবো নতুন কোনো দাঁড়ে
তারপর চলা আবারও চলা আত্মানুসন্ধানে —‘
(খেরোখাতা -২ : অগ্রন্থিত)
লক্ষণীয় সংসার-সমাজ-রাষ্ট্র-বহিঃবিশ্ব পরিভ্রমণ শেষে আত্মানুসন্ধানই কবির লক্ষ, গন্তব্য।এই আত্মানুসন্ধানকে কবি জীবনের অর্থ সন্ধান রূপে চিত্রিত করেছেন। মধ্য চল্লিশে প্রকাশিত কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘মেঘ বালিকা’র ‘যে চোখে তোমায় দেখি’ কবিতায় উপরোক্ত বোধের আর্তি বিশেষভাবে লক্ষনীয়ঃ
‘জীবন মানে অমৃত কুম্বের সন্ধানে—
আমরণ গোলোক ধাঁধাঁয় ঘুরে ফেরা
অলীক হাতছানি।
জীবন মানে— কুয়াশা ভাঙা ভোরে
প্রথম সূর্যের নরম রাঙা আলো
এক টুকরো সজিবতা
জীবন মানে শিশুর নিষ্পাপ হাসি
শিশির ধোয়া সবুজ দূর্বা ঘাস
উড়ন্ত পতাকা।
এবং শেষ স্তবকঃ
জীবন মানে— লোকারণ্য চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে
বেসুরে গান গাওয়া
জীবন মানে বুঝিয়ে দেওয়া
না থেকেও পাশে থাকা।’
(যে চোখে তোমায় দেখি : ‘মেঘ বালিকা’)
প্রকৃতি ও প্রেম কবি দিলরুবার দুই প্রিয় অনুষঙ্গ। প্রকৃতি ও প্রেমকে কবি আপন আবেগের জাদুদণ্ডে এমনভাবে দাঁড় করিয়েছেন যেখানে প্রকৃতি বিশেষত বর্ষার, আরো স্পষ্ট করে বললে বলতে হয় মেঘের বহুবিচিত্র বিবরণ প্রণয় প্রবণ সত্ত্বায় বারবার দীপিত হয়ে ওঠে এবং ক্রমশ তা পাঠকের সদাচঞ্চল চিত্তে অতল দীঘির ঢেউয়ের মতো ছোট ছোট আলোড়ন তোলে। কবি দিলরুবার প্রতিটি লাইন মধ্যবিত্ত মুখরতার চিরাচরিত গণ্ডি এড়িয়ে আনন্দরূপ জীবনানন্দকে স্পর্শ করে অন্ধকার রাতের নির্জনতার সৌন্দর্যানুভূতির বেদম উন্মোচন করে। মেঘ বৃষ্টি বিষয়ক কয়েক পঙক্তিঃ
১. অবাক আমি চেয়ে দেখি আকাশ আঁধার মেঘে
ঝাপসা দিক চক্রবালে সজল বৃষ্টির রেখা,
আহঃ কী সুখ, এই তো তুমি ছুঁয়ে দিলে আমায়
না ভুল বললাম আমি ছুঁলাম তোমায়।
(বৃষ্টি বন্দনা : মেঘ বালিকা’)
২. দুটো চিল গোল হয়ে সাঁতার কাটছে
বাতাসে ভেসে ভেসে, মাঝখানে একটুকরো
কালো মেঘ শালগ্রাম শিলার মতো অনড়
ওরা কী মেঘের গায়ে বৃষ্টির গন্ধ পায় ?
(মেঘ বিলাসী, প্রাগুক্ত)
৩. ফাঁকা আকাশে এবার শুম্ভ নিশুম্ভের লড়াই
শ্যামদেশী রাজপুত্র প্রস্তুত ধনুক হাতে
তৈরী হলুদ কালো ডোরাকাটা বনদস্যুও—একবনে তো দুই রাজা থাকতে পারে না
কী মুশকীল— ভাগ্যি ভালো, আকাশ কাঁপিয়ে
বৃষ্টি এলো। আমার ভাগ্য নির্ধারণটা মুলতুবী
থাকলো আজকের মতো।
(মেঘের সওয়ার, প্রাগুক্ত )
৪. সায়াহ্নের আবছা আঁধারের মতো অস্পষ্ট কাজলরেখা
ছুঁয়ে আছে আনত চোখের পাতা
তোমাকে নিয়ে লেখা যত গান কবিতা
বৃষ্টিতে ভেসে আজ সন্ধ্যায় কেয়ার বনে ফুটলো ফুল হয়ে।
(কাজলরেখার জলে : ‘মনমাঝি)
বাংলা সাহিত্যে প্রেম, সে এক বিপুল বিস্ময়ের ব্যাপার। চণ্ডীদাস, বৈষ্ণব পদাবলী, রবীন্দ্র -নজরুল -পঞ্চ পাণ্ডব, শামসুর -শামসুল-মাহমুদ-শক্তি-সুনীল-গুণ-জয় প্রমুখের হাতে তার অদম্য বিস্তার। কবি দিলরুবার প্রেমের কবিতায় রবীন্দ্র দার্শনিকতা অথবা জীবনানন্দের কবিতার মতো বিবর্ণ প্রেমের যন্ত্রণা নেই, রয়েছে সুখ-দুঃখ, হাসি-আনন্দ, ভালোলাগা -ভালো না লাগার মহাসিন্ধু সমান আয়োজন। কবি সুচতুর, তার প্রেম সর্বদাই তাই যেনো প্রকৃতি, মহাশূন্য, চাঁদ বিলাসীঃ
১. হায় কবি
তুমি জানবে না কোনোদিন
এক বালিকার ফুল হয়ে ফুটে ওঠার
এই গল্প।
(কুড়ির গল্প, প্রাগুক্ত)
২. ওমা তাও জানো নাএকটু পরেই মেঘেরা স্নান করাবে
আজ আকাশটাকে, তাইতো এত তাড়া সবার।
ইশশ…. খেয়ালই করিনি নীল আকাশ কখন ঢেকেছে মেঘে
থাক, আজ আর চিঠির জবাব পাঠাব না।
(অভিমানী চিঠি, প্রাগুক্ত )
৩. রূপনারায়নের সোনালি বালুর চর পেরিয়ে
দেখা হলো চম্পাবতীর মোহনায়
তোমাকে পেলাম উচ্ছল উচ্ছ্বাসে
উন্মুক্ত তরঙ্গের সফেদ ফেনায়
অবগাহনের আহ্বান
ভালোবাসা আর ভালোলাগায় একাকার।
(হৃদয়পুর রেলক্রসিং, প্রাগুক্ত)
৪. কাগজ ছিড়ে তুমি নৌকা বানাতে
আর আমি–
কখনো বকুল আবার কখনো কৃষ্ণচূড়ার
ঝরা পাপড়ি দিয়ে তাকে সাজালাম।
(এক মুঠো আকাশ, প্রাগুক্ত)
৫. কোথায় লুকিয়ে ছিল এ চোরাকাঁটা
আমায় বিধবে বলে—
এত খুঁজলাম তন্ন তন্ন করে
পেলাম না, কোথায় যে উধাও হলো —
(কাঁটা, প্রাগুক্ত)
৬. তুমি লোক- লজ্জার অজুহাত দিলে
যেনো আমি কিছুই দেখিনা সারা আকাশময়
কোন খেলা খেলো তুমি
কৃত্তিকা, রোহিণী, বিশাখা কত সখী তোমার।
(তৃতীয়া তিথির চাঁদ, প্রাগুক্ত)
৭. আমার ফুল ফোটানোর বেলা শেষ হতে সন্ধ্যা নামে
তোমার দেওয়া অলীক প্রতিশ্রুতি আঁধারে মিলিয়ে যেতে যেতে
কাঁচপোকার সোনালি টিপের মত একাকী জ্বলতে থাকে
পশ্চিম আকাশে সন্ধ্যাতারা হয়ে।
(হেলাফেলা : ‘মনমাঝি ‘)
৮. তুই ডুবলে- মরবে আমার স্বপ্নসাধ
তুই ভাসলে- রাঙা ফানুস ওড়াবো পূবের হাওয়ায়
তুই চাইলে- বেনো জলের উজান ঠেলে ভাসবো মোহনায়—
(মনমাঝি : ‘মনমাঝি’)
চার
অনস্থিত্ব থেকে অস্থিত্বে, অন্ধকার থেকে আলোয়, নীরবতা থেকে সরবতায় শব্দকে তুলে এনে, শব্দকে খুঁজে এনে সম্পূর্ণতার রাজারূপ দেয়াই কবির ধর্ম। সেই অর্থে কবিও একজন ঈশ্বরতুল্য নির্মাতা।
মালার্মের মত হচ্ছে ‘কবিতা শব্দে লেখা হয় ভাবনায় নয়’ কিন্তু এর বিপরীতে ম্যাথু আর্নল্ডের স্পর্ধাময় ঘোষণা ‘কবিতায় ভাবনাই প্রধান’। কেনো এই বিতর্ক ? সম্ভবত কবিতার সেই রহস্যময়তা যা কেবলই খেলে বেড়ায় একজন সৎ কবির কলমে তারই বহুবিচিত্রমুখী বিস্তার এই বিতর্কের প্রথম ও শেষ কারণ। দিলরুবার কবিতায় এই রহস্যময়তার হাতছানি রয়েছে।সব ভয় ভ্রুকুটি তুচ্ছজ্ঞানে কবি দিলরুবা শব্দ আর ভাবনার যুগল খেলায় মেতে ওঠেন সত্য প্রকাশের দাম্ভিকতায়।সে সত্য কখনো সমাজবিধি কখনো অন্তর্গূঢ় মনোজাগতিক রসায়নের মিথোষ্ক্রিয়ার লঙ্ঘন।কিন্তু তাতে কীঃ
১. এ শহরের গুমোট গরম তার স্লিভলেস ব্লাউজ পরা
সুন্দরী স্ত্রী র সহ্য হয় না।
অতএব মেয়েটিকেই পালাবদল করে অভিনয় করতে হয়
নানান মানুষের স্ত্রীর ভূমিকায়।
(জানালা পারের ঝাপসা জীবন : ‘মনমাঝি’
২. তার চোখ তখন টিভির পর্দায় মোহিনী নারীর
বুকের নিটোল খাঁজে আটকে আছে আঠার মত,
আমি ফিরে যাই আমার মন খারাপের একলা বারান্দায়—-
(শেষ দুপুরে, প্রাগুক্ত)
৩. কে যেনো এসে মৃদু কড়া নাড়ে দুযারে
বলে, ওরে দুপুর গড়িয়ে বিকের হল যে
এবার সংসারের মায়া কাটা, চল বাণপ্রস্থে যাই।
(বাণপ্রস্থ, প্রাগুক্ত)
৪. আমার চৌষট্টিকলা সে তো ইন্দ্রসভার বহুগামী দেবকুলের জন্য
তাকে আমি স্বর্গের পারিজাতের সুগন্ধি মালায় মুড়ে
ভাসিয়ে দিয়েছি আকাশ গঙ্গায়
এবার সব দ্বিধাদ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে গ্রহণ করো আমায়।
বুঝি এমনি করেই ঋষি বিশ্বামিত্রকে মিনতি করেছিল অপ্সরী মেনকা
আর এর পরের করুণ মধুর উপাখ্যান অজানা নয় কারো।
(জন্মেরও আগে, প্রাগুক্ত)
৫. ইলোরার গুহাগাত্রে পীনোন্নত সুন্দরী শ্রেষ্ঠার কারিগর
তুমিও কি গোপনে সবার অলক্ষ্যে তোমার সৃষ্টিকে
স্পর্শ করে অবগাহনের সুখে ভিজে ওঠোনি কোনোদিন ?
(উদাসী বাতাসে ভাসে বৈরাগী কলস, প্রাগুক্ত)
রবীন্দ্রনাথ ‘অমিত’ আর ‘লাবন্যে’র আশ্রয়ে নিজেই নিজের গণ্ডি ভেঙে আধুনিকতাকে ছুঁয়েছিলেন। ভূগোল ইতিহাসের ক্ষুদ্র গণ্ডি ভেঙে জীবনানন্দ বেরিয়ে এসেছেন তার অমর সৃষ্টি ‘বনলতা সেন’ চরিত্রায়নের মাধ্যমে।এভাবে আরো উল্লেখ করা যায় বুদ্ধদেবের কঙ্কাবতী, পুর্ণেন্দুর শুভঙ্কর- নন্দিনী , সুনীলের নীরা ইত্যাদি। একথা উল্লেখ না করলেও চলে বাঙালি স্বভাবকবি।আর এই স্বভাবধর্মের কারণে ভাবনা ও লেখার গণ্ডি অনেকাংশে সংকুচিত হয়ে পড়ে। কবি দিলরুবা এ বিষয়ে সচেতন। আর সচেতন বলেই তার কবিতার ভূগোল এবং ইতিহাসের সম্প্রসারণেও তৎপর। এই তৎপরতার অংশ হিসেবে তিনি তার কবিতায় শুধু যে উপরোক্ত চরিত্রগুলোর ব্যবহার করেছেন তাই নয়, একই সাথে নিয়ে এসেছেন পদাবলি সহ বিভিন্ন সাহিত্য পাঠের অর্জিত জ্ঞান, পৌরাণিক চরিত্র কাহিনী ও গল্প-গাঁথা। বিশেষত পৌরাণিক চরিত্র ও গল্প-গাঁথাগুলোকে দিলরুবা আধুনিক নানাবিধ শঙ্কটের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে শঙ্কটের চেহারাসমূহকে যেমন পরিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন তেমনি তার কবিতাও খুঁজে পেয়েছে বাংলা সংস্কৃতির সহস্র বছরের শেষের দিকের ধাপ।যেটাকে আমরা চিহ্নিত করতে পারি আধুনিকোত্তর বলে।
পাঁচ
১. মাধবীর রেনু মেখে
চুম্বনে চুম্বনে ক্লান্ত যখন ভ্রমর
ঠিক সেই মুহূর্তে
রেশম গুটি থেকে জন্ম নিল
একটি রঙিন প্রজাপতি ।
(চেনা অচেনা : ‘মেঘ বালিকা’)
২. বিদ্যাপতির রাধা আমি
নীলাম্বরী ফেলে হয়েছি দেখো
কেমন মন ভোলানো রাঙা কৃষ্ণচূড়া।
(বৈখাখী মেঘ, ‘মেঘ বালিকা’)
নিজেকে জানা বোঝার পরে এভাবেই উত্তরণ কবি দিলরুবা ও তার কবিতার।কবির এই আত্মান্বেষণ— প্রেমে, প্রকৃতির মুগ্ধ অবলোকনে। সামাজিক সংগতিহীন বিষয়গৌরবের প্রতি শিল্পিত বিদ্রূপ ও বিদ্রোহে যার পূর্ণতা।


শুভ্র আহমেদ
জন্ম : ০৩ অক্টোবর ১৯৬৬
প্রকাশিত বই
কার্নিশে শাল্মলী তরু : কবিতা : ১৯৯৯, আড্ডা
বিচিত পাঠ : প্রবন্ধ : ২০১৪, ম্যানগ্রোভ
বলা যাবে ভালোবেসেছি : কবিতা : ২০১৫, ম্যানগ্রোভ
দুই ফর্মায় প্রেম ও অন্যান্য কবিতা : কবিতা : ২০১৬, ম্যানগ্রোভ
রবীন্দ্রনাথ যেভাবে বাঁশি বাজিয়েছেন এবং অন্যান্য : প্রবন্ধ : ২০১৯, ম্যানগ্রোভ
পুরস্কার / সম্মাননা
কবিতাকুঞ্জ সম্ম্ননা (১৪০৮ ব)
বিজয় সাহিত্য পুরস্কার (২০০৯)
কবি শামসুর রাহমান পদক (২০১০)
দৈনিক কালের কণ্ঠ শিক্ষক সম্মাননা (২০১২)
কবি সিকানদার আবু জাফর স্বর্পদক (২০১৪)

লেখকের আরও লেখা :
সাবদার সিদ্দিকি : একজন ক্রুশকাঠহীন যিশু – শুভ্র আহমেদ
কবিতা । অভিসার পর্ব : শুভ্র আহমেদ
buy generic cialis online with mastercard tadalafil generic where to buy
tadalafil cost in canada tadalafil side effects
buy generic cialis online with mastercard cialis without prescription
buy cialis cost tadalafil generic
prescription tadalafil online https://cialisbusd.com/
what is tadalafil tadalafil online with out prescription
tadalafil without a doctor prescription https://cialiswbtc.com/
tadalafil goodrx what is tadalafil
tadalafil online with out prescription generic tadalafil from uk
tadalafil online tadalafil cost in canada
where to buy generic cialis online safely cheapest tadalafil cost
tadalafil daily online tadalafil without a doctor prescription
generic cialis online fast shipping cheap generic cialis for sale
tadalafil drug where to buy cialis without prescription
where to get tadalafil tadalafil goodrx
buy generic cialis online with mastercard tadalafil cialis
https://cialiswbtc.com/ where to order tadalafil tablets
https://cialisicp.com/ lowest price cialis
side effects of tadalafil tadalafil cost walmart
tadalafil cialis tadalafil goodrx
hi!,I like your writing very a lot! proportion we be in contact extra approximately your article on AOL? I need an expert on this area to resolve my problem. Maybe that’s you! Having a look forward to peer you.
Some truly nice stuff on this web site, I enjoy it.
hydroxichlorquine can hydroxychloroquine be purchased over the counter
buy modafinil 100mg sale buy modafinil
buy modafinil 100mg without prescription buy provigil 200mg pill order modafinil 200mg pills
buy provigil 100mg
generic modafinil 100mg oral modafinil oral provigil 100mg
when Does Cialis Go Generic?
where At On Cialis Do I Cut It In Half?
where To Buy Cialis?
modafinil online
where Can You Buy Cialis Cheap?
pharmacy prices compare
best canadian pharmacies
canadian pharmacy online no prescription
reliable online pharmacy
Cialis Professional is a medication that some men consider for this purpose generic cialis vs cialis In the largest original, prospective trial of tadalafil in diabetic men, SГЎenz de Tejada and co-workers reported that tadalafil significantly improves ED and is well tolerated in this population SГЎenz de Tejada et al 2002
cialis for sale in usa Utilising a metabolic indicator dye, previously demonstrated to reflect cell number 14, 16, the number of cells per well under both culture conditions were measured at specific intervals 24 to 72 h over 6 day 2D and 9 day 3D time frames