শ্রাবণের ছবি
আহমেদ সাব্বির
শ্রাবণে জেগে ওঠে প্রকৃতি। সবুজ হয়ে ওঠে গাছপালা, তৃণলতা। চৈত্রের আগুণে দগ্ধ হওয়া পাতার ক্ষত সারিয়ে দেয় শ্রাবণ। সজীব সতেজ হয়ে ওঠা ঝোঁপঝাড় প্রাণ ফিরে পায়। আকাশের দিকে তাকালে চোখে পড়ে মেঘের লীলা। কত রঙের কত রূপের মেঘ ভেসে থাকে শ্রাবণের আকাশ জুড়ে। ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদলায়। সারারাত অবিরাম বর্ষণে ক্লান্ত আকাশে ঝকঝকে রোদ ওঠে। সেই রোদ কাচাসোনার গুঁড়োর মতো উজ্জ্বল। রোদের আলোয় মেঘ খেলা করে। তুলো তুলো হাওয়াই মেঠাই মেঘ দেবশিশুদের রূপ ধারণ করে খেলা করে। অপরূপ সেই দৃশ্য। কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই রোদ মিলিয়ে যায় ফলসারাঙা মেঘের আড়ালে।
মেঘ ঘণীভূত হয়ে আকাশ দখলে নিতে চায়। আকাশের এক প্রান্ত তখনো রোদ ঝলমল করতে করতে নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। অপর প্রান্তে মেঘের ঘণঘটা। এ যেন সেই সাদাকালো চলচ্চিত্রের যুগের আলো-ছায়ার দৃশ্যায়ণ। হঠাৎ হুড়মুড় করে নেমে আসে বর্ষা। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দেখা যায় চারপাশে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। ভিজে যাচ্ছে মেহগনি বাগান, লেবুর ঝাড়, সদ্য লতিয়ে ওঠা পুঁই-করলার মাচান। কিছুক্ষণ আগে যে কাঠঠোকরাকে দেখা গিয়েছিল শাণিত ঠোঁটে ঠক্ ঠক্ আওয়াজ তুলে কাঁঠাল গাছ ফুটো করতে, এখন সে উধাও। এপারে ঝুম বৃষ্টি অথচ দূরে বিলের ওপারে ঝকঝরে রোদের নাচন। গরু চরছে মাঠে, পুকুরে শিশুরা সাঁতার কাটছে। চাষীরা কাদামাখা ক্লান্ত শরীর নিয়ে উঠে আসছে বীজতলা থেকে। ওপারে আবার মেঘ জমতে শুরু করেছে।
অনেকে বলেন শরতের কত রূপ। বসন্তের কত রঙ। অথচ শ্রাবণের যে মোহনীয়তা তা প্রেয়সীর অভিমানের মতো রহস্যময়। শ্রাবণ সকাল এক রঙের, শ্রাবণ সন্ধ্যা আরেক রঙের। আর শ্রাবণের রাত যেন মহাকাব্যিক। সুরেলা, ঘোরলাগা। সেটা অনুভব ছাড়া ভাষায় বর্ণনা করা অসাধ্য। শ্রাবণের সকাল কিছুটা আচ্ছন্ন-আড়ষ্ট। বৃষ্টি ঝরছে ভোর থেকে। একটানা অনবরত। জানালায় বৃষ্টির ছাঁট। বাইরে ধোঁয়া ধোঁয়া বাষ্প ভেজা গাছের উপর ভেসে বেড়ায়। শ্রাবণ সকালে রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল খুব একটা চোখে পড়ে না। ঝরো ঝরো বৃষ্টির মধ্যে দু-একটা সাইকেল, ছাতা মাথায় পথচারী, জবুথবু সবজিওয়ালা কাকভেজা হয়ে যাতায়াত করে। দূরে তাকালে চোখে পড়ে মনমরা প্রকৃতি। নিঝুম ছায়াচ্ছন্নতায় আড়ষ্ট। যেন জেগে ওঠার অপেক্ষায় বসে আছে। বৃষ্টি কমলেই ওরা প্রকাশ করবে নিজেদের স্নিগ্ধ রূপ।
শ্রাবণের দুপুর। নিস্তরঙ্গ। কোথাও কল্লোল নেই, বৃষ্টির উদ্যাম নৃত্য ছাড়া। গঞ্জের পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদী বর্ষাক্রান্ত। বুকে তার গভীর জলের চাপ। চারপাশ মৃদু অন্ধকার। ঘণঘোর শ্রাবণের মেঘ আকাশ ঢেকে জেঁকে বসেছে। মাছধরা জেলে নৌকাগুলো ঘাটে বাধা– মনমরা হয়ে বসে আছে ফুলে ওঠা তীরে। দূরে বিলের বীজতলায় জল থৈ থৈ বৃষ্টি। চাষীরা একটু আগেও ছিল। থিকথিকে কাদায় হাঁটু পর্যন্ত ডুবিয়ে বীজতলার আগাছা বাছছিল। বৃষ্টির প্রতাপে সবাই বীজতলা ছেড়ে উঠে এসেছে একটা টঙঘর। বিলের জমির পাশেই ছোট্ট বাঁশের টঙঘর। উপরে খড় অথবা গোলপাতার ছাউনি, নিচে বাঁশের মাচান। সেখানে বসেই চাষীরা বিড়ি ধরিয়ে শরীরকে গরম করার চেষ্টা করছে। হাসি-ঠাট্টা আর খুনসুঁটি করে ভুলে থাকতে চাইছে জঠরে জমে ওঠা দুপুরের ক্ষুধা। পাশের এক টুকরো মাঠে ছেলেরা ফুটবল নিয়ে মেতেছে। বৃষ্টিকে উপক্ষো করে কাদামাখা শরীর ছুটছে বল পায়ে। কেউ ছুটছে কেউ আছড়ে পড়ছে কাদায়। আবার উঠে দাঁড়িয়ে ছুটে চলেছে । দুপুরে কোনো কোনে রান্নাঘর থেকে ভেজা ভেজা ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। ভাতের গন্ধ নাকে এসে লাগে। এভাবে ঝরতে ঝরতে শ্রাবণ এক সময় ক্লান্ত হয়ে পড়ে। বিশ্রাম নিতে বসে যায়। আর তখনই প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে প্রকৃতি।
বিশ্রামকালে আকাশে রঙধনু দেখা যায়। বড় অপরূপ সেই বর্ণিল রঙধনু। রোদের বুকে ধনুকের মতো বাঁক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এ যেন শ্রাবণের আরেক রূপ। গাছের পাতায় রোদের ঝিলিক, নদীর জলে রোদের ঝালর, বিলের কলমিঝোঁপে রোদের নাচনে চারপাশ সোনা হয়ে যায়।
রাতের শ্রাবণ অন্য এক রূপ ধারণ করে। এই রূপ আরো গভীর আরো অভিমানী। চারদিকে ঘণ অন্ধকার। কোথাও কোনা কোলাহল নেই। প্রাণের কল্লোল নেই। ঝিঁঝির ডাক নেই। নিশাচর বাদুড়ের ডানাঝাপটানো নেই, শিয়ালের কান্না কিংবা তক্ষকের ক্ষোভ কিছুই শোনা যায় না। আকাশে মেঘের ঘণঘটা। নক্ষত্রের বাগান, জোছনার সরোবর সব মেঘের সন্ত্রাসে নীরব। কেবল একটানা বৃষ্টির অঝোর ধারাপাত। আর থেকে থেকে মেঘের গোঙানি রাতকে ভয়ার্ত করে তোলে। শ্রাবণ রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে, কেবল জেগে থাকেন কবি। শ্রাবণের রাত যেন কবিতার রাত। কালিদাসের মেঘদুতের রাত, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ রাত। রাতের এসরাজে বাজে শ্রাবণ ভৈরবী। সেই কিন্নরী সুর শ্রাবণকে শাশ্বত করে তোলে অলৌকিক এক বিষন্নতায়। শ্রাবণরাতে কবি জীবনকে দেখতে পান বৃষ্টির মদিরা পান করে। এভাবেই কেটে যায় রাতের সময়। ভোর অপেক্ষা করে শ্রাবণের আরেক রহস্য দেখার জন্য। ক্লান্ত কবি ঘুমিয়ে পড়েন সারা রাতের শ্রাবণ-বর্ষণ বুকে নিয়ে।
Регистрация в 2024 году — бесплатный промокод 1xbet на сегодня. Часто задаваемые вопросы по регистрации и учетной записи у букмекера 1xbet. [url=https://magic-arsenal.com/catalog/pages/index.php?promokod_279.html]промокод на 1хбет сегодня бесплатную ставку[/url]. Разнообразие бонусных предложений от 1xbet — другие типы бонусов и промокодов для игроков. Промокод 1xbet на День Рождения. Фрибеты или бесплатные ставки. Тото-промокоды 1xbet. Промокоды 1xbet у блогеров. Система промокодов при регистрации позволяет новым игрокам букмекерской конторы 1xbet получать внушительные бонусные суммы к своему первому депозиту. Обратите внимание, что это не промокод на ставку, а именно на регистрацию. Рабочие промокоды 1хбет на сегодня: Вид бонуса. Размер бонуса.