শিল্পী এস এম সুলতানের কোনো পূর্বসূরি ছিলো না, নেই কোনো উত্তরসূরিও
মাঈন উদ্দিন জাহেদ
‘কোন কোন মানুষ জন্মায় , জন্মের সীমানা যাদের ধরে রাখতে পারে না। অথচ তাদের সবাইকে ক্ষণজন্মাও বলা যাবে না। এ রকম অদ্ভুত প্রকৃতির শিশু অনেক জন্মগ্রহণ করে জগতে, জন্মের বন্ধন ছিন্ন করার জন্য যাদের রয়েছে এক স্বভাবিক আকুতি।… শেখ মুহাম্মদ সুলতান সে সৌভাগ্যের বরে ভাগ্যবান, আবার সে দুর্ভাগ্যের অভিশাপে অভিশপ্ত। ’ (বাংলার চিত্র ঐতিহ্য: সুলতানের সাধনা- আহমদ ছাফা, পৃ: ১৭০)
নড়াইলের মাসিমদিয়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক ও রাজমিস্ত্রি শেখ মেছের আলীর ছেলে শেখ মুহাম্মদ সুলতান (১০ আগাষ্ট ১৯২৩- ১০ অক্টোবর ১৯৯৪) ওরফে লাল মিয়া শৈশবে বাল্য শিক্ষক কৃষ্ণনাথের জীয়ন কাঠির ছোঁয়ায় শিল্পকলার স্বপ্নময় জগতে প্রবেশ করে যে আপন আলো র্নিমাণ করেছেন- তা বাংলাদেশের চিত্রকলার ধারাবাহিক যাত্রায় ভিন্ন ও অনন্য। বিশ্ব শিল্পকলায় সুলতান প্রথম বাঙালি চিত্রি হিসেবে পাবলো পিকাসোর সাথে চিত্র প্রর্দশনীতে অংশ নিয়েছিলেন। সাথে আরো ছিলেন- সালভাদর দালি, জন ব্লাক, পল ক্লী, জন র্মাটিন- যা অনুষ্ঠিত হয়েছিল হ্যামস্টিড, লন্ডন, যুক্তরাজ্যে ১৯৫৬ সালে। যদিও তার প্রিয় শিল্পী পিকাসো ছিলেন না, ছিলেন ইমপ্রেশনিস্ট শিল্পী সেজান ও ভিনসেট ভেনগগ।
১০ বছর বয়সে যখন তিনি ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র, স্কুল পরির্দশক ড. শ্যামাপ্রসাদ মুর্খাজীর পেন্সিল স্কেচ এঁকে শিল্পী হিসেবে সবার দৃষ্টি কাড়েন। জমিদার ধীরেন্দ্র নাথ রায়ের পৃষ্টপোষকতায় ও বিশিষ্ট শিল্প সমালোচক শাহেদ সোহরাওয়ারদীর প্রত্যক্ষ প্রভাবে কলকাতা আর্ট কলেজে ছ’বছরের কোর্সে ভর্তি হয়েও যিনি তিন বছরেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ত্যাগ করেন- তাতে পষ্ট হয়ে যায় তার বহেমিয়ান জীবনের চারিত্র। পায়ে হেঁটে যিনি উপমহাদেশের প্রায় ছোট বড় শহর ঘুরে বেড়িয়েছিলেন জীবনের পাঠ নিতে।
সুলতানের জবানিতে শুনুন তা :
১৯৫৩ তে, র্আট কলেজ থেকে পালিয়ে আমি ঘুরতে থাকলাম। সারা ভারতের সমস্ত স্টেশনে আমি পায়ে হেঁটে হেঁটে ঘুরেছি।
আমিনুল: পায়ে হেঁটে?
সুলতান: পায়ে হেঁটে… সিমলা, মুশৌরী, শ্রীনগর, র্নথ ওয়ের্স্টান ফ্রন্ট গ্রাহাম…
আমি তো নবাব ফরিদ খানের মেহমান ছিলাম। তিন মাস ঘুরতে ঘুরতে গিয়েছিলাম সেখানে। দাক্ষিণাত্যে গিয়েছি, মধ্য ভারতে গিয়েছি…(বাংলাদেশের চিত্রকলা ও চিত্রকর: আমিনুর রহমান, পৃ:৪১)
হ্যা, শিল্পী এস এম সুলতানের প্রথম চিত্র প্রর্দশনী হয়েছিলো ১৯৪৬ সালে সিমলায়। ৪৭ এর ভারত –পাকিস্তান ভাগের পর তিনি চলে আসেন তৎকালিন র্পূব-পাকিস্তানে। আবার করাচি, ফার্সি স্কুলে দু’বছর আর্ট টিচার। খ্যাতিমান শিল্পী চুকতাই ও শাকের আলীর সাথে পরিচয় ও আন্তর্জাতিক যাত্রা। নিউইর্য়ক, ওয়াসিংটন, শিকাগো, বোস্টন ও লন্ডনে চিত্র প্রদর্শনী। ১৯৫৩ সালে আবার নড়াইলে ফিরে আসা। শিশু স্বর্গ সহ শিশুদের জন্য তার স্বপ্নময় পৃথিবী নির্মাণের প্রচেষ্টা। বিশাল নৌকায় ঘুরে ঘুরে শিশুদের ছবি আঁকা শেখানো এবং শিশুদের জন্য বহু প্রতিষ্ঠান গড়া। শিশুর চোখে তিনি পৃথিবী দেখতে চেয়েছিলেন। বলতেন … আমি তো বাচ্চাদের শিল্পী। এই স্বপ্নময় জগতে কেটে যায় তার অনেক সময়।
বাংলাদেশের চিত্র কলার মূলধারায় তিনি অনেক দিন প্রাসংগিক ছিলেন না। শিল্পচার্য জয়নুল অবেদীনের সাথে মানসিক দূরত্বে ৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা কেন্দ্রিক চিত্রধারার সাথে অনালোচিত ছিলেন। ১৯৭৬ সালে, বিশেষ করে জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক ও সাহিত্যিক আহমদ ছফার প্রচেষ্ঠায় ঢাকার শিল্পকলা একাডেমীতে একক চিত্র প্রদর্শনীর পর আলোচনার পাদপ্রদীপে আসেন। বিশেষ করে বিশিষ্ট চিন্তক মহাত্মা আহমদ ছফা তিমির থেকে বের করে আনেন সুলতানের চিত্রকলা। লিখেছিলেন চমৎকার বর্ণাঢ্য চিত্র সমালোচনা- বাংলার চিত্র ঐতিহ্য: সুলতানের সাধনা (১৯৮০)।
সুলতানের শিল্প সাধনা সম্পর্কে লেখক আহমদ ছফা বলেন: ‘সুলতানকে বাংলার প্রকৃতিতে, বাংলার ইতিহাসে এবং বাংলার মানুষের শ্রম, ঘাম, সংঘাতের ভেতর সৌন্দর্যকে আবিষ্কার করার জন্য পাড়ি দিতে হযেছে দুস্তর পথ, পেরিয়ে আসতে হয়েছে সাধনা ও নিরীক্ষার অনেক গুলো পর্যায়। তার ব্যাক্তি জীবন এবং শিল্পী জীবনের সমান্তরাল যে অগ্রগতি তাও কম বিস্ময়কর নয়।’ (বাংলার চিত্র ঐতিহ্য: সুলতানের সাধনা- আহমদ ছাফা, পৃ: ১৫১)
বাংলাদেশের চিত্রকলার মুলধারায় শিল্পী এস এম সুলতানের ছবিগুলো আপাত: প্রাসংগিক হয়ে আসে না; তার ছবির মূল থিম গ্রামীণ জনগোষ্ঠী হলেও তার ছবির ফিগারগুলো ব্যাতিক্রম। ফিগারগুলো দানবীয় অঙ্গসৌষ্ঠবময়। তিনি রিয়েলিস্টিক ধারার শিল্পী হলেও তার ছবির কৃৃষকেরা বাংলার আবহমান কৃষকের মতো নয়। দানিবীয় গাঠনিত অবয়বের তো নয়ই। তাহলে সুলতানের ছবির মানুষেরা কারা?- যারা বিশাল দেহী, সুঠাম পেশী, প্রচন্ড প্রতাপময়। মুলত: শিল্পী সুলতান ইচ্ছাকৃত ভাবে বাস্তবকে ঠেলে কল্পনাকে সামনে আনতে চেয়েছেন। তার মাঝে এক ধরণের রোমান্টিক আদর্শবাদ প্রাণিত হয়েছিলো। তাই তাকে সম্পূর্ণ ভাবে বাস্তববাদী শিল্পীও বলা যায় না। এ প্রসঙ্গে আমরা শিল্পতাত্ত্বিক হারবার্ট রিডের Realistic Painter সম্পর্কে ব্যাখ্যাটি স্মৃতিতে রাখতে পারি:
The realistic mood needs no explanation; it is , in the plastic art , the effort to represent the world exactly as it is present in our senses, without omission, without falsity of any kind.(The Meaning of Art, page:160)
সুলতানের ৫০ পরর্বতী চিত্রগুলো নিয়ে বিশিষ্ট চিত্র সমালোচক শরীফ আতিউজ্জামান সূচিবদ্ধ করেছেন এভাবে : তার ক্যানভাস জুড়ে শুধু বাংলাদেশ- বাংলার কৃষক সমাজ, উৎপাদনের সাথে যারা সম্পৃক্ত, জল ও মাটির সাথে যাদের সম্পর্ক নিবিড়। তাঁর বিশাল ক্যানভাস গুলো ধারণ করে আছে গ্রামের বিস্তৃর্ণ সবুজ ফসলো মাঠ, জমিতে মই দেয়া, লা্গংল -গরুতে গাঁতায় চাষ, ধান তোলা, ধান মারাই, ধান ঝাড়া ,ধান ভানা, গোরায় ধান উঠানো, পাট কাটা , পাট বাচা, পাট ধোয়ার কাজে ব্যস্ত কৃষাণ-কৃষাণী, নদীর ঘাটে স্নানরতা, জল ভরা, কাপড় ধোয়া,শাপলা তোলা, দুধ দোহানো, মাছ কাটার কাজে নিয়োজিত কৃসক রমণী, খাল বিল নদীতে মাছ শিকারে ব্যস্ত জেলে সম্প্রদায়, ঢাল সড়কি লাঠি দিয়ে চর দথলে উদ্যত মারমুখি কৃষক, আছে ঋতু ভিত্তিক গ্রামীণ পরিবেশ’।(দশ পথিকৃৎ চিত্রশিল্পী, পৃ: ৮৪)
এছাড়া কিছু ব্যতিক্রম চিত্রও আছে: বস্তীবাসি জীবন, জলোচ্ছাসের পর, বেদেনীদেও ঘওে ফেরা, গণহত্যার কিছু নিরীক্ষাধর্মী বিমূর্ত চিত্রকলা। হ্যা, শিল্পী এস এম সুলতান- তেল ও জল রঙেই মুলত: কাজ করলেও কিছু পেন্সিল ও কালির স্কেচও আছে।
বাংলাদেশের চিত্রকলার মুলধারায় শিল্পী এস এম সুলতানের ছবিগুলো আপাত: প্রাসংগিক হয়ে আসে না; তার ছবির মূল থিম গ্রামীণ জনগোষ্ঠী হলেও তার ছবির ফিগারগুলো ব্যাতিক্রম। ফিগারগুলো দানবীয় অঙ্গসৌষ্ঠবময়। তিনি রিয়েলিস্টিক ধারার শিল্পী হলেও তার ছবির কৃৃষকেরা বাংলার আবহমান কৃষকের মতো নয়। দানিবীয় গাঠনিত অবয়বের তো নয়ই। তাহলে সুলতানের ছবির মানুষেরা কারা?- যারা বিশাল দেহী, সুঠাম পেশী, প্রচন্ড প্রতাপময়। মুলত: শিল্পী সুলতান ইচ্ছাকৃত ভাবে বাস্তবকে ঠেলে কল্পনাকে সামনে আনতে চেয়েছেন। তার মাঝে এক ধরণের রোমান্টিক আদর্শবাদ প্রাণিত হয়েছিলো। তাই তাকে সম্পূর্ণ ভাবে বাস্তববাদী শিল্পীও বলা যায় না। এ প্রসঙ্গে আমরা শিল্পতাত্ত্বিক হারবার্ট রিডের Realistic Painter সম্পর্কে ব্যাখ্যাটি স্মৃতিতে রাখতে পারি:
The realistic mood needs no explanation; it is , in the plastic art , the effort to represent the world exactly as it is present in our senses, without omission, without falsity of any kind.(The Meaning of Art, page:160)
‘শুধু ফোটোগ্রাফির উপস্থাপনা ছবি আঁকার উদ্দেশ্য হতে পারে না। আমার কৃষকের অতিকায়তা সব বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। সমালোচকরা বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে একে ব্যাখ্যা করার প্রয়াস পেয়েছেন। কেউ একে বিকৃতি বলেছেন, কেউ আবার আমার এ্যানাটমি জ্ঞানের অভাব হিসেবেও দেখেছেন, কিন্তু এখানেই আমার ছবির দর্শন। আমি রেঁনেসা মাস্টারদের অনুকরণে তাদের দেবসৌষ্ঠব এঁকেছি মানুষকে দেখাতে যে কৃষকদের এরূপ হওয়া উচিৎ। তাদের কৃষকায় হওয়ার পিছনে নিয়তি বা ভাগ্য নয়, শোষণের দীর্ঘ ইতিহাস জড়িত। আমার ছবিতে একটি প্রতিবাদী ‘মেসেজ’ আছে। আমার আশা, সব ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে একদিন ওরা জয়ী হবেই। ওরা ওদের স্বাস্থ্য ফিরে পাবে।’
আমাদের শাদা চোখে মানুষের যে ফিগারগুলো দেখি, বা ইতিহাস ও সাহিত্যে বাঙালির যে চিরন্তন ফিগারটা পাই, সে চিত্রের সাথে সুলতানের ফিগার গুলো মেলে না। উপমহাদেশের চিত্ররীতিতে নারীপুরুষের যে আকৃতি সুলতানের সাথে কেনো মেলে না? এটা ছবির দর্শক মাত্রই প্রশ্ন। নারী নিয়ে আমাদের চিত্রকলায় যে আদল আছে তা হলো: চিকণ ঠোঁট,খাঁড়া নাক, নীল তিল কুল, পদ্ম পাতা কিংবা মৃগ- খঞ্জনার চোখ । বক্ষ যুগল ঘট বা দাড়িম্ব ফলের মতো। কিন্তু সুলতানের ছবিতে আমরা তা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত দেখি। তার নারীরা স্ফীত ও মেদ সর্বস্ব। নারীরাও বিশাল দেহী। মস্তক ও নীতম্বে কিছুটা ভারতীয় সাদৃশ্য। শাস্ত্রে যেভাবে পুরুষের চিত্র অঁকা হয়েছে:
কিবা সুমেরু চুড়া – যেন শালদ্রুম
ফোঁড়া শশীমুখ পঙ্কজ নয়ন।
সুলতানের পুরুষেরা তেমন নয়।তার ছবির পুরুষেরা দেবতা নয় মূলত: মানুষ। সর্বপরী কৃষক। দেবতার মতো রূপবান নয়। তার ছবির এমন রোমান্টিক প্রবণতা দূর বাস্তবের আদর্শায়ন। এ সম্পর্কে শিল্পীর ভাষ্যই প্রণিধান যোগ্য:
‘শুধু ফোটোগ্রাফির উপস্থাপনা ছবি আঁকার উদ্দেশ্য হতে পারে না। আমার কৃষকের অতিকায়তা সব বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। সমালোচকরা বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে একে ব্যাখ্যা করার প্রয়াস পেয়েছেন। কেউ একে বিকৃতি বলেছেন, কেউ আবার আমার এ্যানাটমি জ্ঞানের অভাব হিসেবেও দেখেছেন, কিন্তু এখানেই আমার ছবির দর্শন। আমি রেঁনেসা মাস্টারদের অনুকরণে তাদের দেবসৌষ্ঠব এঁকেছি মানুষকে দেখাতে যে কৃষকদের এরূপ হওয়া উচিৎ। তাদের কৃষকায় হওয়ার পিছনে নিয়তি বা ভাগ্য নয়, শোষণের দীর্ঘ ইতিহাস জড়িত। আমার ছবিতে একটি প্রতিবাদী ‘মেসেজ’ আছে। আমার আশা, সব ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে একদিন ওরা জয়ী হবেই। ওরা ওদের স্বাস্থ্য ফিরে পাবে।’(ভিডিও সাক্ষাৎকার: বিশিষ্ট চিত্র সমালোচক শরীফ আতিউজ্জামান)
তবে বিশেষ ভাবে মনে রাখা উচিৎ- ১৯৪৬ শিল্পী যখন বাবার মৃত্যুর পর নড়াইলে ফিরে আসেন তখন শিল্পী খাকসার আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পরেন। কৃষক বিদ্রোহের সাথে যুক্ত হন। আন্ডার গ্রাউন্ড পার্টির সাথে যুক্ত হয়ে গভীর রাতে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে কৃষকদের সমাজ পরিবর্তনের জন্য প্রাণিত করতে চেষ্টা চালান। হয়তো সে কারণে- কৃষকদের জীবন পরিবর্তনের কথা, কল্পিত আদর্শ চিত্রগুলো, কাম্য গুলো তার ছবির সৌষ্ঠব্য হয়ে উঠে আসতে থাকে বিভিন্ন ফিগারে, চিত্রে, স্কেচে।
এস এম সুলতান পুরোপুরি ইম্প্রেশনিস্ট ধারার শিল্পী ছিলেন না, ছিলেন অনেকটা প্রকাশবাদী ধারার শিল্পী। আবেগ যেখানে মুখ্য। যেখানে পরিপর্শিক জগৎ ও অবস্থা কিছুটা অতিরঞ্জনে উপস্থাপিত। যা উদ্ভট নয় বরং উদ্ভাবিত। শিল্পতাত্ত্বিক হারবার্ট রিট প্রসঙ্গটিকে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন:
it expresses the emotions of artist at any cost the cost being usually an exaggeration or distortion of natural appearances which borders on grotesque.
আমরা এর বাস্তবতা গ্রীক ভাস্কর্যেও দেখি। গ্রীক ভাস্কর্যেও বাস্তবের সম্পূর্ণ প্রতিফলন হয় না। মিলোসের আফ্রোদিতিকে আমরা যেভাবে দেখি তা বাস্তবে দৃশ্যের মতো নয়। চোখের ভ্রু ,মুখ, বক্ষযুগল বাস্তবের মতো নয়,পূন:নির্মিত।
শিল্পী এস এম সুলতান মুলত: ইউরোপিয় রেঁনেসার শিল্পীদের মতো ভিশনারী। এক সময়ের সচ্চল কৃষক যখন সামন্তবাদী সমাজে এসে কৃষকায় হয়ে গেলো, শোষিত হতে হতে সমাজের নিম্নবর্গে পৌঁছে গেলো, তাকে উদ্দীপ্ত করতে, তার হারানো স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারেই শিল্পকে প্রোণদনাময় উদ্ভাস হিসেবে দেখেছেন তিনি। উজ্জ্বীবন, স্বপ্ন ও সম্ভাবনার আশাকে তার শিল্পে আশ্রয় দিয়েছেন, লালিত করেছেন বিশাল ক্যানভাসে। এ বিশালতায় বাংলার এ বিশাল কৃষিজীবী সমাজকে প্রতিনিধিত্ব করতে।
বিশিষ্ট শিল্প তাত্ত্বিক-সমালোচক ও কবি সৈয়দ আলী আহসান শিল্পী এস এম সুলতান এর চিত্র নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছেন:
‘তার লক্ষ্য হচ্ছে আমাদের গ্রামের সমাজ জীবনকে উপস্থিত করা। অত্যন্ত বলিষ্ঠ-দেহী কৃষককুল অথবা কৃষক রমণী, কৃষিকর্মে নিযুক্ত প্রানী, উর্বরা ভ’মি, এবং বলিষ্ঠ ধানের মঞ্জরী সব কিছু একাকার করে তিনি একটি সজিবতার উত্তরণ খুঁজেছেন। তার বক্তব্য হচ্ছে, এ সজিবতা হচ্ছে আমাদের কাম্য সুতরাং তিনি কাম্যের প্রসাদকে আমাদের সামনে উপস্থিত করেছেন। অবশ্য এখাণে মনে রাখতে হবে বাস্তব দৃশ্য আমাদের গ্রামাঞ্চলে এ সজিবতাকে উদঘাটন করে না। বিপুল আয়তনের ক্যানভাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে এস এম সুলতান যথেষ্ট সাহস দেখিয়েছেন। এ সমস্ত চিত্রের মধ্যে সমাজ ব্যবস্থার মূখ্য কোনো সমালোচনা নেই, একটি কাম্য আস্থার উদ্ঘাটন আছে।’ ( বাংলাদেশের শিল্পকলা:শিল্পবোধ ও শিল্পচৈতন্য: পৃষ্ঠা-১৭১)
শিল্পী এস এম সুলতান ছবির ফিগারগুলো দানবীয় অঙ্গসৌষ্ঠ বলে কোনো কোনো শিল্প সমালোচক তাকে নিয়ে তাচ্ছিল্য করেন-‘ সুলতান এ্যানাটমি জানে না’। তাদের কাছে ফিগারই মুখ্য, শিল্প নয়। মনে রাখা দরকার- শুধু জ্যামিতিক নিয়মে বাস্তবতার অনুকরণের ছবি আদর্শ ছবি নয়, তা হয়ে যায় ফটোগ্রাফি। শিল্পগুরু শ্রী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ’ বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী’তে বলেছেন:
‘গনেশ মূর্তিটিতে আমাদের ঘরের ও পরের ছেলের এ্যানাটমি যেমন করে ভাঙ্গা হয়েছে তেমন আর কিছুতে না। হাতি ও মানুষের সমস্তখানি রূপ ও রেখার সামঞ্জস্যের মধ্যদিয়ে একটি নতুন এ্যান্টমি এলো, কাজেই সেটা আমাদের চক্ষে পীড়া দিচ্ছে না, কেননা সেটা ঘটনা নয়, রচনা। ( শিল্প ও দেহতত্ত্ব-পৃ:৯৩)
‘মাছ গেছে, ধান গেছে , সুর গেছে সব হারিয়ে গেছে। সুজলা সুফলা কথাটি তো শেষ হয়ে গেলো। স্রোতসিনী নদী মাতৃক কথাটাই ফুরিয়ে গেলো, কি করে জাতি বাঁচবে? আমি প্রতিবাদ করি, আমি মুখে বললে বলবে যে দেশের শত্রু। সেজন্য কথা বলি না। আমি ঐ ছবিতে দেখাই দেখো, তুমি প্রশ্ন করো কৃষক মোটা হয়েছে কেনো?…কৃষককে আমি মাসুকুলার করেছি কেনো? কেননা ওদের নি:শেষ করে দিয়েছে।
কৃষককে ভালোবাসি আমি এজন্য যে, ওরা কাজ নিয়ে থাকে। মাটির ধর্মী, মাটির সঙ্গে ওরা সম্পৃক্ত, আর ওরা আমাদের ফসল দেয়। আমাদের অন্ন জোগান দেয় । ওরা দু:খী হলে আমরা দু:খী হয়ে যাই। কৃষককে ভালো রাখতে গিয়েই তো ছবির ধারা বদলে গেলো আমার। ছবির স্টাইল বদলে গেলো। আমি আর বিদেশী কায়দায় ছবি আঁকছি না।’
১৯৯১ সালের এক সাক্ষাৎকারে শিল্পী এ এম সুলতান তার নতুন ধরণের চিত্র ভাবনা, শিল্প ভাবনা সম্পর্কে বলেন:
‘মাছ গেছে, ধান গেছে , সুর গেছে সব হারিয়ে গেছে। সুজলা সুফলা কথাটি তো শেষ হয়ে গেলো। স্রোতসিনী নদী মাতৃক কথাটাই ফুরিয়ে গেলো, কি করে জাতি বাঁচবে? আমি প্রতিবাদ করি, আমি মুখে বললে বলবে যে দেশের শত্রু। সেজন্য কথা বলি না। আমি ঐ ছবিতে দেখাই দেখো, তুমি প্রশ্ন করো কৃষক মোটা হয়েছে কেনো?…কৃষককে আমি মাসুকুলার করেছি কেনো? কেননা ওদের নি:শেষ করে দিয়েছে।
কৃষককে ভালোবাসি আমি এজন্য যে, ওরা কাজ নিয়ে থাকে। মাটির ধর্মী, মাটির সঙ্গে ওরা সম্পৃক্ত, আর ওরা আমাদের ফসল দেয়। আমাদের অন্ন জোগান দেয় । ওরা দু:খী হলে আমরা দু:খী হয়ে যাই। কৃষককে ভালো রাখতে গিয়েই তো ছবির ধারা বদলে গেলো আমার। ছবির স্টাইল বদলে গেলো। আমি আর বিদেশী কায়দায় ছবি আঁকছি না।’ (বাংলাদেশের চিত্রকলা ও চিত্রকর: আমিনুর রহমান, পৃ:৪৩)
শিল্পী এস এম সুলতান এভাবে হয়ে ওঠেন অন্য এক মাত্রার অন্য রকম। বাঙালির একান্ত নিজস্ব ঘরানার শিল্পী। সাহিত্যিক আহমদ ছফা এজন্য শিল্পী এস এম সুলতান কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে লিখেছেন:
‘সুলতানের কৃষকেরা জীবন সাধনায় নিমগ্ন। তারা মাটিকে জাষ করে ফসল ফলায় না। পেশির শক্তি দিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গম করে প্রকৃতিকে ফলে –ফসলে সুন্দরী সন্তাসবতী হতে বাধ্য করে। এই খানে জীবনের সংগ্রাম এবং সাধনা. আকাঙ্খা এবং স্বপ্ন, আজ এবং আগামীকাল একটি বিন্দুতে এসে মিশে গিয়েছে। সৃলতানের কৃষকেরা নেহায়েত মাটির করুণা কাঙাল নয়। রামচন্দ্র যেমন অহল্যা পাষাণীকে স্পর্শ করে মানবী রূপ দান করেছিলেন, তেমনি তার মেহনতি মানুষদের পরশ লাগা মাত্রই ভেতর থেকে মাটির প্রান সুস্দর মধুর স্বপ্নে ভাপিয়ে উঠতে থাকে। এ মানুষগুলো পাখা থাকলে দেবদূতের মতো আকাশের অভিমুখে উড়াল দিতে পারতো। কিন্তু একটি বিশেষ ব্রতে, একটি বিশেষ অঙ্গিকারে আবদ্ধ বলেই তারা মাটির দিকে ঝুঁকে পড়ে আছে। সে অঙ্গিকারটি, সে ব্রতটি মাটিকে গর্ভবতী ও ফসলশালিণী করা। মাথার উপরে স্বর্গলোকের যা কিছু প্রতিশ্রুতি, যা ছিু প্রেরণা তার সবটুকু- আকাশে নীল থেকে, রামধণু বর্ণের সুষমা থেকে ছেঁকেএনে মাটির ভেতরে চারিয়ে দিয়ে যাচ্ছে এই মানুষ-মানুষীর দল।’ (বাংলার চিত্র ঐতিহ্য: সুলতানের সাধনা- আহমদ ছাফা, পৃ: ১৬৫)
‘শেখ সুলতানের মধ্যে দ্য ভিঞ্চি, মিকেলেঞ্জেলো, রাফায়েল প্রমুখ শিল্পীর প্রকাণ্ড কল্পনা এবং কল্পনার বলিষ্ঠ চাপ এত গভীর এবং অনপনেয় যে মনে হবে এ চিত্রসমূহ, কোনোরকমের মধ্যবর্তিতার বালাই ছাড়া, সরাসরি রেনেসাঁস যুগের চেতনার বলয় থেকে ছিটকে পড়ে এই উনিশ শ’ সাতাত্তর সালে বাংলাদেশের কৃষক সমাজে এসে নতুন ভাবে জন্মগ্রহণ করেছে। এই ছবিগুলো আঁকার মতো মানসিক স্থিতাবস্থা অর্জন করার জন্য শেখ সুলতানকে সব দিতে হয়েছে। পরিবারের মায়া, বংশধারার মধ্যদিয়ে নিজের অস্তিত্বকে প্রবাহিত করার স্বাভাবিক জৈবিক আকাঙ্খা ভেতর থেকে ছেটে দিয়ে, এই চিত্র সন্তান জন্ম দেয়ার একাগ্রতায় কাপালিক সাধনায় নিযুক্ত থাকতে হয়েছে সারাজীবন। শেষ পর্যন্ত অসম্ভব সম্ভব হয়েছে। বাংলার শিল্পীর হাত দিয়ে বাংলার প্রকৃতি এবং বাংলার ইতিহাসের একেবারে ভেতর থেকে রেনেসাঁস যুগের ফুল ফুটেছে। এইখানে সুলতানের অনন্যতা। এই খানে বাংলার কোন শিল্পীর সঙ্গে ভারতবর্ষের কোন শিল্পীর সঙ্গে সুলতানের তুলনা চলে না। অবনীন্দ্রনাথ, যামিনী রায়, নন্দলাল, জয়নুল অবেদীন, আবদার রহমান চাঘতাই, এ সকল দিকপাল শিল্পীর মধ্যে যতই পার্থক্য থাকুক, তবু সকলের মধ্যে অন্তর্নিহিত যোগসূত্র অবশ্যই রয়ে গেছে। হ্যাভেল ভারতীয় শিল্পদর্শনের যে সংজ্ঞাটি দিয়েছেন, কেউ তার আওতার বাইরে যেতে পারেননি- একমাত্র সুলতান ছাড়া।’
এ অনন্য সাধারণ শিল্পী ও শিল্পীর সাধনাকে অনুভব করতে হলে মহাত্মা আহমদ ছাফা’র আরো একটি মূল্যায়ন মনে রাখা জরুরী:
‘শেখ সুলতানের মধ্যে দ্য ভিঞ্চি, মিকেলেঞ্জেলো, রাফায়েল প্রমুখ শিল্পীর প্রকাণ্ড কল্পনা এবং কল্পনার বলিষ্ঠ চাপ এত গভীর এবং অনপনেয় যে মনে হবে এ চিত্রসমূহ, কোনোরকমের মধ্যবর্তিতার বালাই ছাড়া, সরাসরি রেনেসাঁস যুগের চেতনার বলয় থেকে ছিটকে পড়ে এই উনিশ শ’ সাতাত্তর সালে বাংলাদেশের কৃষক সমাজে এসে নতুন ভাবে জন্মগ্রহণ করেছে। এই ছবিগুলো আঁকার মতো মানসিক স্থিতাবস্থা অর্জন করার জন্য শেখ সুলতানকে সব দিতে হয়েছে। পরিবারের মায়া, বংশধারার মধ্যদিয়ে নিজের অস্তিত্বকে প্রবাহিত করার স্বাভাবিক জৈবিক আকাঙ্খা ভেতর থেকে ছেটে দিয়ে, এই চিত্র সন্তান জন্ম দেয়ার একাগ্রতায় কাপালিক সাধনায় নিযুক্ত থাকতে হয়েছে সারাজীবন। শেষ পর্যন্ত অসম্ভব সম্ভব হয়েছে। বাংলার শিল্পীর হাত দিয়ে বাংলার প্রকৃতি এবং বাংলার ইতিহাসের একেবারে ভেতর থেকে রেনেসাঁস যুগের ফুল ফুটেছে। এইখানে সুলতানের অনন্যতা। এই খানে বাংলার কোন শিল্পীর সঙ্গে ভারতবর্ষের কোন শিল্পীর সঙ্গে সুলতানের তুলনা চলে না। অবনীন্দ্রনাথ, যামিনী রায়, নন্দলাল, জয়নুল অবেদীন, আবদার রহমান চাঘতাই, এ সকল দিকপাল শিল্পীর মধ্যে যতই পার্থক্য থাকুক, তবু সকলের মধ্যে অন্তর্নিহিত যোগসূত্র অবশ্যই রয়ে গেছে। হ্যাভেল ভারতীয় শিল্পদর্শনের যে সংজ্ঞাটি দিয়েছেন, কেউ তার আওতার বাইরে যেতে পারেননি- একমাত্র সুলতান ছাড়া।’ (বাংলার চিত্র ঐতিহ্য: সুলতানের সাধনা- আহমদ ছাফা, পৃ: ১৬৭)
শিল্পী এস এম সুলতানের কোনো পূর্বসরি ছিলো না, নেই কোনো উত্তরসূরিও। কিন্তু ট্রেজেডি হচ্ছে তার কর্মময় জীবন ও চিত্রগুলোর নিয়ে আলোচনার প্রয়াসও নেই আমাদের মাঝে।
tadalafil generic where to buy where to get tadalafil
cialis tadalafil tadalafil online
tadalafil brands tadalafil liquid
generic tadalafil from uk cheap cialis pills for sale
generic cialis online fast shipping buy generic cialis online with mastercard
where to buy generic cialis online safely tadalafil order online no prescription
cialis without a prescription cialis at canadian pharmacy
I love it when folks come together and share
ideas. Great site, continue the good work!
tadalafil generic cialis at canadian pharmacy
buy cialis pills tadalafil
https://cialistrxy.com/ cheap generic cialis for sale
tadalafil side effects where to buy cialis without prescription
best price usa tadalafil best price usa tadalafil
cialis without prescription tadalafil brands
where to buy tadalafil on line tadalafil online with out prescription
generic tadalafil from uk tadalafil liquid
tadalafil cost walmart https://cialismat.com/
tadalafil daily online buy tadalis
tadalafil brands tadalafil liquid
tadalafil price walmart tadalafil daily online
Incredible! This blog looks exactly like my old one! It’s on a completely different topic but it has pretty much the same layout and design. Superb choice of colors!
order modafinil 200mg for sale modafinil 100mg cheap
order provigil 100mg for sale
what Is Cialis?
order modafinil online provigil 100mg pills
where To Buy Cialis In Saline County?
how Long For Cialis To Work?
purchase modafinil modafinil 200mg generic modafinil brand
what Is The Meaning Of The Two Bathtubs In The Cialis Commercials?