
নাগিব মাহফুজ
নাগিব মাহফুজ । আরবি ভাষার কিংবদন্তি ঔপন্যাসিক। আরব লেখেকদের মধ্যে সাহিত্যে একমাত্র নোবেল বিজয়ী। আরব বিশ্ব ছাড়িয়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিকদেরও একজন তিনি। বিশ্বব্যাপী প্রভাবশালী এই আধুনিক ঔপন্যাসিকের জন্ম মিশরের কায়রোর আল-জামালিয়া গ্রামে, ১৯১১ সালের ১১ ডিসেম্বর। বয়স যখন ১৩ বছর, তখন বাবা তার জন্মস্থান আল-জামালিয়া থেকে স্থানান্তরিত হয়ে আল-আব্বাসিয়া গ্রামে চলে আসেন। তারা বহু বছর সেখানে বসবাস করেন। পিতার মৃত্যুর পরও তিনি তার মাকে নিয়ে সেখানে অনেকদিন বসবাস করেন। তারপর চলে আসেন পুরনো কায়রোর আল-আজহার এলাকায়। তিনি গণিত ও বিজ্ঞান নিয়ে লেখাপড়া শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত তাতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এরপর স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন দর্শন বিষয়ে। লেখাপড়া শেষ করে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে অবসর নেওয়ার আগ পর্যন্ত বহু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দায়িত্ব পালন করেন। ১৭ বছর বয়সে লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৩৯ সালে তার লিখিত প্রথম উপন্যাস ‘খুফুজ উইজডম’ প্রকাশিত হয়। ১৯৫২ সালের জুলাই মাসে সংগঠিত মিশর বিপ্লবের আগে তার ১০টি বই প্রকাশিত হয়। এই বিপ্লবে তার লেখালেখি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তারপর তিনি বেশকিছু বছর লেখালেখি বন্ধ রাখেন। ১৯৫৭ সালে প্রকাশিত হয় তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘কায়রো ট্রিলজি’। যা তাকে সারাবিশ্বে পরিচিত করে তোলে। তার লিখিত মোট উপন্যাসের সংখ্যা ৩৪টি, ছোটগল্পের ৩৫০টির বেশি। এছাড়াও লিখেছেন ৫টি নাটক এবং অনেকগুলো চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য। তার লিখিত অনেক গল্প নিয়ে মিশর ও বিভিন্ন দেশে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র। তিনি সাহিত্য সাধনার প্রথম দশ বছর যে কয়েক ডজন ছোটগল্প রচনা করেছেন, তার অধিকাংশই শহুরে জীবনের নানা অন্ধকার দিক নিয়ে লিখিত। তার গল্পের অনেক চরিত্র সরাসরি জীবন থেকে নেয়া। ফলে অতি দ্রুত সময়ে তিনি পাঠকদের হৃদয়ে জায়গা করে নেন। ১৯৪৫ থেকে ১৯৫৭ সালের মধ্যে তার যে উপন্যাসগুলো প্রকাশিত হয়, তা সাধারণভাবে বাস্তবতাবাদী বলে অভিহিত হয়। তিনি ১৯৭১ সাল থেকে মৃত্যুর কিছুদিন আগ পর্যন্ত নিয়মিত ‘আল-আহরাম’-এ সাপ্তাহিক কলাম লিখেছেন। এসব কলাম দিয়ে একটি বই বের হয় ২০০১ সালে।
নাগিব মাহফুজ দেশে-বিদেশে সমান জনপ্রিয় ও সম্মানের অধিকারী। তার অসামান্য সাহিত্যকৃতির জন্য তাকে দু-দুবার ইজিপ্সিয়ান স্টেট প্রাইজ দেওয়া হয়। ১৯৮৮ সালে তাকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। ২০০৬ সালের ৩০ আগস্ট কায়রোতে এই ঔপন্যাসিকের মৃত্যু হয়। ‘দ্য প্যারিস রিভিউ’তে তার একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। এটি গ্রহণ করেন শার্লোট আল-শাবরাভি। গত ১১ ডিসেম্বর তার জন্মদিন উপলক্ষে জনপ্রিয় পত্রিকা ‘ডেইলি সাহারা’তে তার এই সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। সাক্ষাৎকারে সাহিত্যকৃতি, জীবন ও জগতভাবনা নিয়ে কথা বলেন নাগিব মাহফুজ।
অনুবাদ
আদিল মাহমুদ


কবে থেকে আপনার লেখালেখির শুরু?
নাগিব মাহফুজ
১৯২৯ থেকে। তবে সে সময় আমার সবগুলো গল্প প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। মাজাল্লার সম্পাদক সালামা মুসা বলতেন, তোমার মধ্যে প্রতিশ্রুতি আছে, কিন্তু এখনও মানোত্তীর্ণ হতে পারোনি। ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরের কথা খুব মনে পড়ে, কারণ সেটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু, হিটলার পোল্যান্ড আক্রমণ করলেন। আমার গল্প ‘আবাছ আল-আকদার’ ছাপা হলো, সেটা মাজাল্লা প্রকাশকদের পক্ষ থেকে এক ধরনের অপ্রত্যাশিত উপহার ছিল।
তখন থেকে কী আপনার লেখা এবং প্রকাশনা সহজভাবেই চলতে লাগল?
নাগিব মাহফুজ
না, তা না। ‘মাজাল্লা’তে প্রথম প্রকাশের পর আমার এক লেখক বন্ধু এসে বলল, তার ভাইয়ের একটা প্রিন্টিং প্রেস আছে, তুমি আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পার। এরপর তারা কয়েকজন সহকর্মীকে নিয়ে একটা প্রকাশনা কমিটি গঠন করল এবং কিছুটা সফলও হয়েছিল। ১৯৪৩ সাল থেকে আমরা কিছুটা নিয়মিত প্রকাশনা শুরু করলাম। আমরা প্রত্যেক বছর একটা করে গল্প প্রকাশ করতে লাগলাম।
আপনি কখনো জীবিকার জন্যে লেখার উপর নির্ভর করেছিলেন?
না। আমি সবসময় সরকারি চাকরি করেছি। তবে সময় ব্যয় করেছি সাহিত্যের পেছনে বই-কাগজ নিয়ে। লেখালেখি থেকে টাকা উপার্জন অনেক পরের ঘটনা। আমি বিনিময় ছাড়াই আশিটি গল্প প্রকাশ করেছি। এমনকি আমার প্রথম দিকের উপন্যাসগুলোতেও আমি তেমন টাকা-পয়সা পাইনি।
লেখালেখি থেকে টাকা উপার্জন কবে থেকে শুরু?
নাগিব মাহফুজ
আমার ছোটগল্পগুলো যখন ইংরেজি, ফরাসি এবং জার্মান ভাষায় অনূদিত হলো তখন থেকে। বিশেষভাবে ‘জাবালাভি’ খুবই সাফল্য লাভ করার পর। আমার প্রথম অনূদিত উপন্যাস ‘মিদাক অ্যালি’। সেটি প্রথম ছেপেছিলেন ‘খাইয়্যাত’ নামের এক লেবাননী প্রকাশক। আমি বা অনুবাদক কেউই এর থেকে টাকা পাইনি, প্রকাশক আমাদের ঠকিয়েছিলেন। ১৯৭০ সালে এটি আবার ছাপল হ্যানিমান। তারপর এটি আবার ফরাসি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
১৯৫২ সালে রাজনৈতিক পরিবেশ কী আপনার জীবনে কোন ভূমিকা রেখেছিল?
নাগিব মাহফুজ
১৯১৯ সালের বিপ্লব যখন ঘটে তখন আমার বয়স সাত। এই বিপ্লবের দ্বারা আমি খুব প্রভাবিত ও অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। আমি যাদের চিনতাম তাদের প্রত্যেকেই ছিল ওয়াফদ পার্টি এবং উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভের পক্ষে। আমি জগলুল পাশা সাদ-এর প্রত্যক্ষ অনুসারী হিসেবে রাজনীতিতে জড়িয়েছিলাম। আমি এখনও মনে করি, আমি আমার জীবনে যা কিছু করেছি, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে এই রাজনীতি-সংশ্লিষ্টতা। তবে আমি কখনও রাজনীতির সক্রিয় কর্মী ছিলাম না, বা কোনো রাজনৈতিক দলের বা আনুষ্ঠানিক কমিটির সদস্য ছিলাম না। তবে আমি ওয়াফদ পার্টির সমর্থক ছিলাম, আমি কখনো দলীয় সদস্য হিসেবে পরিচিত হতে চাইনি। একজন লেখক হিসেবে আমি পরিপূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করতে চেয়েছি, যা কখন কোন দলীয় সদস্যের থাকতে পারে না।
আপনাকে কী সেন্সরশিপ নিয়ে খুব ভুগতে হয়েছে? এজন্য আপনাকে কী আপনার কোনো পাণ্ডুলিপি পুনর্লিখন করতে হয়েছে?
নাগিব মাহফুজ
সম্প্রতি হয়নি, তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আল-ক্কাওরা আল-জাদিদা এবং রাদিবাসকে সেন্সর করা হয়েছিল। আমাকে বামপন্থী বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। সেন্সরকারীরা রাদিবাসকে উস্কানিকর বলে আখ্যায়িত করেছিল। কারণ এতে জনগণ রাজাকে হত্যা করে, আর আমাদের রাজা তখনও জীবিত। আমি তাদের ব্যাখ্যা করে বোঝালাম যে, এটা নিছকই একটা ঐতিহাসিক গল্প, কিন্তু তারা দাবি করল এটা একটা মিথ্যা ইতিহাস, রাজাকে লোকেরা হত্যা করেনি, তিনি মারা গিয়েছিলেন রহস্যজনক ঘটনায়।
আমরা জানি সেন্সরকারীরা আপনার দ্য চিলড্রেন অব গ্যাবেলাভির ব্যাপারেও তো আপত্তি তুলেছিল, বিষয়টি কী সত্য?
নাগিব মাহফুজ
হ্যাঁ তুলেছিল। এমনকি সেই সময় আমার উপর সব ধরনের শৈল্পিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। সাহিত্যিক সেন্সরশিপ কমিটির প্রধান আমাকে বলেছিলেন, কায়রোর প্রধান ইসলামি সংস্থা আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বিরোধে না জড়ানোর স্বার্থে আমি যেন মিশরে বই প্রকাশ না করি। বইটা বৈরুতে প্রকাশ পেলেও মিশরে প্রকাশের অনুমতি পায়নি।
চিলড্রেন অব গ্যাবেলাভি নিয়ে আপনার ইচ্ছা কী ছিল? আপনি কী এটাকে উস্কানিকর করে তুলতে চেয়েছিলেন?
নাগিব মাহফুজ
এই বইটাতে আমি দেখাতে চেয়েছি সমাজে বিজ্ঞানের একটা স্থান আছে। ঠিক একটা নতুন ধর্মের মতো। বলতে চেয়েছি বিজ্ঞান আবশ্যিকভাবে ধর্মীয় মূল্যবোধের বিরোধী নয়। আমি পাঠককে বোঝাতে চেয়েছি বিজ্ঞানকে প্রত্যাখ্যান করার অর্থ হলো সাধারণ মানুষকে ত্যাগ করা। দুর্ভাগ্যক্রমে এটাকে ভুল বোঝা হয়েছে, এর জন্যে দায়ী ওইসব লোক, যারা জানে না কিভাবে একটা গল্পকে পড়তে হয়। রূপককে আক্ষরিক অর্থে নেওয়া ঠিক নয়। অনেক পাঠকেরই বোধশক্তির যথেষ্ট অভাব রয়েছে।
সালমান রুশদীর ব্যাপারে আপনার চিন্তা-ভাবনা কী? আপনি কী মনে করেন একজন লেখকের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকা উচিৎ?
নাগিব মাহফুজ
আমি যা ভাবি তা হলো, প্রত্যেক সমাজের নিজস্ব ঐতিহ্য, আইন, ধর্মীয় বিশ্বাস আছে। যেগুলোকে তারা সংরক্ষণ করার চেষ্টা করে। কালে কালে ব্যক্তিবিশেষের পরিবর্তন দাবি করে। আমি বিশ্বাস করি সমাজের অধিকার আছে তার নিজস্বতাকে রক্ষা করার। ঠিক যেমন একজন ব্যক্তির অধিকার আছে যা সে পছন্দ করে না, তাকে পরিহার করার। একজন লেখক যদি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় তার সমাজের আইন বা বিশ্বাসগুলো আর উপযোগী নয় বরং ক্ষতিকর, তাহলে তার বিরুদ্ধে কথা বলা তার দায়িত্ব। কিন্তু তাকে তার এই স্পষ্টবাদিতার জন্য মূল্য দিতে প্রস্তুত থাকতে হবে। যদি সে এই মূল্য দিতে প্রস্তুত না থাকে, তাহলে তার জন্যে চুপ থাকাই বাঞ্ছনীয়।
আপনি কি ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ পড়েছেন?
নাগিব মাহফুজ
না। যখন এটা বের হয় তখন আমি ভালো পড়তে পারি না, আমার দৃষ্টিশক্তি খুবই খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছিল। তবে আমেরিকান কালচারাল অ্যাটাশে বইটার প্রত্যেকটা চ্যাপ্টার আমাকে ব্যাখ্যা করে বুঝানো হয়েছে। আমি দেখেছি- এতে যে মানহানি করা হয়েছে তা অগ্রহণযোগ্য। রুশদি এমনকি নবীর স্ত্রীদেরও অপমান করেছে! এখন কথা হলো, আমি আইডিয়া নিয়ে বিতর্ক করতে পারি, কিন্তু অপমানগুলোর কী করব? মানহানি আদালতের বিষয়। একই সঙ্গে আমি খোমেনির অবস্থানকেও সমান বিপজ্জনক বলে বিবেচনা করি। রায় দিয়ে দেওয়ার অধিকার তার নেই, এটা ইসলামি পদ্ধতি নয়। ইসলামি নীতি অনুযায়ী, যখন কোনো লোক ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়, তখন তাকে তওবা এবং শাস্তির মধ্যে কোন একটাকে বেছে নিতে বলা হয়। রুশদিকে সে সুযোগ দেওয়া হয়নি। আমি সবসময় রুশদির লেখার স্বাধীনতাকে সমর্থন করেছি এবং সে আইডিয়ার দিক থেকে কী চেয়েছে সেটা আমি বলেছি। কিন্তু এমন কোন কিছুর মানহানি করার অধিকার তার নেই, বিশেষ করে নবী বা সেই রকম কোন পবিত্র কিছুর।
আচ্ছা কুরআনে কী মানহানি বা ব্লাসফেমি নিয়ে আলোচনা আছে?
নাগিব মাহফুজ
অবশ্যই। শুধু কুরআন কেন, দুনিয়ার সকল সভ্য জাতিই ধর্মের মানহানি, নিন্দার বিরুদ্ধে আইন প্রণয়ন করেছে।
আপনি কী ছেলেবেলা ধার্মিক ছিলেন? প্রত্যেক শুক্রবার পিতার সঙ্গে মসজিদে যেতেন?
নাগিব মাহফুজ
যৌবনকালে আমি অনেক ধার্মিক ছিলাম। কিন্তু আমার পিতা জুমআর নামাজে যাওয়ার জন্যে আমার উপর চাপ দিতেন না, যদিও তিনি প্রত্যেক শুক্রবারই নামাজে যেতেন। পরে আমি প্রবলভাবে বিশ্বাস করতে শুরু করি যে, ধর্মকে উন্মুক্ত রাখা উচিত; বদ্ধ-মানসিকতার ধর্ম হচ্ছে একটা অভিশাপ। ধর্ম নিয়ে অতি বাড়াবাড়ি করা যায় তাদের সাথে যাদের জীবনের শেষ আশাটুকুও হারিয়ে গেছে। আমি ধর্মকে খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি, কিন্তু একই সঙ্গে সেটা বেশ বিপজ্জনক হয়ে ওঠার সম্ভাবনাও আছে। তুমি যদি জনগণকে আলোড়িত করতে চাও তাহলে একটা সংবেদনশীল জিনিস খুঁজবে। মিশরে ধর্ম ছাড়া অন্য কিছুতে মানুষ এত আলোড়িত হয় না। কৃষকদের কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে কী? ধর্ম। সে কারণে ধর্মকে খোলা মন নিয়ে ব্যাখ্যা করা উচিৎ। ধর্মের প্রেম এবং মানবিকতার বিষয়গুলোকে উচ্চকিত করা উচিৎ। ধর্ম প্রগতি ও সভ্যতার সঙ্গে সম্পর্কিত, কেবল আবেগ নয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজকাল ধর্মের পশ্চাদপদ ব্যাখ্যা করা হয় এবং সভ্যতার বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয়।
যেসব মেয়েরা তাদের মাথা, এমনকি মুখ এবং হাতও ঢেকে রাখে তাদের সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী? এটা কি ধর্মকে সভ্যতার বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর উদাহরণ?
নাগিব মাহফুজ
মাথা ঢাকা একটা স্টাইল ও ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। এটা এখন আর সে কথা বোঝায় না অধিকাংশ লোকজন যা মনে করে। তবে আমি ধর্মীয় উন্মাদনাকে ভয় করি। এটা একটা অনিষ্টকর প্রবণতা, মানবিকতার বিরোধী।
ইদানীং আপনি কি নামাজ পড়েন?
নাগিব মাহফুজ
কখনো কখনো পড়ি। বয়সের কারণে পেরে উঠছি না। তোমার এবং আমার মধ্যে, আমি ধর্মকে একটা আবশ্যকীয় মানবীয় আচরণ বলে গণ্য করি। এখন সবসময় নামাজ পড়া, রোজা রাখা, আর জায়নামাজে মাথা ছোঁয়ানোর চাইতে আরেকজন মানুষের কল্যাণ করা সুস্পষ্টরূপেই অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।
এখন আপনি ডিনার পার্টি ও সংবর্ধনা সভায় যেতে চান না, কিন্তু কেন?
নাগিব মাহফুজ
আমি কখনও এসব অনুষ্ঠানে যাই না। এমনকি আমার বন্ধুদের বাড়িতেও বেড়াতে যাই না। আমি তাদের সঙ্গে দেখা করি ক্যাসিনো কাসর আল-নীল অথবা কোন কফি হাউসে।
সেই কারণেই কি আপনি নোবেল প্রাইজ নিতে সুইডেনে যাননি? এতো এতো দেখা-সাক্ষাৎ, ডিনার, পার্টি, সে কারণে?
নাগিব মাহফুজ
না, ঠিক তা নয়। যৌবনকালে আমি ভ্রমণ খুব পছন্দ করতাম, কিন্তু এখন আর সে ইচ্ছা হয় না। এমনকি দুই সপ্তাহের ভ্রমণও আমার লাইফ স্টাইলকে বিঘ্নিত করে।
আপনাকে নিশ্চয়ই বহুবার জিজ্ঞেস করা হয়েছে নোবেল প্রাপ্তিতে আপনার প্রতিক্রিয়া কী? আপনি কি আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন যে পুরস্কার পাচ্ছেন?
নাগিব মাহফুজ
মোটেই না। আমার স্ত্রী মনে করতেন আমি এটা পাওয়ার যোগ্য, কিন্তু আমি সবসময় সন্দেহ করতাম যে নোবেল একটা পাশ্চাত্যীয় পুরস্কার; আমি মনে করতাম তারা কখনোই প্রাচ্যের কাউকে এটা দিতে চায় না। একটা গুঞ্জন ছিল যে আরব জগতের দুজন লেখক তালিকায় আছেন, ইউসুফ ইদরিস এবং অ্যাডোনিস।
আপনি কী জানতেন যে, আপনার নাম বিবেচনা করা হয়েছে?
নাগিব মাহফুজ
না, জানতাম না। সেদিন সকালে আমি আল-আহরাম-এ ছিলাম। আমি যদি আর আধ ঘণ্টা দেরি করতাম, তাহলে তৎক্ষণাৎ জেনে যেতাম। কিন্তু আমি বাড়ি গিয়ে লাঞ্চ করছিলাম। খবরটা আল-আহরাম-এ এসেছিল টেলিপ্রিন্টারে, তখন তারা আমার বাড়িতে টেলিফোন করে। আমার স্ত্রী আমাকে জাগিয়ে তুলে জানায় খবরটা, আমার মনে হয় সে আমার সঙ্গে কৌতুক করছে, আমি আবার ঘুমাতে যাচ্ছিলাম। তখন সে বলল যে, আল-আহরাম থেকে টেলিফোন এসেছে। আমি ফোন ধরতেই শুনলাম একজন বলছে, অভিনন্দন, জনাব! লোকটা মি. বাশা। উনি আমার সঙ্গে মাঝে-মধ্যে হাসি-তামাশা করে থাকেন, তাই তার কথায় আমি গুরুত্ব দিলাম না। আমি পাজামা পরা অবস্থায়ই লিভিংরুমে গিয়ে বসলাম। তখন কলিংবেল বেজে উঠল। কেউ একজন ভেতরে ঢুকল, আমার মনে হলো সে সাংবাদিক, কিন্তু না, দেখলাম তিনি সুইডিশ অ্যাম্বাসাডর! সুতরাং আমি দুঃখ প্রকাশ করে পোশাক পরিবর্তন করতে চাইলাম। এভাবেই ব্যাপারটা ঘটেছিল।
আপনার লেখার প্রসঙ্গে ফিরে আসি। আপনি কী নিয়মিত শিডিউল মেনে লেখেন?
নাগিব মাহফুজ
আমি সবসময় বাধ্য হই শিডিউল মেনে লিখতে। আটটা থেকে দুটো পর্যন্ত আমি কাজে থাকি। চারটা থেকে সাতটা পর্যন্ত লিখি। তারপর সাতটা থেকে দশটা পর্যন্ত পড়ি। শুক্রবার ব্যতীত এটা আমার নিয়মিত রুটিন। যা ইচ্ছা তাই করার সময় পাই না আমি। তবে আমি তিন বছর আগে লেখালেখি বন্ধ করে দিয়েছি।
আপনি আপনার গল্পের চরিত্র এবং আইডিয়াগুলোকে কিভাবে নিয়ে আসেন?
নাগিব মাহফুজ
আমাকে এভাবে বলতে দাও। তুমি যখন তোমার বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাও তখন কী নিয়ে কথা বলো? সেইসব জিনিস সেই দিন, সেই সপ্তাহে তোমর ওপর একটা দাগ ফেলে যায়। আমি গল্প লিখি এই একই পদ্ধতিতে। ঘটনা ঘটে বাড়িতে, স্কুলে, রাস্তায়, এগুলো হচ্ছে গল্পের ভিত্তি। কিছু কিছু অভিজ্ঞতা এমন গভীর দাগ কেটে যায় সেগুলো নিয়ে কথা বলার চেয়ে আমি উপন্যাসের মধ্যে নিয়ে কাজ করি। ধরো, উদাহরণস্বরূপ, একজন অপরাধী সম্প্রতি তিনজন লোককে খুন করেছে। এই মূল গল্প থেকে শুরু করে এটাকে কিভাবে লিখব, তার কয়েকটা উপায় নির্ধারণ করি। উদাহরণস্বরূপ, আমি পছন্দ করব গল্পটা কার পরিপ্রেক্ষিত থেকে লিখব, স্বামী, স্ত্রী, চাকর, নাকি খুনির? পছন্দের এই হের-ফেরের কারণে একেকটা গল্প আলাদা হয়ে যায়।
যখন আপনি লিখতে শুরু করেন তখন শব্দগুলো কি আপনাআপনি চলে আসে, নাকি প্রথমে নোট তৈরি করেন? আপনি মনের মধ্যে নির্দিষ্ট থিম ঠিক করে কী লিখতে বসেন?
নাগিব মাহফুজ
আমার ছোটগল্পগুলো আসে সরাসরি হৃদয় থেকে। অন্য রচনার ক্ষেত্রে আমি প্রথমে গবেষণা করি। ‘দ্য কায়রো ট্রিলজি’ শুরু করার আগে, উদাহরণস্বরূপ, আমি বিস্তারিত গবেষণা করেছিলাম। প্রত্যেকটা চরিত্র সম্পর্কে আমি আলাদা ফাইল তৈরি করেছিলাম। সেটা যদি না করতাম, তাহলে খেই হারিয়ে ফেলতাম, অনেক কিছু ভুলে যেতাম। কখন কখন থিম আসে আপনাআপনি, গল্পের ঘটনাবলীর মধ্যে দিয়ে, আর কখন কখন শুরু করার আগে থেকেই মনের মধ্যে থিম ঠিক করা থাকে। আমার যদি আগে থেকেই জানা থাকে আমি এমন একজন মানুষের ছবি আঁকতে চাই, যে সকল বিপদাপদ অতিক্রম করে বিজয়ী হতে চায়, তাহলে আমি সেই রকম ক্ষমতাসম্পন্ন নায়ক তৈরি করি। তবে আমি একটা চরিত্রের আচরণের দীর্ঘ বর্ণনা দেওয়ার মাধ্যমেও গল্প লিখি, সেক্ষেত্রে থিম আপনাআপনি বেরিয়ে আসে।
আপনি একটা গল্পকে চূড়ান্ত করার আগে কী রকম সংশোধন ও পুনর্লিখন করেন?
নাগিব মাহফুজ
আমি ঘন ঘন সংশোধন করি, অনেক অংশ কেটে ফেলি, গোটা পৃষ্ঠা জুড়ে লিখি, এমনকি পেছনেও। প্রায়ই আমার সংশোধনী হয় মোটা দাগের। সংশোধনীর পর আমি গল্পটা পুনরায় লিখি এবং তারপর প্রকাশকের কাছে পাঠাই। তখন আমি পুরনো সব কাগজ-পত্র ছিঁড়ে ফেলে দিই।
আপনি আপনার নোটগুলো কখনই সংরক্ষণ করেন না? অনেক লেখক তাদের লেখার প্রত্যেকটা শব্দ সংরক্ষণ করেন! আপনি কি মনে করেন না একজন লেখকের সংশোধনী পর্যবেক্ষণ করার মধ্য দিয়ে তার লেখার পদ্ধতি পাঠ করা আগ্রহের ব্যাপার?
নাগিব মাহফুজ
হতে পারে, তবে ব্যাপারটা স্রেফ এই যে, নোট সংরক্ষণ করা আমার সংস্কৃতির অংশ নয়। আমি কখনও শুনিনি যে, কোন লেখক তার লেখার প্রাথমিক খসড়া সংরক্ষণ করেন। আমাকে সংশোধনীগুলো বাতিল করতে হয়, তা না হলে আমার বাড়ি অপ্রয়োজনীয় কাগজে ভেসে যাবে! তাছাড়া, আমার হাতের লেখা ভয়ানক রকম খারাপ!
আমারা জানি ছোটগল্প ও উপন্যাস কোনটাই আরবি সাহিত্যের উত্তরাধিকারের অংশ নয়। তা সত্ত্বেও এ দু’টি নিয়ে আপনার যে সাফল্য, এটা আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা করেন বা দেখছেন?
নাগিব মাহফুজ
ঠিক আছে আমরা আরব লেখকরা ছোটগল্প এবং উপন্যাসের ধারণা পশ্চিম থেকে ধার করেছি, কিন্তু এতদিনে সেটা আমাদের নিজেদের সাহিত্যে আত্মীকৃত হয়ে গেছে। চল্লিশ এবং পঞ্চাশের দশকে অনেক অনুবাদ হয়েছে ; আমরা স্রেফ গল্প লেখার পদ্ধতি এবং স্টাইলটা গ্রহণ করেছি।
এখন আমরা আপনার রচনার নির্দিষ্ট উদাহরণ নিয়ে কথা বলি- ‘দ্য থিফ অ্যান্ড দ্য ডগস’। এটা কিভাবে শুরু হয়েছিল?
নাগিব মাহফুজ
এই গল্পটার অনুপ্রেরণা একজন চোর। যে কিছুদিনের জন্য কায়রোকে সন্ত্রস্ত করে তুলেছিল। তার নাম মাহমুদ সুলাইমান। জেল থেকে বেরিয়ে সে তার স্ত্রী এবং আইনজীবীকে খুন করার চেষ্টা করে। তারা অক্ষতভাবে পালিয়ে যায়, কিন্তু ঘটনার ফেরে সে নিজেই নিহত হয়।
উপন্যাসে যেমনটি আছে! বাস্তবেও কী তার স্ত্রী তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল?
নাগিব মাহফুজ
আসলে বিষয়টি ঠিক এমন না। আমি এই চরিত্রকে সামনে রেখে কাহিনীটি বানিয়েছি। সে সময় আমি একটা অবিরাম এবং অদ্ভুত অনুভূতিতে ভুগছিলাম যে, আমাকে তাড়া করা হচ্ছে। এই বিশ্বাস জন্মেছিল যে, সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমাদের জীবন অর্থহীন হয়ে পড়েছে। তাই আমি যখন এই চোরের কাহিনী লিখলাম, তখন আমি এর সঙ্গে আমার গল্পও জুড়ে দিলাম। একটা সরল অপরাধ-কাহিনী কালের দার্শনিক অনুধ্যান হয়ে উঠল! প্রধান চরিত্র সাইয়িদ মাহরানকে আমি আমার সকল সন্দেহ ও জটিলতার অংশ করেছি। আমি তাকে শেখ, পতিতা, অর্থ ও খ্যাতির জন্যে বিশ্বাসঘাতকতাকারী আদর্শবাদীর মধ্যে উত্তর খোঁজার অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে চালিয়েছি।
গল্পটায় ধর্মের ভূমিকা কী? শেখ যেমন পরামর্শ দিচ্ছেন, খোদায় বিশ্বাস স্থাপনই কী সত্যিকার সুখ লাভের উপায়? অপরাধী যার সন্ধান করছে সুফিবাদের মধ্যেই কী তার উত্তর নিহিত?
নাগিব মাহফুজ
আমরা জানি শেখ জীবনকে প্রত্যাখ্যান করছেন। অন্যদিকে অপরাধী চাচ্ছে তার তাৎক্ষণিক সমস্যার সমাধান। তারা পৃথক দুই জগতের বাসিন্দা। আমি সুফিবাদকে ভালোবাসি, ঠিক ততটাই ভালোবাসি সুন্দর কবিতা, কিন্তু এটা কাঙ্ক্ষিত উত্তর নয়। সুফিবাদ হচ্ছে মরুভূমির মরীচিকার মতো। এটা তোমাকে বলছে আসো, বসো, আরাম করো এবং ক্ষণিকের জন্যে উপভোগ করো। জীবনকে প্রত্যাখ্যানকারী যেকোনো পথকে আমি প্রত্যাখ্যান করি, কিন্তু আমি সুফিবাদকে পছন্দ না করে পারি না।
ট্রিলজির আব্দুল গাওয়াদ সমকালের আদর্শ মিশরীয় পুরুষের প্রতিরূপ। এখনও কী তার মত মানুষই অধিক?
নাগিব মাহফুজ
হ্যাঁ। বিশেষ করে গ্রাম এলাকায়। যদিও আজকের আব্দুল গাওয়াদ সম্ভবত অপেক্ষাকৃত কম চরমপন্থী। প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই কি তার ছায়া নেই?
প্রত্যেক মিশরীয় লোক, নাকি প্রত্যেক লোকের কথা বলছেন আপনি?
নাগিব মাহফুজ
আমি অন্য দেশের কথা বলতে পারি না, তবে এটা মিশরীয়দের ক্ষেত্রে খুবই সত্য।
সংসারে কার প্রাধান্য থাকা উচিৎ বলে আপনি মনে করেন? কার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকা উচিৎ?
নাগিব মাহফুজ
বিয়ে হচ্ছে সমান অংশীদারিত্বের একটা কোম্পানির মত। কোন একজন শাসন করবে না। যদি মতান্তর হয় তাহলে দু’জনের মধ্যে যে অধিকতর বুদ্ধিমান সে প্রাধান্য বিস্তার করবে। তবে প্রত্যেকটা পরিবার আলাদা। ক্ষমতা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অর্থের ওপর নির্ভরশীল; যে সবচেয়ে বেশি অর্থ উপার্জন করে সেই বেশি ক্ষমতাবান হয়। কোন ধরা-বাঁধা নিয়ম নেই।
মিশরের মতো অতি রক্ষণশীল, ঐতিহ্যবাহী সমাজে পুরুষের উপর নারী কী প্রায়ই ক্ষমতাশীল হয় না?
নাগিব মাহফুজ
হ্যাঁ অবশ্যই। সাম্প্রতিক ইতিহাস তারই প্রমাণ দেয়। গণনাযোগ্য রাজনৈতিক বা সামরিক ক্ষমতার অধিকারী পুরুষরা শক্ত নারীদের কব্জায় পড়ে, তারাই তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব বিস্তার করে। এই নারীরা পর্দা ও বোরখার পেছন থেকে শাসন করে।
আপনার গল্প-উপন্যাসের নায়িকাদের অধিকাংশই কেন নীচু শ্রেণীর নারী? আপনি কী তাদের দিয়ে কোন বড় কিছুকে প্রতিবিম্বিত করতে চান? যেমন মিশর, উদাহরণ হিসেবে?
নাগিব মাহফুজ
না। নীচু শ্রেণীর নারীদের সম্পর্কে লিখে আমি স্রেফ এটাই দেখাতে চাই, এইসব উপন্যাস যে কালের পটভূমিতে লেখা সে সময় নারীদের কোন অধিকার ছিল না। একজন মহিলা যদি ভালো স্বামী খুঁজতে না পারে বা খারাপ স্বামীকে ত্যাগ করতে না পারে, তাহলে তার কোনো ভবিষ্যত থাকে না। কখন কখন তার একমাত্র গন্তব্য হচ্ছে, দুর্ভাগ্যক্রমে, অবৈধ পন্থা। এই নিকট অতীতেও নারীরা প্রচুর অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। এমনকি বিয়েতে পছন্দের স্বাধীনতা, তালাক, এবং শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকার থেকেও। এখন মেয়েরা শিক্ষা লাভ করছে, অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে, কারণ যে মেয়ে শিক্ষা লাভ করছে সে একটা অস্ত্র পাচ্ছে।
কোন বিষয় আপনার হৃদয়ের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ? কোন বিষয় নিয়ে লিখতে আপনি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন?
নাগিব মাহফুজ
স্বাধীনতা। উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা, রাজার অবিসংবাদী শাসন থেকে মুক্তি, এবং সমাজ ও পরিবারের প্রেক্ষাপটে মৌলিক মানবিক স্বাধীনতা। এই ধরনের স্বাধীনতা একটা আরেকটার অনুবর্তী হয়।
আপনি কি মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যত সম্পর্কে আশাবাদী, বিশেষ করে উপসাগরীয় যুদ্ধ এবং অব্যাহত সহিংসতার পেক্ষাপটে?
নাগিব মাহফুজ
আমার এই বয়সে নৈরাশ্যবাদী হওয়া চলে না। যৌবনে এ কথা ঘোষণা করা যায় যে মানুষের সামনে কোনো আশা নেই, কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে মানুষ পৃথিবীকে ঘৃণা না করার জন্য জনগণকে সাহস জোগাতে শেখে।
নায়ক সম্পর্কে আপনার ধারণা কী? আপনার গল্পে এবং সমকালীন কোন মিশরীয় লেখকের গল্পেই নায়কের অস্তিত্ব দেখা যায় না। কেন?
নাগিব মাহফুজ
এটা সত্যি যে আমার অধিকাংশ গল্পে নায়ক নেই কেবল চরিত্র আছে। কেন? কারণ আমি আমাদের সমাজকে সমালোচকের দৃষ্টিতে দেখি এবং যেসব লোককে দেখি তাদের মধ্যে অসাধারণ কিছু লক্ষ করি না। আমার আগের প্রজন্ম ১৯১৯ সালের অভ্যুত্থান দ্বারা প্রভাবিত ছিল। তারা নায়কোচিত আচরণ প্রত্যক্ষ করেছে অস্বাভাবিক বাধা অতিক্রম করতে সক্ষম কর্মী, সেই রকম নায়ক। অন্য লেখকরা তওফিক আল-হাকিম, মুহাম্মাদ হুসাইন হায়কল, ইবরাহীম আবদ আল-ক্কাদির আল-মাজিনি—নায়কোচিত লেখা লিখেছেন। কিন্তু সামগ্রিকভাবে, আমাদের প্রজন্ম খুব উদাসীন এবং নায়ক একটা দুর্লভ জিনিস; এই কালে ফ্যান্টাসি না হলে কোন উপন্যাসে তুমি নায়ক সৃষ্টি করতে পারো না।
আপনি নায়ককে কিভাবে চিত্রায়িত করবেন?
নাগিব মাহফুজ
প্রাচীন আরবি সাহিত্যে অনেক নায়ক আছে, তারা সবাই অশ্বারোহী, উপাধিধারী সম্ভ্রান্ত যোদ্ধা। কিন্তু বর্তমানে আমার দৃষ্টিতে একজন নায়ক হবে সে, যে একটি বিশেষ নীতিমালার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ এবং বাধার মুখেও তার উপর অটল থাকবে। সে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবে এবং তার একটা শক্তিশালী নৈতিক ভিত্তি থাকবে।
আপনি কী আপনার সন্তান এবং জনগণের জন্য সেই রকম একজন নায়ক নন, যিনি বিরোধিতার মুখেও নিজ নীতিমালার উপর অটল থেকেছেন?
নাগিব মাহফুজ
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। তবে আমি নিজেকে নায়ক বলে মনে করি না।
আপনি তাহলে নিজেকে কিভাবে চিত্রিত করবেন?
নাগিব মাহফুজ
আমি এমন একজন মানুষ যে সাহিত্য ভালোবাসে। যে কাজে বিশ্বাসী এবং কাজের ব্যাপারে আন্তরিক। এমন একজন মানুষ যে কাজকে অর্থ এবং খ্যাতির চেয়েও বেশি ভালোবাসে। অবশ্য অর্থ এবং খ্যাতি যদি আসে, স্বাগত! কিন্তু সেটা কখনই আমার লক্ষ্য হয়নি। কেন? কারণ আমি যেকোন কিছুর চাইতে লেখাকে বেশি ভালোবাসি। এটা খারাপ শোনাতে পারে, কিন্তু আমি অনুভব করি যে, সাহিত্য ছাড়া আমার জীবনের কোন অর্থ থাকবে না। আমার ভালো বন্ধু, ভ্রমণ, বিলাসিতা, সবই থাকতে পারে, কিন্তু সাহিত্য ছাড়া আমার জীবন করুণ হয়ে উঠবে।

https://mexicopharmacy.store/# medicine in mexico pharmacies
order drugs online: legal drugs buy online – discount prescriptions
medicine in mexico pharmacies: reputable mexican pharmacies online – medicine in mexico pharmacies
https://canadiandrugs.store/# canada rx pharmacy world
canadian overnight pharmacy: buy prescription drugs online without doctor – trust online pharmacy
mexican border pharmacies shipping to usa п»їbest mexican online pharmacies mexico drug stores pharmacies
northwestpharmacy: online pharmacy no prescription – canadian pharmacy antiobotics without prescription
http://canadiandrugs.store/# my canadian pharmacy
Hello there! Do you know if they make any plugins to help with SEO? I’m trying to get my blog to rank for some targeted keywords but I’m not seeing very good gains. If you know of any please share. Kudos!
canadian pharmacy world: Mail order pharmacy – canadian drugs
http://paxlovid.club/# Paxlovid buy online
Way cool! Some very valid points! I appreciate you writing this post and the rest of the site is extremely good.
ventolin uk pharmacy: Ventolin inhaler best price – buy cheap ventolin
https://clomid.club/# where can i buy cheap clomid without insurance
neurontin singapore: buy gabapentin – neurontin 800 mg tablets
https://wellbutrin.rest/# wellbutrin sr
order wellbutrin online: Wellbutrin online with insurance – wellbutrin buy online
paxlovid for sale http://paxlovid.club/# paxlovid covid
https://wellbutrin.rest/# wellbutrin online no prescription
neurontin 300 mg cap: buy gabapentin online – generic neurontin 300 mg
http://gabapentin.life/# 32 neurontin
gabapentin online: generic gabapentin – neurontin 3
http://claritin.icu/# ventolin 8g
ventolin generic price: Ventolin inhaler – buy ventolin over the counter
https://gabapentin.life/# neurontin 300 mg buy
farmacia online senza ricetta: kamagra gel – acquisto farmaci con ricetta
acquisto farmaci con ricetta kamagra oral jelly farmacie online autorizzate elenco
farmacia online più conveniente: Avanafil farmaco – comprare farmaci online con ricetta
https://tadalafilit.store/# farmacie online autorizzate elenco
acquisto farmaci con ricetta: acquisto farmaci con ricetta – acquistare farmaci senza ricetta
farmacie on line spedizione gratuita: kamagra gel – farmacia online piГ№ conveniente
After checking out a number of the blog articles on your site, I really like your way of blogging. I saved it to my bookmark site list and will be checking back soon. Please check out my web site as well and let me know what you think.
comprare farmaci online all’estero: kamagra oral jelly consegna 24 ore – farmacie on line spedizione gratuita
farmacia online migliore kamagra farmacia online miglior prezzo
top farmacia online: avanafil generico – farmacia online senza ricetta
siti sicuri per comprare viagra online: viagra online siti sicuri – viagra online in 2 giorni
top farmacia online: avanafil prezzo – farmacia online migliore
https://tadalafilit.store/# farmacia online piГ№ conveniente
comprare farmaci online con ricetta: kamagra – farmacie online sicure
comprare farmaci online con ricetta: farmacia online più conveniente – farmacia online senza ricetta
top farmacia online: farmacia online più conveniente – farmacie on line spedizione gratuita
п»їfarmacia online migliore avanafil prezzo in farmacia comprare farmaci online all’estero
farmacia online migliore: cialis generico – comprare farmaci online con ricetta
We are a group of volunteers and starting a new scheme in our community. Your web site provided us with valuable information to work on. You have done an impressive job and our whole community will be grateful to you.
farmacia online miglior prezzo: kamagra – farmacia online migliore
comprare farmaci online all’estero: farmacia online spedizione gratuita – top farmacia online
https://tadalafilit.store/# farmaci senza ricetta elenco
farmacia online senza ricetta: kamagra gel – acquistare farmaci senza ricetta
farmacie online affidabili: farmacia online – farmacie on line spedizione gratuita
comprare farmaci online con ricetta: avanafil – farmacia online più conveniente
migliori farmacie online 2023 Farmacie a roma che vendono cialis senza ricetta farmacie online autorizzate elenco
farmacia online miglior prezzo: Farmacie che vendono Cialis senza ricetta – farmacie online affidabili
viagra online spedizione gratuita: sildenafil prezzo – pillole per erezione immediata