
মুহম্মদ নূরুল হুদা ঐতিহ্যে প্রত্যাবর্তন

মজিদ মাহমুদ

মুহম্মদ নূরুল হুদার কবিতা আদিম পৃথিবীর গল্প; সেই গল্প শোনাতে শোনাতে তাঁর কবিতা আজকের মানুষ পর্যন্ত প্রলম্বিত হয়ে পড়ে; যে মানুষ আগামী দিনে হয়ে যাবে প্রাচীন; তাই তাঁর কবিতায় খ্যাতনামা পুরাণের ব্যবহার এবং সাম্প্রতিক বিষয়কে পুরাণ করে তোলার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। মুহম্মদ নূরুল হুদার কাব্যমানসের বৈশিষ্ট্য অন্যত্র- সমকালীন কাব্যসতীর্থ থেকে পৃথক।
আধুনিক কবির রোমান্টিক গীতিধর্মিতার চেয়ে মহাকবির ক্লাসিক স্থৈর্য্য তাঁর মানস-গঠনে বিশিষ্টতা দিয়েছে। তাই প্রতিটি গ্রন্থের জন্য একটি পৃথক এবং সামগ্রিক চেতনা ধারণে তিনি তৎপর। একটা কাব্যগ্রন্থের জন্য সামগ্রিক চেতনা রূপায়ণ আধুনিক বাংলাকাব্য পরিত্যাগ করেছিল- হুদা তা পুনর্বিবেচনা করেছেন।
মুহম্মদ নূরুল হুদার কবিতায় মৌল প্রবণতা তাঁর ইতিহাসচেতনা; মহাকালের ইশারা থেকে উৎসারিত যে সময়চেতনা, সেই সময়ের মধ্যে সংস্থাপিত মানুষের জৈবিক অস্তিত্ব এবং পরিণতি লিপিবদ্ধ করা।
মুহম্মদ নূরুল হুদা যে কারণে আলাদা সেটি হলো, এই জনপদের আদিম রূপটি কবিতার সাহায্যে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। সেই জনপদের ভয়াল শ্বাপদ রূপের পাশাপাশি সম্ভাবনাও তিনি আবিস্কার করেছেন। চিত্রে যে দিকটি আবিস্কার করেছিলেন এস এম সুলতান, হুদা কবিতায় সেই কাজটি করেছেন।
সুলতানের চিত্রকলায় আমরা পাই, কৃষি নির্ভর সমাজের পেশিবহুল মানুষ এবং সেই মানুষের সংগ্রামশীলতা। অবশেষে একটি Pantisocracy’ও ধারণা আবিস্কার করা যেতে পারে। সেইসঙ্গে আধুনিক মানুষের বিবিক্তি, ক্লান্তি, সংশয়, বিতৃষ্ণা ও নৈরাশ্যিক নেতিবাচকতা পরিহার করে নূরুল হুদা একটি ইতিবাচ্য নির্মাণে সক্রিয় হয়েছেন।
তাঁর কবিতায় পড়ুয়ার পাঠ অভিজ্ঞতাকে মাঝে মাঝে অতিক্রম করে যেতে চায়। নূরুল হুদা বৈচিত্র্যপিয়াসী, তাঁর একটি গ্রন্থ থেকে আরেকটি গ্রন্থ দৃষ্টিগ্রাহ্যভাবে আলাদা হয়ে গেছে; যদিও পরিণামে একই লক্ষ্যে তাঁর অভিযাত্রা। হুদার কাব্যগ্রন্থে নাম বিবেচনায় সে সত্য ধরা পড়ে ‘শোভাযাত্রা দ্রাবিড়ার প্রতি’, ‘অগ্নিময়ী হে মৃন্ময়ী’, ‘আমার তামাটে জাতি’, ‘শুক্লা শকুন্তলা’; তবে কবির ক্ষেত্রে কোনো বিবেচনা চূড়ান্ত নয়। মানব মনের বিচিত্রমুখী চেতনার যতটুকু সে ধারণা করতে চায়। একই দর্শনে স্থিতি থাকা কবির ধর্ম নয়।
তার কবিতায় আদিম বাঙালিয়ানা লক্ষ্য করা গেলেও এর জন্য তাঁর হাহাকার নেই। তাঁর কাছে বর্তমানের মূল্য সর্বাধিক, কারণ তাঁর মধ্যে রয়েছে ভবিষ্যৎ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি। হুদার কাছে অতীতের যে মূল্য তা ইতিহাসের দ্বান্দ্বিকতার পর্যায় বোঝায় ‘কামুদ হার্মাদ এসে ঘাড়ে তার ফেলে যায় সজোর নিঃশ্বাস’। তিনি মানুষের ক্রম উন্নতির সম্ভাবনায় আস্থাশীল। কবিকে হতে হবে বর্তমানের প্রতি দায়িত্ববান, ভবিষ্যতের দ্রষ্টা।
১৯৭২ সালে মুহম্মদ নূরুল হুদার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘শোণিতে সমুদ্রপাত’ প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থে কবির উৎকর্ষ এবং পরিণতিবোধের স্বাক্ষর রয়েছে:
দূরে যাচ্ছো, বৃষ্টিপাত থেকে দূরে যাচ্ছে রিমঝিম পায়
বাজিয়ে শঙ্খের চুড়ি, হাওয়ায় এলিয়ে দিয়ে কালো কেশদাম
ঘুর্ণি নৃত্যে মেতে দূরে যাচ্ছো, দূরে যাচ্ছো তুমিও উর্বশী।
এ গ্রন্থে কবির মধ্যে কিছু প্রস্তাবনা লক্ষ্য করা যায়। প্রেম-বিরহ নস্টালজিয়া থাকলেও কবি তাতে কাতর নন, কবি তাঁর অতীতকে ফিরে আসতে আহবান জানান; তারপর অতীত আর বর্তমানের তফাত মহাকাল চেতনার মধ্যে একাকার করে ফেলেন :
‘যেখানেই হাত রাখি তোমার শরীর’ সুতরাং ‘সুতনুকা, আজ থেকে তোমাকে বিশাল বিদায়।’ এ গ্রন্থে কবি কোনো সংকীর্ণ প্রত্যাশা দ্বারা আক্রান্ত নন। কবির দুঃখ বিশাল চেতনা বিশাল; ‘যেন বৃদ্ধ সফোক্লিস/গ্রীসীয় খাড়ির মতো ক্লান্ত, ভারি পাপড়ি জড়িয়ে অ্যাজিয়ান তীরে এসে দাঁড়ালো হঠাৎ।’ সমকালীন দুঃখ এবং প্রতারণা কবি এ গ্রন্থেও শব্দায়িত করেছেন, কিন্তু সংকীর্ণ শব্দবন্ধ তিনি পরিত্যাগ করে ঐতিহ্যের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েছেন।
ম্যাকবেথের মতো তিনিও জানেন, Now, o’er the one halfword, Nature seems dead and wricked dreams abuse/ now witchcraft celebrates/pale hecate’s offerings; তবু ‘ডানকানের মুখের মতো চেতনায় ভাসে সেই মুখ’, কিন্তু মানুষের আত্মঘাতী লোভের কাছে ‘ঝলোমেলো গাছপালা ছায়াভস্ম হয়’।
জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে, মানুষের পদচ্ছাপ আজ চন্দ্রপৃষ্ঠ ধারণা করে, কিন্তু আত্মার কি কোনো মুক্তি ঘটেছে? বিশ্বের বয়সী সে আত্মাকে কবি করেছেন লালন। ফসটাস যেমন শয়তানের কাছে আত্মা বিক্রি করেছিল, সেই শয়তান জ্ঞানেরই সমার্থক। আধুনিক মানুষকে ফসটাসের মতো সম যাতনা বয়ে নিয়ে চলতে হচ্ছে। কবির বাণী তাই :
জ্ঞানলোভী পাপাত্মারা, তোমাদের থিওলজি প্রসারিত হবে বহুদূর
সঠিক জানবে প্রায় লোকাতীত পৃথিবীর সম্ভাব্য খবর,
নিটোল সঠিক বার্তা সে জগতের, তবু জানি, জানবে এটিই
ফসটাস এখন নরকে।
হতাশা যে হুদার মধ্যে নেই তা নয়, কিন্তু একে পরাজয়ের ভাষা না বলে satire-এর ভাষা বলা ভালো। যেমন তাঁর শামুক কবিতাটি। এই কবিতায় কবি শামুকের মতো নিজেকে গুটিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন, যদিও ‘গহন সুখে জ্বলবে জ্বালুক আলো’।বিষ্ণুদে’র কবিতাটি অবশ্য এর বিপরীতার্থক :
হে নিঃসঙ্গ শামুক। তোমাদের কুটিল মন
কথা শোনো, কারো ঘরকে বাহির, আপন পর,
হৃদয়কে কারো আকাশের নীলে উন্মীলন।
নূরুল হুদার ফসটাস যে নরকে জ্বলছে তা থেকে মুক্তি কোথায়? ‘জ্ঞানের বিপুল বিশ্বে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠালোভীরা’ তবু :
সময় স্তম্ভের মতো আলোর শরীর নিয়ে
সমুদ্র সঙ্গমে তার আজো অধিবাস
অঙ্গজুড়ে সবুজ আসর
পাখির উড়াল আঁকা ডালপালা
বাতাসের সহগামী করে
তবুও শিকড় তার গভীর গিরির উচ্চে
জালের বিথার।’
(সিজানের গাছ)
নূরুল হুদার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ, ‘আমার সশস্ত্র শব্দবাহিনী’ (১৯৭৫) আমাকে ভাবিয়েছে বেশ। প্রচলিত কাব্যপাঠের অভ্যাসকে ব্যাহত করেছে, eye rhyme-এর আধিক্য ঘটেছে, nonce word এবং nonsense word সন্নিবেশিত হয়েছে। কবিতার অবয়বের দিকে দিয়েও পূর্ববর্তী গ্রন্থের কবিতা থেকে পৃথক হয়ে গেছে।
কোনো পড়ুয়া যদি প্রথমেই তাঁর এই গ্রন্থটি পাঠ করেন, তাহলে ঠিক কবিকে আবিস্কার করতে পারবেন না। কেননা, এই কাব্যের অনেক কবিতাই প্রাথমিক পাঠে মনে হয় নিতান্তই সহজ সরল। এই গ্রন্থ থেকে কয়েকটি কবিতা উদ্ধার করা যাক :
০১.
পেলুম টাকা একটি টাকা টাটকা পেলুম
বুকে রাখলুম মুখে ঢাকলুম হাতে রইল ফাঁকা
পেলুম টাকা একটি টাকা হাটকা পেলুম
কেমন টাকা? আরশি টাকা, হাজার মুখ আঁকা
কাহার আরশি? রাজার আরশি, বাজার দরে হাঁকা।
(আরশি টাকা)
০২.
হৈ হৈ হৈ হৈ হৈ
গ্রহ থেকে উপগ্রহ গলগ্রহ মই,
হৈ হৈ হৈ হৈ হৈ
ল্যাঙ মারে তৈমুরের ক্র্যাচ গেল কই
হৈ হৈ হৈ হৈ হৈ
রসাতলে রাজনীতি প্রজানীতি ঐ
হৈ হৈ হৈ হৈ হৈ
(নগর রাখালের উক্তি)
০৩.
মা ভালো, বাবা ভালো
ভালো যে গৃহিণী
যেহেতু অসুস্থ আমি
ওলো স্বৈরিণী
(তার বার্তা: স্বৈরিণীকে)
উপর্যুক্ত কবিতার উদ্ধৃতির কারণ, অনেকেই এইগুলির উল্লেখ করে বলতে চেয়েছেন, মুহম্মদ নূরুল হুদার কবিতা অগভীর এবং ননসেন্স ভার্সে পরিপূর্ণ। আমি তাঁদেরকে অনুরোধ করব, কবিতাগুলোকে যেন রচনাকালের সঙ্গে মিলিয়ে পড়া হয়। তাহলে কি এই কবিতা তাঁর সময়কে অতিক্রম করতে পারেনি?
হুদার কবিতার মৌল প্রবণতা ঐতিহ্য অনুসরণ, অথচ এই গ্রন্থে তিনি সমকালীন অবস্থাকে কাব্য করে তুলেছেন, কিন্তু লক্ষ্য করার বিষয় এই কবিতাগুলিতে কোনো আন্দোলন নেই, নেই বিবৃতিদানের আধিক্য। হুদার প্রকাশভঙ্গি ভিন্ন। ঠিক চর্যাপদকর্তাদের মতো, হেয়াঁলি এবং সান্ধ্য ভাষা আক্রান্ত বোধকরি এর কারণ রাজনৈতিক।
আমার বিশ্বাস এই কবিতাগুলোর কায়িক মূল্য কখনো হ্রাস পাবে না। মুহম্মদ নূরুল হুদার এ গ্রন্থেও আদিম মানুষের সংগ্রামশীলতা প্রেম রিরংসা বিধৃত হয়েছে। সেই খৃষ্টপূর্ব ৪৫০৭ সালের মানুষের খাদ্যান্বেষণের গল্পও তৈরি করেছে তিনি :
নেকড়েটা এসো হত্যা করি
ঝলসে খাই কলজেটা তার
হাড় মাংস ইসস্তত: ফেলে রাখতে পারো
রক্তে বসাতে পারো গভীর চুমুক
এখানে আসে না যেন তৃতীয় অমুক।
(খাদ্যান্বেষণ, খৃষ্টপূর্ব ৪৫০৭)
জীবনের তুমুল আলোড়ন, কোলাহল, ইতিহাস আর ভূগোলের অবস্থান নিয়ে হুদার তৃতীয় কার্বগ্রন্থ ‘শোভাযাত্রা দ্রাবিড়ার প্রতি’ (১৯৭৫)। এ গ্রন্থের নামের মধ্যেই বিবেচ্য বিষয় সংকলিত হয়ে আছে। এ আলোচনার শুরুতেই বলেছিলাম, ইতিহাসের কালচেতনার মধ্যে হুদার অভিযাত্রা, রোমান্টিক মানসিকতার চেয়ে ক্লাসিক কাঠামোর দিকে তাঁর পক্ষপাতিত্ব; যে বিষয় এবং দার্শনিক বিষয়াদি তিনি রূপ দিতে তৎপর এ গ্রন্থে তার বিকাশ ঘটেছে।
এ গ্রন্থে মুহম্মদ নূরুল হুদা যে দ্রাবিড়ার প্রতি নিবেদিত সে ‘মিথুনের শেষ নামে শাড়িহীনা, বিব্রস্ত্রা, আদিমা।’ তাঁর নায়িকারা রক্ত মাংসের নারী, মাতৃতান্ত্রিক কৃষিপ্রধান সমাজের নারী যারা শস্যবীজ রোপন করেছে, ধারণ করেছে মানব জীবাণু। ‘তোমার গ্রীবার ভাঁজে কুসমিত ঘাম/শীত গ্রীষ্মে-অমায়-খরায়/কাম হয়ে নেমে যায় বুকের ঢালুতে।’
তোমার কাহিনী জানি আমি
তুমি জানো আমাদের বংশের কাহিনী
শক-হুন, অর্থ কি দ্রাবিড়
কে কোথায় কোন পাড়ে সুখে দুঃখে বেঁধেছিল নীড়
সবুজ চরের মতো প্রণয়িনী আঁচালের কাছে
সমর্পিত কে সেই যুবক
(গৃহমুখী)
এ গ্রন্থে উল্লেখযোগ্য কবিতা, ‘শোভাযাত্রা দ্রাবিড়ার প্রতি’, এর তুল্য কবিতা আল মাহমুদের ‘সোনালী কাবিন’ সনেটগুচ্ছ, এ তুলনা অবয়ব কিংবা বিষয়ে নয়, কেবল এক জাতীয় কবিতার প্রকৃষ্ট বন্ধন বিবেচনায়। এ কবিতাটি মানুষ যে যাত্রা শুরু করেছিল সে যাত্রার অব্যাহত মিছিল। সমগ্র মানব চেতনাকে ধারণের এক বিশাল প্রবণতা হুদার এ কাব্যের চিত্ররূপ পেয়েছে।
‘দ্বিপ্রহরে’ ‘জীবন জীবন’ স্বরে ফুঁসে ওঠে মানুষের দীঘল মিছিল।’ এ মিছিল কখনো শেষ হবে না। ‘তোমার পরিধি বাড়ে ক্ষুব্ধ হয় অন্তিম বিলয়।’ এ ভাষা এবং চয়নের মধ্যে মহাকাব্যের বিষয়ের সাযুজ্য আছে।
তাছাড়া কবিতাগুলো গঠনের দিক থেকেও হুদার ব্যতিক্রম নির্মাণ: Fourteener এর eight and six meter কে ভেঙে দিয়ে আট পংক্তিতে বিন্যাস করেছেন। এখানে একটি কবিতার উদ্ধৃতি দেওয়া যাক :
শ্বাসাঘাতে ত্রস্ত এই মুমূর্ষু রোগীর মতো বেঁচে আছি আজো
ইতস্তত ভেসে যাই কাঙ্ক্ষিত কমল ফুটে ওঠে প্লাবনের জল
তোমার তো নৌকা নেই, তোমার তো ভিন্নতর পরিত্রাণ নেই
গভীরে গভীরে থাকো কোনোদিন সমতলে ওঠেনি জলের
কে পাপিষ্ঠ প্রবঞ্চক রাত্রি দিনে আমাদের ঠকায় এমন
আমি তো ডুবতে চাই, ছুঁতে চাই, হে আমার মাটির শিকড়
আমাকে সাঁতারু করো কি উল্লাসে ভেসে যাই স্রোতে ভেসে যাই
হে মৈনাক, শির তোলো তোমার শরীর জুড়ে পুনর্বার নিজেকে সাজাই।
‘অগ্নিময়ী হে মৃন্ময়ী’ (১৯৮০) একটি কবিতার গ্রন্থ, এক থেকে পঞ্চাশটি এপিসোড সবই অগ্নিময়ী মৃন্ময়ীকে নিয়ে কবির অভিযাত্রার কাহিনী। সৈয়দ শামসুল হকের ‘বৈশাখে রচিত পংক্তিমালা’ একটি কবিতার গ্রন্থ। কিন্তু সেখানে কবি আত্মমগ্নতা এবং সমকাল নিমজ্জনে ক্লিষ্ট; অবশ্য হুদার কাব্য অন্য বিষয় অন্য ভাষা এবং ভাবে উপরিতল স্পর্শ করে হুদা কাব্য নির্মাণের কঠিন পথে অগ্রসর হননি :
মৌন-মুগ্ধ মন্যুমেন্ট, সঙ্গী তার একাকী তিমির
পাদমূলে রয়েছি দাঁড়িয়ে
ব্যাগ্রাতুর দুবাহু বাড়িয়ে
কুড়োরে কি ইতস্তত খসে পড়ে প্রতীক্ষা অধীর?
সম্মুখে আনন্দ যাত্রা লক্ষ কোটি ফুল্ল পৃথিবীর।
‘আমার তামাটে জাতি’ (১৯৮১) আবহমান বাংলার কৃষিনির্ভর সমাজ এবং কৃষকের কাহিনী। মাটি এবং মাটি সংলগ্নতা কাব্যের প্রধান সুর। ঘুমের ভেতর কবি শস্যপতনের শব্দ শোনেন। অনার্য সমাজের কাহিনী বর্ণনা করেন, যে অনার্য দ্রাবিড় আজ স্বাধীন বাঙালি জাতিসত্তার প্রতীক। বাঙালির জন্মতিথি রক্তে লেখা ষোল ডিসেম্বর। এ কাব্যে কবি শ্রমজীবি মানুষের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ভাষাভঙ্গিতে শব্দ প্রয়োগ হয়ে উঠেছে জনমানুষ-সংলগ্ন।
তাঁর দ্বিতীয় কাব্যের সঙ্গে এ গ্রন্থের শব্দ প্রয়োগের একটি মিল পাওয়া যায়। তবে নূরুল হুদার প্রায় সব কাব্যেই আদিমের প্রতি একটু পক্ষপাতিত্ব লক্ষ করা যায়। কিন্তু এই তুমুল রক্ত মাংসের মানবীয় পণ্যের সীমারেখা অতিক্রম করে চলেছে, কবি স্বদেশকে দেশমাতৃকা বলেছেন, জননী জন্মভ‚মি স্বর্গের চেয়েও শ্রেষ্ঠ বলেছেন, কিন্তু এসব বর্ণনার সঙ্গে কেমন যেন হিতোপদেশ জড়িয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে নূরুল হুদার এই কাব্যের ‘মা’ কবিতাটি দ্রষ্টব্য। নিয়তিতাড়িত ইডিপাস। ‘নারী কি রমণীর অনাবশ্যক আবরণ নামিয়ে তার নগ্ন স্তনে মুখ রেখে মগ্ন স্বরে ডেকে উঠেছি মা’।
মূলের দিকে প্রত্যাবর্তন হুদার কবিতার প্রধান প্রবণতা হলেও সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদে মগ্ন থাকেননি তিনি:
নাতাশা আমার বোন দূরে রাশিয়ায়
নাতাশা বাংলা শেখে নাতাশা বাংলা জানে
ভাটির দেশের গান নাতাশার প্রাণে
নাতাশা প্রভেদ বোঝে শালিকে টিয়ায়।
(নাতাশা)
আরেকটি ব্যতিক্রম ধরনের কাব্যগ্রন্থ মুহম্মদ নূরুল হুদার ‘শুক্লা শকুন্তলা’ (১৯৮৩)। এ ধরনের বিষয়ভিত্তিক সনেটগুচ্ছ যে বাংলা সাহিত্যে নেই তা নয়; এর বিশেষত্ব বিষয় বিনির্মাণ অর্থাৎ সাম্প্রতিক উপযোগিতার সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া। আজকের কোনো কবি যখন শকুন্তলাকে কাব্যের বিষয় করে তোলেন, তখন তিনি পুরাণের ঘটনার সঙ্গে আজকের সম্পর্ক খুঁজে পান।
মধুসূদনের ‘দুষ্মন্তের প্রতি শকুন্তলা’ কবিতায় শকুন্তলার মানবিক হাহাকার বাঙালি রমণীর অবজ্ঞা বিরহ বেদনায় একাকার হয়ে গেছে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘স্বপ্ন’ কবিতায় কালের উল্লেখ করেছেন, শিপ্রানদী পারে উজ্জয়িনীপুরে যে প্রিয়ার জন্য তার আকুতি সে প্রিয়া আজ অন্য ভাষায় কথা বলে :
সে ভাষা ভুলিয়া গেছি। নাম দোঁহাকার
দুজনে ভাবিনু কত, মনে নাহি আর
দুজনে ভাবিনু কত চাহি দোঁহ পানে,
অঝোরে ঝরলি অশ্রু নিস্পন্দন নয়নে
সংস্কৃত কবির বিরহী নায়িকা যখন বাংলা কবির হৃদয় দখল করেছে, তখন সে বেদনা কণ্ঠ মুনির আশ্রম দুহিতার বেদনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সেই বেদনা আদিম দ্রাবিড়ার বেদনা, তামাটে নারী আর কৌমসমাজের বেদনা। এই গ্রন্থের ক্ষেত্রে কালিদাসের শকুন্তলা একটি উপলক্ষ মাত্র। কবি সেই কাহিনীর সূত্র ধরে আজকের মানুষ পর্যন্ত প্রলম্বিত করেছেন। উপসংহারের কবিতাটি এখানে উদ্ধার করছি :
শুক্লা এবার উঠি, কালিদাস আপনি থাকুন
আপনারা পাত্রপাত্রী অবশেষে সুখের দম্পতি
আমরা আরেক কালে, আমাদের নেই ভীমরতি
আমরা সুযোগ মতো হত্যা করি রমণীর ভ্রুণ।
দেবতার আশীর্বাদ আজকাল আমরা মানি না
আমরা প্রত্যেক আজ আমাদের কালের দেবতা
প্রেম এক প্রিয় পণ্য, যে কেউই হতে পারি ক্রেতা
বিরহের প্রাচীনতা আমরা তা জেনেও জানি না।
সময় খোদাই করি, গড়ে তুলি মুহূর্ত মিনার
ফাইফরমাস মতো সৃষ্টি করি পাথর প্রতিমা
আমরা পছন্দ করি মাপসিদ্ধ তনুর তনিমা
পাণ্ডুর অতীতলিপি আমাদের পরম ঘৃণার।
আপনি তো প্রিয় কবি, আমাদের প্রিয় কালিদাস;
ঐতিহ্য অমরাবতী; আমরা কি ঐতিহ্যের দাস?
যিসাস মুজিব (১৯৮৪) নূরুল হুদার সামগ্রিক বিশ্বাসের কবিতা; যে বিশ্বাস তাঁর পূর্ববর্তী কাব্যগ্রন্থগুলিতে বিভিন্নভাবে শব্দায়িত হয়েছে এ গ্রন্থে তার ব্যর্থতার কারণ বর্ণিত হয়েছে। আঙ্গিকের বিবেচনা এ আলোচনায় অনুপস্থিত রেখে নূরুল হুদার কবিতার বিষয়গত কোথাও দুটি দিকে ইঙ্গিত করছি। এই পোস্টমডার্নিজম, বিশ্বব্যাপী যে ধারণাটি, কোথাও সাহিত্যের ক্ষেত্রে আন্দোলনের রূপ নিচ্ছে। এমনকি বাংলা কবিতার ক্ষেত্রেও সম্প্রতি কেউ কেউ এই ধারণাটি পরীক্ষা করে দেখেছেন।
কিন্তু বাংলাদেশের যাঁরা এই কর্মটি একটি অবস্থানে নিয়ে যেতে আগ্রহী তাঁরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধর্মীয় ঐতিহ্য-পুরাণকে কাজে লাগাতে চাচ্ছেন। কিন্তু পোস্টমডার্নিজম ধারণা আদৌ তেমন নয়, শেকড়ের দিকে প্রত্যাবর্তন, কিন্তু সেই শেকড় কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত? যদি তা ধর্মীয় সভ্যতা ছেড়ে আরো বহুদূরে এগুতে চায় আমরা কি তা রোধ করতে পারব?
নরমান ব্রাউন থেকে এডওয়ার্ড সাইদ পর্যন্ত কেউই পোস্টমডার্নিজমকে কোনো সূত্রের মধ্যে বাঁধতে চাননি। তা হবে এমন, মানুষের নিজের, যেখান থেকে সে ফিরে এসেছে। কিংবা কেউ তাকে উৎপাটিত করেছে সে যেখানে ফিরে যাবে, এমনকি বুনো স্বভাবে আদিমের কাছে; আর ঔপনিবেশিকতাকে মনে প্রাণে ঘৃণা করা, তবে দৈশিক জাগরণের মধ্যে বিশ্বকে ধারণ করা এই অরিয়েন্টালিজমও পোস্টমডার্নিজমের আরেকটি বিবেচনা।
আমি যেভাবে নূরুল হুদার কবিতা পাঠ করেছি তাতে আমার মনে হয়েছে একজন কবি পুরোপুরি বিষয়সচেতন না হয়েও এ ধরনের কবিতা রচনা করেছেন। হুদার কবিতা কেবলই শেকড়ের দিকে অভিযাত্রা, কেবলই আর্যবাদ এবং ঔপনিবেশিকতা মোচনের হাতিয়ার।
‘শোভাযাত্রা দ্রাবিড়ার প্রতি’, ‘অগ্নিময়ী হে মৃন্ময়ী’ ‘আমার তামাটে জাতি’, ‘শুক্লা শকুন্তলা’ এসব তো তারই প্রমাণ। হুদার কাব্য-বিশ্বাস কোন সংকীর্ণ মতাদর্শে আক্রান্ত নয়, জাতিসত্তার পরিচয়ের অহংকারে দীপ্ত। একই সঙ্গে হুদার কাব্য আধ্যাত্মিকতায় সমৃদ্ধ এবং সেই আধ্যাত্মিকতার ধরনও বাউল লোকধর্মনির্ভর, কামগন্ধী!
ভালোবাসার মেঘ থেকে বৃষ্টিপাত হচ্ছে
চাষ হচ্ছে তিন একর জমিতে
ধানের রোয়ার মতো বেড়ে উঠছ তুমি
বেড়ে উঠছি তোমার উর্বর মনোভূমি
তার নিচে সোনা
এমন মানব জীবন রয়না পতিত
আবাদ করলে হয় না গোনাহ!
(চাষাবাদ: যিসাস মুজিব)
পরিশেষে বলা যায়, হুদা’র কবিতা অনেকাংশে সরল; আধুনিক জটিলতা যা এসেছে তা সরলতাকে আহবান করতে গিয়ে এসেছে। তাই জীবনানন্দীয় যে নগর জটিলতা কখনো ‘যেন আমাদের নিজের মনও নিজের নয়’ কিংবা শামসুর রাহমানের মায়ের কাছে ‘অচেনা ভদ্রলোকে’র যে মানসিক নির্মিতি, তার বিন্যাস ব্যতিরেকে এ আলোচনা সম্পন্ন করা গেলো।

কবি নূরুল হুদার স্কেচ : মাসুক হেলাল


মজিদ মাহমুদ
জন্ম ১৬ এপ্রিল ১৯৬৬, পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার চরগড়গড়ি গ্রামে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতোকত্তোর।
কবিতা তাঁর নিজস্ব ভুবন হলেও মননশীল গবেষণাকর্মে খ্যাতি রয়েছে।
প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৪০ এর অধিক।
উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ
কবিতা
মাহফুজামঙ্গল (১৯৮৯), গোষ্ঠের দিকে (১৯৯৬), বল উপখ্যান (২০০০), আপেল কাহিনী (২০০১), ধাত্রী ক্লিনিকের জন্ম (২০০৫), সিংহ ও গর্দভের কবিতা (২০০৯), গ্রামকুট (২০১৫), কাটাপড়া মানুষ (২০১৭), লঙ্কাবি যাত্রা (২০১৯), শুঁড়িখানার গান (২০১৯)।
প্রবন্ধ ও গবেষণা
নজরুল, তৃতীয় বিশ্বের মুখপাত্র (১৯৯৭), কেন কবি কেন কবি নয় (২০০১), ভাষার আধিপত্য ও বিবিধ প্রবন্ধ (২০০৫), নজরুলের মানুষধর্ম (২০০৫), উত্তর-উপনিবেশ সাহিত্য ও অন্যান্য (২০০৯), সাহিত্যচিন্তা ও বিকল্পভাবনা (২০১১), রবীন্দ্রনাথ ও ভারতবর্ষ (২০১৩), নির্বাচিত প্রবন্ধ (২০১৪), সন্তকবীর শতদোঁহা ও রবীন্দ্রনাথ (২০১৫), ক্ষণচিন্তা (২০১৬)।
গল্প-উপন্যাস
মাকড়সা ও রজনীগন্ধা (১৯৮৬), সম্পর্ক (২০২০)।
শিশু সাহিত্য
বৌটুবানী ফুলের দেশে (১৯৮৫), বাংলাদেশের মুখ (২০০৭)।
mexico drug stores pharmacies: best online pharmacy – mexican drugstore online
canadian pharmacy india: certified canadian pharmacy – legit canadian online pharmacy
https://indiapharmacy.site/# online pharmacy india
canadian pharmacy tampa certified canada pharmacy online best canadian online pharmacy
reputable indian pharmacies: best india pharmacy – cheapest online pharmacy india
mexico drug stores pharmacies: mexico pharmacy – buying prescription drugs in mexico
https://buydrugsonline.top/# canada drug stores
canadian pharmacy cheap: canadian drugstore online – escrow pharmacy canada
list of trusted canadian pharmacies: buy prescription drugs online without doctor – canadian discount pharmacy
https://ordermedicationonline.pro/# canadian discount pharmacy
http://gabapentin.life/# neurontin prescription medication
п»їpaxlovid: Paxlovid buy online – п»їpaxlovid
http://paxlovid.club/# paxlovid pharmacy
buy generic clomid without dr prescription: clomid best price – buying cheap clomid without dr prescription
https://claritin.icu/# ventolin tabs 4mg
ventolin tablet medication: Ventolin HFA Inhaler – ventolin cream
paxlovid pharmacy http://paxlovid.club/# paxlovid buy
http://clomid.club/# where buy cheap clomid pill
wellbutrin 100mg tablets: Buy Wellbutrin online – wellbutrin xl 300
https://clomid.club/# how to get generic clomid pill
ventolin cost usa: Ventolin HFA Inhaler – how much is a ventolin
http://paxlovid.club/# paxlovid india
wellbutrin over the counter: Buy Wellbutrin online – wellbutrin xl 300 mg generic
https://clomid.club/# how can i get cheap clomid
farmacie online autorizzate elenco: farmacia online miglior prezzo – acquistare farmaci senza ricetta
top farmacia online: avanafil – acquistare farmaci senza ricetta
farmacia online: avanafil – migliori farmacie online 2023
farmaci senza ricetta elenco kamagra gel acquistare farmaci senza ricetta
http://tadalafilit.store/# farmacia online senza ricetta
farmacie online sicure: farmacia online più conveniente – farmacia online miglior prezzo
farmacia online migliore: kamagra – farmacia online migliore
farmacia online migliore: avanafil prezzo – farmacie online affidabili
acquisto farmaci con ricetta: dove acquistare cialis online sicuro – farmacia online piГ№ conveniente
viagra pfizer 25mg prezzo: viagra prezzo farmacia – siti sicuri per comprare viagra online
farmacie on line spedizione gratuita kamagra migliori farmacie online 2023
pillole per erezione immediata: viagra online siti sicuri – alternativa al viagra senza ricetta in farmacia
https://avanafilit.icu/# farmacia online piГ№ conveniente
comprare farmaci online con ricetta: kamagra gel prezzo – farmacia online
acquisto farmaci con ricetta: Tadalafil generico – farmaci senza ricetta elenco
comprare farmaci online all’estero: avanafil – comprare farmaci online con ricetta
viagra online spedizione gratuita: viagra online spedizione gratuita – viagra originale recensioni
farmacia online miglior prezzo Tadalafil generico farmacie online sicure
acquistare farmaci senza ricetta: Farmacie che vendono Cialis senza ricetta – farmaci senza ricetta elenco
acquistare farmaci senza ricetta: kamagra gel – farmacia online senza ricetta
https://sildenafilit.bid/# pillole per erezioni fortissime
farmacia online migliore: kamagra oral jelly consegna 24 ore – farmacia online migliore
farmacie online affidabili: avanafil generico prezzo – acquistare farmaci senza ricetta
acquistare farmaci senza ricetta: kamagra gel prezzo – farmacie on line spedizione gratuita
farmacia online miglior prezzo: Tadalafil generico – comprare farmaci online all’estero
viagra 100 mg prezzo in farmacia: viagra generico – viagra prezzo farmacia 2023
farmacie online sicure: Cialis senza ricetta – farmacia online senza ricetta