বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর এর কবিতা

বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর এর কবিতা

মতিন বৈরাগী

কবিতা পড়তে পড়তে তুমি
কবিতা পড়তে পড়তে তুমি আমার দিকে তাকাতে
আর আমি তোমার চোখে
পাথর গলে যেতে দেখতাম
জানালার বাইরে ম্যাগ্ললিয়ার শাদা
শাদা আগুন জ্বালিয়ে দিতে
তুমি এখন অসুস্থ
কবিতা কি মানুষকে রোগমুক্ত করে
হায়রে অসুখী, অসুস্থ সংস্কৃতি
কি-ইবা বলতে পারে
অসুস্থ তোমাকে…
[আমাদের মুখ কাব্য-১৯৯৩]

বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান পুরুষ কবি শামসুর রাহমান কবি বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের কবিতা প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন : ‘লক্ষ্য করেছি, রোরহানের কবিতা সম্পর্কে পাঠক এবং সমালোচক মহলে তেমন ঔৎসুক্য নেই। এক হিসেবে তিনি একজন অবহেলিত কবি। আমি তার বন্ধু হিসেবে নয়, কবিতার পাঠক হিসেবে বলছি, এই অবহেলা মোটেই তার প্রাপ্য নয়। আমি আগেও দু’-একবার তাঁর কবিতাবলী সম্পর্কে আমার মতামত প্রকাশ করেছি, তিনি ভালো কবিতা লিখেছেন, এখনও লিখছেন। বাংলাদেশের সকল কবির কবিতা থেকে তার কবিতা আলাদা। তিনি মূলত গদ্য ছন্দে কবিতা লেখেন। তার কবিতায় অযথা বাগাড়ম্বর নেই, পড়লে কবিতা মনে হয় না যেন, কিন্তু একটি অভিনিবেশ সহকারে পাঠ করলে কবিতার দীপ্তি ঝলসে ওঠে ভোরের প্রথম আলোর মতো।’
[বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর ও তাঁর বই ৭০তম তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে প্রকাশিত]

শিল্পে শিল্পীর উপস্থিতি যত দূরের হয় ততই তা অন্যের নিকটবর্তী থাকে। কবি বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের কবিতায় আমরা তার উপস্থিতি টের পাই। ‘তুমি এখন অসুস্থ’ সেই অসুস্থতাটা কেমন তা আমরা পেয়ে যাই ‘হায়রে অসুখী, অসুস্থ সংস্কৃতি’ চেহারা থেকে। বলার অপেক্ষা রাখে না সংস্কৃতি যা মানুষের পরিচিতিকে নিত্য তুলে ধরে, যা একজনের সঙ্গে আরেক জনের বোধ-বুদ্ধিকে ভাষার গমনাগমনের মধ্য দিয়ে যুক্ত করে, তা যখন অসুস্থ তখন ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির ভিন্নতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে, ঐক্যের প্রয়োজনাবলীর অনুষঙ্গ শিথিল করে এবং সামাজিক জীবনযাপন চিত্রটাকে বিশৃঙ্খল করে, সমাজ ও রাষ্ট্র কাঠামোর এই বিশৃঙ্খলা আলটিমেটলি সমাজবদ্ধ মানুষকেই পীড়িত করে এবং তার পর;
‘কি-ইবা বলতে পারে /অসুস্থ তোমাকে’ এই প্রশ্ন একটা সিদ্ধান্ত নয়, এটা একটা প্যারাডক্স বিস্তারের যা আমরা লক্ষ্য করে আসছি। ঠিক তার পরে তিনি বলছেন ‘মৃত্যু যখন তোমার মধ্যে এলো/আমি তোমার জীবন্ত হাত ধরে থাকলাম/মৃত্যুকে ঠেকাতে পারলাম না’ [কবিতা পড়তে পড়তে, আমাদের মুখ ’৯৩] কোন রকম স্পষ্ট নয় কোন রকম অস্পষ্ট নয় অন্যরকম একমাত্রা থেকে আরেক মাত্রায় গমন। সংস্কৃতির পচন তার ছড়ানো রোগ সুস্থ সমাজ দেহ-কা-কে বিষাক্ত করেছে এবং স্বাভাবিক গতির সমাজে অস্থিরতায় স্থিরতাকে বিনষ্ট করছে, তাকে রুখবার আর কোন উপায় কবির হাতে থাকল না, সে কেবল তার দেখা-জানা গতিময় ছন্দময় ভাবনা থেকে ছিটকে পড়ছেন, অর্থাৎ সে জীবিত মৃত তার উপস্থিতিকে অস্বীকার করতেও পারছেন না, আবার তাকে গ্রহণও করতে পারছেন না, সত্তার সত্যের সঙ্গে মিলিয়ে। তার পরই ‘তোমার চোখ পাথর হয়ে গেলো’ পাথর চোখ পাথরের চোখ এর মধ্যের পার্থক্যটা খুঁজে নিলেই বোঝা যায় যে চোখ পাথর হয়ে যাওয়া মানে বিস্মিত হওয়া, হতভম্ব হওয়া, কিংকর্তব্যবিমূঢ় হওয়া। এই বিমূঢ়তা কবিকে ভাষাহীন করে ‘তোমার চোখ পাথর হয়ে গেলো’ সমাপ্তি এনেছে। বয়ে যাওয়া বেদনা বোধের রেশ ছড়িয়ে গেছে একটা বেদনার সুর হয়ে। একটা নবতর ভাষা হয়ে। যে ভাষার বয়নে এই কবিতাটি দেহ কাঠামো লাভ করেছে তা লক্ষ্য করলে সহজেই কবি শামসুর রাহমানের উপরের কথাগুলোকেই সমর্থন করবে। কবিতাটির রচনাকাল ’৯৩-এর আগেও হতে পারে কিন্তু গ্রন্থবদ্ধ তারিখকে যদি শনাক্ত করে সময়টাকে মিলিয়ে নিই বলতে দ্বিধা নেই যে এই কবিতাটি সহজ ভাবভঙ্গিতে বিন্যস্ত হলেও এর ভাবনায় রয়েছে এক বড় প্রেক্ষিত আর সে প্রেক্ষিতটা স্বাধীনতার উত্তরকালের রাজনৈতিক কর্মকা- দ্বারা সৃষ্টি সমাজ সংস্কৃতির অসুখ। সে অসুখ যে কত ভয়াবহ তা একটি প্রবন্ধের নিট ছবি ভাষা ও আবেগের নিয়ন্ত্রণে বুনন হয়েছে। বলছে অনেক কিছু পাঠককে, আবার পাঠক নিজে খুঁজতে পারেন তার নিজের মতো করে এর বিশেষ কে, সেখানেই এর চমৎকারিত্ব যে কেবল নান্দনিকতার স্পষ্ট রূপদান এই কবিতা নয়, নান্দনিকতা তার কাঠামোতে এবং বলার ভঙ্গিতে, যেখানে একটা গুরুতর বিষয় বর্তমান, কিন্তু সেই বিষয়টা কেবল বিষয় হয়ে উঁচিয়ে থাকেনি, থেকেছে শিল্পের মোড়কে একটা জানান। যাকে নির্মাণ কৌশলে স্বাতন্ত্র্যতা দিয়েছে।

১৯৯৮ সালে প্রকাশিত হয় তার ‘মানুষের বুকের মধ্যে’ কাব্য। এতে রয়েছে ছোট-বড় ৪০টি কবিতা। ‘কে কবে মানুষের বুক খুলে নদী দেখেছে স্তব্ধতা ও নিস্তব্ধতার মধ্যে অর্থের দূরত্ব আছে অতীত ও ভবিষ্যতের মধ্যে যেমন বর্তমান আগামীকাল কি বুক থেকে নদীগুলো বার করে দেব, যাতে ঢেউ শান্ত করতে পারি।’ [মানুষের বুকের মধ্যে কাব্য ১৯৯৮]

নদী তো কখনও বুকের মধ্যে থাকে না, বুক তো বুক সে খানে হৃৎপি- থাকে, হৃৎপি-ের ধুকপুক থাকে সে রক্ত চালনা করে শিরায় শিরায় মস্তিষ্কে আর তাই নিয়ে মানুষের বঁাঁচা। বন্ধ হয়ে গেলে মিনিট খানিক তার পর একটা সুন্দর নিস্তব্ধতা, নিস্তব্ধতা চিরকালের। শিরাগুলো নদীর মতো নদীতে যেমন জল প্রবহমান শিরায় প্রবহমান রক্তরূপী জল। জল প্রয়োজনীয় নদীও নদী কেবল সুখ শোভার বিষয় নয়, নদী জীবনের সঙ্গে সেই শুরু থেকে অস্তিত্বমান, যদিও আজ আর মানুষ নদীকে চায় না, কেবল শাসন করতে চায় তাকে বানিয়ে রাখতে চায় বনসাইয়ের ভয়াবহ পরিণতি নানাভাবে মানুষ দেখছে কিন্তু আমল করছে না। জীবনের সঙ্গে নদীর এই সংযোগ জীবনের সঙ্গে নদীর উপমা কোনভাবে কাল্পনিক নয, বাস্তবের। সুতরাং যদি মানুষ বুকের নদীকে দেখতে পেত তার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পারত অনুভব করত ধুঁকপুকের মাত্রা স্টেথেসকোপ দিয়ে নয়, অন্তরদৃষ্টি দিয়ে তা হলে ‘স্তব্ধতা ও নিস্তব্ধতার মধ্যে অর্থের যে দূরত্ব অস্তিত্বকে অনুভব করতে পারত। সেভাবেই অতীত যা কিছু তা কোন অতীত নয় প্রতিমুহূর্তের মান, যে অস্তিত্বমান ভবিষ্যতের মধ্যে সে স্পষ্ট হয়ে উঠত মানুষের কাছে আর ‘আগামীকাল নদীগুলো বার করে দেব/ যাতে ঢেউ শান্ত করতে পারি’ এই ভাষা একটা অন্তরগত ভাষার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করে এভাবে যে নদীকে বার করে দেয়া, তাকে মুক্ত করা, মুক্ত করা জীবনকে যে গতিময় নদীর মতন এবং তার প্রিয় অপ্রিয়কে খোলামেলা করতে পারা যা নানা সামাজিক রাষ্ট্রিক ক্রিয়ায় স্তব্ধ হয়ে আছে, রুদ্ধ চলমান গতি মানে স্বাধীনতা যা মানুষের মৌলিক যা বন্দী হয়ে শিশু জীবন থেকে নানা মৌলবাদিতায়। এ রকম ভাবনার স্থির বিন্দু থেকে শুরু করে চলতে চলতে হঠাৎ ‘তোমার আঙ্গুল আমার পিঠ আদর করতে থাকে’ পঙ্ক্তি খোলসমুক্ত হয়ে পড়ে, যা জীবন এখানে এক মুক্ত মানবিক আকাক্সক্ষার ইঙ্গিত তারপর ‘অথচ নদীগুলো বুকের মধ্যে রেখে /আমাকে একাই চলে যেতে হবে’ এই কাব্যিক ভাষণ আপাতত দেখলে মনে হয় কাব্যিক নয়, কাব্যের কারিশমায় কোন বুনন তৈরি করে না এ যেন একটা সাদামাটা স্টেটমেন্ট, তা কিন্তু নয়। এর একটা অন্তর সত্য রয়েছে কাব্যের দ্বৈত ভাষণে একই কবিতায় বৈপরীত্য দ্বিভাষিক ক্রিয়ায় কাব্য রহস্য দানাদার হয়ে ওঠে। সহজ বলার মধ্য দিয়ে তিনি এমনি অনেক ক্রিয়ার পারস্পরিক বৈপরীত্য তৈরি করে তার পাঠককে একটা কেন্দ্রের দিকে নিয়ে যান যা বিন্দু নয়, আমাদের নতুন এক দৃষ্টিশোভায় আনন্দ দেয়।

০১.
আমার ভাবনা
গ্রামের রাস্তায় হাঁটতে থাকার মতো
ধুলা থেকে ধুলোয়
গাছ থেকে গাছপালায়
মানুষের কাছে মানুষের দায় আছে
আমার ভাবনার কেন্দ্রে তাই
শহর এবং গ্রাম এক হয়ে যায়
নির্যাতিত আমার হৃদয় [পৃথিবীতে স্থায়ী]

০২.
‘ডিকটেটরদের রাজত্বে যখন বাস করেছি
তখন নিজেকে শুনিয়েছি এই কবিতা :
যারা গল্প বলে তারা বিপজ্জনক যারা গান গায় তারা বিপজ্জনক’
[ডিকটেটরদের রাজত্বে, মানুষের বুকের মধ্যে ’৯৮ ]

মাতৃভাষা সংগ্রামী রবীন্দ্র গবেষক বহুমাত্রিক লেখক আহমদ রফিক তার শিল্প সংস্কৃতি জীবনগ্রন্থে আধুনিক কবিতার সমস্যা প্রবন্ধে বেশ কয়েকজন কবির কবিতা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় কবি বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের কবিতা প্রসঙ্গেও খানিকটা আলোকপাত করেছেন এভাবে ‘বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের মেজাজ মূলত রোমান্টিক। তার কবিতার শব্দচয়ন, গঠন-বিন্যাসে লালিত্যের বিদগ্ধ উপস্থিতি রোমান্টিক আমেজ এনে দেয়। তবু তার কবিতার ‘হিপনোটিক ড্রাউজিনেস’ দার্শনিক অনুজ্ঞার অভিক্ষেপ জটিল হয়ে ওঠার ফলে কবিতা দ্যুতিময় হয়ে উঠতে পারে না, এর চাইতে ছোট গল্পের পরিধিতে বোরহানউদ্দিন অনেক বেশি ঋজু, বলিষ্ঠ এবং রোমান্টিকতা সত্ত্বেও সমাজ চেতনায় সমৃদ্ধ।’ কথাটির মধ্যে সত্য রয়েছে। সে হলো বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের কবিতায় দার্শনিকতা। আর এ রকম কবিতার শরীর যতই রোমান্টিক মনে হোক না কেন আসলে নির্জন কাটা কাটা উচ্চারণ নানা দিকে ছড়িয়ে একটা প্রজ্ঞার দিকে বাঁক নিতে চায়। হয়ত সব ক্ষেত্রে সেগুলো সকলের ভাল নাও লাগতে পারে, কিন্তু এই সত্য আবিষ্কারের যে পথ শ্রদ্ধেয় আহমদ রফিক বাতলিয়ে দিলেন যে তার কবিতায় ‘হিপনোটিক ড্রাউজিনেস’ দার্শনিক অনুজ্ঞার অভিক্ষেপ’ এই বিষয়টা পাঠকদের আবিষ্কারের মধ্যে এলে কেবল তখনই তারা খান জাহাঙ্গীরের কবিতার মর্মে প্রবেশ করে কিছু ভিন্ন অনুভূতির সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন :

ক.
না এই ভাবে বাঁচা যায় না
বইয়ের অভিজ্ঞতা দিয়ে বহুদূর যাওয়া যায় না
সাদামাটা নিকষ কালো, কোথাও আলো নেই
যাদের হত্যা করা হয়েছে সে সব মূল অন্ধকারে ঘিরে ধরে’
[আপনাদের কি মনে আছে, আসবাবহীন ঘর]

খ.
আমার হৃদয়ে শুনি শব্দের ধুকপুক
নৈরাজ্যের দিন আর হাহাকারের রাত শেষ হয়
কবিতার উপর হাত রেখে বেঁচে থাকি
জীবনে আর একটা দিনের আয়ু বাড়ে।’
[ কবিতার উপর হাত রেখে, আসবাবহীন ঘর]

চলমান ঘটনাবলী তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন এবং স্বভাবজাত বিক্ষণ থেকে তিনি যেমন বলেছেন ‘বইয়ের অভিজ্ঞতা দিয়ে বহুদূর যাওয়া যায় না’ সেই ধ্বনি ছড়িয়ে আছে তার এই কাব্যে। বইয়ের অভিজ্ঞতা কেবল দেখার দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রসারিত করে, কিন্তু বাস্তবকে বদল করার জন্য দরকার বিপ্লবী মানুষের। বিপ্লবী রাজনীতির। সেই অভিজ্ঞান ছড়িয়ে আছে তার কবিতাগুলোতে। এতে রয়েছে নানা ঘটনার অবলোকন, তাঁর মানসিক প্রতিক্রিয়ার, তার বেদনা থেকে উৎসারিত তীব্র চিৎকার। কিন্তু রয়েছে ভালবাসার দিকে যাওয়ার এক ইচ্ছে। সে কারণে তিনি সব সময় সকল কবিতায় সমসাময়িকতার ভেতর থেকেছেন। এ যেন কোন এক স্বপ্নকে বুকে করে হাঁটা আর প্রত্যক্ষ করা অসুখগুলোকে, যার চিকিৎসা তার হাতে নয়, এ থেকে প্রাপ্ত আলোকে উদ্ভাসিত অন্য মানুষ।

লেখাটি বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর-এর ৮০ তম জন্মবাষিকী উপলক্ষে শ্রদ্ধার্ঘ্য রাষ্ট্র সমাজ সংস্কৃতি বই থেকে নেওয়া (সংক্ষেপিত)

About Mangrove Sahitya

দেখে আসুন

আবিদ আজাদের কবিতা : শিল্পের বাগানবাড়ি । আমিনুল ইসলাম

আবিদ আজাদের কবিতা : শিল্পের বাগানবাড়ি আমিনুল ইসলাম   কবিতার ইতিহাস তার টেকনিকের ইতিহাস এই …

37 কমেন্টস

  1. Im thankful for the blog post.Much thanks again. Keep writing.

  2. When I initially commented I clicked the “Notify me when new comments are added”checkbox and now each time a comment is added I get three e-mails with the same comment.Is there any way you can remove me from that service? Appreciate it!

  3. Thanks so much for the article.Really thank you!

  4. I am so grateful for your post.Much thanks again. Awesome.

  5. It’s truly a great and helpful piece of info. I am glad that you just shared this helpful information with us. Please keep us informed like this. Thanks for sharing.

  6. I am sure this paragraph has touched all theinternet people, its really really nice piece of writing on building up newblog.

  7. Appreciate you sharing, great blog post.Thanks Again. Fantastic.

  8. I appreciate you sharing this blog. Really Cool.

  9. Major thanks for the blog article.Really looking forward to read more. Cool.

  10. This is a topic that is near to my heart Take care! Where are your contact details though?

  11. I really like and appreciate your blog.Thanks Again. Awesome.

  12. ivermectin mechanism of action covid ivermectin

  13. Excellent blog you’ve got here.. Itís difficult to find good quality writing like yours nowadays. I seriously appreciate individuals like you! Take care!!

  14. What’s up colleagues, pleasant paragraph and fastidious urging commented here, I am genuinely enjoying by these.

  15. Your style is very unique in comparison to other folks I’ve read stuff from. Thanks for posting when you’ve got the opportunity, Guess I will just book mark this blog.

  16. ivermectin for guinea pig lice ivermectin pills

  17. I am so grateful for your post.Thanks Again. Really Cool.

  18. It’s wonderful that you are getting thoughts from this articleas well as from our discussion made at this place.

  19. Im grateful for the blog article.Really looking forward to read more.

  20. Looking forward to reading more. Great blog post.Much thanks again. Cool.

  21. Hi my loved one! I want to say that this post is amazing, nice written and include almost all important infos. I would like to look extra posts like this.

  22. male pocket stroker[…]Wonderful story, reckoned we could combine a number of unrelated data, nevertheless definitely really worth taking a look, whoa did a single find out about Mid East has got much more problerms also […]

  23. side effects for sulfamethoxazole trimethoprim what does sulfameth trimethoprim treat

  24. ivermectin cream 1 stromectol ivermectin for humans — ivermectin 2

  25. I needed to thank you for this fantastic read!! I absolutely enjoyed every little bit of it. I have got you book-marked to look at new things you postÖ

  26. Thanks a lot for the blog.Thanks Again. Keep writing.

  27. Good day! I know this is somewhat off topic but I was wondering if you knew where Icould find a captcha plugin for my comment form? I’m using the same blog platform as yours and I’m having difficulty finding one?Thanks a lot!

  28. Fantastic article post.Really thank you! Awesome.

  29. Enjoyed every bit of your blog. Will read on…

  30. ロリラブドール これは、すべてのWebビューアをサポートするすばらしい投稿です。彼らはそれから利益を得るだろうと私は確信しています。

  31. Appreciate you sharing, great blog.Really looking forward to read more. Great.

  32. Awesome blog post.Thanks Again. Keep writing.

  33. This is one awesome post.Really looking forward to read more. Great.

  34. PG SLOT สมัครสล็อต PG ทดลองเล่นฟรีที่ PGTHAIPG SLOT เว็บตรงไม่ผ่านเอเย่นต์PGTHAI.CLUBPG

  35. I appreciate you sharing this blog post.Really looking forward to read more. Keep writing.

  36. Yes! Finally someone writes about essaytyper.

  37. Normally I do not read post on blogs, but I would like to say that this write-up very pressured me to check out anddo it! Your writing taste has been surprised me. Thank you, very nice article.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *