পাউল সেলান : দুর্বোধ্যতম কবি
গাজী আজিজুর রহমান


কবি ও তার কবিতা এবং তার ব্যক্তিজীবন-এ দুয়ের মধ্যে যেমন পার্থক্য সুদূর তেমনি অন্তরঙ্গ অন্বয়ও হতে পারে একশোতে একশো। যেমন জীবনানন্দের কবিতা, বিষ্ণু দের কবিতা, আবুল হাসানের কবিতা বা তুষার রায়ের। কবিতা শুধু শব্দ-ছন্দ-অলঙ্কার নয়- সামগ্রিক সৃষ্টি, যার জন্ম হয় কবির চেতনা ও অবচেতনার গভীর অতলে। বাস্তবের বীক্ষা স্মৃতি ও স্বপ্ন যার সৃষ্টি-পুরাণ। আধুনিক কবিতায় এর সাথে মূলত সংযুক্ত হয়েছে অভিজ্ঞতা এবং বহুমাত্রিকতার ব্যাসক্তি। সব মিলে রবীন্দ্রনাথের কথাটাই গ্রহণীয় ‘পাঁজি মিলিয়ে মভারনের সীমানা নির্ণয় করবে কে?’ তবু অস্বীকারের উপায় নেই আধুনিকতার যাত্রা উনিশ শতকে আর বিশ শতকে তার চূড়ান্ত উৎসঞ্জন। বিশেষত মার্কসবাদ, বিজ্ঞানের বিকাশ, রুশ বিপ্লব, দু’দুটো বিশ্বযুদ্ধ, নগর-নাগর কেন্দ্রিক যান্ত্রিক সভ্যতা, সংশয় ও নেতিবাদে তন্মনস্ক মানুষ মোকাবিলা করলো যে কালো বন্যার কাল তারই এক অন্তিম লগ্নের অসহায় কবি পাউল সেলান (জন্ম ; ২৩ নভেম্বর ১৯২০, আত্মহত্যা ২০ এপ্রিল ১৯৭০) এক পিরামিডের বিস্ময়, দুর্গমতা এবং আঁধারেরও অধিক আঁধারে নঞর্যে আলোকিত।
সেলান জন্মেছিলেন রুমানিয়ার বুকভনিয়াতে। স্কুল জীবন এখানে শেষ করে ১৯৩৮ এর ফ্রান্সে আসেন চিকিৎসাশাস্ত্র পড়তে। কিন্তু পরের বছরই স্বদেশে ফিরে রোমান্স ভাষাও সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা। ১৯৪০ এ সোভিয়েতের বুকভিয়া দখল, পর বছরই দখল করলো নাৎসী জার্মানি। শুরু হয় ইহুদি গ্রেফতার। বাবা-মাসহ বন্দি হলেন সেলান। পাঠানো হলো বন্দি শিবির Transnistiuci-তে। এখানেই বাবার মৃত্যু। মাকে হত্যা করা হলো গুলি করে। আর সেলান বাঁচলেন পালিয়ে। কিন্তু স্বামীসহ বাঁচতে পারেনি কবি মারিনা ৎভাতেয়েভা। সব কষ্টের অবসান ঘটিয়ে আত্মহত্যা করে তার প্রাণ জুড়ালো। ১৯৪৫-এ বুকভিয়া থেকে সেলান এলেন বুখারেস্টে। চাকরি নিলেন অনুবাদকের। ১৯৪৭-এ এলেন ভিয়েনায়, এখানেই প্রকাশিত হয় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ভস্মাধার থেকে বার্লি’। অস্থির সেলান পরবছর প্যারিসে এসে জার্মান সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করে জার্মান সাহিত্যের প্রভাষক হন Ecole Normale Superieure-র। ১৯৫২-বিয়ে করলেন গ্রাফিক শিল্পী গিছেল লেস্অ্যঞ্জকে। এবং ফ্রান্সের নাগরিত্ব নেন স্থায়ীভাবে। এ সময় তিনি প্রবলভাবে প্রভাবিত হন আত্মঘাতী কবি জেরার দ্য নের্ভাল, গেঅর্ক ট্রাকল, এসেনিন, মায়াকভস্কিসহ বোদলেয়ার, র্যাবোঁ, অ্যালিয়ের, পল ভালেরি, মালার্মে ইত্যাদি আধুনিক কবিতার দেবতাদের দ্বারা আর প্রেষিত ও পীড়িত হলেন মহাযুদ্ধের প্রহরণ ও বিষ সক্রমণে। মৌলিক কবিতাসহ এ সময় তিনি প্রায় পাগলের মতো অনুবাদ করতে থাকেন শেক্সপীয়র, এমিলি ডিকেনসন, আঁরি মিশো, রেনেশার, ব্লখ, মারিঅ্যান মূর, অন্দ্রে বুশ, জঁ দাইভ, এসেনিনসহ ম্যান্ডেলস্টাসের কবিতা।
পাউল সেলান যখন কলম ধরেছিলেন তখন পৃথিবীর বড় দুঃসময়। চারপাশে দুর্যোগ, ক্রন্দন-হাহাকার, নাগিনীরা ফেলিছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস, আগুনে অশনিতে সন্ত্রস্ত, সিদ্ধ মানুষ। কুরু-পান্ডবের যুদ্ধ ছিল কৃষ্ণের ভাষায় ন্যায়-নীতি ও ধর্ম প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ, কারবালার যুদ্ধও ছিল সত্যধর্ম প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ, আমাদের ৭১-এর মহান যুদ্ধও ছিল একটি জাতির স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য ন্যায় যুদ্ধ। কিন্তু প্রথম বা দ্বিতীয় উভয় মহাযুদ্ধ ছিল দুই পরশক্তির বিক্রমের যুদ্ধ, পররাজ্য দখলের যুদ্ধ, নীতি-আদর্শ ও ধর্মহীন কৌরভসুলভ কুকর্ম ও এজিদ সুলভ নিষ্ঠুর পীড়ানন্দের যুদ্ধ। বিশ্বযুদ্ধে যে ধ্বংসযজ্ঞ ও মৃত্যুমঞ্চ সংঘটিত হয়েছিল, নেমেছিল তিমির অন্ধকার আর বেঁচে থাকা মানুষগুলোর মরে ছিল আত্মায়তাতে আর কবিতা লেখা সম্ভব ছিল না (থিওডোর আর্ভোনোর), অসম্ভব ছিল গান গাওয়া, ভালোবাসা প্রেমাষ্পদকে। কারণ ততক্ষণে পৃথিবীর সব শুভশক্তি, কল্যাণীয় শক্তি ও সুন্দরের মৃত্যু ঘটেছে জল-সৃলে। যে বাস্তবতা মূর্ত হয়ে ওঠে পিকাসোর চিত্রে, রাসেল ও রঁলার লেখায়, রবীন্দ্রনাথের সভ্যতার সংকটে, ট্রাকলের আত্মহত্যায়, লোরকরা নির্মম মৃত্যুতে, আনতোনিন আর্তোর (১৮৯৬-১৯৪৮) মানসিক ভারসাম্য হারানোয়, ডিলান টমাসের (১৯১৪-১৯৫৩) মাত্রাতিরিক্ত মদ্য পানে মৃত্যুতে ভার্জিনিয়া উলফ-এর (১৮৮২-১৯৪১) আত্মঘাতী হওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বযুদ্ধের ভায়বহতা লাভ করে মানুষের ঘৃণা ও ধিক্কার। যুদ্ধ নিয়ে আসে মারী, মড়ক, দুর্ভিক্ষ আর যথাতির জরাগ্রস্ত যৌবনহীনতা। বিশেষত নাৎসীদের ‘আউশউইৎস’ নরমেধযঞ্জের পর যখন সব আশাই দুরাশা, সব স্মৃতি রাত্রি দেবী নিক্সের ভয়ংকর প্রতিমা, ক্যামুর ‘দ্য প্লেগ’-এর মতো মহামারী তাড়িত জীবন তখন রক্তের অক্ষরে কবিতা লিখছে সেলান। যে কবিতা কুয়াশা ঘেরা, অরণ্যের অন্ধাকর খচিত, স্কিংক্সের মতো মৃত্যু তাড়িত এবং উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আতঙ্কিত। তিনি চেয়েছিলেন তার এষণা-অভিশঙ্কা, গ্লানি, অশ্লাঘা, মৃত্যু অধিক মর্ম যাতনা পৌঁছে যাক সবার কাছে খঞ্জরের ঘাতক প্রতীকে। মানুষ জানুক যুদ্ধ কত খারাপ, যুদ্ধ কত বীভৎস, যুদ্ধ কত অমানবিক, যুদ্ধ কত নির্মম ও নিষ্ঠুর। এসব অভিপ্রায় ও আত্মক্ষয়কে তিনি একে একে তুলে ধরে ছিলেন ‘পাপি এবং স্মৃতি (১৯৫২), আঙিনা থেকে আঙিনায়’ (১৯৫৫), ‘ভাষার গ্রীল’ (১৯৫৯), ‘না-কারো গোলাপ’ (১৯৬৩), ‘শ্বাসচক্র’ ‘সুতোর সূর্যাবলি’ (১৯৬৮) এবং তার মরণোত্তর আলোক চাপ’ (১৯৭০), তুষার অংশ’ ও ‘কালের খামার’ কবিতাগ্রন্থ পরম্পরায়।
কবি আলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত সুজিৎ ঘোষ সম্পাদিত (১৯৯২) ‘স্মৃতি ও সত্তায় বিষ্ণু দে’ গ্রন্থে এক প্রবন্ধে যুদ্ধ ও মৃত্যুতাড়িত কবি সেলান সম্পর্কে বলেছিলেন “লাঞ্ছিত ইহুদিসম্প্রদায়ের বিধুর প্রতিভু ঐ কবি প্যারিসে ১৯৭০ এর ২০শে এপ্রিল আত্মহত্যা করেন। আজ তাঁর পাঠকদের মধ্যে কোথাও কোনো সংশয় নেই, তাঁর কবিতার আত্মা ব্যাপক সাধারণ্যে নন্দিত হয়নি বেল পাউল সেলানের যে-ক্ষোভ দীর্ঘায়িত ছিল, আত্মহননের মাধ্যমে তারই সংক্ষিপ্ত সমাধানের ট্রাজিক প্রয়াস প্রকাশিত”। কবির এই ক্ষোভ ও মর্মজ্বালা কবিরই সৃষ্ট। বিশ্বযুদ্ধের বিষে এত গভীরভাবে জর্জরিত হতে দেখা যায় না আর কোনো কবিকে। কেবল তুলনা চলে ট্রাকল, এলিয়ট ও মারিনা ৎভাতেয়েভার জীবন কবিতার সামে। তবে দুর্বোধ্যতায় সেলান ছিলেন সবার শীর্ষে। দুর্বোধ্যতায় আমাদের দেশে সুধীন দত্ত, বিষ্ণু দেও তার কাছে শিশু। যে কারণে জর্জ স্টাইনার এর মতো সমালোচকও বলতে বাধ্য হয়েছিলেন “(it’s) very difficult to say anything useful. কবিতার ভাষা নির্মাণে সেলান ছিলেন চরমপন্থীদেরও গুরু। তার কবিতায় ব্যবহৃত অপ্রচলিত শব্দ ও অভিব্যক্তি (আর্কেইজম) এবং নব্য প্রয়োগ বিধি (নিওলজিজম) এতটাই দুর্জেয় ও দুরধ্যয়ী ছিল যে, সে অর্থভেদে সাধারণতো দূরের কথা বিশিষ্টজনের জন্য ও ছিল অনধিগম্য ও অপরিঞ্জেয়। আমি’কে গোপন রেখে ‘তুমি’ ও ‘আমরা’র মধ্য দিয়ে তার কবিতা অগ্রসৃতি লাভ করেছে একবচনে। এখানে রোমান্টিক হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না তার। কারণ তিনি নাৎসীদের বন্দি শিবিরের অবর্ণনীয় অত্যাচার দেখেছেন, দেখেছেন গ্যাসচেম্বারের বীভৎসতা, আর স্বজনদের পোড়া কয়লা দেহের গন্ধে তার জীবনের সব শুভ সুন্দরের গান, কোমলতার কাব্য, স্বভাবের মধুরতা উরে গিয়েছিল যুদ্ধের নৃশংসতায়। তাই তার কবিতায় নন্দনতত্ত্ব রয়ে গেল অনর্পিত ও অনভিপ্রেত। এই সূত্রে সেলান বলেন ‘কবিতা হলো নিঃসঙ্গ। নিঃসঙ্গ এবং (তা সত্ত্বেও) পথে নেমে পড়েছে সে। কবিতা চায় আরেকজনকে, সেই আরেকজনকে তার চাই-ই চাই, তার পরে বড়োই জরুরি ঐ অন্যোন্যতা। সে ‘ঐ আরেকের কাছে গিয়ে হাজির হয়, তার সঙ্গে কথা বলে… তার মধ্য দিয়ে একরকম সংলাপ প্রায়শই দ্বিধাগ্রস্ত সংলাপ জন্ম দেয়।’ ১৯৬০-এ সেলান ব্যুশনার পুরস্কার পেলে সারি-লুইসে কাশানিৎস এই কথাটাই এভাবে ব্যক্ত করেছিলেন- তাঁর নির্জনতা সাধারণীকরণের প্রত্যাশায় স্বকীয়, তিনি আর তাঁর নিজের হয়েই নয়, অন্যদের হয়েও কথা বলে চলেছেন। এমন নির্জন সজনের কবিতার সংগ্রাম আমরা একমাত্র প্রত্যক্ষ করি বিষ্ণুদের কবিতায় এবং রোমান্টিক আবিলতাহীন দুর্বোধ্যতায়।
জগৎ জুড়ে বিশ শতকের কবিতায় কাফেলায় সেলানে কবিতা এতটাই ব্যতিক্রম, এতটাই উত্তরাধিকারহীন যে তার খোলা দ্বারেও কেউ প্রবেশ করে না প্রায়শ। তার কবিতা পড়তে মনে হবে উদ্ভট, যোগসূত্রহীন, নিরবলম্ব, বালু-নুড়ি-পাথরের শুষ্ক বেলাভূমি। মনে হবে কতগুলো শব্দের জট বা দৌড়াদৌড়ি খেলা, যেমন : দানাদার,/দানাদার এবং দড়ি-দড়ি। বোঁটাময়,/ঘন;/ রসােেলা ও উজ্জ্বল; যকৃতোপম,/চ্যাপ্টা এবং/স্থূল; ঢিলে, জটপাকানো;/তিনি, সে”-(সংকীর্ণকরণ) এর সাথে কিছুটা তুলনীয় বিষ্ণুদের “শ্বেতচন্দন লেপ/কুমারী ভঙ্গীমা/ফুলের শয়ান ড্যানায়ে/গন্ধে আতুর/ভারাক্রান্ত মোহ/রাধিকা চাঁদ/সবুজ কুঞ্জবন/সুঠাম সুশী মেদসু কোমল প্রিয়া/সুমধুর কাকলি/বাসনাবিলাস/উপবন পূর্ণিমা/দোল রাত্রি” (উর্বশী ও আর্টেমিস) যেন যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজিত সৈনিকদের বাতিল অস্ত্রশস্ত্র জড় করে কবি সাজান খড়ের স্তুপ। এখানে অর্থের চেয়ে অনর্থই যেন দুর্বিনীত। সেলানের কবিতার এই জটিলতা, দুর্ভেদ্য অগম্যতা সংবৃততা এবং কন্টক শয্যা কবিতার ইতিহাসে এতটাই বিরল যে শিকড় সন্ধানই বাতুলতা।
খোন্দকার আশরাফ হোসেন পাউল সেলানের কবিতার সামনে দাঁড়ানোকে স্কিংক্সের সামনে দাঁড়ানোর মতো মনে হয়েছে দুর্বোধ্য। পরে পড়তে পড়তে উদ্ধার করলেন পাউল সেলানের প্রথম দিককার কবিতার বিষয় প্রায়শ থার্ডরাইখের বন্দীশিবিরে ইহুদীদের নিধনযজ্ঞ। সেলানের কবিতার আরো দুটো প্রধান উপস্থিতি হলো দু’জন লেখকের : অসিপ্ ম্যানডেলস্টাম (osip mandelstam) রুশ কবি যাঁকে স্টালিন হত্যা করেছিলেন, এবং দার্শনিক ও নাৎসীসমর্থক মার্টিন হাইডেগার (Martin Heidegem) যে ভাবেই বলি না কেন সেলান বোদলেয়ার বা এলিয়ট, নের্ভাল বা অ্যাপোলিনিয়ের দ্বারা খুব প্রভাবিত হয়েছিলেন তাতেও সনাক্ত হন না সেলান, স্বগত বৃত্তে সেলান নিয়ত একাকী, এই একাকীত্বই তার আত্মবিনাশের সুড়ঙ্গ ছিল।
সেলানের জীবন ও কবিতা উচ্চকিত নয়, স্বর্ধিত নয়, উত্তেজকও নয়- নির্জনের নিত্য সংগ্রামে তা ট্রাজিক ও মহোজ্জ্বল। অবশেষে পরাবাস্তবের আশ্রয়ে জটিল, রূপকাশ্রয়ী, সাংকেতিক ও চৈতন্য নিরপেক্ষ। তার সব সৌন্দর্য ও শিল্পচেতনা যন্ত্রণা ও কান্নায় মসীলিপ্ত। তার এষণা ও অনুরাগ কাফনে-কুম্ভীপাকে প্রহরণে-মৃত্যুদিকে গদ্যময়। তার প্রকৃতিতে বসন্তে রক্তপাত ঘটে, আবর্জনা স্তুপের ঈশ্বর, দুঃখের দাঁড়িপাল্লা ভরা তার প্রতিটি প্রহর, আর রক্তবৃষ্টি চোখে এই পৃথিবী শুধুই ধূসর, শুধুই আমব্রীয় রাত। সেই রূপশ্রীহীন আশ্চর্য অসুস্থ ও শিরচ্ছেদ করা কয়েকটি শিউলি ফুল উদ্ধৃতি এখন : ১. প্রত্যুষের কালো দুধ আমরা তাকে পান করি সন্ধ্যায় (মৃত্যুসঙ্গীত) ২. সাত গোলাপের পরে শুনি ঝর্ণাধারার জলের ঝাঁপুই (ক্রিস্টাল) ৩. শাওনের মেঘ, কুয়োর উপর তুমি ঘোরো?/আমার সুশান্ত মা কান্না কাঁদে সবার জন্য (চিনার গাছা) ৪. কালো কোকিল/হীরার নাল দিয়ে তার অবয়ব খোদাই করে আকাশের দরজায় (লোহার জুতোর মচমচ আওয়াজ) ৫. সময় হয়েছে পাথরের ফুল হয়ে উঠবার/অস্থিরতার একটা স্পন্দমান হৃদয় পাবার (সূর্যবলয়) ৬. মনিকনীনিকা, সন্তরক, স্বপ্রহীন, নীরক্ত/আকাশ, হৃদয়-ধূসর, হয়তো নিকটে (ভাষার জাল)-এ রকম প্রচুর উদাহরণে ক্লিষ্ট ও ক্লান্ত হবে পাঠকের হৃদয়, কারণ সেলানের সব কিছুই উল্টোপাল্টা, এতদিন মানুষ জানতো ঈশ্বরের কাছেই মানুষকে নত হতে হয়, প্রার্থিত হতে হয়, আর সেলান বললেন “প্রার্থনা করো প্রভু/প্রার্থনা করো আমাদের কাছে/আমরা নিকটবর্তী” (টেনেব্রেই)। এই সাহসের সমাচার কেবল সেলানের পক্ষেই উচ্চারণ সম্ভব।
নিরন্তর হতাশা, ক্ষোভ, অপমান (তিনি নাকি ইভান গলের কবিতা চুরি করে কবিতা লেখেন) আর অশান্তিতে সেলান ক্রমে জটিল থেকে জটিলতর, দুর্বোধ্য থেকে দুর্বোধ্যতর হয়ে উঠতে থাকেন যাপিত জীবনে। হতে থাকেন সমাজ সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন (যে বিচ্ছিন্নতা বা এলিয়েনেশন ছিল তৎকালীন আধুনিকতার এক অন্যতম উপসর্গ। কাফকা, ক্যামু, সার্ত্রের লেখায় যার চূড়ান্ত অধিবাস ঘটেছিল), একাকী এবং পলাতক। ভুগতে থাকেন বোদলেয়রীয় সিজোফ্রেনিয়ায়। এ সব বিষ-মৃণাল ধরে তিনি গড়ে তোলেন এক খ-িত ব্যক্তি গত কূটাভাস কণ্টকিত জীবন। যে জীবনের চাবি থাকতো তার নিজের পকেটে। জীবনের শেষ দিকে আক্রান্ত হন প্যারাইনয়া রোগে (নির্যাতন ভ্রম মানসিক বৈকল্য)। তার কেবল মনে হতো সমস্ত পৃথিবী ও মানুষ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত- যে ফাঁদ থেকে তার নিস্কৃতি নেই! এমন এক দুঃখ কষ্টের দিনে, অসহায় সময় হাঁটতে হাঁটতে অস্ত গোধুলীতে সীন নদীর সাথে দেখা। খর বেগে বয়ে চলেছে নদী আনন্দে না ক্রোধে কবি জানেন না, কেবল জানেন আমাদের কেউ ডাকার নেই, বলার নেই আমরা ছিলাম আমরা আছি আমরা থাকবো- তখনই ভাবলো নদী “আর কেউ আমাদের মাটিও কর্দম থেকে গড়বে না/আর কেউ মন্ত্রোচ্চারে ডাকবো না আমাদের ধুলি/কেউ-না” (প্রার্থনা গান), অতএব ছাই-ছাই, তারপরই শিল্পিত ডলফিনের মতো একটা ড্রাইভ, জল তরঙ্গ’ ও কয়েকটি বুদবুদ… পৃথিবী হারালো এক রক্তাক্ত সংবেদনের কবিকে, যার প্রতিটি উচ্চারণ ছিল পাথর আর তরবারির মতো নিষ্ঠুর এবং সত্য, আর সত্য বলেই তা ছিল সুন্দর, ভয়ঙ্কর সুন্দর।
মিল্টন বা ডানের মতো তার কবিতা ছিল বিগদ্ধ জনের জন্য, আর সেই কবিদের জন্য যারা খোঁজেন কবিতায় প্রণোদনা, অভিনব নির্বেদ, হৃদয় ও রক্তের স্বর, বিষ্ময়কর সুন্দর ও ভ্রাষ্টার প্রাজ্ঞতা-তিনি তাদের প্রার্থিত কবি। যেমন এলিয়ট অডেন, জীবনানন্দ সুধীন দত্ত বা রিলকে-র্যাঁবো। সেলানের কবিতা এক দুর্গম অরণ্যের নিশীথ, এক দুর্ভেদ্য কেল্লার জঠর- যেখানে হামাগুড়ি দিয়েও প্রবেশ করতে পারে না যে কেউ প্রতি সেলান ছাড়া। মহামতি প্লেটো তার একাডেমির প্রবেশের ফটকে যেমন লিখে রেখেছিলেন এখানে সাধারণের প্রবেশ তেমনি পাউল সেলানের কবিতার কপালে যেন লেখা থাকে ‘No Entry’ কবি অভিধায়।
মূল সূত্র : পাউল সেলানের কবিতা : খোন্দকার আশরাফ হোসেন


গাজী আজিজুর রহমান
জন্ম : ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭, দার্জিলিং, ভারত
প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ
প্রবন্ধ, গবেষণা
সাহিত্যে সমাজবাস্তবতার ধারা (১৯৯২, পুনর্মুদ্রণ ২০১৪)
স্বেচ্ছামৃত্যুর করতলে কবি (১৯৯৬, পুনর্মুদ্রণ ২০১৫)
সাহিত্য ও সিংহাসন (১৯৯৯)
নোবেল সাহিত্য পুরস্কারের শতবর্ষ (২০০১)
সাতক্ষীরার ভাষা ও শব্দকোষ (২০০৪)
আধুনিক বাংলা উপন্যাসের বিষয় ও শিল্পরূপ (২০০৯)
কবিদের কবি (২০১০)
কালীগঞ্জের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ (২০১৪)
সম্পাদনা
মরণরে তুহু মম (২০০৪)
খান আনসার উদ্দীন আহমেদ রচনাবলী (১৯৯৯)
অন্যান্য প্রকাশনা
বজ্রের বাঁশি (উপন্যাস)
কালো সূর্যের নীচে (নাটক)
সক্রেটিস (নাটক)
যোদ্ধার জতুগৃহ (উপন্যাস)
পুরস্কার / সম্মাননা
সাতক্ষীরা সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার (১৯৯৫)
ম্যান অব দি ইয়ার, বায়োগ্রাফিক্যাল ইনস্টিটিউট, যুক্তরাষ্ট্র (১৯৯৮)
কবি জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার (২০০১)
শিমুল-পলাশ সাহিত্য পুরস্কার, কলকাতা (২০০৪)
বাংলা ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র পুরস্কার (২০০৭)
লিনট পদক পুরস্কার (২০০৮)
সিকানদার আবু জাফর পদক (২০১২)
কবি সুকান্ত পুরস্কার (কলকাতা ২০১৫)
১৯৮৩ সাল থেকে সম্পাদনা করে যাচ্ছেন ‘নদী’ নামের একটি সাহিত্যপত্র সাথে অসংখ্য অনিয়মিত সম্পাদনা

লেখককে নিয়ে বিশেষ সংখ্যা
https://canadiandrugs.store/# canadian pharmacies compare
indian pharmacy paypal: india online pharmacy – india pharmacy mail order
canadian pharmacy 1 internet online drugstore: international online pharmacy – canadian medications
prescription drugs without doctor buy medicine online medication without prior prescription
https://mexicopharmacy.store/# mexican drugstore online
mexican drugstore online: mexican medicine – п»їbest mexican online pharmacies
discount online pharmacy: Mail order pharmacy – most reliable online pharmacy
https://indiapharmacy.site/# indian pharmacy online
onlinepharmaciescanada com: international online pharmacy – canadian king pharmacy
п»їlegitimate online pharmacies india indianpharmacy com indianpharmacy com
canadian drug store online: Top mail order pharmacies – canadian drug store legit
https://paxlovid.club/# paxlovid covid
can i buy cheap clomid without prescription: clomid best price – can i buy cheap clomid price
slot gacor malam ini
https://claritin.icu/# ventolin 500 mcg
paxlovid price: paxlovid club – paxlovid covid
b52 club
http://gabapentin.life/# brand name neurontin
order generic clomid without insurance: Buy Clomid Shipped From Canada – order generic clomid without rx
Bahis siteleri, bahis oynamak isteyen kullanıcıların internet üzerinden erişebildiği platformlardır.
paxlovid http://paxlovid.club/# paxlovid pharmacy
Bahis siteleri, bahis oynamak isteyen kullanıcıların internet üzerinden erişebildiği platformlardır.
http://paxlovid.club/# paxlovid price
Great post.
can you get cheap clomid: Buy Clomid Shipped From Canada – where buy generic clomid tablets
http://wellbutrin.rest/# wellbutrin pills
Sun52
cost clomid price: can i get clomid without insurance – buy clomid pills
It’s a shame you don’t have a donate button! I’d most certainly donate to this brilliant blog!
I suppose for now i’ll settle for book-marking and adding your RSS feed to my Google account.
I look forward to fresh updates and will talk about this
website with my Facebook group. Talk soon!
Great selection of modern and classic books waiting to be discovered. All free and available in most ereader formats. download free books
http://gabapentin.life/# neurontin 800 mg cost
ventolin 50 mg: Ventolin HFA Inhaler – ventolin 4mg uk
https://gabapentin.life/# neurontin brand name 800mg best price
alternativa al viagra senza ricetta in farmacia viagra online siti sicuri viagra generico recensioni
farmacia online senza ricetta: farmacia online migliore – farmacie on line spedizione gratuita
farmacia online: avanafil – farmacie online autorizzate elenco
http://kamagrait.club/# farmacia online
п»їfarmacia online migliore: farmacia online migliore – farmacie online affidabili
farmacia online senza ricetta: farmacia online miglior prezzo – comprare farmaci online all’estero
viagra prezzo farmacia 2023 sildenafil 100mg prezzo viagra cosa serve
farmacia online migliore: Tadalafil prezzo – farmaci senza ricetta elenco
VPS SERVER
Высокоскоростной доступ в Интернет: до 1000 Мбит/с
Скорость подключения к Интернету — еще один важный фактор для успеха вашего проекта. Наши VPS/VDS-серверы, адаптированные как под Windows, так и под Linux, обеспечивают доступ в Интернет со скоростью до 1000 Мбит/с, что гарантирует быструю загрузку веб-страниц и высокую производительность онлайн-приложений на обеих операционных системах.
Sun52
Sun52
acquisto farmaci con ricetta: avanafil prezzo in farmacia – farmacia online migliore
top farmacia online: Cialis senza ricetta – farmaci senza ricetta elenco
https://tadalafilit.store/# farmacia online senza ricetta
https://weedfindx.com
farmacia online più conveniente: avanafil generico – farmacie online autorizzate elenco
farmacia online miglior prezzo: kamagra – acquistare farmaci senza ricetta
farmacie online affidabili: kamagra oral jelly – farmacia online senza ricetta
viagra 100 mg prezzo in farmacia viagra senza ricetta alternativa al viagra senza ricetta in farmacia
viagra generico recensioni: viagra consegna in 24 ore pagamento alla consegna – miglior sito dove acquistare viagra
b52 club
Tiêu đề: “B52 Club – Trải nghiệm Game Đánh Bài Trực Tuyến Tuyệt Vời”
B52 Club là một cổng game phổ biến trong cộng đồng trực tuyến, đưa người chơi vào thế giới hấp dẫn với nhiều yếu tố quan trọng đã giúp trò chơi trở nên nổi tiếng và thu hút đông đảo người tham gia.
1. Bảo mật và An toàn
B52 Club đặt sự bảo mật và an toàn lên hàng đầu. Trang web đảm bảo bảo vệ thông tin người dùng, tiền tệ và dữ liệu cá nhân bằng cách sử dụng biện pháp bảo mật mạnh mẽ. Chứng chỉ SSL đảm bảo việc mã hóa thông tin, cùng với việc được cấp phép bởi các tổ chức uy tín, tạo nên một môi trường chơi game đáng tin cậy.
2. Đa dạng về Trò chơi
B52 Play nổi tiếng với sự đa dạng trong danh mục trò chơi. Người chơi có thể thưởng thức nhiều trò chơi đánh bài phổ biến như baccarat, blackjack, poker, và nhiều trò chơi đánh bài cá nhân khác. Điều này tạo ra sự đa dạng và hứng thú cho mọi người chơi.
3. Hỗ trợ Khách hàng Chuyên Nghiệp
B52 Club tự hào với đội ngũ hỗ trợ khách hàng chuyên nghiệp, tận tâm và hiệu quả. Người chơi có thể liên hệ thông qua các kênh như chat trực tuyến, email, điện thoại, hoặc mạng xã hội. Vấn đề kỹ thuật, tài khoản hay bất kỳ thắc mắc nào đều được giải quyết nhanh chóng.
4. Phương Thức Thanh Toán An Toàn
B52 Club cung cấp nhiều phương thức thanh toán để đảm bảo người chơi có thể dễ dàng nạp và rút tiền một cách an toàn và thuận tiện. Quy trình thanh toán được thiết kế để mang lại trải nghiệm đơn giản và hiệu quả cho người chơi.
5. Chính Sách Thưởng và Ưu Đãi Hấp Dẫn
Khi đánh giá một cổng game B52, chính sách thưởng và ưu đãi luôn được chú ý. B52 Club không chỉ mang đến những chính sách thưởng hấp dẫn mà còn cam kết đối xử công bằng và minh bạch đối với người chơi. Điều này giúp thu hút và giữ chân người chơi trên thương trường game đánh bài trực tuyến.
Hướng Dẫn Tải và Cài Đặt
Để tham gia vào B52 Club, người chơi có thể tải file APK cho hệ điều hành Android hoặc iOS theo hướng dẫn chi tiết trên trang web. Quy trình đơn giản và thuận tiện giúp người chơi nhanh chóng trải nghiệm trò chơi.
Với những ưu điểm vượt trội như vậy, B52 Club không chỉ là nơi giải trí tuyệt vời mà còn là điểm đến lý tưởng cho những người yêu thích thách thức và may mắn.
farmacie online sicure: farmacia online migliore – farmacie online sicure
comprare farmaci online all’estero: cialis prezzo – acquisto farmaci con ricetta
http://tadalafilit.store/# farmacie online autorizzate elenco
Türkiyede’ki en iyi Bonus veren siteler mi arıyorsun ? Sizlere en iyi deneme bonusu, üyelik bonusu veren siteler listesini sunmaktan gurur duyuyoruz.
comprare farmaci online all’estero: avanafil prezzo in farmacia – farmacia online miglior prezzo
Türkiyede’ki en iyi Bonus veren siteler mi arıyorsun ? Sizlere en iyi deneme bonusu, üyelik bonusu veren siteler listesini sunmaktan gurur duyuyoruz.
pillole per erezione immediata: viagra online consegna rapida – viagra ordine telefonico
farmacia online migliore: kamagra oral jelly – comprare farmaci online all’estero
farmacie online affidabili kamagra oral jelly consegna 24 ore acquisto farmaci con ricetta
cialis farmacia senza ricetta: viagra originale in 24 ore contrassegno – miglior sito per comprare viagra online
comprare farmaci online con ricetta: comprare avanafil senza ricetta – farmacie on line spedizione gratuita
farmacia online migliore: farmacia online spedizione gratuita – farmacia online migliore
farmacia online: farmacia online miglior prezzo – farmacie online affidabili
https://farmaciait.pro/# farmacie online autorizzate elenco
I’ve read so many articles, this one is nice, Regards, IDProperti.com | Pasang Iklan Properti