১৪ নভেম্বর ২০২৩

কবি নুরুজ্জামান সাহেবের শুভম পঞ্চপঞ্চাশত্তম

 

নুরুজ্জামান সাহেব একজন কবিমন চাষি

ইমরুল ইউসুফ

 

কিছু কিছু ফুল আছে কাছে টানে। না চাইতেই ঢেলে দেয় সৌরভ সুষমা। হৃদয় কুসুম। কিছু কিছু নদী আছে হৃদয় হরণী। তার সমস্ত জল ভালোবাসায়-প্রেমে দয়ায় করুণায় অমৃত নিঃস্বনী। কিছু কিছু পাখি আছে ঘুম ভাঙানিয়া। ‘অন্ধজনে দেহ আলো’ বলে ডেকে যায়। শুভ্র সুন্দর সেই পাখি কি আমরা চিনি? চিনি সেই ফুল। সেই নদী। সেই পাখি? এই হৃদয় সংবেদ এবং বোধ থেকে বলা যায় চিনি— খুব ভালো করেই চিনি। যিনি ফুলের সৌরভ দিয়ে কাছে টানেন। হৃদয় কুসুম ঢেলে ভালোবাসেন। প্রবাহমান নদীর মতো বাঁধাহীনভাবে কাছে আসেন। স্নেহাশিস দিতে পারেন আকাশের মতো উদারতা দিয়ে। তিনি কবি নুরুজ্জামান সাহেব। আমার প্রিয় সাহেব ভাই। তাঁর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক নির্মাণে বয়স মোটেও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। নতুন নতুন চিন্তানির্মাণে কোনো জটিলতা সৃষ্টি করেনি। বরং তাঁর নবচিন্তা, নবভাবনা, নববাক্যের রূপায়ন সময়কে বারবার রাঙিয়ে দিয়েছে। মনে নতুন চিন্তার খোরাক জুগিয়েছে।

নুরুজ্জামান সাহেব মূলত কবি। যদিও আমি তাঁকে গবেষকও বলি। কারণ তিনি নতুন নতুন বিষয় এবং সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনাকে উপজীব্য করে ক্ষুরধার, বুলেটবিদ্ধ, সময়বিদ্ধ, রীতিরুদ্ধ কাব্য রচনা করেন। মানসপটে লেখেন হাজার বাক্য। মোছেন, আবার লেখেন। বাক্যসিদ্ধ করে। কাব্যঋদ্ধ করে। আমরা সেই বাক্য অনায়াসেই গলাধঃকরণ করি। হজমও হয়ে যায় নিমিষে। তবে থেকে যায় স্বাদ। কাব্য পাঠের স্বাদ। কাব্য আত্মস্থ করার স্বাদ। সেই স্বাদ, সেই কাব্যরস হৃদয় সংবেদে জমাই। মনের মনিকোঠায় ওঠাই, নামাই, কিন্তু থামাই না।

‘মাটির শরীর ঘাসের ঢাকনা/মগজে ওড়ে ভাবের পাখনা’। কবি নুরুজ্জামান সাহেবের ফেসবুক পেজের ছবির নিচে ‘বায়ো’তে লেখা এই কথন তাঁর মননজীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এজন্য সাহেব ভাইকে ‘কবিমন চাষি’ বললে মোটেও অত্যুক্তি হবে না। কারণ তিনি সবসময় শব্দ নিয়ে ভাবেন। নতুন নতুন শব্দ তৈরি করেন। শব্দগুলো বাক্যের ডানায় বেঁধে উড়িয়ে দেন আকাশে। বাক্যগুলো মেঘ ছুঁয়ে, মাটি ছুঁয়ে, ঘাসের ডগা ছুঁয়ে কালো হরফ হয়ে যায়। সবুজ পাতা হয়ে যায়। ভাবনার খেরো খাতা হয়ে যায়। এসব ভেবেই বুঝি নুরুজ্জামান সাহেব লিখেছেন— ‘আধমরা ছাল/আধমরা পাতা/দিনের এইতো খেরোখাতা/লিখছিলো চুপচাপ আলো/হঠাৎ কালো/হঠাৎ ঢালো-ঝড়/উধাও লাইন/আইন নড়বড়/আগাগোড়া সিসঢালা পথ।’ এভাবেই কবি শব্দ ঢেলে ঢেলে পথ তৈরি করেন। যে পথে কবিপথিক হাঁটতে পারেন অনায়াসেই। হাঁটতে হাঁটতে বিচরণ করেন অবারিত বাংলায়। চোখের দৃষ্টিতে। হৃদয় বৃষ্টিতে ভিজিয়ে ক্যামেরার সেলুলয়েডে তোলেন প্রায় সাড়ে তিনশ ছবি। জানি না, ছবিগুলো ‘তুমি কি কেবলই ছবি’ হয়ে ফেসবুকে থাকবে নাকি কাগজের বুকে প্রজাপতির মতো পাখা মেলে ঝিরঝির করে উড়ে বেড়াবে!

আমরা প্রতিদিন নানান কাজে ব্যস্ত থাকি। নিজেকে ব্যস্ত রাখি। নিজের সৃষ্টিশীলতাকে নিজের মনের সঙ্গে বিনিময় করি। আর এসবের মধ্য দিয়েই আমরা বেঁচে থাকি। নিজেদের বাঁচিয়ে রাখি। বঁচিয়ে রাখি নিজের মৌলিকতা। সাহেব ভাইও তার ব্যতিক্রম নন। তিনি কাব্যচর্চার পাশাপাশি আইন চর্চায়, হোমিওপ্যাথ চর্চায় সদা ব্যস্ত থাকেন। ব্যস্ত থাকেন সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে কাব্যমালা গাঁথায়।

‘হয় জড়িত নয় জড়িত/মনের ভিতর ভয় জড়িত/নানান ঠ্যালায় জর্জরিত/আয়ের ঠ্যালায় কর জড়িত/বউয়ের ঠ্যালায় বর জড়িত/কথার ঠ্যালায় জ্বর জড়িত/হাওয়ার ঠ্যালায় ঝড় জড়িত/ঘরে ঘরে পর জড়িত/সব তাতেই চর জড়িত।’ এই চর ভাবনার চর। এই চর শব্দ চাষের চর। এই চর কাব্যচর। সাহেব ভাই সবসময় কোনো না কোনো চরে বিচরণ করেন। এই বিচরণে চরণ থাকে। শব্দকে বরণ থাকে। পাঠকের মন হরণ থাকে।

কবি নুরুজ্জামান সাহেবের

শুভম পঞ্চপঞ্চাশত্তম।