দী র্ঘ ক বি তা
অভিবাসীর গান
আমিনুল ইসলাম
হে জননী, বিষুবরেখায় হেলান দিয়ে দুচোখ মেলে দ্যাখো–
নদীর মতো বয়ে চলেছি আমি
কাঁধে নিয়ে নিরন্তর কর্মপ্রবাহের জল
আমার সাথে আছো তুমিও
যতদূর গঙ্গা, ততোদূর গঙ্গাঋদ্ধি
যতদূর উড়ি আমি, ততোদূর বিস্তৃত হও তুমিও।
আলেকজান্ডার যা পারেনি
যা পারেনি সুলতান সুলেমান
কিংবা রানি ভিক্টোরিয়া,
আমি তাই করে চলেছি
এখন কোনো মহাদেশেই আর অনুপস্থিত নও তুমি।
আর দ্যাখো, তোমার মুখের জবানকে
হাওয়ার মতো ছড়িয়ে দিয়েছি আমি
পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত!
কান পাতো মেরু হাওয়ায়– উত্তরে, দক্ষিণে
কান পাতো আটলান্টিকে–
ঢেউয়ের গর্জনে, ঈগলের শিসে,
শুনতে পাবে আপন কন্ঠস্বর;
আমি যেন সোলেমানি তখ্ত–
তুমি সওয়ারী,
যতদূর অভিবাসন, ততোদূর মাতৃভাষা
যতদূর মাতৃভাষা, ততোদূর মাতৃভূমি।
স্বপ্নশাসিত শিশুকালেও ভাবিনি স্বপ্নের সীমা
এতটা সম্প্রসারিত হয়;
শিশুকাল বাল্যকাল, কিংবা কৈশোর
কোনোকালেই ভাবিনি
এতদূরে আসবো কখনো,
কোনোদিন এতকাজ করতে হবে আমাকে।
আমার যেনবা কোনো ক্লান্তি নাই, শ্রান্তি নাই
বিশ্রাম নামক শব্দটি লেখা হয়নি
পরিযায়ী প্রাণের সিলেবাসে আমার।
কিন্তু কোথা থেকে আসে এত শক্তি!
কোথা থেকে আসে এত প্রেরণা!
সেটা ভেবে দেখার বিষয়
ভেবে দেখার সময়টুকু ওভারটাইম
ভেবে দেখার সময়টুকু ভয়!
তো ভেবে দেখবো সে কখন!
কাজই আমার পেশা– কাজই আমার নেশা ।
অথচ মাঝে মাঝে কিছু অকৃতজ্ঞ কণ্ঠ
মাঝে মাঝে কিছু আবোল তাবোল
কিন্তু এটাই সত্য যে অভিবাসী কর্মীর
প্রতিটি ঘামের ফোঁটা পড়ার সাথে
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে
একটি করে ডলার পড়ার শব্দ হয়
তৃপ্তির চিত্রকল্প হয়ে হেসে ওঠে গর্ভনর মহোদয়ের চোখ।
ঘর্মাক্ত দেহে জেগে ওঠে প্রেরণা
জেগে উঠি আমি।
অভিবাসীর রক্ত পানি হয়ে পড়ে প্রবাসের মাটিতে
স্বদেশে জমে ওঠে জ্বালানির জোগান
অর্থনীতির চাকা ঘোরে
গতি বাড়ে বিমানের ইঞ্জিনের
ইউনিফর্মের রেশনে জমা হয় শায়েস্তা খানের কাল
পুরাতন পতাকায় নতুন হাওয়া লাগে;
এসবই আমাকে ক্লান্তির বদলে আনন্দ দেয়
সার্ভিসিং হয় জীবনের; বেঁচে উঠি পুনর্বার।
হে জননী, সবাই বলে দাও, দাও, আরো দাও, আরও!
আমি তো দেওয়ার জন্যই অভিবাসী হয়েছি মা গো,
দিনরাত দিয়েই চলেছি
প্রবাসে দিচ্ছি, স্বদেশেও পাঠাচ্ছি
দেওয়া ছাড়া আর কীইবা আছে করার!
দূর হতে আরেকবার নিবিড়চোখে চেয়ে দ্যাখো
আমি আনন্দ রাজ্যের অভিবাসী
আমি বেদনার রাজ্যে অভিবাসী
আমি অনুরাগের উঠোনে অভিবাসী
আমি অভিমানের ভূগোলে অভিবাসী
আমার হাসি পায় না সহগামী ঠোঁট
আমার কান্না পায় না প্রিয়তম দৃষ্টি
আমার আবেগ পায় না সংবেদনশীল বুক
যেখানেই আমি, সেখানেই কাজ
যেখানেই কাজ, সেখানেই আমি
সবার জন্য যখন বিশ্রাম, আমার তখন ওভারটাইম
সবার জন্য যখন মিলন, আমার তখন নৈঃসঙ্গ
সবার জন্য যখন উৎসব,
তখন আমাকে জড়িয়ে অনিঃশেষ উৎসবহীনতা।
ড্রাইভিং শেষে গাড়িচালক মোছে তার গাড়িটি
রাইডিং শেষে ঘোড়ার গায়ে হাত বোলায় ঘোড়সওয়ার
ঘাটে পৌঁছেই নৌকার পাল গোটায় নৌকার মাঝি
কিন্তু আমার কোনো অন্তবর্তী গন্তব্য নেই
আমার জন্য নেই কোনো ক্লান্তি মোছার হাত।
অধিকন্তু সকলেই নয়, দু-একজন মালিকের কথা ভাবলে,
তালগোল পাকায় ভাবনা
জানি না– সবখানি উজাড় করে নিয়েও
কেন মন ভরে না সেইসব মালিকের,
কেন তারা মাঝে মাঝে দাসযুগ ফিরিয়ে আনেন!
তখন আমাকে দেখে-=
জাতিসংঘের ওয়ালে হেলান দিয়ে নীরবে কাঁদে
আইএলও কনভেনশন
বোবার মতো গোঙায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের ঘোষণা।
আর কষ্টের মাঝেও হাসি চেপে রাখতে পারি না
যখনই দেখি–
কতিপয় লোক ট্রাম্প-কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠছে
অভিবাসন বিরোধিতায় আর
তাদের গা থেকে ছড়িয়ে পড়া গন্ধে
প্রকটিত হয়ে উঠছে অস্ত্রহাতে অভিবাসনের ইতিহাস।
হে জননী, বলতে পারো মানুষ এত স্ববিরোধী কেন?
কেন তারা অস্বীকার করতে চায়
নিজেদেরই রচা ইতিহাস ও ঐতিহ্য?
আমি তো কোনও জবরদখলকারী নই
আমার সাথে নেই কোনো উপনিবেশবাদী জাহাজ
কিংবা সাম্রাজ্যবাদী সাবমেরিন;
আদিমানুষের কোনো জনপদ নতুন করে আবিষ্কারের
হাস্যকর দাবিও নেই আমার মনে;
আমি শুধু স্বল্প দামের শ্রমিক মাত্র
যাা নিই, দিই তারচেয়ে অনেক বেশি
তবু কেন এই অদ্ভুত বিরোধিতা?
আমার কুঁড়েঘরে কোনো বোমা পড়েনি বটে
কিন্তু যাদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করেছে
টমাহক আর কার্পেট বোমা,
এবং অত্যন্ত অন্যায্যভাবে,
শুধু ধর্মীয় পার্থক্যের কারণে যারা টেক্সটবুক
একজাম্পল অব ইথনিক ক্লিনজিংয়ের শিকার,
তারা কেন নিরীহ প্রাণটা হাতে নিয়ে
যেতে পারবে না পৃথিবীর আনাচে কানাচে?
ভিটায় গর্জনশীল বোমা, সীমান্তে তাক করা রাইফেল,
এহেন পরিস্থিতি তৈরী করছে কারা?
অভিবাসীরা কেন গ্লোবাল বিশ্বের নন্দঘোষ হবে!
বিশ্বায়নের মঞ্চে প্রবাদের কণ্ঠের মতো সোচ্চার আলোকায়ন
তার বিউটি পার্লার মুখে কালি লাগা দেখে
আমার তো ভীষণ কষ্টই হয়, প্রভুগণের হয় না কেন ?
দাখো, অভিবাসন প্রকৃতিরই ধর্ম
সাইবেরিয়ার হংস-মিথুন এসে ডুডুল-লু
গান গেয়ে যায় তোমার উঠোনে
তুমি তালি দিয়ে উঠো-ওয়ান মোর! ওয়ান মোর!
জলের একতারা হাতে নদীরা চিরদিনই অভিবাসী
আর কান পেতে মুগ্ধ দুপাশের সবুজ ভূগোল;
দক্ষিণ সমুদ্রের স্নানসিক্ত হাওয়া অভিবাসী হয়ে আসে
তোমার চত্বরে আর ফুলে ও ফসলে
ভরে ওঠে তোমার উঠোন;
চন্দ্র সূর্য তারা অভিবাসী প্রাণে বিলিয়ে চলেছে আলো
আর পৃথিবী ভরে উঠছে প্রাণে ও প্রাচুর্যে, স্বপ্নে ও সম্পদে
কখনো এপাশে, কখনো ওপাশে;
মানুষও মূলে অভিবাসী,
নিষিদ্ধ ফলের স্বাদ নিয়ে সেই যে এলো স্বর্গের সিঁড়ি বেয়ে,
ফেরার বাসনা আদি বাগানের গন্ধ হয়ে
জড়িয়ে রেখেছে তার পরিযায়ী মন
L’Oreal কারখানায় তৈরি ইহলৌকিক পারফিউম
যা মুছে ফেলতে পারে নাকো সবখানি,
পারে নাকো নাস্তিকতার সেন্টের শিশিও।
যাক ওসব, আমি আদার বেপারী, অত বড় বড়
জাহাজের খবর হজম করতেও পারব না;
আমার কাজ পেলেই হয়,
কাজ আমাকে মারে না
কাজ না পেলেই যমের ভয় এসে তাড়া করতে বসে
গর্ভবতী রমণীর মতো কাজের মজুদ নিয়ে বুকে
আমি ক্লান্তিকে শক্তিতে পরিণত করি
আমি অশ্রুকে শুকাই আনন্দের বাতাসে
আমি বেদনাকে অভিবাদন জানিয়ে রাখি
আমি জানি এসবের অবসান রচিত হচ্ছে দূরে
যেখানে আমি রেখে এসেছি আমার সোনালি আমানত
হে জননী, তুমি আমার সব আমানত সামলে রেখো
আমার সন্তানের জন্য রেখে আসা চুমুটা
রোজ ওর কোমল অধরে দিও সকালে ও সন্ধায়;
যে প্রিয়জনকে রেখে এসেছি
জলেভেজা শপথের সান্ত্বনায়, তাকে যেন
লুট করে না নিয়ে যায় মতলববাজ মৌসুমী হাওয়া।
সেই কবেই তো জমিদারি প্রথা গেছে
কানু সর্দারের ডাকাতির রাত এখন পুরাঘটিত অতীত
কেন তবুও প্রবাসীর রিজার্ভ রাতে ডাকাতের ভয়
কেন তবু তার অর্জিত রোদে চাঁদাবাজির উৎসব?
আরেকটি কথা, আমি কোনোভাবে দাঁড়িয়েছি ফের
কিন্তু তুমি কি জানো জননী,
প্রবাসীগামীর খরচের খাত কত কিসিমের,
আর কত রকমের শুভঙ্কর বসে আছে–
চৌরাস্তার মোড়ে,
ছদ্মবেশি আড়ালে,
পরাক্রান্ত টেবিলে?
সবিনয় অনুরোধ, আমার মতো আর কাউকে যেন
অস্বীকৃত খরচের খপ্পরে পড়ে
ঋণের বোঝা বাড়িয়ে নিতে না হয়!
আর তোমার সকল ভুল ছিদ্রে তালা লাগাও জননী,
অতিব্যয় আর ভুলপথ সর্বনাশের মূল কারণ।
জানি, ফিরে গিয়ে আমি আর ফিরে পাবো না
আমার কৈশোর আকাশের কাশফুল দিগন্ত
যৌবন নদীর অনেক ঢেউ
হাতছাড়া হয়ে যাবে চিরতরে
আমি গিয়ে ফিরে পাবো নাকো অতিক্রান্ত
মিলনের অগণিত রাত।
রেখে আসা শিশুর ঠোঁট থেকে ছিটকে পড়া হাসি
ফিরে পাবো না চৈতীচাঁদের আলো নিঙড়েও।
সেসব দুঃখ সয়ে নিবো আমি, সেসব সয়ে যাবে আমার
যদি প্রত্যাবৃত্ত চোখে দেখতে পাই–
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের সাথে পাল্লা দিয়ে
চারপাশে গড়ে উঠেছে সমৃদ্ধির উঠোন
আর সেই উঠোনের এককোণে
আমার জন্য প্রতীক্ষারত– আধখানা সচ্ছল জীবন, অন্তরঙ্গ দুটি হাত।
Hello there, You have done an excellent job. I will definitely digg it and personally recommend to my friends. I am sure they will be benefited from this site.
An intriguing discussion is worth comment. I think that you ought to write more on this subject, it might not be a taboo subject but generally people don’t speak about such topics. To the next! Kind regards!!
I am truly happy to read this blog posts which includes lots of useful data, thanks for providing these information.
Hi there, i read your blog occasionally and i own a similar one and i was just wondering if you get a lot of spam responses? If so how do you prevent it, any plugin or anything you can advise? I get so much lately it’s driving me insane so any assistance is very much appreciated.
Hi, i think that i saw you visited my web site so i came to return the favor.I am trying to find things to improve my site!I suppose its ok to use some of your ideas!!
Hi there would you mind stating which blog platform you’re working with? I’m planning to start my own blog in the near future but I’m having a tough time choosing between BlogEngine/Wordpress/B2evolution and Drupal. The reason I ask is because your design seems different then most blogs and I’m looking for something completely unique. P.S Apologies for getting off-topic but I had to ask!
Pretty component to content. I simply stumbled upon your website and in accession capital to say that I acquire in fact enjoyed account your blog posts. Any way I’ll be subscribing on your augment or even I fulfillment you get entry to persistently rapidly.
It’s really a cool and helpful piece of information. I’m satisfied that you shared this helpful info with us. Please stay us informed like this. Thank you for sharing.