
দি পেল ম্যান : জুলিয়াস লং
অনুবাদ : বাবলু ভঞ্জ চৌধুরী

জুলিয়াস লং কোন নামী লেখক নন, বরং তিনি একজন হারিয়ে যাওয়া লেখক। সংক্ষিপ্ত জীবন ছিল তাঁর, মাত্র আটচল্লিশ বছর বয়সে তিনি মারা যান। জন্ম ১৯০৭ সালে আমেরিকায়, মৃত্যু ১৯৫৫ সালে আমেরিকাতেই। ছিলেন একজন আইনজীবি। ১৯৩৪ সালে ‘অয়্যার্ড ম্যাগাজিন’-এ ‘দি পেল ম্যান’ নামে তাঁর একটি গল্প প্রকাশিত হয়। ওটিই তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত একমাত্র গল্প। গল্পটিকে মার্কিন সাহিত্যে হ্যালোইন গল্প গোত্রের একটি উৎকৃষ্ট গল্প বলা হয়ে থাকে।
২১২ নং রুমের লোকটির সাথে আমার এখনও সাক্ষাত হয়নি। এমনকি তার নামটিও জানা হয়নি। তিনি হোটেলের রেস্টুরেন্টে খেতে আসেন না। লবিতেও বের হন না। তিনবার আমরা যখন পাশ কাটিয়েছি, একটি কথাও হয়নি, অভ্যাসবসত অজান্তে দুজন দুজনার দিকে মাথা দুলিয়েছি মাত্র। কিন্তু তার সাথে পরিচয় হওয়াটা খুব জরুরী। বড্ড নির্জন মনমরা জায়গা এটা। বারান্দার ওই বয়স্কা মহিলা ছাড়া লোক বলতে ২১২ নং রুমের ওই লোকটি আর আমি। অবশ্য এ মৌনতার জন্য আমার কোন অভিযোগ নেই, ডাক্তারের পরামর্শেই এমনটি করতে হচ্ছে।
ভাবছি ২১২ নম্বরের লোকটিও অবকাশ যাপনে এসেছেন। বেশ সাদাটে-বিবর্ণ চেহারা, যাকে বলে পেল ম্যান। আমি তাকে অসুস্থ বলে ভাবতে পারছি না, কারণ তার এই শ্বেত-বিবর্ণতা কোন অসুস্থতা ফোটাচ্ছে না, বরং হাতির দাঁতের মতো এর চকচকে সুঠাম মসৃনতার মধ্যে একটা জৌলুস রয়েছে। তার দেহ সৌষ্ঠব একজন স্বাস্থ্যবান মানুষের মতোই, লম্বা ও ঋজু। ধীর দৃঢ় পদক্ষেপে তিনি হাঁটেন। নিশ্চিত বলতে পারি তার গায়ের এমন রং জন্মগত নয়, তাহলে এই গ্রীস্মের রোদে তেতে তিনি দ্রুত কালো হয়ে যেতেন।
নিশ্চয়ই অটোতে করে এসেছেন তিনি, কারণ ট্রেনে এলে তার সাথে আমার দেখা হত। আমার আসার অল্পক্ষণ পরেই তিনি এলেন, রুমে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে আমি যখন নীচে নামছিলাম. তখন সিঁড়িতে তাকে ব্যাগপত্র নিয়ে উপরে উঠে আসতে দেখলাম। আশ্চর্য, গোবেচারা টাইপের হোটেল বয় তাকে রুমটি পর্যন্ত দেখিয়ে দেয়নি।
অবাক লাগছে যে, অনেক রুম খালি থাকলেও তিনি একেবারে মাথার ২১২ নং রুমটিই পছন্দ করলেন। বিল্ডিংটা লম্বা, সংকীর্ণ, তিনতলা। ঘরগুলো সব পূব দিকে, পশ্চিম দিকের দেওয়ালে ঠেস দিয়ে আছে জরাজীর্ণ দোকানপাটের দেওয়াল। বারান্দাটা লম্বা, অন্ধকার–অন্ধকার; শক্ত স্যাঁতসেঁতে কার্পেট থেকে কটু গন্ধ ছড়াচ্ছে। ঝুলকালি মাখা পুরনো বাল্বগুলো থেকে ক্ষীণ আলো বরে হচ্ছে, যেন সেগুলি খবরখানার। বারান্দার এই ভূতুড়ে পরিবেশের জন্য আমি সামনের দিকের এবং দক্ষিণ খোলা দেখে ২০১ নং রুমটি ভাড়া পেতে খুব জোরাজুরি করেছিলাম। কিন্তু হিটলার গোফের রুম ক্লার্ক আমাকে ওই ঘরটি ভাড়া দিতে মোটেই রাজি হল না। স্বল্পক্ষণের জন্য যারা আসে, ঘরটি তাদেরকে ভাড়া দেওয়ার জন্য রিজার্ভ রাখা, এতে বেশি লাভ। ভয় পাচ্ছি ঘরটি পেতে যে পরিমানে একগুঁয়েমি দেখিয়েছি তাতে রুম ক্লার্ক আমার শত্রু হয়ে যায় কিনা।
ত্রিশ বছর আগে আমি যদি শুধু আত্মপ্রত্যয়ী থাকতাম, তাহলে আজ হতাশগ্রস্ত সহকারীর পরিবর্তে পুর্ণ অধ্যাপক হতাম। তবে আমি স্মার্ট, উদাসীন নই, আর সে কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট তাৎক্ষণিকভাবে আমার ছুটি অনুমোদনের সুপারিশ করছেন। সন্দেহ নেই, তিনি আমার ভালোর জন্যই তা করেছেন। আমার হতচ্ছাড়া জীবনে যারা প্রভাব রেখেছেন, আমার সকল ক্ষেত্রেও তারা তা রেখেছেন।
যাহোক, গরমের ছুটি কাটানোটা বেশ ফল দেবে মনে হচ্ছে। ইউনিভার্সিটি থেকে দূরে এসে ভালই লাগছে। ছাত্র-ছাত্রীদের জ্বালাতন নেই, সময়টা বেশ উপভোগ করছি।
এই হোটেল যদি একেবারে গাছমছমে নিরালা না হত, ২১২ নম্বরের ওই পেল ম্যানের সাথে দেখা করার একটা উপায় আমি বের করতামই। এখন রুম ক্লার্কই সে ব্যবস্থা করে দিতে পারে।
ঠিক এক সপ্তাহ হল আমি এখানে আছি। এই ছোট্ট ফাঁকা ফাঁকা শহরে একজনও যদি আমার পরিচিত থাকত, সে আমার দৃষ্টি থেকে পালাত। যারা আয় উপার্জনের জন্য আমার টাকা নিতে এগিয়ে আসছে, তারা দুটো কথা বলতে এগিয়ে আসছে না। ভাবছি, দেড়শ বছর ধরে আমার পূর্ব পুরুষরা এখানকার অধিবাসী ছিলেন―এরকম কিছু বোঝাতে না পারলে হয়ত আমি এদের সমাজে মিশতে পারব না।
মুখচোরা হওয়া সত্বেও আমি দুয়েকবার সাহস করে ওদিকে গিয়েছি। মনে আমার এই সাথ যে, ২১১ নং রুমে আমি লোকটির মুখোমুখি হব। ভাবছি, কেন লোকটি ২১২ নং রুমটি ছেড়ে দিলেন। সামনের দিকে একটি রুম এগিয়ে আসাতে সুবিধে নিশ্চয়ই আছে। গতকাল তিনি যখন আরেকটি রুম থেকে বের হলেন, তখনই বুঝলাম যে তিনি রুম পরিবর্তন করেছেন।
দূর থেকে দুজন দুজনকে আবার দেখলাম। কেমন বিষন্ন কালো গভীর চোখ তার, সে চোখে ক্রুর সন্তুষ্টি। তিনি নিশ্চয়ই জেনে গেছেন যে তার সাথে পরিচিত হতে আমি উদগ্রিব, তবু তার আচরণ দেখে তা বোঝা যায় না। তিনি যদি আমাকে সহজ ভাবেন, তবে ভুল করবেন। কারো পিছনে ঘুরঘুর করবার লোক আমি নই। আসলে সেই বাকবিতণ্ডার পর রুম ক্লার্কের কাছ থেকে এই লোকটি সম্পর্কে কিছুই জানা হয়নি।
ভাবি, তিনি খাচ্ছেন কোথায়? আমি কদিন হোটেলের রেস্টুরেন্টে যাইনি, বাইরে খেতে গিয়েছি। ২১০ নং রুমের প্রত্যেকের কাছে সাহস করে খোঁজও নিয়েছি। যারা যে যে রেস্টুরেন্টে খেয়েছে কোথাও পেল ম্যানের মতো কাউকে দেখেছে কিনা মনে করতে পারছে না। সম্ভবত তিনি এই শহরের ওই ব্রাহ্মণ সেবা-আশ্রমে যান, তা নাহলে কোথাও বোর্ডিং নিয়েছেন। আসল ব্যাপারটা আমার জানা দরকার।
লোকটার সমস্যা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে, তিনি আবার রুম চেঞ্জ করেছেন। আশ্চর্য! সুবিধা পাওয়াই যদি তার ইচ্ছে হয়, তবে কেন তিনি ২০২ নং রুম নিচ্ছেন না, এটা তো প্রায় সামনে, খালি পড়ে আছে।
ভাবছি, তার এই অসুবিধা নিয়ে আলাপ শুরু করা যায়। আমি শুধু বলব, ‘এখন কাছাকাছি যে!’
তিনি আবারও তাই করলেন, এবার ২০৯ নং রুম ভাড়া করলেন। তার এই অহেতুক আচরণ কৌতুহল সৃষ্টি করছে। কারণটা কী? মনে হচ্ছে তিনি হোটেলের অন্যান্যদের বিরক্তির কারণ হবেন। ভেবে পাচ্ছি না যে, একজন মাত্র গেস্টের চার চারটে ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজটি বেলবয় আর আয়া একসাথে কীভাবে সামলাচ্ছে। তিনি যদি গোঁয়ার না হয়ে থাকেন, তবে আমি তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করব।…এসব ভাবতে গিয়ে বেশ অস্থির লাগছে।
এর পরে তিনি কোন ঘরে যাবেন, তা নিয়ে আমি খুব কৌতুহলি হয়ে উঠলাম। কারণ তাকে এবার একটি রুম বাদ দিয়ে আসতে হবে, নইলে যে রুমে আছেন সেখানেই থাকতে হবে। কারণ ২০৮ নং রুমে একজন বয়স্ক মহিলা রয়েছেন। এখানে আসা পর্যন্ত তাকে ওই রুম ছাড়তে দেখিনি, এবং তিনি ছাড়বেন বলেও মনে হয় না।
কোন দৌড় প্রতিযোগিতায় আমরা যখন পছন্দের প্রতিযোগীর দৌঁড়টা উত্তেজনার সাথে দেখি আর ভাবি, এবার কী হবে কী হবে! –ঠিক সেভাবে পেল ম্যান এবার কী করবেন- তাই ভাবছি। শেষ পর্যন্ত আমার ভাবনা হোঁচট খেল।
লোকটিকে তার বর্তমান রুমেও থাকতে হল না, আবার তাকে একটি রুম বাদ দিতেও হল না; ২০৮ নম্বরের মহিলাটি মারা গেলেন। কেউ এই মৃত্যুর কারণ বুঝতে পারল না। সবার ধারণা বয়সের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। আজ সকালেই তাকে কবর দেওয়া হয়েছে। যে কজন সেখানে ছিল, তাদের মধ্যে আমিও ছিলাম। ঠিক যে সময় আমি মর্গ থেকে ফিরে এলাম, দেখলাম পেল ম্যান রুম থেকে বের হচ্ছেন; তিনি ইতিমধ্যেই রুম চেঞ্জ করেছেন।
আমাকে দেখেই তিনি হাসলেন, আমি সাহস পেলাম বটে, কিন্তু সে হাসির অর্থ হল এই যে, আমি অযথা চেষ্টা করছি। বিশ্বাস না করে উপায় নেই যে, এ হাসির তাৎপর্য আছে, যেন তার আর আমার মাঝে এমন কিছু আছে, যা আমি গুরুত্ব দিচ্ছি না। কিন্তু ঠিক তখনই তার ওই হাসিকে স্বাভাবিক বলে মনে হল। মনে হল, এমনিতেই মোনালিসার হাসির মতো কচিত অষ্পষ্ট দেখিয়েছিল।
রহস্যের মানুষটি এখন ২০৭ নং রুমে। এ নিয়ে আর আমি আশ্চর্য্য হই না। বরং তিনি ওই রুমে না এলে আশ্চর্য হতাম। তার সম্পর্কে জানার ইচ্ছা বাদ দিয়েছি। প্রথম দিনে তাকে যতটুকু জেনেছি, এতদিনে তার চেয়ে বেশি আর জানা হয়নি। ভাবি, কোথা থেকে তিনি এসেছেন। আচরণে কখনও কখনও তাকে বিদেশী বলে মনে হয়। এখন তার কন্ঠস্বরটি শোনা দরকার। মনে হচ্ছে তিনি কোন দূর-বিদেশি ভাষায় কথা বলেন। কোনভাবে তাকে যদি কথা বলানো যেত! যদি সেই কলেজ ছাত্রের মতো যা তা বানিয়ে বলার ক্ষমতা আমার থাকত, কিছু না করেই যে নিজেকে সেলিব্রেটি বানিয়ে ফেলতে পারে! কিন্তু আমি যে শুধুমাত্র একজন সহকারী অধ্যাপক।
ভয় পেয়ে গেলাম, আজ সকালে ঘুম ভেঙে দেখি আমি মেঝেতে উপুড় হয়ে পড়ে আছি। আমার সর্বাঙ্গ কাপড়ে মোড়ানো। রাতে ঘরে ফেরার পর ক্লান্তিতে আমি বোধহয় পড়ে গিয়েছিলাম।
ভাবছি, আমার অবস্থা আসলে খারাপ কিনা। যারা আমায় দেখে আঁতকে উঠছেন, আমি তাদের থেকে সরে যাচ্ছি, বোঝাচ্ছি যে আমি ভাল আছি। এই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্টের সেই দীর্ঘ হাততালির কথা মনে পড়ল, আমাকে বিদায় জানানোর সময় তিনি এমন হাততালি দিয়েছিলেন। এর মানে-আমি জীবিত ফিরি তিনি তা চাননি।
যাহোক, আমি ততটা অসুস্থ নই। অবশ্য আমাকে আরও সাবধানী হতে হবে। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে মন খারাপ করার মতো কাছের লোক কেউ আমার নেই। আমি বিয়ে করিনি। কারণ আমি একজন ব্যাচেলরের একাকিত্বের পরিবর্তে একজন স্বামীর একাকিত্ব চাইনি।
সত্যিকথা বলতে কী, মৃত্যুতে আমার ভয় নেই। মরার পর কোন কিছু আছে কিনা, তা নিয়ে ভাবতেও চাই না। কিছু থাকুক বা না থাকুক, আমি আমার মতো চলতে চেষ্টা করি।
নিজের মধ্যে কিছু পরিবর্তন নিয়ে আমি এতটাই আচ্ছন্ন ছিলাম যে, একটা অস্বাভাবিক ঘটনা আমি খেয়াল করিনি; পেল ম্যান আশ্চর্য কাণ্ড ঘটিয়েছেন, তিনি পর পর তিনটি রুম বাদ দিয়ে একেবারে ২০৩ নম্বরে চলে এসেছেন। এখন আমরা খুব কাছাকাছি। ইচ্ছা করলে যখন তখন দেখা করতে পারি। তার সাথে পরিচিত হবার এখন বড় সুযোগ।
ক’দিন যাবৎ বিছানায় পড়ে আছি, বাইরে থেকে খাবার আনিয়ে নিই। স্থানীয় একজন চিকিৎসককেও দেখিয়েছি, একেবারে বাচাল যারে বলে! খুব বিজ্ঞের মতো সে আমাকে দেখল, এবং বাইরে না যেতে পরামর্শ দিল, সিঁড়ি ভাঙতেও নিষেধ করল। এই সামান্য পরামর্শের ফি দশ দশটা ডলার। আমার কোটের পকেট থেকে তা বের করে নিতে বলায় সে চোঁ-করে এমনভাবে তা বের করে নিল, কোন পকেটমারও এত নিখুঁতভাবে নিতে পারত না।
ডাক্তার তখনও বেশি দূরে যায়নি, রুম ক্লার্ক আমাকে দেখতে এল। পরামর্শ দিল যেন আমি লোকাল হাসপাতালে চিকিৎসা নিই। বলল, ওটা আধুনিক এবং ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এত দীর্ঘ সময়ে আমি যা পারিনি, এখন পারলাম, বেশ দৃঢ়ভাবে তাকে বললাম যে, যেখানে আছি সেখানেই থাকতে চাই। লোকটা অদ্ভুতভাবে ভ্রুকুটি করল, সম্মতি না থাকলেও কিছু বলল না। ডাক্তার নিশ্চয়ই সিঁড়িতে তার কাছে বানিয়ে বানিয়ে কিছু বলেছে। আমি নিশ্চিত সেখান থেকেই তার মনে ভয় ঢুকেছে যে, আমি তার এই ভাল রুমটাতে মরে পড়ে থাকি কিনা।
পেল ম্যান যা করার তাই করলেন। গত রাতে মেঝেতে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটার সময় দেখলাম ২০২ নম্বর রুমের দরজাটা অল্প খোলা। বেখেয়ালেই ভেতরের দিকে তাকালাম। দেখলাম, পেল ম্যান একটা রকিং চেয়ারে বসে আরামে সিগারেট টানছেন। আমার দিকে একবার মুখ তুলে তাকালেন, মুখে সেই রহস্যময় হাসি। কিন্তু এবার আর তা ততখানি শিতল মনে হল না। আমি বারান্দায় চলে গেলাম। চারপাশের পরিবেশও ততটা ভূতুড়ে লাগল না। পেল ম্যানের যাবতীয় আচরণ আর আমাকে ভাবাল না, সব অকারণ অর্থহীন মনে হল
ভাবছি, পেল ম্যানের সাথে দেখা করব না। কিন্তু তার পরিচয়টা জানতে হবে। আগামীকাল রুম ক্লার্ককে ডেকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করব।
আমি এখন জানি। আমি জেনে গেছি পেল ম্যানের পরিচয় এবং তার হাসির অর্থ।
আজ বিকেলে রুম ক্লার্ককে ডেকে আমার বিছানায় বসিয়েছিলাম।
‘আচ্ছা বলুন তো!’ হুটকরেই জিজ্ঞেস করলাম, ‘২০২ নম্বর রুমের লোকটি কে?’
রুম ক্লার্ক বুঝতে পারল না, বিরক্ত হল।
‘আপনি ভুল করছেন, ওই রুমটা খালি পড়ে আছে।’
‘বলেন কী’ শিউরে উঠলাম, ‘আমি স্বচক্ষে তাকে দু রাত আগে ওখানে দেখেছি; লম্বা হ্যান্ডসাম, কালো চোখের একটা লোক। গায়ের রংটা ফ্যাকাশে , আমি যেদিন এসেছি সেদিন তিনিও হোটেলে উঠলেন।’
রুম ক্লার্ক ভাবছে আমি তার ওপর জোর করে এসব চাপাচ্ছি।
‘কিন্তু আপনি নিশ্চিত থাকুন, আমাদের রেজিস্টারে ওই দিন আপনি ছাড়া আর কারো চেক ইন করার তথ্য নেই।’
‘সে কী! আমি তাকে বিশবার দেখেছি, প্রথমে তিনি বারান্দার ওই মাথার ২১২ নম্বর রুমে ছিলেন, তারপর এই দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন, এখন তিনি আমার পাশেরটাতে, ২০২-এ।’
রুম ক্লার্ক হাত ছুঁড়ল, ‘পাগল নাকি!’ চেঁচাল। বুঝলাম, সে আমাকে পাগলই ভাবল।
আমি আর কিছু বলিনি। রুম ক্লার্ক উঠে গিয়ে পেল ম্যানের দরজা ঝাঁকাল, তার দৃঢ় বিশ্বাস-ঘরটা খালি।
গত কয়েক সপ্তাহের ঘটনা এখন আমি বুঝতে পারছি। ২০৭ এর সেই মৃত্যুর তাৎপর্যটাও এখন অজ্ঞাত নয়। এমন কী এও বুঝতে পারছি, সেই বয়স্কা মহিলার মৃত্যুর জন্য আমিও আংশিক দায়ী। আসলে পেল ম্যানকে আমিই এখানে এনেছি। তবে আমিই সেই লোক নই, যিনি পেল ম্যানের পথে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এই হোটেলে কেন তিনি আমার কাছাকাছি আসতে একটার পর একটা রুম পেরুনোর পথ বেছে নিলেন, কেন তার পথটি ২০৭ এর সেই মহিলার চৌকাঠ পেরিয়ে ভেতরে গেল, এসবের ব্যাখ্যা আমি দিতে পারি না।
বোধকরি, যে রাতে তিনি একেবারে তিনটি রুম বাদ দিয়ে এলেন, আর আমি অচেতন হয়ে মেঝেতে পড়ে গেলাম, সেই রাতেই তার পরিচয় সম্পর্কে আমার জেনে যাওয়ার কথা। তিনি তো আমার দ্বার পর্যন্ত পৌঁছানোর লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছেন, প্রতিটি রাতে তিনি দুরন্ত অপরাজেয়।
তিনি অচিরেই আসবেন, এবং তার এতদিনের স্থির লক্ষ্য পুরণ হবে, তিনি এই রুমেই থাকবেন। যখন আসবেন, অন্তত আমিও তাকে তার সেই শিতল হাসি ফিরিয়ে দিতে পারব।
সে অবধি দরজা ভেজিয়ে রেখে অপেক্ষা করি।
* * * * *
দরজা ধীরে ধীরে খুলছে…

অনুবাদকের কথা :
জুলিয়াস লং এর ‘The Pale Man’ এর বঙ্গানুবাদ করছি। প্রথম বারের মতো একেবারে অনভ্যস্ত, অপরিচিত ভাষারূপ থেকে আমার নিজের ভাষায় রূপান্তর করতে গিয়ে বুঝেছি, সেই সময় লেখক যা ভেবেছেন, আমাকেও তাই ভাবতে হচ্ছে। অর্থ্যাৎ, আমি বাদ, লং এখন বাংলায় লিখছেন। কারণ আমি সংগত কারনে ওই ভাষার প্রকাশ প্রক্রিয়া আত্মগত করতে পারিনি। তাই আমাকে খুব ভাবতে হচ্ছে। এতো ভাবনা যেখানে, সেটাকে রূপান্তর বলি কেমন করে ? তা তো আস্ত একটা লেখনি। আসলে অনুবাদ সাহিত্য আস্ত আরেকখানা লেখনি। একই জিনিস দুই পাত্রে রাখা, একজন নয়, দুইজন রাখছেন।

Hello, i believe that i noticed you visited my site so i came to go back the desire?.I am attempting to to find things to enhance my website!I suppose its adequate to make use of some of your ideas!!
For the reason that the admin of this site is working, no hesitation very quickly it will be famous, due to its feature contents.
b52 club