
১
একটি ভয়ানক বিভৎস যৌনতা
তারপর ধরাধরি করে ক্ষতবিক্ষত সেই মেয়েটিকে তারা গাছের ডালে ঝুলিয়ে দিলো! তখনও মেয়েটির দু’পা বেয়ে টপটপ করে রক্তের ফোঁটা ঝরছিলো। আকাশে তখন বুদ্ধপূর্ণিমার চাঁদ, যা ছিলো মেঘে ঢাকা।
ঝুলিয়ে দিলো মানে? কোন মেয়েটিকে ঝুলিয়ে দিলো? আরে হ ! মহাশয় বিস্তারিত বলুন, ঘটনা কি?
দেখুন, আমি গল্প বলা শেষ করে ফেলেছি। প্রথম থেকেই আমি শুরু করেছিলাম। ঠিক সদ্য বিবাহিত কোন নর নারীর মতো। কপালের টিকলি থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত। দুঃখিত! আমার আসলে কোথাও ভুল হচ্ছে। সদ্য বিবাহিত পুরুষের বড্ড তাড়া থাকে! যৌন সম্পর্কিত বিষয়ে অভিজ্ঞতার অভাবে এরা বালকের মতো আচরণ করে। পুরুষ তার চরম যৌন সুখটা পেলেও ৮৫% নারী অর্গাজম থেকে বঞ্চিত থাকে। আমার ধারনা, বিয়ের কিছুদিন পর বিবাহিত মেয়েরা এ কারণে বয়স্ক পুরুষের প্রতি চরম আসক্তিবোধ করে। আমার অবশ্য ভুলও হতে পারে।
তিনি আমার মুখে তাকিয়ে থাকেন। হয়তো ভাবছেন, মসকারা করছি কিনা! তিনি বলেন, আপনি গল্প শেষ করে ফেলেছেন? কিছুই তো বুঝতেছি না। আপনি কি আমার লগে ফাইজলামি করছেন?
আমি সত্যিকার অর্থেই গল্প বলা শেষ করে ফেলেছি। আপনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন! আপনার নাকে ঘড় ঘড় আওয়াজ হচ্ছিলো! ভাবছিলাম এতো গভীর ঘুম! আপনি হয়তো বহু বছর ঘুমাননি। হয়তো হাতে ইসরাফিলের শিঙা নিয়ে বসে ছিলেন। এতো বছর পরে আপনার চমৎকার ক্লান্তিকর ঘুম দেখে আমার ভালো লাগছিলো। কে যেন বলেছিলো, ঘুম নাকি ঈশ্বরপ্রদত্ত। যদিও আমার ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই তথাপি মনে হয় ঈশ্বর নিজেও হয়তো দারুণভাবে আপনার মতো ঘুমরোগে আক্রান্ত। অধিকাংশ ধনী মানুষদের নাকি ঘুম হয় না। প্রতি রাতে ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে তাদের নির্ঘুম রাত কাটে। তবে বিষয়টা সাংঘাতিক রকম হাস্যকর হলেও সত্যি, আপনি একজন সুখি পাগলের মতো ঘুমাচ্ছিলেন। যার দুনিয়াতে কিছুই নেই শুধু ঘুম ছাড়া। সত্যিকার অর্থে আপনাকে দেখে খুব মায়া হচ্ছিলো। বিশ্বাস করুন, খুব মায়া লাগছিলো আপনাকে দেখে! তাই আপনাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলিনি। কিন্তু আমি গল্প বলে গেছি নিরবিচ্ছিন্ন বিজলির বাতির মতো। বিরক্তিকর, একঘেয়েমি গল্প শুনে অনেকের ভালো ঘুম হয়। তবে আমার হয় না। গল্প শুনতে আমার বেশ লাগে। আমার পুত্রও হয়েছে ঠিক আমার মতো। গল্প শুনাতে পারলে তার মতো নিরব, একনিষ্ঠ, নিরবচ্ছিন্ন শ্রোতা আর একটিও পাবেন না। এই আমি বলে রাখলুম।
আপনাকে একটি গোপন কথা বলি, দয়া করে কাউকে বলবেন না। কোন একসময় আমি Insomnia এর Chronic Insomnia রোগে ভুগছিলাম। এটি একটি ভয়ংকর মানসিক রোগ। প্রতি রাতে আমি বিভৎস সব স্বপ্ন দেখতাম। রাতের পর রাত আমি নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি। একটুখানি ঘুমের জন্য ঈশ্বরের কাছে ভিক্ষে মেগেছি। নিদ্রাহীনতায় আমার শরীর ভয়ানক রকম ভেঙে যায়। দিনের বেলা আমার শরীর কাঁপতো। আমি ঢলে ঢলে পড়ে যেতাম। মানুষ মনে করতো, আমি হয়তো নেশাটেশা করি।
উপায়ন্তর না দেখে একসময় একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাই। তিনি আমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন। আমাকে জিজ্ঞেস করেন, আমি বাস্তবে বীভৎস কোনকিছু সংঘটিত হতে দেখেছি কিনা! খুন বা অনেকগুলো অপমৃত্যু এই রকম ধরনের কিছু! অথবা আমার কোনকিছুতে ভয় আছে কিনা! আমি বলি, না আমি ভয়ংকর কিছু দেখিনি। আমার অস্থিরতা, স্বপ্নে দেখা দুঃস্বপ্নগুলো শুধু ডাক্তারকে খুলে বলি। তিনি আমাকে প্রেসক্রাইপড করেন। কিছু নির্দেশনা ও বিধিনিষেধ আরোপ করেন। কিছু ওষুধ লিখে দেন। যদিও আমি ওষুধ ক্রয় করিনি। আমি যে ডাক্তারের কাছে গিয়েছি এটাই আমি ভুলে গিয়েছিলাম।
সন্ধ্যার পরে বাসায় চলে আসি। খুব ক্ষিদে পেয়েছিলো। বাসায় ফ্রেশ হয়ে হালকা খাবার খেয়ে ড্রয়িংরুমে সোফাতে শরীর এলিয়ে দেই। তখন বিটিভিতে রাত আটটার সংবাদ চলছিলো। সংবাদ শুনতে শুনতে আমার চোখের পাতা জোড়া লেগে যাচ্ছিলো। আমি চোখের পাতা অতি কষ্টে খুলে রেখে সংবাদ শুনছিলাম। একসময় সোফাসেটের উপরেই ঘুমিয়ে গেলাম আর যখন নিদ্রাভঙ্গ হলো তখন সকাল এগারোটা বেজে গেলো।
কাকতালীয়ভাবে পরেরদিনও ঐ একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো। এরপর থেকে যখনই নিদ্রাহীনতা পেয়ে বসে, আমি শুয়ে শুয়ে বিটিভি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ি। বিটিভি নিয়ে Psychiatrists দের গবেষণা করা উচিত। Insomnia রোগের উপর বিটিভি কিভাবে এতো ভালো কাজ করে বিষয়টি নিয়ে একটি চমৎকার থিসিস লেখা যেতে পারে।
আপনি এটাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
আমার জন্য নিদ্রাহীনতার বিপক্ষে বিটিভির প্রভাব আর আপনার চমৎকার শান্ত সৌম্য ঘুমের উপর আমার গল্পের প্রভাব নিয়ে একটা নাতিদীর্ঘ আলোচনা হতে পারে, নাকি পারে না?
আমি অবশ্য দারুণ হতাশ। আমার বিভৎস যৌনতায় ভরা গল্পটি আপনি শোনেননি বলে। আমি এক মুহুর্তের জন্য গল্প বলা বন্ধ করিনি। কারণ আমার মনে হচ্ছিলো আপনার জন্য চমৎকার একটি ঘুম প্রয়োজন। আমার কিঞ্চিৎ শঙ্কা ছিলো, গল্প বলা থামালে আপনার ঘুমে সাংঘাতিক ব্যঘাত ঘটতে পারে।
এখন যদি আপনি গল্পটি পুনরায় শুনতে চান, তবে করজোড়ে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আমার পক্ষে গল্পটি আবার শুরু করা সম্ভব নয়। আমি দুঃখিত!

২
আমি ও কয়েকজন হিন্দু
আমার যখন দু’বছরের মতো বয়স, আমার মা আমাদের সাত ভাইবোনকে নিয়ে জন্মভিটা (খুলনা জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম) ছেড়ে সাতক্ষীরা চলে আসেন। সাতক্ষীরা জেলার ইটাগাছা গ্রামে একজনের পরিত্যক্ত জমিতে ঘর তুলে আমরা বসবাস শুরু করি। এটা ছিলো হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা।
সেখানে প্রায় চল্লিশ পঞ্চাশ ঘর হিন্দু পরিবার ছিলো! আমি বেড়ে উঠেছি হিন্দুদের সঙ্গে। আমার বন্ধুদের প্রায় সবাই ছিলো হিন্দু। একসময় আমরা পিতৃহীন হয়ে (পিতা জীবিত থেকেও আমাদের কাছে মৃত) চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বড় হয়েছি। এমনও সময় গিয়েছে যে, দুপুর গড়িয়ে বিকেল তবুও বাড়িতে রান্না হয়নি কিছু। আশি, নব্বইয়ের দশকে মানুষের কষ্ট গেছে অনেক। কার্তিক মাস এলে মানুষের ঘরে ঘরে নীরব দুর্ভিক্ষ লেগে যেত। তবে আমার তাতে কি যায় আসে! সোজা চলে যেতাম সুকুমার কাকীর কাছে (কাকীর ছেলের নাম সুকুমার)। আমার মনে আছে কাকী আমাকে কোলে বসিয়ে তাঁর থালা থেকে আমাকে ভাত খাওয়াতেন। কাকী বাড়িতে না থাকলে চলে যেতাম অনিমা দিদির বাড়িতে। এক থালা ভাত, দুধ আর সঙ্গে দিতেন খাঁটি খেঁজুরের গুঁড়। তৃপ্তি ভরে খেয়ে নিতাম। তারপর দিদির বাড়ির বারান্দায় ঘুমিয়ে পড়তাম। হয়তো ঘুমের মধ্যেই কোন এক ফাঁকে মা এসে তুলে নিয়ে যেতেন। ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখতাম আমি আমাদের বাড়িতে শুয়ে আছি। বাড়ির পাশে ছিলো সড়ক ও জনপদ বিভাগের কলোনি। সেখানে প্রচুর ফলজ গাছ ছিলো। আমার হিন্দু বন্ধুদের নিয়ে জ্যৈষ্ঠের আগুন ঝরা দূপুরে আম কুড়াতে যেতাম। দুপুরের হালকা বাতাসে পাকা আম ঝরে পড়তো। সে আমের স্বাদ অন্যরকম। সারাদিন টো টো করে ঘুরে বেড়ানো, গাছের ফল চুরি আবার কখনো কখনো মারামারিও হতো। সেসব বন্ধুদের নাম আজও আমি ভুলিনি। শ্যামল, সুবর্ণ, বেনু, মনীন্দ্র, খগা, প্রতাপ, বীরেন।
তবে সবচেয়ে মজা হতো দুর্গা পূজার সময়। ঢাকের তালে তালে নাচা, হই হুল্লোড় আর সুস্বাদু প্রসাদ আহ! সেসব কি ভুলা যায়! আমাদের বাড়িতে থালা ভরে আসতো প্রসাদ। লুচি, ডাল, কলা, বোরই, মিঠা আলু, আপেল আরও কতকিছু!
নরেন কাকা নতুন বিয়ে করেছেন। নতুন কাকীর নাম বিন্দি। খুব সুন্দরী ছিলেন। আমি বিন্দি কাকীকে কাকী বলতাম না, ডাকতাম বৌদি। তাতে নরেন কাকা রাগ করতেন না। শুধু বলতেন, তুই কবে না আবার গুবলেট পাকিয়ে ফেলিস! বিন্দি বৌদি আমাকে খুব ভালোবাসতেন। একবার নরেন কাকা গেছে তার পিসির বাড়িতে পিসিকে আনতে। ভালো রান্নাবান্না করতে হবে। নরেন কাকার পিসি মোরগের ঝোল খেতে নাকি খুব পছন্দ করেন। কিন্তু নরেন কাকা মোরগ না কেটে পাশের গ্রাম বাঁকালে গেছেন পিসিকে আনতে। অগ্যতা বিন্দি বৌদি আমাকে দিলেন মোরগ কাটতে। বৌদি আবার কাটাকুটি দেখতে পারেন না। আমরা মুসলমানরা তো ধড় থেকে মাথা আলাদা করিনা। কিন্তু হিন্দু রীতিতে আলাদা করার নিয়ম। আমি শুধু বললাম, বৌদি তুমি চোখ বন্ধ করে পা আর ডানাগুলো ধরে রাখো, বাকীটা আমি দেখছি। এদিকে আমি মুসলিম রীতিতে মোরগ জবেহ করে বৌদিকে বললাম ঝুড়ির মধ্যে ফেলতে। বৌদি ফেলে দিলো। আমি মোরগ জবেহ করে বাড়ি চলে আসলাম। এর কিছুক্ষণ পর আবার ডাক পড়লো। বৌদি বললো, একি করেছিস! তুই মোরগের ধড় ফেলিস নি? এখন কি হবে? আমি সরল সোজা উত্তর দিলাম, ধড় ফেলতে হয় নাকি? শিগগির ধড় ফেল! আমি মরা মোরগের ধড়, মাথা থেকে আলাদা করে দিলাম। বৌদি বললেন, খবরদার মোরগ কাটার কথা কাউকে বলিস না যেন! রাতে পিসি এলেন। আমারও ডাক পড়লো! পেট পুরে মোরগের ঝোল দিয়ে ভাত খেয়ে বাড়ি ফিরলাম।
আমার প্রথম কষ্ট এই বিন্দি বৌদিকে নিয়ে। একদিন সন্ধ্যাবেলা বৌদি আমাকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদলেন। কি হয়েছে বৌদি? বৌদি জবাব দিলেন না। আমিও কিছুই বুঝলাম না। কিন্তু ভেতরটা কেমন জানি হু হু করে উঠলো! মনে মনে ভাবি, হয়তো নরেন কাকা বৌদিকে বকাঝকা দিয়েছেন! তবে কাকা বৌদিকে কখনো মারতেন না।
পরদিন সকালে শুনি, কাকা আর বিন্দি বৌদি ইন্ডিয়া চলে গেছে। তারা আর কখনো ফিরবে না। কেন চলে গেলো? মাকে বললাম, মা, বিন্দি বৌদি চলে গেলো কেন? মা আমার প্রশ্নের উত্তর দেয়নি। পরে অনেক বড় হলে জেনেছি, ওয়ার্ড কমিশনারের ছেলের চোখ পড়েছিলো বিন্দি বৌদির উপর। এর কিছুদিন পর আমরাও সাতক্ষীরা ছেড়ে ফিরে আসি আমাদের জন্মভিটায়।
গত দু’বছর পূর্বে সেই ইটাগাছার হিন্দু পাড়ায় গিয়েছিলাম। এখন সেখানে মাত্র তিন ঘর হিন্দু পরিবার আছে। সুকুমার কাকী আছে। কাকীকে বললাম- সুকুমার দাদা কৈ? বললো- ও ইন্ডিয়ায় থাকে। তা আপনি যাননি কেন? আমি যাবো না। স্বামীর ভিটা রেখে কৈ যাবো রে পাগল !
আমি খুঁজে ফিরি আমার সেই হিন্দু বন্ধুদের। খুঁজে ফিরি অনিমা দিদিকে, বিন্দি বৌদিকে, নরেন কাকাকে। কেমন আছে ওরা? খুব কি ভালো আছে! আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে!

৩
নগ্ন নারীর লাশ এবং এক বিষন্ন বসন্তের গল্প
অনেক বছর পর, মাকে নিয়ে গ্রামে গিয়েছি শুধু বসন্ত দেখবো বলে। গাঁও-গ্রামের বসন্তের রুপ দখিনা বাতাসের মতোই ঝরঝরে। সঙ্গে জন্মভিটার টান, ভাঙাচোরা মাটির বাড়িটা অদৃশ্য জোয়ারের মতোই টানে। বলাবাহুল্য, উঠেছি এক আত্মীয়ের বাড়িতে।
তবে সেবার বসন্ত ছিলো বিষন্ন, হাহাকার আর নিরুত্তাপ। কেননা বসন্ত মানে নতুন কুড়ি, চিরায়ত সবুজ, প্রজাপতি, মৌমাছি, পাখির কলরব, হট্টগোল তবে তা বিলীন হয়েছিল প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায়। বসন্তের সে রাতে প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টিতে খড়ের চালের ফাঁক গলে চুইয়ে চুইয়ে পড়েছিলো বরফ শীতল পানি। থালা, বাটি, হাড়ি পেতে রেখে ঠাণ্ডা পানি ধরা হয়েছিলো যাতে পানিতে মাটির মেঝে কাঁদা না হয়ে যায়। তবুও মাটির মেঝে কাঁদার মতো নরম হয়ে গিয়েছিলো। আমরা সারারাত ঘুমায়নি। শীতে কাঁপছিলাম। মা বলছিলো, বাছা! আয়াতুল কুরসী পড়ো! সুরা ইয়াসীন পড়ো! আমি জোরে জোরে আয়াতুল কুরসী পড়েছিলাম। সেই ঝড়-বৃষ্টির রাতে আয়াতুল কুরসী পড়তে পড়তে বারবার তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছি। যখনই ঢলে ঢলে পড়েছি মা আমাকে ধরে রেখেছে যেন কাঁদা পানিতে পড়ে না যায়। বসন্তের সে রাত ছিলো এমনই বিভীষিকাময়।
সেবার ঘুমিয়েছিলাম অনেক সকাল অবধি। সকাল গড়িয়ে দুপুর। তবুও সূর্যের মুখ কেউ দেখেনি। পৃথিবীতে রাত নেমেছিলো দীর্ঘক্ষণ; দুপুর পর্যন্ত। তখনও টিপ টিপ করে বৃষ্টি ঝরছিলো। বেশ ঠান্ডা। আমি পুরাতন কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘরের কোনে জড়োসড়ো হয়ে বেঘোরে ঘুমোচ্ছিলাম।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। গাছের পাতার ফাঁক গলে সূর্যের শেষ নরম রাঙা আলো আমার ছায়াকে আদমের মতো দীর্ঘকায় করে তুলেছে। মাঠের উত্তরের জঙ্গল থেকে শিয়ালের হুক্কাহুয়া শব্দ যেন প্রতিবাদ করছে আমার ছায়াকে। কোথা থেকে দু’টো কুকুর ছুটে এলো এবং সমস্বরে চিৎকার করে উঠলো। কুকুর যেন বলছে, চুপ থাক বেয়াদব। শেয়ালদের কাছে আমি যেন অবাঞ্ছিত কেউ। কুকুর এটা মেনে নিতে পারে না। সে আমার পক্ষাবলম্বন করে। যদিও কুকুর খুব ভালো করেই জানে, প্রাণীদের পৃথিবীতে মানুষ সবসময়ই দখলদার। মানুষ ভুলে গেছে সে প্রাণী। প্রাণী বলতে মানুষ এখন লজ্জাবোধ করে!
আদমের মতো সেই দীর্ঘ ছায়ার মধ্যে একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখি। একটি নগ্ন নারীর লাশ। শুভ্র কুয়াশার মতো গায়ের রঙ। চুলগুলো এতো লম্বা যে, তা পাশের মরা নদীর সবুজ জলে, জলজ শেওলার মতো ভেসে বেড়াচ্ছে। চুলের ভেতরে রুপোলী পুঁটি মাছ পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি। এটা এখন নিশ্চিত মাছেদের জন্য অভয়ারণ্য হবে। চমকে উঠি যখন নারীটির মুখ দৃষ্টিগোচর হয়! আশ্চর্যজনকভাবে নারীটির কোন চোখ নেই। সেখানে কেবল কিছু সবুজ কচি ঘাস জন্মেছে এবং আরও আশ্চর্যের ব্যাপার হলো সেই কচি কচি ঘাসে অজস্র ফুল ফুটেছে। ঘাসফুল! এজন্য নারীটিকে মোটেও খারাপ লাগছে না বরং এখন মনে হচ্ছে চোখ থাকলে আরও বেশি কদর্য লাগতো। আমার খুবই ভয় লাগে। আবার শিয়ালের হুক্কাহুয়ার শব্দ পাই। খুব ভয়ে ভয়ে নারীটির শ্বেতকায় স্তনের দিকে চেয়ে থাকি। নিটোল স্তন। নীলাভ স্তনবৃন্ত! দুই স্তনের মাঝে উপত্যকার ঢালু। আকাশের দিকে চেয়ে থাকে স্তন। সিঁদুরের মতো লাল মেঘ, রাঙিয়ে দিয়েছে স্তনকে।
স্তনবৃন্ত কি নীলাভ হয়? আমার জানতে হবে!
একটি নীল মাছি। বেশ বড়সড়। নারীর নগ্ন পা বেয়ে হাটু, হাটু থেকে উরুর উপর এসে পড়ে। যদিও নারীটির পা জোড়াকে পা বলে মনে হয় না। মনে হয় পবিত্র কিতাব, যা প্রতিনিয়তই অতি যত্নে লুকিয়ে রাখা হতো এবং প্রায়শই পবিত্র কূপের জলে ধৌত করা হতো। অদ্ভুত রকম একটি গন্ধ নাকে লাগে। নারীটির পায়ের অতি সন্নিকটে কয়েকটি বেলীফুল। কিন্তু এই বেলীফুলের গন্ধ ঠিক কর্পূরের মতো তীব্র ঝাঁঝালো। আমি সহ্য করতে পারি না! দু-হাত নাড়িয়ে নীল মাছিটিকে সরিয়ে দিতে চাই কিন্তু পারি না। সে আবার উড়ে এসে বসে পড়ে। হাত নাড়তে থাকি, নাড়তেই থাকি। একসময় মনে হয়, পেছন থেকে কে যেন আমার হাত দু’টি বেঁধে রেখেছে। শক্ত, আষ্টেপৃষ্ঠে। চাইলেও হাত নাড়াতে পারি না। নীল মাছি নতুন উদ্যমে উরু থেকে উরুর সন্ধিক্ষণে যাত্রা শুরু করে। ব্যর্থ প্রেমিকের মতো চিৎকার করে কাঁদতে থাকি। তীব্র সে চিৎকারের ধ্বনি প্রতিধ্বনি হয়ে আঘাত করে বুকে। কিন্তু এই চিৎকার আমি নিজেই শুনতে পাই না! হতবিহ্বল আর দারুণ ব্যর্থতায় চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরে পড়ে নারীটির পায়ের পাতায়। নীল মাছিটি ভয়ংকর শব্দ করে হেসে ওঠে। ভয় পেয়ে গুঙিয়ে উঠি। আমি অক্ষম অবনত, নীল মাছি উদ্ধত, গর্বিত। পরিষ্কার দেখতে পাই, নীল মাছিটি দু’উরুর সন্ধিক্ষণে শুষে নিচ্ছে সমস্ত রস! মাছিটির আগ্রহ এবং নিবিড় মনোযোগ, আমার কাছে একজন ধ্যানমগ্ন ঋষির মতো লাগে। অভীষ্ট লক্ষ্য যার অভিলাষ। নীল মাছিটি শুভ্র শিলাবৃষ্টির মতো ছোট ছোট অজস্র ডিম নারীর দু’উরুর সন্ধিক্ষণে ভরে দেয়। পরক্ষণেই ডিম থেকে বেরিয়ে আসে হাজার হাজার নীল মাছি। শুষে নিচ্ছে নারীর সমস্ত রক্ত, রস। ডিম পাড়ে, আবার হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ নীল মাছির জন্ম হয়। রক্ত, রস শুষে শুষে পান করে। নারীর সমস্ত শরীর এখন শুভ্র রঙের পরিবর্তে শুধু নীল রঙ আর অবিরত বিভৎস এককস্বরে ভন ভন শব্দ। এই বিভৎস শব্দের মাঝেই একসময় নারীটি অদৃশ্য হয়ে যায়। নীল মাছিগুলো আমার সামনে ভয়ংকর লাল জিহ্বা বের করে ভেঙচায়। যেন তারা এ রণক্ষেত্রে বিজয়ী। তাদের চকচকে চোখে তৃপ্তির ঢেউ দোলে আর ঠোঁটে লেগে থাকে শুভ্র কুয়াশা! ওরা উড়ে যায় উত্তরের জঙ্গলে। যেখানে কিছুক্ষণ আগে শিয়াল ‘হুক্কাহুয়া’ শব্দে ডেকে উঠেছিলো। আর পারি না! আমার দৃষ্টি পায়ের পাতায় নত করি। এখন কি রাত নেমেছে? আমি জানি না। খুব কষ্ট হয়। তীব্র কষ্টে আমার চোখ নীল রঙ ধারন করে। কিছু নীল রঙ পাশের নদীতে ঝরনার মতো ঝরে পড়ে। ঝরে পড়ার ঝপাৎ ঝপাৎ শব্দ পাই!
খুব তাড়া আছে আমার। সুদীর্ঘকাল না খেয়ে আছি। কত জনম না খেয়ে আছি? মনে করতে পারি না। ঘরে ফিরতে চাই। পারি না। আমি ক্লান্ত শ্রান্ত একজন অপুরুষ, এই নারীর পায়ের সামনেই বসে পড়ি। যদিও সেই সুন্দর শুভ্র পবিত্র কিতাবের মতো পা জোড়া আর একটুও অবশিষ্ট নেই। তবে জায়গাটি ছিলো ভেজা আর কর্দমাক্ত। যেখানে আমার চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরেছিলো। হঠাৎ কে যেন আমার পিঠে চাপড় দেয়। বলে, ওঠ ওঠ ওঠ! উঠে পড়ো! উঠে পড়ো! আমি চোখ মেলে তাকাই! দেখি আমার সামনে আমার মা বসে আছেন!
মা বলে, কিরে আর কতক্ষণ ঘুমাবি? বেলা তো দুপুরে গড়ালো। সকালের খাবার খাবি না? আমি বোকার মতো চেয়ে থাকি।
মা বলে, শুনেছিস খবর?
আমি বলি, কি?
মা বলে, গত রাতে কুলসুম মারা গেছে!
আমি বলি, কোন কুলসুম মা?
মা বলে, তোর সঙ্গে পড়তো যে কুলসুম!
আমি বলি, কুলসুমের বাড়ি কোথায়?
মা অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকে।
মা বলে, মধ্য পাড়ার ইলিয়াছদের বাড়ীর পাশে।
আমি বলি, শুভ্র কুয়াশার মতো দেখতে যে মেয়েটি!
মা আমার শুভ্র কুয়াশা রঙ বোঝে না। বলে, খুব পরিষ্কার দেখতে যে মেয়েটি।
আমি বলি, কি হয়েছিলো মেয়েটির?
মা বলে, সাপে কেঁটেছে!
আমি বলি, একটি সাপ?
মা বলে, তা জানি না। ওদের ঘরের মেঝের গর্ত থেকে একুশটি সাপ ধরা পড়েছে।
আমার চোখের পর্দায় একটি কবিতা ভেসে ওঠে। বিড়বিড় করে কবিতাটি আওড়ে যায়!
‘যখন চাঁদ ওঠে আকাশে
তখন প্রদীপ নিয়ে যেও না বাইরে,
যদি যাও, চাঁদের হৃদয় তাহলে ভেঙে যাবে।
যখন বাগানে ফুল ফোটে
কাঁচি নিয়ে যেও না বাগানে
যদি যাও, ঘাস ফুলের হৃদয় তাহলে ভেঙে যাবে।
যদি তুমি ভালোবাস কোন মেয়েকে
যে তোমাকে ভালোবাসে,
তবে প্রতিশ্রুতি দিও না অন্য কোন নারীকে,
যদি দাও, মেয়েটির হৃদয় তাহলে ভেঙে যাবে।’
কুলসুমের মুখটি মনে করার চেষ্টা করি নিরন্তর। কিন্তু পারি না। সামনের দেয়ালে একটি শূণ্য চোখের নারীর ছবি ভেসে ওঠে। যার দু’টি চোখ বস্তুত কচি কচি ঘাসে ভরপুর।
কি চমৎকার ঘাসফুল ফুটে আছে! শত শত হাজার হাজার! আচ্ছা, ঘাসফুলগুলোর রঙ কেমন ছিলো?


রেজাউল করিম
জন্ম : ২ জুন ১৯৮৫, খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার গজালিয়া গ্রামে। জনক- মােঃ তফিলউদ্দীন ঢালী, একজন বাউন্ডুলে, ভবঘুরে ; জননী, রমেছা খাতুন, সংগ্রামী বাঙলার প্রতিচ্ছবি। জননীর ছায়াতলে, গ্রাম আর শহরের আলাে আঁধারে বেড়ে উঠেছেন
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিএ (অনার্স), এমএ । জনগণের সেবকরূপী সরকারি চাকুরে
বাউল আঁখড়ায় সময় কাটানাে প্রিয় শখ

প্রকাশিত গ্রন্থ : ক্যানভাস ও নারী (কাব্যগ্রন্থ), দেবতা (উপন্যাস), তোমার কাছে যাবো (কাব্যগ্রন্থ)
কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে সাহিত্যের আঙিনায় প্রবেশ। কবিতার শব্দাবলী তার কাছে ধর্মীয় বাণীর মতাে। প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘ক্যানভাস ও নারী’। বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর প্রতিক্রিয়াশীল গােষ্ঠী দ্বারা লেখক হামলার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন পালিয়ে ছিলেন। ঠিক ফেরারি আসামীর মতো। বিরূপ রাজনৈতিক পরিবেশের কারণে পরবর্তীতে বইটির প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়া হয়। ‘দেবতা’ লেখকের প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস। কল্পনা ও বাস্তবতার মিশ্রণই এ উপন্যাসের মূল সুর। মানব জীবনের আদিম প্রবৃত্তি, প্রেম বৈকল্য, ধর্মীয় গোঁড়ামী, ধর্ম পালনের বিভিন্নতা চিহ্নিত করার পাশাপাশি আদিবাসী সম্প্রদায়ের ধর্ম, সংস্কার, সংস্কৃতির প্রতি লেখকের দূর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। লেখক এই উপন্যাসের ভেতর দিয়ে তার শেকড় খুঁজেছেন। যে শেকড় অসাম্প্রদায়িকতার, যার ভেতর দিয়ে লেখক ধীরে ধীরে বেড়ে উঠেছেন।
ছোটগল্পকার রেজাউলের ছোটগল্পে চমক আর তীব্র আকাঙ্ক্ষা আপনাকে বাধ্য করবে গল্পের শেষ পরিণতি পর্যন্ত ধরে রাখতে। অধিকাংশ গল্পে তিনি কথক হিসেবে আবির্ভূত হন। জীবনের সঙ্গে কল্পনার মিশ্রণ তার গল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। পাঠক যখন গল্পের ভেতর পরম জাদু বাস্তবতার পাহাড় বেয়ে উপরে ওঠে, সে ঐ গল্পের চরিত্র হয়েই একসময় নিজেকে পাহাড় চূড়ায় আবিষ্কার করে। এতে পাঠক আন্দোলিত হন, হন বিমোহিত হন
https://cialisbusd.com/ tadalafil cost in canada
cialis without prescription best price usa tadalafil
buy cialis tadalafil online
cheap generic cialis for sale what is tadalafil
tadalafil side effects tadalafil without a doctor prescription
generic cialis online fast shipping tadalafil dosage
tadalafil cost in canada generic tadalafil from uk
where to get tadalafil generic cialis online fast shipping
Аppreciate tһis post. ᒪet mе try it oսt.
mү weeb ρage – пратите ове ствари на мрежи
cialis without prescription where to get tadalafil
side effects for tadalafil buy generic cialis online with mastercard
where to order tadalafil tablets tadalafil liquid
tadalafil daily online lowest price cialis
It is perfect time toо make somе plans for thhe future and іt iѕ timе to be hapⲣy.
Ӏ’ve read thіs post and if Ӏ could I want to
suggesst ʏоu few intеresting thingѕ or tips. Mabe you couⅼd ᴡrite next
articoes referring tⲟ thіs article. Ι ԝant too rеad even mօrе thiongs about
it!
Ѕtop by my web blog; 더 많은 정보를 읽어보세요
tadalafil generic what is tadalafil
tadalafil online canada generic tadalafil
I love youг blog.. vеry nice colors & theme. Ɗіd you mɑke tһis website yoᥙrself or did yoᥙ hiore someone to ɗo it for
you? Plz reply аs I’m ⅼooking to construct my own blog and ѡould like
tо find outt where u ɡot this frⲟm. many thanks
Feel free to visit my weeb pɑge; lees trending topic
tadalafil online with out prescription where to buy generic cialis online safely
buy generic cialis online with mastercard https://extratadalafill.com/
cheap cialis pills for sale https://cialistrxy.com/
Thiѕ design is spectacular! Yoou ᧐bviously know how to ҝeep ɑ reader entertained.
Вetween yourr wit аnd у᧐ur videos, I was almost moved to start my oᴡn blog (well,
almost…HaHa!) Wonderful job. І гeally loved whɑt уou haad tߋ ѕay, and more than tһɑt, how you ρresented іt.
To᧐ cool!
mʏ website … đọc thêm thông tin
https://cialisusdc.com/ tadalafil
Pretty nice post. I just stumbled upon your blog and wanted to say that I have truly enjoyed surfing around your blog posts. In any case I will be subscribing to your rss feed and I hope you write again very soon!
I blog frequently аnd I genuinely tһank you f᧐r yⲟur іnformation. Thіs article
haѕ realⅼy peaked my inteгеst. I wіll book mark yoսr website ɑnd keeр checking foг neԝ inf᧐rmation аbout ojce per ԝeek.
Ӏ subscribed tо yourr Feed toⲟ.
Here is my site … เข้าสู่ระบบสล็อต
modafinil 200mg brand modafinil 100mg oral
how Long Will Cialis Daily Take To Work?
what Is The Minimum Hours Can You Wait In Between Doses Of Cialis?
order provigil generic order modafinil 200mg online
how Fir, Will My Erection Be Using Cialis?
Cialis How Long Towork?
how To Get The Best Results From Taking Cialis?
buy modafinil 200mg pills buy modafinil 200mg pill provigil 200mg pill
An impressive share! Ӏ’ve just forwarded tһis onjto a co-worker ᴡho
was d᧐ing a littlе reseaгch on thіѕ. And he
iin fact bought mme lunch dᥙe t᧐ the
fact that I discovered іt for hіm… lol. So alpow mе to reword this….
Thankѕ for the meal!! Βut yeah, thanbks for spending tһe time to talk аbout tһis issue һere on your website.
Ꮮooҝ at my webvsite :: فتحة حرة
These pills actually help in treating erectile dysfunctions cialis 5 mg
Ꮐreetings fro Ꮮoѕ angeles! І’m bored at worк so I
decided toⲟ chsck oout your website on my iphone Ԁuring lunch break.
І really like thhe іnformation you provide hеre and
can’t wait to tɑke а looҝ when І gеt home. І’m amazed аt
how fast your blog loaded on my mobile .. I’m not even uѕing WIFI, just 3G ..
Anyhow, wonderful blog!
Ⅿy homepaɡе situs judi slot online deposit via pulsa 10 ribu
cialis 5mg best price dimenhydrinate propranolol er 60mg capsules side effects His baptism in Commonwealth politics came in Kampala in 2007
It’s remarkable designed fοr me too haѵe a site, which is usefᥙl іn favor of
my experience. tһanks admin
Feel free tⲟ surf t᧐ my web-site …
tuoda nämä tavarat nettiin
However, he was beheaded by Zhao poppers and high blood pressure Ling brand name cialis online and Korenman, S