গ ল্প : রাহাদ, একজন বাঙালি : স্বকৃত নোমান

স্বকৃত নোমান

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি যখন মাস্টার্সে, রাহাদ তখন অনার্স ফাইনাল ইয়ারে। সে ছিল ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স অ্যন্ড টেকনোলজি বিভাগের, আমি পরিসংখ্যানের। তার বাড়ি ছিল শহরের পাঁচ মাইল পুবে, আমার দুই মাইল উত্তরে। সে সাইকেলে যাতায়াত করত। শহরের কলেজ রোডে তার বড় মামার একটা লাইব্রেরী ছিল। স্কুল-কলেজের বইপুস্তক আর স্টেশনারী সামগ্রী বিক্রি করত। লাইব্রেরীর পেছনে ছিল ছোট্ট একটা রুম, যেখানে থাকত তার স্কুল শিক্ষক ছোট মামা। বৃষ্টি-বাদলের দিনে বাড়ি থেকে যাতায়াত কষ্টকর বলে মামার সঙ্গে সেও থেকে যেত।

তার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল ক্যাম্পাসে রতনের চা দোকানে। রাস্তাঘাটে থুতু ফেলা নিয়ে এক বন্ধুর সঙ্গে সেদিন আলাপ করছিলাম। আমার মেজাজ ছিল কড়া, গলা ছিল চড়া। বলছিলাম, বাঙালি কি কোনোদিন শিষ্টাচার শিখবে না? এ কেমন বদ অভ্যাস! কোনো ভদ্রলোক কি রাস্তাঘাটে থুতু ফেলে? রোজা-রমজানের দিনে তো কফ-থুতুর জন্য রাস্তায় হাঁটাই মুশকিল। পেটে ময়লা নিয়ে ঘোরে বলে তারা ভাবে জগতটাই বুঝি ময়লায় ভরা। এমন খাটাশ জাতি পৃথিবীর আর কোথায় আছে!

আমার কথাগুলো বুঝি রাহাদের ভালো লেগেছিল। কিংবা খাটাশ জাতি বলায় খারাপ লেগেছিল। সেও আমাদের আড্ডায় যোগ দিয়েছিল। সেই শুরু। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। রতনের দোকানে আমরা চা-সিগারেট খেতে খেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিতাম। কোনো কোনো বিকেলে দুজন চলে যেতাম পদ্মার তীরে। ফিরতাম সূর্যাস্তের পর। নানা বিষয়ে কথা হতো, শুধু রাজনীতি ছাড়া। রাজনীতির প্রতি তার অনুরাগ বা বিরাগ ছিল না। এই একটা ব্যাপারে সে ছিল সম্পূর্ণ নির্লিপ্ত। আমি তো প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতি করতাম, যুক্ত ছিলাম নানা সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে, পড়তাম আউট বই। তাকেও যুক্ত করতে চাইতাম। সে এড়িয়ে যেত। এসবে জড়িয়ে পড়ালেখার ক্ষতি করতে চাইত না। পাঠ্যপুস্তকের বাইরে একটা লাইনও পড়ত না।
তবে তার মধ্যে ছিল গভীর দেশপ্রেম। প্রায়ই বলতো, দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ। দেশকে ভালোবাসতে হয় মায়ের মতো। আমি বাঙালি, এ আমার অহংকার। যারা ঠুনকো বিষয়ে দেশ ও জাতির বদনাম করত তাদের উপর সে রেগে যেত। শুরু করে দিত তর্ক। ইংরেজি বিভাগের এক ছাত্র একবার বাংলাদেশকে চোর-ডাকাতের দেশ বলেছিল বলে তার গায়ে হাত তুলে বসেছিল। প্রায়ই বলত, লেখাপড়া শেষ করে দেশের সেবায় আত্মনিয়োগ করবে। দেশের জন্য কিছু করতে পারলেই তার জীবন সার্থক হবে।

মাস্টার্স শেষ করে তো চাকরি নিয়ে আমি ঢাকায় চলে এলাম। রাহাদ কোথায় যে হারিয়ে গেল! প্রায়ই মনে পড়ত তার কথা। বাড়ির ঠিকানাও জানতাম না যে একবার গিয়ে খোঁজ নেব। রাজশাহীর বন্ধুদের কাছে তার কথা কত জানতে চেয়েছি, কেউ খোঁজ দিতে পারেনি। খোঁজ নিতে এক ঈদের ছুটিতে রাজশাহীর কলেজ রোডে তার মামার লাইব্রেরীতে গিয়েছিলাম। সেদিন লাইব্রেরীটি ছিল বন্ধ।

প্রায় আট বছর পর একদিন ফেসবুকে আবিষ্কার করি তাকে। আমাকে ফ্রেন্ড রিক্যুয়েস্ট পাঠিয়েছে। একসেপ্ট করলাম। ইনবক্সে ফোন নম্বর নিয়ে ফোন করলাম। জানাল, সেই এখনো গ্রামেই থাকে। বেকার। চাকরি-বাকরির অনেক চেষ্টা করেও পায়নি। এক প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি নিয়ে চার মাস ঢাকায় ছিল। বেতন কম ছিল বলে ছেড়ে দিয়ে আবার বাড়ি ফিরে যায়। ইউরোপ-আমেরিকার কোনো দেশে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কানাডা তার পছন্দের দেশ। স্টুডেন্ট ভিসায় সে কানাডায় যাওয়ার ব্যাপারে অনেক দূর এগিয়েছে। কাগজপত্র প্রায় গুছিয়ে এনেছে।

তারপর প্রায় দু-তিন বছর আর কোনো যোগাযোগ নেই। ফোন বন্ধ। ইনবক্সে নক করলেও সিন করে না। একদিন সে ইনবক্সে নক করল। কুশল বিনিময়ের পর জানাল, সে এখন কানাডায়। অনেক চেষ্টার পর স্বপ্নের দেশে পাড়ি দিতে পেরেছে। কিন্তু তার বড় বিপদ। কানাডায় যাওয়ার আগে এলাকার ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা তাকে একবার মারধর করেছে, পঞ্চাশ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছে। দিতে না পারলে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। কানাডায় যাওয়ার পর সন্ত্রাসীরা বাড়িতে গিয়ে তার খোঁজ করেছে। তাকে না পেয়ে ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।

সর্বনাশ! বলিস কী!

হ্যাঁ দোস্ত, খুব বিপদে আছি।

তারা কেন এসব করছে? তাদের অভিযোগ কী? আমি জানতে চাইলাম।

রাহাদ বলল, অভিযোগ একটাই, আমি তাদের দল করি না। আমাকে দলে ভেড়াতে অনেক চেষ্টা করেছে, আমি রাজি হইনি। আই হেইট পলিটিক্স।
অবিশ্বাস হলো না তার কথা। আমি তো জানি বরাবরই সে রাজনীতির ব্যাপারে নির্লিপ্ত। বললাম, এখন কী অবস্থা?

খুব খারাপ। তারা এখনো হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। আমাকে না পেলে আমার বাবা-ভাই আর মামাদের হত্যার হুমকি দিচ্ছে।

ভেরি স্যাড। মামলা করছিস না কেন?

মামলা! বাংলাদেশের পুলিশ কেমন জানিস না? সন্ত্রাসীরা পাওয়ার পার্টির লোক, পুলিশ কি আমার মামালা নেবে?

দুঃখজনক।

একটা উপকার করতে পারবি দোস্ত?

বল কী করতে হবে।

রাহাদ জানাল যে, তার ওপর যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল, সন্ত্রাসীরা যে তার কাছে চাঁদা দাবি করেছিল, তার আত্মীয়-স্বজনদের যে হত্যার হুমকি দিচ্ছে এবং সে দেশে ফিরলে তাকেও যে মেরে ফেলবে, এসব নিয়ে আমি যেন পত্রিকায় একটা নিউজ ছাপানোর ব্যবস্থা করি। তাতে সন্ত্রাসীরা ভয় পাবে। আর এসব করার সাহস পাবে না।
কী করি? আমি তো সাংবাদিক নই যে পত্রিকায় নিউজ ছাপতে পারব। ছোটখাট একটা সরকারি চাকরি করি, তেমন কোনো সাংবাদিকের সঙ্গে পরিচয় নেই। কিন্তু যে করেই হোক রাহাদের কাজটা করে দিতে হবে। সে আমার বন্ধু। তার বিপদ মানে আমার বিপদ। বিপদে তার জন্য সামান্য কাজটুকু কি করতে পারব না?

মনে পড়ে গেল রাজিবের কথা। রাজিব সরকার। শাহবাগ আন্দোলনের সময় পরিচয় হয়েছিল। মাঝেমধ্যে ঝিগাতলায় দেখা হয়, আড্ডা হয়। দৈনিক শুভসকালের কালচারাল রিপোর্টার। পাশাপাশি অনলাইন এক্টিভিস্ট। নানা বিষয়ে লেখালেখি করে। শাহবাগ আন্দোলনের পরের বছর, সারাদেশে যখন প্রগতিশীল ব্লগার-এক্টিভিস্টদের চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মারা হচ্ছিল, জঙ্গিরা হত্যার হুমকি দিয়ে আটত্রিশজনের যে তালিকা ছেড়েছিল, সেখানে তার নামও ছিল। হুমকিপ্রাপ্তদের অনেকে তখন ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে এসাইলাম নিয়ে চলে যায়। সে চাইলে যেতে পারত। চলে যাওয়ার জন্য আমরা তাকে কত বোঝালাম। সে তো একরোখা, আমাদের কথা কানেই তোলেনি। বলেছে, এই দেশ আমার। দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া মানে তো পরাজয়। আমি কেন পরাজিত হবো? হবে তো তারা। লড়াই করতে হলে যুদ্ধের মাঠে থাকতে হয়। আমি মাঠে থেকেই লড়াই করে যাব। মরলে দেশেই মরব। দেশের মাটিতেই হবে আমার কবর।

একদিন রাজিবের সঙ্গে দেখা করে রাহাদের ঘটনাটা জানিয়ে এ নিয়ে তার পত্রিকায় একটা নিউজ ছাপানোর অনুরোধ করলাম। রাজিব আমাকে আশ^স্ত করল। ছাপবে, তবে একটু সময় লাগবে। নিউজটা আসতে হবে রাজশাহী প্রতিনিধির মাধ্যমে। তার সঙ্গে সে কথা বলবে। প্রয়োজনে নিউজটা সে লিখে রাজশাহী প্রতিনিধিকে পাঠাবে। প্রতিনিধি পাঠাবে কান্ট্রি এডিটরকে। এছাড়া সম্ভব নয়।

আমি বললাম, সময় লাগুক, একটু দেখেন প্লিজ। বন্ধুটির বড় উপকার হবে।

আমি রাহাদের কাছে অপারগতা স্বীকার করলাম। এবার সে বলল, টাকাপয়সা লাগলে সে খরচ করতে রাজি। আমি ভাবলাম, কিছু টাকা দিলে হয়ত নিউজটি ছাপার ব্যবস্থা করতে পারবে রাজিব। তাকে জানালাম সে কথা। রাজিব রাজি হলো না। টাকাপয়সা দিয়ে নিউজ ছাপানো তার পক্ষে অসম্ভব। তবে সে পরিচয় করিয়ে দিল দৈনিক আগামী বার্তার রিপোর্টার সুজন মাহমুদের সঙ্গে। সুজন কাজটা করে দিতে পারবে। নিউজ এডিটরকে হাজার পাঁচেক টাকা দিলে নিউজটা ছেপে দেবে।

কেটে গেল প্রায় এক মাস। রাহাদ আমাকে তাড়ার পর তাড়া দিচ্ছে। চার-পাঁচ দিন পরপরই ম্যাসেঞ্জারে কল করে অগ্রগতি জানতে চায়। ফোনে একদিন রাজিবের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। না, নিউজটি ছাপতে পারেনি সে। রাজশাহী প্রতিনিধি পাঠিয়েছিল, নিউজ এডিটর ফেলে দিয়েছে। রাজিব রিক্যুয়েস্ট করেছিল, শোনেনি। বলেছে, পুরনো খবর। ভ্যালুলেস।

আমি রাহাদকে জানালাম টাকার কথা। দুদিনের মধ্যে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নে টাকা পাঠিয়ে দিল সে। টাকাটা দিলাম সুজনকে। দুই মাস কেটে গেল, অথচ নিউজটি ছাপার কোনো খবর নেই। সুজন সহজে ফোন ধরে না। ধরলেও নিচু গলায় ‘মিটিংয়ে, একটু পর কল দেব’ বলে রেখে দেয়। বিরক্ত হয়ে একদিন আমি কড়া একটা এসএমএস পাঠালাম। নিউজটি আদৌ ছাপা হবে কিনা জানতে চাইলাম। সঙ্গে সঙ্গে সে কলব্যাক করল। জানাল যে, নিউজ এডিটরকে কোনোভাবেই রাজি করাতে পারছে না। একদিন দেখা করে টাকাটা সে ফেরত দিয়ে দেবে।

আমি রাহাদকে আবারও জানালাম অপারগতার কথা। রাহাদ বলল, টাকা কম বলে হয়ত রাজি হচ্ছে না। প্রয়োজনে রাহাদ আরো টাকা দেবে, তবু যেন নিউজটা ছাপানোর ব্যবস্থা করি।

আমি সুজনকে জানালাম বাড়তি টাকার কথা। সুজন বলল, তার পত্রিকায় ছাপানো সম্ভব হবে না। তবে তার পরিচিত এক সম্পাদক আছে। দৈনিক কালান্তর নামে একটা পত্রিকা আছে তার। আন্ডারগ্রাউন্ড। সপ্তায় দু-তিন দিন ছাপে। এক দেড় শ কপি করে। হাজার পঞ্চাশেক টাকা দিলে নিউজটা সে ছেপে দেবে।

একটা নিউজের জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা! এত টাকা কি রাহাদ খরচ করবে? এত টাকা কী করে চাইব তার কাছে! সে যদি অন্য কিছু ভাবে! যদি ভাবে এই টাকা থেকে আমি কমিশন খাচ্ছি! পরে আবার সম্পর্কটাই না নষ্ট হয়! কিন্তু তার অব্যাহত তাগাদায় পঞ্চাশ হাজার টাকার কথা তাকে না জানিয়ে পারলাম না। সে বলল, নো প্রোবলেম, আমি টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি।

একটা আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকায় নিউজটা ছাপানোর জন্য এত টাকা খরচ করবি?

হোক আন্ডারগ্রাউন্ড, দৈনিক পত্রিকা হলেই হবে।

আমার একটু ধন্দ লাগল। যে পত্রিকা পাঠকের কাছে যাবে না, যে পত্রিকার নিউজ প্রশাসনের চোখে পড়বে না, সেই পত্রিকায় নিউজটা ছেপে লাভটা কী? তবে ধন্দটা রাহাদকে বুঝতে দিলাম না। আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকায় হলেও তার যদি উপকার হয়, আমার অসুবিধা কী? দুদিন পরেই ওয়াস্টার্ন ইউনিয়নে পঞ্চাশ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিল সে।

সপ্তাহখানেক পর কালান্তরের ভেতরের পাতায় ‘সন্ত্রাসীদের ভয়ে দেশে ফিরতে পারছে না প্রবাসী রাহাদ’ শিরোনামে নিউজটি ছাপা হলো, রাহাদের পাসপোর্ট সাইজের একটা ছবিসহ। সুজন আমাকে দিল চার কপি পত্রিকা। নিউজটির ছবি তুলে ইনবক্সে পাঠিয়ে দিলাম রাহাদকে। রাহাদ বলল, ছবিতে কাজ হবে না, মূল পত্রিকা লাগবে।

ডাকে পাঠিয়ে দেব?

হ্যাঁ, ডিএইচএলে পাঠা। দ্রুত পেয়ে যাব।

পরদিন ফার্মগেটে ডিএইচএল অফিসের উদ্দেশে রওনা হলাম। রাহাদ ফোন করে জানাল, পাঠানোর দরকার নেই। মাসখানেকের মধ্যে সে দেশে আসবে। আমার সঙ্গে দেখা করে পত্রিকাগুলো নেবে।

বেশ। তাহলে তো আর কথা নেই। আমার বাসায় আসবি কিন্তু। কতদিন তোকে দেখি না।

নিশ্চয়ই আসব দোস্ত।

প্রায় দেড় মাস পর রাহাদের ফোন। সে এখন বাড়িতে। আগামী কাল ঢাকায় আসবে। তিন দিন থাকবে। টুকটাক কিছু কাজ আছে, শেষ করে ফিরবে। আমার বাসায় থাকবে এক রাত।

আমি কাওরান বাজার থেকে বড় একটা আইড় কিনলাম। ইলিশ কিনলাম এক জোড়া। বেঙ্গল মিটস থেকে খাসি আর মুরগির মাংসও কিনলাম। এত বছর পর রাহাদের সঙ্গে দেখা হবে, ভালো করে আপ্যায়ন করতে হবে না!

রাহাদ সেদিন আমার বাসায় পৌঁছতে পৌঁছতে রাত আটটা বেজে গেল। তাকে দেখে তো প্রথমে চিনতেই পারলাম না। যা মোটা হয়েছে! আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। গোঁফটার কারণে চেহারাটাই যেন পাল্টে গেছে। আমার জন্য সে পারফিউম, সিগারেট, শেভিং লোশন ইত্যাদি এনেছে। জেগে উঠল আমাদের ছাত্রজীবনের স্মৃতি। খেয়েদেয়ে অনেক রাত পর্যন্ত গল্প-গুজব করলাম।

ঘুমানোর আগে ব্যাগ থেকে একটা লুঙ্গি বের করছিল রাহাদ। টান দিয়ে বের করতে গিয়ে লুঙ্গির সঙ্গে বেরিয়ে এলো কাগজের একটা ছোট্ট প্যাকেট। ছিটকে পড়ল মেঝেতে। বেরিয়ে এলো তিনটি ছবি। ছবিগুলো কুড়িয়ে আমি হাতে নিলাম। প্রথম ছবিতে কোনো এক মফস্বল শহরের রাস্তায় রাহাদকে লাঠিপেটা করছে দুই পুলিশ। দ্বিতীয় ছবিতে পুলিশ তাকে হাতকড়া পরিয়ে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। তৃতীয় ছবিতে একটি কক্ষের সিলিঙয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় রাহাদ। চেহারা রক্তাক্ত। পাশে লাঠি হাতে ঘর্মাক্ত মুখের এক পুলিশ ক্ষিপ্ত চোখে তার দিকে তাকিয়ে।

আমি বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করলাম, এসব কবেকার ঘটনা?

রাহাদ হাসল।

সত্যি কথা বলব?

হ্যাঁ, তা-ই তো বলবি।

হাসছিস যে?

ছবিতে যা দেখছিস বাস্তবে তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

আমি বোকার মতো তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি খানিকক্ষণ। তারপর বলি, কিন্তু ছবি দেখে তো মনে হচ্ছে সত্যি তুই পুলিশি নির্যাতনের শিকার।

ভূয়া ছবি। অ্যারেঞ্জড।

রাহাদ জানায় যে, দেশে ফিরে সে কাপড় কিনে পরিচিত এক ট্রেইলারকে দিয়ে পুলিশের ড্রেসগুলো বানিয়েছে। যে দুজন পুলিশ তাকে মারছে, হাতকড়া পরিয়ে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে, তারা আসলে তার বন্ধু। যে কক্ষের সিলিঙয়ে সে ঝুলছে সেটি তাদের গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের একটি কক্ষ। তার মুখে ওগুলো রক্ত নয়, রং। পুলিশটি তার এক চাচাতো ভাই। আর ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসী কর্তৃক তার উপর হামলা, চাঁদা দাবি, বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও সত্যি নয়। যে নিউজটা পত্রিকায় ছাপা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

অ্যারেঞ্জড? বুঝলাম না!

কিন্তু এসব করে তোর লাভটা কী?

একটা সিগারেট ধরিয়ে দেশলাইয়ের কাঠি নেভাতে নেভাতে রাহাদ বলল, এসাইলাম দোস্ত এসাইলাম।

২৫.০৮.২১৯


* সুলতান মাহমুদ রতন সম্পাদিত সাহিত্যের কাগজ মৃৎ : সংখ্যা ০৪ । ফাল্গুন ১৪২৬ থেকে নেওয়া

About Mangrove Sahitya

দেখে আসুন

হেডস্যার আতঙ্ক : নেলী আফরিন

হেডস্যার আতঙ্ক নেলী আফরিন ০১. ‘কী আবদার! ইশকুলে যাবে না, উঁ-হ! রোজ রোজ এক অজুহাত …

7 কমেন্টস

  1. Hey There. I found your blog using msn. This is a very
    well written article. I’ll be sure to bookmark it and come back to read
    more of your useful info. Thanks for the post. I will certainly
    comeback.

  2. It’s great that you are getting ideas from this piece of writing as well as from
    our dialogue made at this place.

  3. you’re truly a good webmaster. The website loading speed is incredible.
    It kind of feels that you are doing any distinctive
    trick. Also, The contents are masterwork. you’ve performed a great activity in this topic!

  4. all the time i used to read smaller articles or reviews that also clear their motive, and that is also happening with this
    article which I am reading here.

  5. I blog frequently and I genuinely appreciate your content.
    This great article has really peaked my interest.
    I will take a note of your blog and keep
    checking for new details about once per week. I subscribed to your Feed too.

  6. Hello, i think that i noticed you visited my website thus i got here to return the want?.I’m
    attempting to find issues to improve my website!I assume its ok to make use of some of your ideas!!

  7. Excellent goods from you, man. I’ve understand your stuff previous to and you
    are just too great. I really like what you’ve acquired here, really like
    what you are stating and the way in which you say it. You make it enjoyable and you still take care
    of to keep it smart. I cant wait to read far more from you.
    This is really a great web site.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *