গল্প : লকডাউনের গল্প

অ্যাঞ্জেলিকা ভট্টাচার্য
তনিমা ঘড়িটা একবার আড়চোখে দেখে নিলো । এখন ৫ টা বাজতে দশ । ঠিক দশমিনিট পর থেকে লকডাউন । এই শব্দটা প্রথম শুনছে তনিমা । মহামারি , দুর্ভিক্ষ , বন্যা এসব চোখে না দেখলেও অনেক শুনেছে । কিন্তু এবারের মহামারীর কারন শুনে চক্ষু চড়ক গাছ । এমন রোগের নাম বাপের জন্মে শোনেনি ।
দাদাবাবু শুধরে দিয়ে বলেছেন – ‘ওরে এটা হল মানুষের তৈরি ভাইরাস । এখন মানুষের উপরেই ভর করেছে ।’
বউদিমনি রেগে গিয়ে বলেছে – সারাদিন ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপ দেখে জ্ঞান ঝাড়বে । এসবের প্রমান আছে কিছু , কে তৈরি করেছে ?
দাদবাবু কিছুটা মজার সুরে বলেছেন – তাহলে ফেলু মিত্তিরকে খবর দাও ।
ফেলু মিত্তির কে তনিমা জানে না । সব কিছু তো জানারও দরকার পড়ে না । বেশি কৌতূহল ভালো না । তনিমা এটাই জানে ।
পড়াশুনো তেমন করার সুযোগ পায়নি তনিমা । ছেলে মেয়েদের পড়াচ্ছে । মেয়ে এবার মাধ্যমিক দিলো । টিভি তে খবর দেখে , মেয়ে জ্ঞান ভাণ্ডার উজার করে দিয়েছে । তাতে খুব বেশি কিছু না বুঝলেও , এটা বুঝেছে যে এই ভাইরাস বড়োলোকদের পেটের ভাত না মারলেও তাদের মতো গরিবদের পেটের ভাত মেরে দেবে । তনিমা তাই দাদাবাবুকে প্রশ্ন করেছিল ‘মানুষের কোনোদিন খিদে পাবে না , এমন কোন ভাইরাস বানাতে পারে না কেউ ?’
বউদিমনি তাড়া দিলো– কিরে সব রান্না হল ? এর পর তো তুই অটো পাবি না । ফিরবি কি করে ?
তনিমা এই কমপ্লেক্সে আসে দুটো অটো পাল্টে । সে তিন বাড়ি রান্না করে । এখানে তার মাইনে সব থেকে বেশি । রান্নার বহরও এখানে একটু বেশি । প্রায় দিন পার্টি লেগে থাকে । প্রায় কুড়ি তিরিশ জনের রকমারি স্ন্যক্স বানাতে হয় তাকে । অবশ্য টাকাতে কার্পণ্য করে না বউদিমনি । কিন্তু হঠাৎ করে লকডাউন সব কিছু উল্টে পাল্টে দিলো । আজ তনিমাকে পাঁচ দিনের রান্না করে রাখতে হচ্ছে । ইচ্ছে না থাকলেও বউদিমনির আবদার বা হুকুম কোনোটাই ফেলার তার সাহস নেই । শুধু একবার বলেছিল – বউদিমনি লকডাউন যদি আরও বাড়ে কি করবে ? সব কিছু তো বন্ধ থাকবে , আমারও আসার উপায় নেই । পলিও তো আসতে পারবে না । পলি এখানে বাসন মাজে আর ঘরদোর পরিষ্কার করে ।
বউদিমনি গজগজ করতে করতে বলেছে – ওসব বাজে কথা বলিস না । হাত পুড়িয়ে রান্না করতে হবে । কোমর ভেঙে ঘর পুছতে হবে । তার থেকেও ভয়াবহ তোর দাদাবাবু চব্বিশ ঘণ্টা ঘরে থাকবে । টিনা সারাদিন মোবাইলে খুটখুট করবে কিন্তু একটাও কাজ করবে না । আজ কলেজে পড়ে , বিয়ে হলে যে কি করবে ! শ্বশুরবাড়িতে কথা শুনতে হবে ।
দাদাবাবু টিভি তে খবর দেখতে দেখতে আওয়াজ দিয়েছিলেন – তোমাকে দেখেই মেয়ে শিখেছে । তুমিও অনেক কাজ করতে বিয়ের পর । বলেই প্রসঙ্গ পাল্টে গেল – তবে সব থেকে কষ্ট হবে তোমার বন্ধুদের কিটি পার্টি বন্ধ এখন কদিন ।
প্রেসারে চারটে সিটি পড়ল । তনিমা ব্যাগটা কাঁধে ফেলে বলল – বউদিমনি মাংসটা হয়ে গেছে । তুমি শুধু কুকার খুলে একটু নুন দেখে নিও ।
আসার আগে দাদাবাবু দুহাজার টাকার একটা নোট দিয়েছে । বলেছে – চাল , ডাল , তেল , নুন , আলু এগুলো অন্তত তুলে রাখিস একটু । অবস্থা খুব সুবিধার নয় । সেসবের আভাস পেয়ে গতকাল রাতেই পাড়ার মুদির দোকানে লম্বা লাইন দিয়ে অল্প জিনিস তুলে রেখেছে । তবে সবটাই ধারে । আজ টাকাটা পেয়ে ভালোই হল । দিনু মুদির দোকানে আগেই বেশ কিছু ধার জমেছে । কিছুটা শোধ দিতে পারলে ভালো । নইলে খুব কথা শোনায় । ছেলে মেয়ের সামনে কথা শুনতে একদম ভালো লাগে না ।
তনিমা রাস্তায় নেমেই বুঝল আজ হাওয়া অন্যরকম । ৫ টা বেজে গেছে শেষ দু একটা বাস যাচ্ছে কিন্তু দমবন্ধ ভিড় ।গরিবের কপালেও মাঝে মাঝে সিকে ছেঁড়ে । একটা ফাঁকা অটো তনিমার সামনে এসে দাঁড়ালো ।
– বাড়ি ফিরবেন তো ?
তনিমার চিনতে অসুবিধা হল না । পাড়ার চেনা মানুষ না হলেও অচেনা মানুষ নয় । অটো ড্রাইভারের নাম শঙ্কর । পাড়ায় কয়েকবার চোখাচোখি হয়েছে । বেশ কয়েকবার যেচেই লিফট দিতে এসেছিল কিন্তু সে নেয়নি । তনিমার মনে হয়েছিল শঙ্করের চাউনির মধ্যে যেন কি একটা আছে ! নয়ত ভেবেছিল সুযোগ খুঁজছে । যেমন অনেকেই খোঁজে । তনিমার চোখে মুখে জৌলুষ না থাকুক তার শরীরের ভাঁজ এখনও তীক্ষ্ণ সেখানে কোন বয়েসের ছাপ পরেনি । পাড়ার লোকে বলে তনিমার নাকি খুব দেমাক । দুবছর আগে স্বামী মারা গেলেও পাড়ায় এখনও তার নামে কোন কলঙ্ক উড়ে বেড়ায় না । সবার সব উটকো নজর , সাহায্য সব টপকে দুই সন্তান নিয়ে নিজের মতোই থাকে তনিমা ।
কি হল উঠে আসুন । আমিও বাড়ি ফিরবো । এক পাড়াতেই তো । এইটুকু বিশ্বাস করতে পারেন । তনিমার কোন অজুহাত দেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই । কারন পিছনেই একটা পুলিশ ভ্যান আসছে । হয়ত এখনই বলে বসবে “ দাঁড়িয়ে আছেন কেন ?”
অটোর পিছনের সীটে তনিমা একা বসেছে । অন্য সময় গায়ে গা ঘেঁষে , ঘামের গন্ধ শুকতে শুকতে মনে হয় কখন যে নামবে সে । আজ ফুরফুরে হাওয়াতে মনে হচ্ছে হোক না দেরি । আসলে তনিমার মনে হচ্ছে সে যেন ঘুরতে বেরিয়েছে ।শঙ্কর আবার রিজার্ভ অটোর টাকাটাই নেবে না তো ! তনিমা ফস করে বলে বসে – আর কোন প্যাসেঞ্জার নিলেন না ? আমি শেয়ার অটোতেই আসি এখানে ।
শঙ্কর হয়ত তনিমার মনের কথা বুঝে বলল – আমি তো বাড়ি যাবো এখন । পুলিশের ডাণ্ডা খেয়ে আর অটো চালিয়ে কাজ নেই এখন । এখন কয়েকদিন ঘরে বসে ঘুমনো ছাড়া উপায় নেই । আর হ্যাঁ আপনি কিন্তু আমায় শেয়ার অটোর ভাড়াই দেবেন ।
তনিমা লজ্জা পেলো । কিন্তু তার বেশি দেবার ক্ষমতা তার নেই । তনিমা নিজেই কথা বাড়াল – আপনি কোথায় থাকেন ?
- রাখাল সামন্তর বাড়ি ভাড়া থাকি ।
- ও আচ্ছা আমাদের পাড়ার রাখালদা ! আমার স্বামীর বন্ধু ছিলেন । খুব ভালো মানুষ । কথাগুলো বলতে বলতে তনিমা ওড়না দিয়ে নাক বাঁধল । রাস্তায় অনেকের নাকে মুখোশ বাঁধা । তনিমার কেনা হয়নি । দোকানে দুবার খোঁজ করে পায়নি । সবাই নাকি বাঁচার তাগিদে অনেক আগেই কিনে নিয়ে গেছে । মেয়ে বলেছে মা এগুলোকে মুখোশ বলবে না । মাস্ক বলবে ।
ছেলেটা সেদিন চারটে সাবান কোথা থেকে নিয়ে এসেছে ! । তনিমা সেদিন ছেলেটাকে এক চড় মেড়েছিল । টাকা কোথা থেকে পেলি ? না , কিছুতেই সে বলেনি । মুখে একটাই কথা – টিভি তে দেখনি বারবার হাত ধুতে হবে ।
তনিমার বুক ভারি হয়ে ওঠে – তবে কি ছেলেটা সাবান চুরি করেছে ? বাপমরা ছেলেটাকে কি মানুষ করতে পারবে না তনিমা ?
জোরে ব্রেক কষার জন্য তনিমার শরীরে ঝাঁকুনি লাগলো । আর এতক্ষনে শঙ্করের কথাগুলো কানে এলো – এই তো ছমাস হল এসেছি । আপনি তো রাম মন্দিরের পাশের গলির শেষ বাড়িটায় থাকেন ! তনিমা মনে মনে ভাবল লোকটা তার অনেক খবর রাখে ।
চারমাথার মোড় থেকে অটোটা বাঁক ঘুরলো ।- রাখালদার মুখে শুনেছি একটা বাস অ্যাকসিডেন্টে আপনার স্বামী মারা যান । রাখালদা আপনাদের অনেক গল্প করেন ।
তনিমার এবার একটু রাগই হল । এমন ভাবে যাকে তাকে তাদের কথা বলার কি আছে ? অবশ্য জানে রাখালদা মানুষটা যে শুধু ভালো তা নয় , খুব সাদাসিধে । তনিমা যখন স্বামীর মৃত্যুর পর অথৈ জলে পরেছিল এই রাখালদা তাকে টাকা দিয়ে অনেক সাহায্য করেছিল । প্রাইভেট বাসের সামান্য কন্ডাক্টার ছিল তার স্বামী । ইউনিয়নকে বলে কয়ে মালিকের কাছ থেকে কিছু টাকার ব্যবস্থা করেছিল রাখালদাই । তাই ওনার ঋণ কোনোদিন ভুলবে না তনিমা ।
রাস্তার পাশে একেকটা মুদি দোকানে লম্বা লাইন । তনিমা সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলল – মানুষের খিদে কি লকডাউন মানবে ?
কথাটা শঙ্করের কানে যেতেই বলল – পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে না পারলে মানুষ কি নিশ্চিন্তে বসে ঘুমবে ?
তনিমা বাইরের দিকে মুখ করেই বলল – আপনার পরিবারে কে কে আছেন ?
- কেউ নেই । একার পেট গামছা বেঁধেও থেকে যেতে পারি ।
তনিমা অবাক হয়ে বলল – কোথার থেকে এসেছেন ? খুব বেশিদিন তো আপনাকে পাড়ায় দেখিনি ।
কিছুক্ষন চুপ থেকে শঙ্কর বলল– জেল থেকে । ভয় পেলেন ?
ঠিকই কথাটা শুনে বুকটা ছ্যাঁত করে উঠেছে তনিমার । তনিমা এর পর জিজ্ঞেস করতেই পারত যে কেন কি করেছিলেন ? কিন্তু সেসব কিছুই জিজ্ঞেস করল না । পাড়ার মধ্যে ঢুকে পড়েছে অটো । শঙ্করকে দাঁড়াতে বলে ব্যাগ থেকে ভাড়ার টাকা মিটিয়ে সৌজন্য মুলক হাসিটুকু হেসে গলির মধ্যে ঢুকে পড়ল ।
ছেলে মেয়েগুলো অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছিল । তনিমা ফিরতেই তাকে অনেক উপদেশ শুনতে হল । ছেলে মেয়ে বড় হলে তারা অভিভাবক হয়ে যায় । রাতে তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়েছে মা ছেলে । ছেলেটির বয়েস দশ । মেয়ে টিভিতে খুব মনোযোগ সহকারে হিন্দি সিনেমা দেখছে ।
আজকে তনিমার মনে বিভিন্ন চিন্তা ভিড় করেছে । রাখালদা খুব ভালো এবং সৎ মানুষ , সে কেন একজন জেল ফেরত মানুষকে থাকতে দিলো তার ঘরে ! শঙ্কর কি দোষ করেছিল ? খুন , ডাকাতি , নাকি কোন মেয়েকে … ! তনিমার মনে নানা প্রশ্ন উঠলেও মানুষ চিনতে তার কখনও ভুল হয় না । শঙ্করকে দেখে তো তেমন মনে হয়নি । অবশ্য কার মনে কি আছে বোঝা মুশকিল ।
তনিমার ফোন বাজছে । ফোন ধরতেই রায় পাড়ার কাকিমার গলা – তনিমা এখন তো লকডাউনের বাজার । একদম ঘর থেকে বেরস না । তোকে আর আসতে হবে না । বৌমা বলল এখন থেকে নিজের কাজ নিজেদের করতে হবে । তুই বরং অন্য কাজ খুঁজে নিস । আর এই মাসের টাকাটা লকডাউন উঠলে পরে এসে নিয়ে যাস ।
তনিমাকে কোন কথা না বলতে দিয়েই ফোন কেটে গেছে । তনিমা হিসাব করল লকডাউন উঠতে এখনও কত দেরি । সে এই সময় অন্য আর কোথায় কাজ পাবে ? টাকাটা যে তার খুব দরকার ছিল ।
আজ তনিমা দেরি করেই ঘুম থেকে উঠেছে । কাজে যাওয়ার তাড়া নেই । অনেকদিন পর বেলা পর্যন্ত ঘুমল । ভেবেছে চালে ডালে বসিয়ে দেবে । কাজ না থাকলে মানুষকে অলসতায় পায় । সকালে চা বসাতে গিয়ে খেয়াল হল চা পাতা নেই ঘরে । পাড়ার দিনুমুদির দোকান হয়ত খুলে গেছে । ধারের টাকাটাও দিয়ে আসবে, চা পাতাও নিয়ে আসবে এই ভেবে নাকে ওড়নাটা চেপে বেরোল ।
এই সকালেও বেশ কিছু লোকের লাইন পড়েছে দোকানে । দুটো বাড়ি পরেই রাখালদার বাড়ি । দরজায় দাঁড়িয়ে ঠ্যালা থেকে সবজি কিনছে । এই পাড়ায় এই একটা সুবিধা সবজি , মাছ সব ঘরের দুয়ারে বিক্রি করতে আসে । তবে দামটা একটু বেশি । তবু এই লকডাউনের বাজারে মানুষ হুমড়ি খেয়ে কিনছে ।
রাখালদা হাতের ইশারায় তনিমাকে ডাকল । তনিমা ভেবেছিল জিনিস কিনেই ঘর মুখো হবে কিন্তু রাখালদা ডাকলে সে ডাক অবজ্ঞা করার কথা তনিমা ভাবতে পারে না । রাখালদার একমুখ হাসি । কিরে তনিমা কাজে যাসনি আজ ?
- না লকডাউনে যাবো কি করে ?
- ও তাই তো । অনেকদিন আসিস না । ছেলে মেয়েরা ভালো আছে তো ? আয় চা খেয়ে যা ।
- রাখালদা আমি পরে আসবো ।
রাখালদা একটু থেমে বলল – তোর সঙ্গে যে কথা ছিল ।
এর পর কিছু বলা যায় না ।
রাখালদার বাড়ির প্রসস্ত উঠোনে গিয়ে বসলো তনিমা । রাখালাদা চা করতে চলে গেল । কিছুক্ষনের মধ্যেই দুকাপ চা নিয়ে হাজির । কোনরকম ভুমিকা ছাড়াই বলল – কাল শঙ্করের অটোতে ফিরেছিস ?
তনিমা বুঝল শঙ্কর বলেছে হয়ত । - ‘তনিমা’ , শঙ্কর জেল খেটেছে সাতবছর । তবে ভয় পাস না । ছেলেটা ভালো । জেলার সাহেব আমার বিশেষ বন্ধু । শঙ্করের ভালো ব্যবহারের জন্য এক বছর সাজা মাফ করেছে । কোথায় যাবে ছেলেটা ! দেশেও কেউ নেই ওর । তাই ভাবলাম আমার কয়েকটা অটো তো ভাড়া খাটে । ও নয় চালাক একটা । যা রোজগার হবে একটা পেটের নিশ্চয়ই চলে যাবে ।
তনিমা কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল – রাখালদা, বললে ভালো ছেলে । তবে জেল খাটল কেন ?
রাখালদা কিছুক্ষন চুপ । তনিমা মনে আছে , দশ বছর আগে তোর স্বামী মানে তপন খুব বাজে একটা কেসে ফেসে গেছিল । কালীপূজোর রাতে জুয়ার আড্ডায় একজন খুন হয় । থানা পুলিশ । শেষ পর্যন্ত অন্য একজন সেই খুনের দায় নিয়েছিল । তপন বেকসুর খালাস পায় । তুই তখন এখানে ছিলি না । তোর মায়ের কাছে ছিলি । সেবারই মনে হয় তোর ছেলেটা হল ।
তনিমার মনে পড়ল । কোর্টে সে একবারও যায়নি । কয়েকদিন টানাপোড়েন চলেছিল তপনকে নিয়ে ।
রাখালদা হাসল । – খুনের সাজা হাত পেতে নিয়েছিল এই শঙ্কর । কিন্তু রাগের মাথায় খুনটা করেছিল তপন । বিমলের পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দিয়েছিল । আমি টাকার বদলে অনেক মানুষকে দেখেছি খুনের দায় নিতে । কিন্তু নিজেকে এভাবে বিনাদোষে মাথা পেতে সাজা নিতে দেখিনি ।
- আমি কখনও শঙ্করকে আমার স্বামীর সঙ্গে দেখিনি । তবে ?
- জানিনা তনিমা । অনেকবার জিজ্ঞেস করেছিলাম বলেনি । তবে ওর গ্রাম পুরুলিয়া ।
তনিমার মা মারা গেছেন আজ পাঁচ বছর । তারপর থেকে পুরুলিয়ার পাট চুকেছে । কিন্তু শঙ্করকে কিছুতেই মনে করতে পারল না । তনিমার সঙ্গে তপনের বিয়েটা দেখাশুনো করে । রাতে শুয়েও তনিমা মনে করতে পারল না শঙ্কর কেন তার এত বড় উপকার করল । তপনকেই বা কি ভাবে চিনল সে ? তাহলে কি যোগাযোগ ছিল ? তপন তো কোনোদিন বলেনি এসব কথা !
তনিমা ঘুমের মধ্যে দেখতে পেল পুকুরের ধারে রোজ একটা ছেলে দাঁড়িয়ে থাকতো । যার মুখ কোনোদিন দেখতে পায়নি তনিমা । শুধু অবয়ব চোখে পড়ত । কোনোদিন কাছেও আসেনি । তনিমা ধরমর করে বিছানার উপর উঠে বসেছে । সব কিছু মনে পরছে , তপন যখন শ্বশুরবাড়ি যেত । তনিমাকে প্রায় বলত তোমাদের গ্রামের একটি ছেলের সঙ্গে আলাপ হয়েছে । খুব ভালো ছেলেটা, নাম শঙ্কর । চেন তুমি ?
তনিমা তো সত্যি এমন নামে কাউকে চিনত না ! এসব কথায় আমল দেয়নি তেমন । কিন্তু এখন কেমন দুয়েদুয়ে চার সব মিলে যাচ্ছে ।
তনিমার খুব ইচ্ছে করল শঙ্করের কাছে গিয়ে সব প্রশ্নের জবাব চায় । কে তাকে বলেছে এভাবে তনিমার জন্য জীবনের এতোগুলো বছর নষ্ট করতে !


অ্যাঞ্জেলিকা ভট্টাচার্য
জন্ম : ১৬ই মার্চ ১৯৮৩ আসানসোল
দর্শনশাস্ত্রে স্নাতক, ইতিহাসে স্নাতকোত্তর

ইচ্ছেমৃত্যু : গল্প : ২০১৭ : কমলিনী, পরিবেশক – দে’জ
বইটি দুটি পুরস্কার পায় – আত্মজা সাহিত্য সম্মাননা এবং ডলি মিদ্যা স্মৃতি পুরস্কার
রূপকথা নয় : গল্প : ২০১৮ : কমলিনী
অনির্বাণ ও মুখবই : গল্প : ২০১৯ : অশোকগাথা
যে গল্পের শেষ নেই : গল্প : ২০২০ : কমলিনী

শ্রীচরণেষু পত্রিকার সম্পাদক
It’s an amazing paragraph in favor of all the internet visitors; they will obtain advantage from it I am sure.
You made some good points there. I looked on the internet for the subject matter and found most guys will approve with your website.
Amoxicillin Clavulanate Lowest Price best price for generic cialis Cialis Que Tal