গল্প । লকডাউনের গল্প : অ্যাঞ্জেলিকা ভট্টাচার্য

গল্প : লকডাউনের গল্প

অ্যাঞ্জেলিকা ভট্টাচার্য

তনিমা ঘড়িটা একবার আড়চোখে দেখে নিলো । এখন ৫ টা বাজতে দশ । ঠিক দশমিনিট পর থেকে লকডাউন । এই শব্দটা প্রথম শুনছে তনিমা । মহামারি , দুর্ভিক্ষ , বন্যা এসব চোখে না দেখলেও অনেক শুনেছে । কিন্তু এবারের মহামারীর কারন শুনে চক্ষু চড়ক গাছ । এমন রোগের নাম বাপের জন্মে শোনেনি ।
দাদাবাবু শুধরে দিয়ে বলেছেন – ‘ওরে এটা হল মানুষের তৈরি ভাইরাস । এখন মানুষের উপরেই ভর করেছে ।’
বউদিমনি রেগে গিয়ে বলেছে – সারাদিন ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপ দেখে জ্ঞান ঝাড়বে । এসবের প্রমান আছে কিছু , কে তৈরি করেছে ?
দাদবাবু কিছুটা মজার সুরে বলেছেন – তাহলে ফেলু মিত্তিরকে খবর দাও ।
ফেলু মিত্তির কে তনিমা জানে না । সব কিছু তো জানারও দরকার পড়ে না । বেশি কৌতূহল ভালো না । তনিমা এটাই জানে ।

পড়াশুনো তেমন করার সুযোগ পায়নি তনিমা । ছেলে মেয়েদের পড়াচ্ছে । মেয়ে এবার মাধ্যমিক দিলো । টিভি তে খবর দেখে , মেয়ে জ্ঞান ভাণ্ডার উজার করে দিয়েছে । তাতে খুব বেশি কিছু না বুঝলেও , এটা বুঝেছে যে এই ভাইরাস বড়োলোকদের পেটের ভাত না মারলেও তাদের মতো গরিবদের পেটের ভাত মেরে দেবে । তনিমা তাই দাদাবাবুকে প্রশ্ন করেছিল ‘মানুষের কোনোদিন খিদে পাবে না , এমন কোন ভাইরাস বানাতে পারে না কেউ ?’
বউদিমনি তাড়া দিলো– কিরে সব রান্না হল ? এর পর তো তুই অটো পাবি না । ফিরবি কি করে ?

তনিমা এই কমপ্লেক্সে আসে দুটো অটো পাল্টে । সে তিন বাড়ি রান্না করে । এখানে তার মাইনে সব থেকে বেশি । রান্নার বহরও এখানে একটু বেশি । প্রায় দিন পার্টি লেগে থাকে । প্রায় কুড়ি তিরিশ জনের রকমারি স্ন্যক্স বানাতে হয় তাকে । অবশ্য টাকাতে কার্পণ্য করে না বউদিমনি । কিন্তু হঠাৎ করে লকডাউন সব কিছু উল্টে পাল্টে দিলো । আজ তনিমাকে পাঁচ দিনের রান্না করে রাখতে হচ্ছে । ইচ্ছে না থাকলেও বউদিমনির আবদার বা হুকুম কোনোটাই ফেলার তার সাহস নেই । শুধু একবার বলেছিল – বউদিমনি লকডাউন যদি আরও বাড়ে কি করবে ? সব কিছু তো বন্ধ থাকবে , আমারও আসার উপায় নেই । পলিও তো আসতে পারবে না । পলি এখানে বাসন মাজে আর ঘরদোর পরিষ্কার করে ।

বউদিমনি গজগজ করতে করতে বলেছে – ওসব বাজে কথা বলিস না । হাত পুড়িয়ে রান্না করতে হবে । কোমর ভেঙে ঘর পুছতে হবে । তার থেকেও ভয়াবহ তোর দাদাবাবু চব্বিশ ঘণ্টা ঘরে থাকবে । টিনা সারাদিন মোবাইলে খুটখুট করবে কিন্তু একটাও কাজ করবে না । আজ কলেজে পড়ে , বিয়ে হলে যে কি করবে ! শ্বশুরবাড়িতে কথা শুনতে হবে ।

দাদাবাবু টিভি তে খবর দেখতে দেখতে আওয়াজ দিয়েছিলেন – তোমাকে দেখেই মেয়ে শিখেছে । তুমিও অনেক কাজ করতে বিয়ের পর । বলেই প্রসঙ্গ পাল্টে গেল – তবে সব থেকে কষ্ট হবে তোমার বন্ধুদের কিটি পার্টি বন্ধ এখন কদিন ।

প্রেসারে চারটে সিটি পড়ল । তনিমা ব্যাগটা কাঁধে ফেলে বলল – বউদিমনি মাংসটা হয়ে গেছে । তুমি শুধু কুকার খুলে একটু নুন দেখে নিও ।
আসার আগে দাদাবাবু দুহাজার টাকার একটা নোট দিয়েছে । বলেছে – চাল , ডাল , তেল , নুন , আলু এগুলো অন্তত তুলে রাখিস একটু । অবস্থা খুব সুবিধার নয় । সেসবের আভাস পেয়ে গতকাল রাতেই পাড়ার মুদির দোকানে লম্বা লাইন দিয়ে অল্প জিনিস তুলে রেখেছে । তবে সবটাই ধারে । আজ টাকাটা পেয়ে ভালোই হল । দিনু মুদির দোকানে আগেই বেশ কিছু ধার জমেছে । কিছুটা শোধ দিতে পারলে ভালো । নইলে খুব কথা শোনায় । ছেলে মেয়ের সামনে কথা শুনতে একদম ভালো লাগে না ।

তনিমা রাস্তায় নেমেই বুঝল আজ হাওয়া অন্যরকম । ৫ টা বেজে গেছে শেষ দু একটা বাস যাচ্ছে কিন্তু দমবন্ধ ভিড় ।গরিবের কপালেও মাঝে মাঝে সিকে ছেঁড়ে । একটা ফাঁকা অটো তনিমার সামনে এসে দাঁড়ালো ।

– বাড়ি ফিরবেন তো ?

তনিমার চিনতে অসুবিধা হল না । পাড়ার চেনা মানুষ না হলেও অচেনা মানুষ নয় । অটো ড্রাইভারের নাম শঙ্কর । পাড়ায় কয়েকবার চোখাচোখি হয়েছে । বেশ কয়েকবার যেচেই লিফট দিতে এসেছিল কিন্তু সে নেয়নি । তনিমার মনে হয়েছিল শঙ্করের চাউনির মধ্যে যেন কি একটা আছে ! নয়ত ভেবেছিল সুযোগ খুঁজছে । যেমন অনেকেই খোঁজে । তনিমার চোখে মুখে জৌলুষ না থাকুক তার শরীরের ভাঁজ এখনও তীক্ষ্ণ সেখানে কোন বয়েসের ছাপ পরেনি । পাড়ার লোকে বলে তনিমার নাকি খুব দেমাক । দুবছর আগে স্বামী মারা গেলেও পাড়ায় এখনও তার নামে কোন কলঙ্ক উড়ে বেড়ায় না । সবার সব উটকো নজর , সাহায্য সব টপকে দুই সন্তান নিয়ে নিজের মতোই থাকে তনিমা ।

কি হল উঠে আসুন । আমিও বাড়ি ফিরবো । এক পাড়াতেই তো । এইটুকু বিশ্বাস করতে পারেন । তনিমার কোন অজুহাত দেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই । কারন পিছনেই একটা পুলিশ ভ্যান আসছে । হয়ত এখনই বলে বসবে “ দাঁড়িয়ে আছেন কেন ?”

অটোর পিছনের সীটে তনিমা একা বসেছে । অন্য সময় গায়ে গা ঘেঁষে , ঘামের গন্ধ শুকতে শুকতে মনে হয় কখন যে নামবে সে । আজ ফুরফুরে হাওয়াতে মনে হচ্ছে হোক না দেরি । আসলে তনিমার মনে হচ্ছে সে যেন ঘুরতে বেরিয়েছে ।শঙ্কর আবার রিজার্ভ অটোর টাকাটাই নেবে না তো ! তনিমা ফস করে বলে বসে – আর কোন প্যাসেঞ্জার নিলেন না ? আমি শেয়ার অটোতেই আসি এখানে ।

শঙ্কর হয়ত তনিমার মনের কথা বুঝে বলল – আমি তো বাড়ি যাবো এখন । পুলিশের ডাণ্ডা খেয়ে আর অটো চালিয়ে কাজ নেই এখন । এখন কয়েকদিন ঘরে বসে ঘুমনো ছাড়া উপায় নেই । আর হ্যাঁ আপনি কিন্তু আমায় শেয়ার অটোর ভাড়াই দেবেন ।
তনিমা লজ্জা পেলো । কিন্তু তার বেশি দেবার ক্ষমতা তার নেই । তনিমা নিজেই কথা বাড়াল – আপনি কোথায় থাকেন ?

  • রাখাল সামন্তর বাড়ি ভাড়া থাকি ।
  • ও আচ্ছা আমাদের পাড়ার রাখালদা ! আমার স্বামীর বন্ধু ছিলেন । খুব ভালো মানুষ । কথাগুলো বলতে বলতে তনিমা ওড়না দিয়ে নাক বাঁধল । রাস্তায় অনেকের নাকে মুখোশ বাঁধা । তনিমার কেনা হয়নি । দোকানে দুবার খোঁজ করে পায়নি । সবাই নাকি বাঁচার তাগিদে অনেক আগেই কিনে নিয়ে গেছে । মেয়ে বলেছে মা এগুলোকে মুখোশ বলবে না । মাস্ক বলবে ।

ছেলেটা সেদিন চারটে সাবান কোথা থেকে নিয়ে এসেছে ! । তনিমা সেদিন ছেলেটাকে এক চড় মেড়েছিল । টাকা কোথা থেকে পেলি ? না , কিছুতেই সে বলেনি । মুখে একটাই কথা – টিভি তে দেখনি বারবার হাত ধুতে হবে ।

তনিমার বুক ভারি হয়ে ওঠে – তবে কি ছেলেটা সাবান চুরি করেছে ? বাপমরা ছেলেটাকে কি মানুষ করতে পারবে না তনিমা ?
জোরে ব্রেক কষার জন্য তনিমার শরীরে ঝাঁকুনি লাগলো । আর এতক্ষনে শঙ্করের কথাগুলো কানে এলো – এই তো ছমাস হল এসেছি । আপনি তো রাম মন্দিরের পাশের গলির শেষ বাড়িটায় থাকেন ! তনিমা মনে মনে ভাবল লোকটা তার অনেক খবর রাখে ।

চারমাথার মোড় থেকে অটোটা বাঁক ঘুরলো ।- রাখালদার মুখে শুনেছি একটা বাস অ্যাকসিডেন্টে আপনার স্বামী মারা যান । রাখালদা আপনাদের অনেক গল্প করেন ।

তনিমার এবার একটু রাগই হল । এমন ভাবে যাকে তাকে তাদের কথা বলার কি আছে ? অবশ্য জানে রাখালদা মানুষটা যে শুধু ভালো তা নয় , খুব সাদাসিধে । তনিমা যখন স্বামীর মৃত্যুর পর অথৈ জলে পরেছিল এই রাখালদা তাকে টাকা দিয়ে অনেক সাহায্য করেছিল । প্রাইভেট বাসের সামান্য কন্ডাক্টার ছিল তার স্বামী । ইউনিয়নকে বলে কয়ে মালিকের কাছ থেকে কিছু টাকার ব্যবস্থা করেছিল রাখালদাই । তাই ওনার ঋণ কোনোদিন ভুলবে না তনিমা ।

রাস্তার পাশে একেকটা মুদি দোকানে লম্বা লাইন । তনিমা সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলল – মানুষের খিদে কি লকডাউন মানবে ?
কথাটা শঙ্করের কানে যেতেই বলল – পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে না পারলে মানুষ কি নিশ্চিন্তে বসে ঘুমবে ?
তনিমা বাইরের দিকে মুখ করেই বলল – আপনার পরিবারে কে কে আছেন ?

  • কেউ নেই । একার পেট গামছা বেঁধেও থেকে যেতে পারি ।
    তনিমা অবাক হয়ে বলল – কোথার থেকে এসেছেন ? খুব বেশিদিন তো আপনাকে পাড়ায় দেখিনি ।
    কিছুক্ষন চুপ থেকে শঙ্কর বলল– জেল থেকে । ভয় পেলেন ?
    ঠিকই কথাটা শুনে বুকটা ছ্যাঁত করে উঠেছে তনিমার । তনিমা এর পর জিজ্ঞেস করতেই পারত যে কেন কি করেছিলেন ? কিন্তু সেসব কিছুই জিজ্ঞেস করল না । পাড়ার মধ্যে ঢুকে পড়েছে অটো । শঙ্করকে দাঁড়াতে বলে ব্যাগ থেকে ভাড়ার টাকা মিটিয়ে সৌজন্য মুলক হাসিটুকু হেসে গলির মধ্যে ঢুকে পড়ল ।

ছেলে মেয়েগুলো অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছিল । তনিমা ফিরতেই তাকে অনেক উপদেশ শুনতে হল । ছেলে মেয়ে বড় হলে তারা অভিভাবক হয়ে যায় । রাতে তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়েছে মা ছেলে । ছেলেটির বয়েস দশ । মেয়ে টিভিতে খুব মনোযোগ সহকারে হিন্দি সিনেমা দেখছে ।
আজকে তনিমার মনে বিভিন্ন চিন্তা ভিড় করেছে । রাখালদা খুব ভালো এবং সৎ মানুষ , সে কেন একজন জেল ফেরত মানুষকে থাকতে দিলো তার ঘরে ! শঙ্কর কি দোষ করেছিল ? খুন , ডাকাতি , নাকি কোন মেয়েকে … ! তনিমার মনে নানা প্রশ্ন উঠলেও মানুষ চিনতে তার কখনও ভুল হয় না । শঙ্করকে দেখে তো তেমন মনে হয়নি । অবশ্য কার মনে কি আছে বোঝা মুশকিল ।

তনিমার ফোন বাজছে । ফোন ধরতেই রায় পাড়ার কাকিমার গলা – তনিমা এখন তো লকডাউনের বাজার । একদম ঘর থেকে বেরস না । তোকে আর আসতে হবে না । বৌমা বলল এখন থেকে নিজের কাজ নিজেদের করতে হবে । তুই বরং অন্য কাজ খুঁজে নিস । আর এই মাসের টাকাটা লকডাউন উঠলে পরে এসে নিয়ে যাস ।
তনিমাকে কোন কথা না বলতে দিয়েই ফোন কেটে গেছে । তনিমা হিসাব করল লকডাউন উঠতে এখনও কত দেরি । সে এই সময় অন্য আর কোথায় কাজ পাবে ? টাকাটা যে তার খুব দরকার ছিল ।

আজ তনিমা দেরি করেই ঘুম থেকে উঠেছে । কাজে যাওয়ার তাড়া নেই । অনেকদিন পর বেলা পর্যন্ত ঘুমল । ভেবেছে চালে ডালে বসিয়ে দেবে । কাজ না থাকলে মানুষকে অলসতায় পায় । সকালে চা বসাতে গিয়ে খেয়াল হল চা পাতা নেই ঘরে । পাড়ার দিনুমুদির দোকান হয়ত খুলে গেছে । ধারের টাকাটাও দিয়ে আসবে, চা পাতাও নিয়ে আসবে এই ভেবে নাকে ওড়নাটা চেপে বেরোল ।

এই সকালেও বেশ কিছু লোকের লাইন পড়েছে দোকানে । দুটো বাড়ি পরেই রাখালদার বাড়ি । দরজায় দাঁড়িয়ে ঠ্যালা থেকে সবজি কিনছে । এই পাড়ায় এই একটা সুবিধা সবজি , মাছ সব ঘরের দুয়ারে বিক্রি করতে আসে । তবে দামটা একটু বেশি । তবু এই লকডাউনের বাজারে মানুষ হুমড়ি খেয়ে কিনছে ।

রাখালদা হাতের ইশারায় তনিমাকে ডাকল । তনিমা ভেবেছিল জিনিস কিনেই ঘর মুখো হবে কিন্তু রাখালদা ডাকলে সে ডাক অবজ্ঞা করার কথা তনিমা ভাবতে পারে না । রাখালদার একমুখ হাসি । কিরে তনিমা কাজে যাসনি আজ ?

  • না লকডাউনে যাবো কি করে ?
  • ও তাই তো । অনেকদিন আসিস না । ছেলে মেয়েরা ভালো আছে তো ? আয় চা খেয়ে যা ।
  • রাখালদা আমি পরে আসবো ।
    রাখালদা একটু থেমে বলল – তোর সঙ্গে যে কথা ছিল ।
    এর পর কিছু বলা যায় না ।
    রাখালদার বাড়ির প্রসস্ত উঠোনে গিয়ে বসলো তনিমা । রাখালাদা চা করতে চলে গেল । কিছুক্ষনের মধ্যেই দুকাপ চা নিয়ে হাজির । কোনরকম ভুমিকা ছাড়াই বলল – কাল শঙ্করের অটোতে ফিরেছিস ?
    তনিমা বুঝল শঙ্কর বলেছে হয়ত ।
  • ‘তনিমা’ , শঙ্কর জেল খেটেছে সাতবছর । তবে ভয় পাস না । ছেলেটা ভালো । জেলার সাহেব আমার বিশেষ বন্ধু । শঙ্করের ভালো ব্যবহারের জন্য এক বছর সাজা মাফ করেছে । কোথায় যাবে ছেলেটা ! দেশেও কেউ নেই ওর । তাই ভাবলাম আমার কয়েকটা অটো তো ভাড়া খাটে । ও নয় চালাক একটা । যা রোজগার হবে একটা পেটের নিশ্চয়ই চলে যাবে ।
    তনিমা কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল – রাখালদা, বললে ভালো ছেলে । তবে জেল খাটল কেন ?
    রাখালদা কিছুক্ষন চুপ । তনিমা মনে আছে , দশ বছর আগে তোর স্বামী মানে তপন খুব বাজে একটা কেসে ফেসে গেছিল । কালীপূজোর রাতে জুয়ার আড্ডায় একজন খুন হয় । থানা পুলিশ । শেষ পর্যন্ত অন্য একজন সেই খুনের দায় নিয়েছিল । তপন বেকসুর খালাস পায় । তুই তখন এখানে ছিলি না । তোর মায়ের কাছে ছিলি । সেবারই মনে হয় তোর ছেলেটা হল ।

তনিমার মনে পড়ল । কোর্টে সে একবারও যায়নি । কয়েকদিন টানাপোড়েন চলেছিল তপনকে নিয়ে ।
রাখালদা হাসল । – খুনের সাজা হাত পেতে নিয়েছিল এই শঙ্কর । কিন্তু রাগের মাথায় খুনটা করেছিল তপন । বিমলের পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দিয়েছিল । আমি টাকার বদলে অনেক মানুষকে দেখেছি খুনের দায় নিতে । কিন্তু নিজেকে এভাবে বিনাদোষে মাথা পেতে সাজা নিতে দেখিনি ।

  • আমি কখনও শঙ্করকে আমার স্বামীর সঙ্গে দেখিনি । তবে ?
  • জানিনা তনিমা । অনেকবার জিজ্ঞেস করেছিলাম বলেনি । তবে ওর গ্রাম পুরুলিয়া ।

তনিমার মা মারা গেছেন আজ পাঁচ বছর । তারপর থেকে পুরুলিয়ার পাট চুকেছে । কিন্তু শঙ্করকে কিছুতেই মনে করতে পারল না । তনিমার সঙ্গে তপনের বিয়েটা দেখাশুনো করে । রাতে শুয়েও তনিমা মনে করতে পারল না শঙ্কর কেন তার এত বড় উপকার করল । তপনকেই বা কি ভাবে চিনল সে ? তাহলে কি যোগাযোগ ছিল ? তপন তো কোনোদিন বলেনি এসব কথা !

তনিমা ঘুমের মধ্যে দেখতে পেল পুকুরের ধারে রোজ একটা ছেলে দাঁড়িয়ে থাকতো । যার মুখ কোনোদিন দেখতে পায়নি তনিমা । শুধু অবয়ব চোখে পড়ত । কোনোদিন কাছেও আসেনি । তনিমা ধরমর করে বিছানার উপর উঠে বসেছে । সব কিছু মনে পরছে , তপন যখন শ্বশুরবাড়ি যেত । তনিমাকে প্রায় বলত তোমাদের গ্রামের একটি ছেলের সঙ্গে আলাপ হয়েছে । খুব ভালো ছেলেটা, নাম শঙ্কর । চেন তুমি ?

তনিমা তো সত্যি এমন নামে কাউকে চিনত না ! এসব কথায় আমল দেয়নি তেমন । কিন্তু এখন কেমন দুয়েদুয়ে চার সব মিলে যাচ্ছে ।

তনিমার খুব ইচ্ছে করল শঙ্করের কাছে গিয়ে সব প্রশ্নের জবাব চায় । কে তাকে বলেছে এভাবে তনিমার জন্য জীবনের এতোগুলো বছর নষ্ট করতে !

অ্যাঞ্জেলিকা ভট্টাচার্য

জন্ম : ১৬ই মার্চ ১৯৮৩ আসানসোল

দর্শনশাস্ত্রে স্নাতক, ইতিহাসে স্নাতকোত্তর

ইচ্ছেমৃত্যু : গল্প : ২০১৭ : কমলিনী, পরিবেশক – দে’জ
বইটি দুটি পুরস্কার পায় – আত্মজা সাহিত্য সম্মাননা এবং ডলি মিদ্যা স্মৃতি পুরস্কার
রূপকথা নয় : গল্প : ২০১৮ : কমলিনী
অনির্বাণ ও মুখবই : গল্প : ২০১৯ : অশোকগাথা
যে গল্পের শেষ নেই : গল্প : ২০২০ : কমলিনী

শ্রীচরণেষু পত্রিকার সম্পাদক

About S M Tuhin

দেখে আসুন

হেডস্যার আতঙ্ক : নেলী আফরিন

হেডস্যার আতঙ্ক নেলী আফরিন ০১. ‘কী আবদার! ইশকুলে যাবে না, উঁ-হ! রোজ রোজ এক অজুহাত …

75 কমেন্টস

  1. canadian discount pharmacy: canada pharmacy online – canadian pharmacy online ship to usa

  2. Great, thanks for sharing this post.Really thank you! Keep writing.

  3. viagra at canadian pharmacy cheap drugs online canadian pharmacies review

  4. mexican mail order pharmacies: top mail order pharmacy from Mexico – buying from online mexican pharmacy

  5. A motivating discussion is worth comment. I believe that you should write more about this topic, it might not be a taboo matter but usually folks don’t talk about these issues. To the next! Many thanks!!

  6. cómo agregar y cambiar la escena azul en html

  7. https://canadiandrugs.store/# canadian pharmacy no rx needed

  8. Enjoyed every bit of your article.Really looking forward to read more. Really Great.

  9. best india pharmacy: online shopping pharmacy india – indian pharmacy

  10. mexican pharmacies shipping to usa: buy medication online – online pharmacies legitimate

  11. Im obliged for the blog post.Much thanks again. Will read on…

  12. http://buydrugsonline.top/# order from canadian pharmacy

  13. online shopping pharmacy india mail order pharmacy india reputable indian pharmacies

  14. top 10 online pharmacy in india: buy medicines online in india – indian pharmacies safe

  15. canadian pharmacies that ship to usa: legal drugs buy online – online medication

  16. Wow, great blog post.Really looking forward to read more. Will read on…

  17. zithromax tab zithromax usage zithromax antibiotics

  18. paxlovid generic: buy paxlovid – paxlovid cost without insurance

  19. This is one awesome article post.Really thank you! Much obliged.

  20. Ill right away seize your rss as I can’t find your e-mail subscription hyperlink or e-newsletter service. Do you have any? Please allow me understand so that I may subscribe. Thanks.

  21. https://clomid.club/# can you get generic clomid for sale

  22. fantastic points altogether, you simply received a emblem new reader. What could you recommend in regards to your put up that you made some days in the past? Any certain?

  23. ventolin pharmacy uk: Ventolin inhaler – can i buy ventolin over the counter in singapore

  24. Really informative blog article.Really looking forward to read more. Really Cool.

  25. paxlovid cost without insurance: cheap paxlovid online – paxlovid pill

  26. Thanks on your marvelous posting! I definitely enjoyed reading it, youwill be a great author. I will be sure to bookmark your blog and will come back sometime soon. Iwant to encourage yourself to continue your great work, havea nice evening!

  27. Thank you ever so for you article post.Thanks Again. Cool.

  28. https://wellbutrin.rest/# wellbutrin 150 mg discount

  29. What an incredible manner of considering things.

  30. Hi, I do believe this is a great blog. I stumbledupon it 😉 I am going to return yet again since i have book-marked it. Money and freedom is the best way to change, may you be rich and continue to guide other people.

  31. gabapentin 600 mg: gabapentin best price – neurontin 300 mg price in india

  32. Hi, after reading this awesome piece of writing iam also cheerful to share my familiarity here with colleagues.

  33. Great blog.Really thank you! Cool.

  34. Valuable content. Kudos.read my college essay professional report writing services online dissertation writing service

  35. I really liked your blog article.Thanks Again. Keep writing.

  36. paxlovid generic: paxlovid club – paxlovid buy

  37. Hey, thanks for the post. Will read on…

  38. https://clomid.club/# can you buy generic clomid pill

  39. can i get clomid no prescription: Buy Clomid Shipped From Canada – where to buy clomid online

  40. Major thanks for the article post.Really looking forward to read more. Will read on…

  41. farmacia online migliore: comprare avanafil senza ricetta – farmacia online migliore

  42. farmacie online sicure avanafil spedra comprare farmaci online all’estero

  43. acquisto farmaci con ricetta: farmacia online spedizione gratuita – farmacia online più conveniente

  44. farmacia online senza ricetta: kamagra – farmacia online

  45. farmacia online migliore: avanafil spedra – acquisto farmaci con ricetta

  46. https://farmaciait.pro/# farmacie online sicure

  47. farmacie online sicure: Tadalafil generico – farmacia online

  48. Thank you ever so for you post.Thanks Again. Much obliged.

  49. farmacia online migliore Tadalafil generico acquistare farmaci senza ricetta

  50. comprare farmaci online con ricetta: farmacia online – farmacie online sicure

  51. top farmacia online: farmacia online più conveniente – farmacia online più conveniente

  52. acquisto farmaci con ricetta: Avanafil farmaco – acquistare farmaci senza ricetta

  53. farmacia online più conveniente: farmacia online – farmacia online

  54. farmacia online più conveniente: kamagra gel prezzo – farmacia online senza ricetta

  55. http://sildenafilit.bid/# pillole per erezione in farmacia senza ricetta

  56. viagra naturale in farmacia senza ricetta: viagra generico – cialis farmacia senza ricetta

  57. viagra generico sandoz viagra senza ricetta viagra consegna in 24 ore pagamento alla consegna

  58. farmaci senza ricetta elenco: Farmacie a milano che vendono cialis senza ricetta – migliori farmacie online 2023

  59. farmaci senza ricetta elenco: farmacia online miglior prezzo – farmacia online più conveniente

  60. farmacia online migliore: kamagra – acquisto farmaci con ricetta

  61. migliori farmacie online 2023: farmacia online – farmacia online senza ricetta

  62. farmacie on line spedizione gratuita: top farmacia online – farmacia online miglior prezzo

  63. acquistare farmaci senza ricetta: cialis prezzo – farmacia online più conveniente

  64. https://sildenafilit.bid/# viagra pfizer 25mg prezzo

  65. Really appreciate you sharing this article.Really thank you! Will read on…

  66. comprare farmaci online con ricetta kamagra gold п»їfarmacia online migliore

  67. farmacia online: avanafil generico prezzo – farmacia online

  68. farmacie online sicure: farmacia online miglior prezzo – farmacia online

  69. farmacia online più conveniente: cialis generico consegna 48 ore – acquistare farmaci senza ricetta

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *