বাজ পড়ার বিকট শব্দে কেঁপে উঠলেন রাধাকান্ত। জানালার দিকে তাকিয়ে দেখলেন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। আশি বছরে পা দিয়েও এতটুকুও খাটো হয়নি কান। শুনতে পেলেন বাতাসের উথালিপাথালি। বুঝতে পারলেন ঝড় উঠল বলে।
আর শুয়ে থাকতে পারলেন না। খাটে হাঁটু মুড়ে জবুথবু হয়ে বসলেন। জানালার দিকে তাকিয়ে তাঁর মনে হল সন্ধে হয়ে গেছে। মনে করার চেষ্টা করলেন, তবে কি তন্দ্রা এসেছিল চোখে! না-এলে ফাঁকি দিয়ে বিকেলটা গড়িয়ে গেল কী ভাবে! এমনিতে তো ঘুমই আসে না।
আগে অবশ্য বিছানায় শরীর মেললেই দু’চোখ বুজে আসত। ‘হ্যাঁ গো’, ‘কী হল’, ‘ঘুমোলে নাকি?’, ‘শুনবে তো…’ গোছের ডাকাডাকিতেও বিরক্ত হতেন। অন্য দিকে পাশ ফিরে শুতেন। খুব বেশি হলে ‘উঁ’ ‘অ্যাঁ’ করে উঠতেন। ব্যস, তার চেয়ে বেশি কিছু নয়।
অথচ একদিন ছিল যখন এই রাধাকান্তই রাতের পর রাত গল্প করে কাটিয়ে দিতেন। পাশাপাশি শুয়ে এই জানালা দিয়ে আকাশের তারা দেখতে দেখতে কখন যে সকাল হয়ে যেত টেরও পেতেন না।
এখন তিনি নেই। কত দিন হয়ে গেল! যাবার সময় যাদের বলে গিয়েছিলেন ‘তোরা তোদের বাপকে দেখিস’, তারা রাধাকান্তকে দেখছে। দেখছে মানে, দেখাশোনার জন্য একটা কাজের মেয়ে রেখে দিয়েছে। সে সকালে আসে, সন্ধে নাগাদ যায়। রাতের খাবার খাইয়ে-দাইয়ে।
আকাশে মেঘ করায় সে বুঝি আজ তাড়াতাড়ি চলে গেছে। এখন তো বর্ষার সময়। এলোপাথাড়ি বৃষ্টিতে জানালা দিয়ে জলের ছাঁট আসে। তাই যাওয়ার আগে সে ভাল করে জানালাগুলো লাগিয়ে দিয়ে যায়, ভেতর থেকে দরজাটা আটকে দিতে বলে। আজ আকাশের অবস্থা দেখে তাড়াহুড়োয় সে হয়তো এ সব বলতে বেমালুম ভুলে গেছে। কিংবা বলেছে, তিনি শুনতে পাননি।
মাঝে মাঝেই জানালা দিয়ে দমকা বাতাস আসছে। আসছে ইতিউতি বজ্রপাতের পৃথিবী কাঁপানো শব্দ। বিদ্যুতের ঝলকানি। রাধাকান্ত ভাবলেন, জানালার ঝাঁপটা ফেলে দেবেন, কিন্তু ওঁর উঠতে ইচ্ছে করল না। কেমন শীত শীত করছে। গায়ে জড়ানো বিছানার চাদরটায় মাথা মুড়ি দিয়ে নিলেন তিনি। জানালাটা দিয়ে দেব! দিয়েই বা কী হবে? ওখান দিয়ে আসা জলের ছাঁটটা যদি ঘর ভাসিয়েও নিয়ে যায়, তা হলেই বা ক্ষতি কী? কার কথা ভেবে আগলাবো এ সব? ওরা কি আর কখনও এ-মুখো হবে!
যখন ওরা ছিল তখন তো জীবন দিয়ে আগলেছেন এ সব। হঠাৎই মনে পড়ে গেল সে বারের কথা। তখনও তাঁর ছোট ছেলেটা হয়নি। চার ছেলেকে শুইয়ে খাটের একদম ধারে গুটিসুটি মেরে পড়ে ছিলেন ওদের মা, তরুলতা। নীচে মাদুর বিছিয়ে উনি। আচমকা মাঝরাতে সে কী পাগল-করা বৃষ্টি। ঝড়-জল। তখন তো অভাবের সংসার। ভাইদের সঙ্গে বনিবনা না-হওয়ায় সবে এক জামাকাপড়ে বেরিয়ে এসেছেন বাপ-ঠাকুরদার ভিটে ছেড়ে। কোনও রকমে বারাসতের এই বাঙাল কলোনিতে তিন কাঠা জমি কিনে একটা মাটির ঘর তুলেছেন। হোগলাপাতা দিয়ে ঘিরে করেছেন একচিলতে বাথরুম। চালের বস্তা পরদার মতো টাঙিয়ে চালাচ্ছেন দরজার কাজ। তখন চোর-টোর কোথায়! খা খা জমি। চাষবাস হয়। মাঝে মধ্যে একটা-দুটো বাড়ি। সবার অবস্থা একই রকম। আর চোর-টোর থাকলেও তাঁদের ঘরে নেবার মতো কিছু ছিল না। যদি চুরি করতে ঢুকত, তা হলে হয়তো চোরই লজ্জায় উল্টে কিছু রেখে যেত। ছিল না কল-টলের বালাইও। জল বলতে ক’হাত দূরের ওই পুকুর। শাকসব্জি যতটা না কিনে পারা যায় রাধাকান্ত টুকটুক করে ঘরের আশপাশে লাগিয়েছেন ধনেপাতা, গাজর, লঙ্কা। কঞ্চি দিয়ে টালির চালে তুলে দিয়েছেন লাউ গাছ, উচ্ছে গাছ, শিম গাছ। সে সব পাড়তে চার ছেলের যাকে যখন সামনে পেতেন তুলে দিতেন উপরে। ছেলেরা অতশত বুঝত না, রাধাকান্ত ওদের টালির জোড়ায় জোড়ায় পা দিতে বললেও, ওরা প্রায়ই প্রতিবারই এক-আধটা করে টালি ভাঙত।
বৃষ্টির সময় সেই ভাঙা টালি বেয়ে জল চুইয়ে আসত। আঙুল দিয়ে সেই জলের রেখা টেনে রাধাকান্ত পাঠিয়ে দিতেন তার নীচের সারির টালির উপরের খাঁজে। সে বার টানা তিন-চার দিন ধরে এমন প্রবল বৃষ্টি হল যে ঘরের প্রায় সব জায়গা দিয়েই জল পড়তে লাগল। বাটি, মগ, হাঁড়ি বসিয়েও কুলনো গেল না। শেষে তুলতে হল বিছানা জুড়ে পাতা পলিথিন সিট। বড়টা হওয়ার পর রাধাকান্ত ভেবেছিলেন একটা ওয়েলক্লথ আনবেন। পর পর দু’মাসেও পেরে ওঠেননি। পরে ডাকবাংলোর মোড় থেকে কিনে এনেছিলেন এই পলিথিন সিট। তখন ডাকবাংলোর মোড় এত জমজমাট ছিল না। বিকেলের দিকে ছোট-ছোট চালার নীচে দোকানিরা নানান পশরা সাজিয়ে বসত। হ্যারিকেন-লম্ফর টিমটিমে আলোয় বেচাকেনা হত। সেই পলিথিন সিটটা একটু বড়ই ছিল। বিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল চাদরের নীচে। বাকিটা গোঁজা থাকত চার দিক দিয়ে। মাঝে মাধ্যে বিছানাপত্র রোদে দেওয়ার সময় সেটা বেরিয়ে পড়ত। সেটায় শুধু বড়ই নয়, কাটিয়ে দিয়েছিল তার পরের তিন ভাইও।
এক টানে সেটা বের করে টন সুতো দিয়ে খাটের মাথা বরাবর চার দিক বেঁধে দিয়েছিলেন টালির নীচের চেলা-বাঁশগুলোতে। যাতে বউ-বাচ্চাগুলো আর না ভেজে। কিন্তু কখন যে একটু একটু করে ওটায় জল জমে জমে ভারী হয়ে গিয়েছিল উনি বোঝেননি। হঠাৎ একটা কোণের সুতো ছিঁড়ে ঝপাৎ করে ঘরময় ছড়িয়ে পড়ল। লাফ দিয়ে উঠলেন ওদের মা, তরুলতা। দেখলেন, একটুর জন্য ওরা ভেজেনি। তবে বিছানার একটা দিক ভিজে একেবারে একশা।
অগত্যা বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে ওদের মা কোনও রকমে খাটের নীচে গিয়ে মাথা গুঁজলেন। আর রাধাকান্ত ওই ঝড়-জলের মধ্যেই গামছা পরে নেমে পড়লেন উঠোনে। একটা একটা করে কুড়িয়ে এনে তুলে রাখলেন জলের তোড়ে ভেসে যাওয়া বীজ-দানাগুলো। সদ্য মাথা তোলা চারাগুলোর ওপর চাপা দিয়ে দিলেন কাঁনা-উঁচু থালা। একটু বড়, যেগুলো জলের ঝাপটায় হেলে পড়েছিল, সেগুলোর পাশে কঞ্চি পুঁতে, কাঠি পুঁতে সোজা করে দিলেন। যাতে জোরে হাওয়া দিলেও টাল সামলাতে পারে। সীমানা জুড়ে পোঁতা দু‘-চার হাত লম্বা লম্বা আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, নারকেল, সুপারি গাছগুলোর গোড়াতেও দলা দলা মাটি তুলে দিলেন যাতে পড়ে না যায়। এক সময় বৃষ্টি থেমে গেল। চারা-টারা সব ক’টাই টান টান হয়ে দাঁড়াল। বীজ-দানাগুলো বোনা হল আবার। কিন্তু রাধাকান্ত পড়লেন ধুম জ্বরে। জ্বরে ক’দিন তিনি মাথাই তুলতে পারলেন না।
তখন পারতেন। মনে জোর ছিল। ভাবতেন, ছেলেরা আছে। আর তো মাত্র ক’টা দিন। এর পরেই ওরা হাল ধরবে। যাতে ওরা শক্ত হাতে হাল ধরকে পারে, যাতে টালির চাল ফেলে দিয়ে ঢালাই ছাদ দিতে পারে, যে ক’টা পোস্ট বসাতে হয় হোক, যাতে সেই মোড় থেকে বাড়িতে নিয়ে আসতে পারে বিজলি-বাতি, যাতে মাটির তুলসী মঞ্চের জায়গায় তুলতে পারে টাইলস্ বসানো ছোট্ট মনোরম মন্দির; সে জন্য কী-ই না উনি করেছেন।
ছোট কোম্পানির অল্প মাইনের চাকরি। তাতে বাচ্চাদের মুখে কোনও রকমে দু’বেলা দু’মুঠো তুলে দেওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু তার বাইরে আর কিছু করা যায় না। তাই একে তাকে ধরে ডাকবাংলোর মোড়ের দোকানিদের পাশে একটু জায়গা বের করলেন। অফিস থেকে ফিরে সেখানে উনি বাচ্চাদের খেলনাপাতি নিয়ে বসতেন। হাতা, খুনতি, দা, ছোটখাটো বাসনপত্রও রাখতেন। তার মধ্যেই জমি-বাড়ির দালালি করতেন। ছুটিছাটার দিনেও কিছু না কিছু করতেন। কখনও চুপচাপ বসে থাকেননি তিনি।
নিজেকে নিংড়ে যে দুটো পয়সা পেয়েছেন, সবটুকুই ঢেলে দিয়েছেন ছেলেদের পিছনে। কলকাতায় হস্টেলে রেখে তাদের পড়ালেখা করিয়েছেন। কখনও বুঝতে দেননি দশটা পয়সা বাস ভাড়া বাঁচানোর জন্য শিয়ালদহ থেকে ক’মাইল হেঁটে উনি তাদের কাছে যান। কখনও জানতে দেননি, তাঁরা দুটিতে শুধু মুড়ি চিবিয়ে কী ভাবে কাটিয়ে দেন রাতের পর রাত। রাধাকান্ত চোখে এখন মাঝে মাঝেই ভেসে ওঠে সেই সব দিনের ছবি।
যে দিন মাইনে পেতেন, তার পরের রবিবারই বাড়িতে মাংস হত। না, বাড়িতে মুরগির মাংস ঢুকত না, খাসির মাংস। তাও সব মাসে নয়। যে মাসে বিয়ে, অন্নপ্রাশন বা ওই জাতীয় কোনও নিমন্ত্রণ থাকত, সে মাসে আর মাংস হত না। মাংসের টাকা দিয়ে উপহার কিনে সেখানে যেতেন। যে যতটা পারেন, মাংস খেতেন।
মাস যত এগোত, তত বড় মাছ থেকে কমদামি মাছে নেমে আসত বাজার। দু’সপ্তাহ পরেই আর মাছ নয়, বাড়িতে আসত ডিম। প্রথম কুড়ি দিন পেরোলে আর গোটা ডিম নয়, ডিম সিদ্ধ করে সুতো দিয়ে মাঝখান থেকে কেটে ছেলেমেয়েদের পাতে দিতেন অর্ধেক করে ডিম। মাসের ছাব্বিশ-সাতাশ দিন হয়ে গেলে বাচ্চাদের পাতে সেটাও দিতে পারতেন না। তখন শুধু রাধাকান্ত পাতে পড়ত ডিম, আর বাকিরা পেত ডিমের ঝোল আর চার ফালি করে কাটা দু’টুকরো করে আলু। রাধাকান্ত খেতে না চাইলে তরুলতা বলতেন, তুমি এত খাটাখাটনি করো, এটুকু না খেলে যে বিছানায় পড়ে যাবে!
স্পষ্ট মনে আছে, সে দিন তাঁকে ভাত বেড়ে দিয়ে তরুলতা মুড়ির বাটি নিয়ে বসেছেন। সঙ্গে গোটা চারেক লঙ্কা। বাটির দিকে তাকিয়ে উনি বউকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার ভাত কোথায়?
— আছে আছে, ভাত আছে। আসলে ক’দিন ধরে শরীরটা ঠিক ভাল যাচ্ছে না। থেকে থেকেই জ্বর আসছে। তাই… তরুলতা বলছিলেন।
কিন্তু রাধাকান্ত তাঁর মুখের দিকে তাকাতেই তরুলতার কথা মাঝপথে আটকে গেল। শুধু বললেন, অ।
খেয়ে-দেয়ে উঠে তরুলতার গায়ে হাত দিয়ে দেখলেন জ্বর নেই। পর দিনও তাই। তার পরের দিনও তাই।
রাধাকান্ত বললেন, এটা তো ঠিক ভাল ঠেকছে না। প্রত্যেক মাসেই শেষের দিকে দেখি তোমার এমন হয়। তুমি একবার তা হলে শিবু ডাক্তারকে…
— তোমার না… হয়েছে একটু জ্বর, তা নিয়ে আবার ডাক্তার-কবিরাজ! এমন জ্বর সবারই হয়। তরুলতা বললেন।
— না না, অনেক দিন তো হল, রোগ নিয়ে ছেলেখেলা কোরো না। এর পর বিছানায় পড়লে… গজগজ করলেন রাধাকান্ত।
— মেয়েদের প্রাণ, কই মাছের জান, বুঝলে? সহজে যায় না। দুটো দিন ভাত না খেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। এর জন্য আবার শুধু শুধু দু’-তিন টাকার ধাক্কা।
তখন শিবু ডাক্তারের ফি, ওষুধপত্র নিয়ে ওই দু‘-তিন টাকাই ছিল। তাও দেখাতে চাইতেন না তরুলতা। কেন দেখাতে চান না ডাক্তার? অনেক পরে সেটা একদিন আবিষ্কার করেছিলেন রাধাকান্ত। আসলে জ্বর-টর কিছু নয়। মাসের শেষের ক’টা দিন চালে একটু টান পড়ে, তখন তো আর দুম করে বলা যায় না চাল বাড়ন্ত, তা ছাড়া রাধাকান্ত ভাতের পোকা। পারলে দু’বেলাই ভাত খান। তাই সব দিক সামলাতে লতার এই বাহানা। বুঝতে পেরে বউকে একটু ধমকেই ছিলেন রাধাকান্ত— চাল বাড়ন্ত হলে আমাকে বলবে, তা বলে না খেয়ে কাটাবে?
জোরে কথা বললে থতমত খেয়ে যেতেন তরুলতা। ছলছল চোখে মুখ নামিয়ে বলেছিলেন, সেই কোন সাতসকালে একটু ভাত খেয়ে বেরোও, বাইরে খিদে পেলে তুমি কী খাও, আমি বুঝি জানি না, না? তুমি ওদের জন্য এত করতে পারো, আর আমি একটু করলেই… কথা শেষ হওয়ার আগেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেছিলেন তরুলতা। রাধাকান্ত কাছে গিয়ে তরুলতার মাথাটা বুকে টেনে নিয়েছিলেন।
ছেলেদের জন্য ওঁরা এ ভাবেই করেছেন। ছেলেরাও একে একে পাস-টাস করে যে যার মতো দাঁড়িয়ে গেছে। বিয়ে-থা করেছে।
এক-একটা ছেলে বিয়ে করেছে। বউ নিয়ে এসেছে। আর বুড়ো-বুড়ি নড়েচড়ে উঠেছেন। এ বার বুঝি বাড়ির হাল ফিরল। ছোট-ছোট কচিকাঁচায় ভরে উঠল ঘর। উঠোন। দামালপনায় তাঁদের মাতিয়ে রাখল সারাক্ষণ।
শাশুড়িরা বুঝি এমনটাই চান। তিনিও একদিন নতুন বউ হয়ে এসেছিলেন। সেই ঘটনাটা মনে পড়লে হাসি পেত বহু দিন পর্যন্ত। বিয়ে হয়েছে তখনও ছ’মাস হয়নি। কী একটা কাজে ক’দিনের জন্য রাধাকান্ত গেছেন কোথায় যেন। রাতে বউয়ের শোয়ার জায়গা হয়েছে শাশুড়ির কাছে। শুয়ে শুয়ে নানান কথা হয় শাশুড়ি-বউয়ে। তত দিনে অনেকটা সহজ হয়ে গেছেন তরুলতা। কিন্তু সেই কথাটা শুনে তাঁর সে কী লজ্জা। লজ্জায় মাটির সঙ্গে মিশে যান আর কী।
কর্তা ফিরতেই গদগদ হয়ে বলেছিলেন, তোমার মা কী বলেছেন জানো? ডালপালা ছড়াতে। বলেই, ঠোঁট কামড়ে হাসতে শুরু করেছিলেন। হাসতে হাসতে ফর্সা মুখ লাল হয়ে উঠেছিল।
শাশুড়ির সেই কথা তিনি রেখেছিলেন। পাঁচ-পাঁচটা ডাল ছড়িয়ে দিয়েছিলেন এ পাশে ও পাশে। তাই নিজে শাশুড়ি হওয়ার পর নিজের মেয়ের মতো করে বউদের শিখিয়ে-পড়িয়ে নিতে চেয়েছিলেন। শাশুড়ির কাছ থেকে উনি যা যা পেয়েছেন, তা-ই উজাড় করে দিতে চেয়েছিলেন। বলেছিলেন, সেই কথাটিও। তখন কি আর বুঝেছিলেন, সেই দিনকাল আর নেই। মানুষও বদলে গেছে অনেক। ছোট বউ তো মুখের ওপরে বলেই দিয়েছিল, সেই যুগ আর নেই মা। এখন হাম দো হামারা দো। একটাকেই মানুষ করতে লোকে হিমশিম খাচ্ছে, আর আপনি বলছেন… মার্কেট প্রাইস জানেন?
মার্কেট প্রাইস সত্যিই জানতেন না তরুলতা। তাই তো যখনই এক-একটা ছেলে বিয়ে করে বউ নিয়ে বাড়ি উঠেছে, তখনই নতুন আশায় বুক বেঁধেছেন। আর প্রতিবারই তা ভেঙে খান খান হয়ে গেছে।
ভেঙে গেছে দেহ। ভেঙে গেছে মন। ভেঙে গেছে স্বপ্ন।
ছেলেরা যাতে ঠিক মতো শিক্ষা পায়, নিজের বুদ্ধি দিয়ে চটজলদি বিচার-বিশ্লেষণ করতে পারে, সত্যিকারের মানুষের মতো মানুষ হয়ে ওঠে, সে সবের দিকে নজর দিতে গিয়ে ছেলেগুলোর দিকে তাকানোরই ফুরসত হয়নি রাধাকান্তর।কী করে যে ওই ফুটফুটে শিশুগুলো হঠাৎ এত বড় হয়ে গেল, টের পাননি। তাই সাধ হয়েছিল, নাতি-নাতনিদের কাছে রেখে, ওরা একটু একটু করে কী ভাবে বেড়ে ওঠে, তা দু’চোখ ভরে পরখ করার। কিন্তু তা আর হল কোথায়!
বড় ছেলে কাজ করে মেকনে। সাহেবি ফার্ম। সকাল ন’টায় অ্যাটেনডেন্স। কলকাতায় না থাকলে হয়! মেজ ছেলে ওর বউয়ের ওপরে কিছু বলতে পারে না। বউমা নাকি বিয়ের আগেই ছেলেকে সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, আমি বাবা ওই পাড়াগাঁয়ে গিয়ে থাকতে পারব না। একটু বৃষ্টি হলেই যা প্যাঁচপেচে কাদা। সেজ ছেলে আবার খুব হিসেবি। সে হিসেব কষে দেখেছে, এখানে থাকলে তার যাতায়াতে যে সময় লাগবে, সেই সময় সে যদি কোনও কোম্পানির হিসেব-নিকেশ দেখে দেয়, তা হলে যা পাবে, তাতে বালিগঞ্জ, নিউ আলিপুর না-হলেও গড়িয়া বা গার্ডেনরিচে দু‘-তিন কামরার ফ্ল্যাট অনায়াসেই ভাড়া নেওয়া যায়। সুতরাং কে আর শুধু শুধু রাতে শোয়ার জন্য এই ধকল সহ্য করে। সেজ ছেলের এই হিসেব রাধাকান্তর মাথায় ঢোকে না। গড়িয়া বা গার্ডেনরিচ থেকে যদি যাতায়াত করা যায়। বারাসত থেকে করা যায় না? এখন তো শুনি আরও সুবিধে হয়েছে। ধর্মতলা থেকে নাকি দু’মিনিট পর পরই লাক্সারি বাস।একটু দাঁড়ালে সিটও পাওয়া যায়। হু হু করে ছোটে। ডাকবাংলোর মোড়ে আসতে কতক্ষণই বা লাগে! নাকি এখানে না থাকার অন্য কোনও কারণ আছে! তখন শুধু আর টাকা দিয়ে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। প্রতিদিন বোঝা বইতে হবে। তিনি তো এখন একটা বোঝাই! নাকি অন্য ভাইরা না ভাবলেও তাদের বউরা ভাবতে পারে, বাড়ির লোভে আছে, সেই ভয়ে! নাকি সে তার বউ-বাচ্চা নিয়ে নিজের মতো করে বাঁচতে চায়। রাধাকান্ত এখন বসে বসে এই রকম এক-একটা কারণ হাতড়ে হাতড়ে বের করেন। অথচ কোনওটাকেই বিশ্বাস করতে মন চায় না। তাঁর ছেলেরা কখনওই এমন হতে পারে না। সেজর পরের জনের তো আবার নাগালই পাওয়া যায় না। আজ দিল্লি, কাল মুম্বই, পরশু চেন্নাই করে বেড়াচ্ছে। অফিস থেকেই ফ্ল্যাট পেয়েছে। বাইশশো স্কোয়ার ফিটের। একদম ঝাঁ-চকচকে। ওর মাকে এক বার নিয়ে গিয়েছিল। পর দিনই ফিরে এসে ওর মা বলেছিলেন, কী কষ্টে আছে গো ওরা, একটুও উঠোন নেই। জামাকাপড় শুকোতে দেবে কোথায়?
আর ছোট ছেলে? সে তো নাক সিঁটকোয়। এটা একটা জায়গা? একটা ভাল স্কুল নেই। মেশার মতো লোকজন নেই। দশটা বাজতে না-বাজতেই শুয়ে পড়া। এটা কোনও লাইফ? এখানে বাচ্চাকাচ্চা রাখলে সে সে রকমই হবে। যত দিন মা-বাবা আছে…
মা-বাবা আছে দেখেই তারা আসে। ছোট আসে। ন’ আসে। সেজ আসে। মেজ আসে। বড় আসে। আগে ঘনঘন আসত। যত দিন যাচ্ছে ওদের আসাটাও তত কমছে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমছে থাকার সময়ও। রাধাকান্ত বুঝতে পারেন, যে ছেলে যেখানে আছে সেখানেই তাদের শিকড়-বাকড় ঢুকে গেছে এত গভীরে যে, হুটহাট করে তারা আর আগের মতো আসতে পারে না।
তবু যে ছেলেই আসে রাধাকান্ত জিজ্ঞেস করেন, একা কেন রে? বউমা এল না? কেউ বলে, দেখো না বেরোতে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ বউ-বাচ্চা নিয়ে ছোট শালা এসে হাজির। কী করি? একাই আসতে হল। তোমার বউমা তো কবে থেকেই এখানে আসার জন্য… যে দিনই রেডি হই, একটা না-একটা…
কেউ বলে, তোমার দাদু ভাইয়ের সামনে পরীক্ষা তো, এখন ওদের যা চাপ…
আবার কেউ বলে, সপ্তাহে এই একটা দিনই তো ও ছুটি পায়। সংসারে হাজার রকম কাজ থাকে। একসঙ্গে দু’জনে বেরোলে…
রাধাকান্ত চুপচাপ শোনেন। শোনেন নাতি-নাতনিদের কথা। তারা কে সাঁতার শিখছে। কে কোন বসে আঁকা প্রতিযোগিতায় নাম দিয়ে প্রাইজ পেয়েছে। কে এ বারও ক্লাসে ফার্স্ট হয়েছে। কার নাচের প্রোগ্রাম হয়ে গেল কলামন্দিরে।
শুধু শোনেনই। শুনে শুনেই আন্দাজ করেন, তাঁর সেই ছোট্ট ছোট্ট দাদুভাই-দিদিভাইরা এত দিনে কত বড় হল। কেবল ন’য়ের মেয়েটা বাদে। তাকে উনি চোখেই দেখেননি। মুখেভাতের সময় খুব করে নিয়ে যেতে চেয়েছিল ওরা। উনি যেতে পারেননি। অসুস্থ ছিলেন। ডাক্তার বারণ করেছিলেন। ন’য়েরও আর সময় হয়নি ওকে নিয়ে আসার।
মাঝে মাঝে রাধাকান্ত মনে হয়, ওদের আসা-টাসার মধ্যে হৃদয়ের সেই টান আর নেই। আছে শুধু কর্তব্য। লোকে কী বলবে! কিংবা না এলে নয়, তাই এই আসা-যাওয়া।
ওদের এই আসা-যাওয়া আরও কমে গেছে, ওদের মা মারা যাওয়ার পর থেকে। বড় ছেলে অবশ্য ওঁকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। উনিই রাজি হননি।
যে ছাউনির তলায় যাঁর সঙ্গে উনি এত কাল কাটিয়েছেন, তিনি চলে য়েতেই সেই ছাউনি ছেড়ে কি তাঁর পক্ষে যাওয়া সম্ভব? এখানকার প্রতিটি ধূলিকণার মধ্যে যে তিনি রয়েছেন। রয়েছে কত কথা, কত ভালবাসাবাসি, কত স্মৃতি। যেতে গেলে এগুলো কি লতাগুল্ম হয়ে পায়ে পায়ে জড়াবে না?
এগুলো নিয়েই উনি এখন বেঁচে থাকতে চান। আর সেই থাকতে চাওয়ার ইচ্ছেটা একটু-একটু করে বাড়িয়ে দিয়ে যায় মাসে মাসে এক-একটা ছেলে আর কখনও সখনও বউ নাতি-নাতনিরা এসে। যাওয়ার সময় হাতে গুঁজে দিয়ে যায় কিছু টাকা। যে টাকা ওরা পাঁচ ভাই মিলে দেয়। পালা করে নিয়ে আসে একেক মাসে এক-একজন। আর যে আসে, সে-ই আঙুল তুলে দেখিয়ে দিয়ে যায় মরুভূমির বুকে মরীচিকার মতো টলটলে জলের পুষ্করিণী। বলে, আমরা তো আছি। যখনই তোমার কোনও দরকার হবে, শুধু একটু খবর দিয়ো, ব্যস। খবর দেওয়ার জন্য সব ক’টা ছেলেরই ফোন নম্বর রয়েছে তাঁর কাছে। মোবাইলের তো বটেই। ল্যান্ড নম্বরও রয়েছে। ওরাও সেই নাম্বারগুলো সেভ করে দিয়ে গেছে ফোনে। কিন্তু কে খবর দেবে! তাঁকে তাঁর বড় ছেলে যে মোবাইলটা কিনে দিয়ে গেছে, সেটার বোতাম টিপতে গিয়ে কোনটার জায়গায় কোনটা টিপে ফেলেন, অন্য লোকের কাছে ফোন চলে যায়। ছেলেরা করলেও কানে চেপে ধরেও সব কথা ঠিক মতো শুনতে পান না। যেটুকু শুনতে পান, তার অনেকটাই বোঝেন না। বাইরে বেরিয়ে যে কাউকে দিয়ে ফোন করাবেন, তারও কি উপায় আছে! এমনিতেই শরীর চলে না। রাধাকান্তর আফসোস হয় ছেলেদের কথা ভেবে, ওরা ভাবে টাকা-পয়সাই সব। আর, দরকার ছাড়া কেউ বুঝি কারও কথা ভাবে না… চোখের সামনে কেমন বদলে গেল পৃথিবীটা!
বুকের ভিতরটা হাহাকার করে উঠল ওঁর। এই যে একটু আগে তাঁর জানালা বন্ধ করতে ইচ্ছে করছিল, কিন্তু বিছানার চাদরের মুড়ি থেকে তাঁর যে বেরোতেই ইচ্ছে করল না, ফলে দরমার ঝাঁপটা খোলাই পড়ে রইল। যদি ওই পাঁচটার একটাও থাকত, তা হলে কি জানালাটা এখনও এই ভাবে হাঁ করে খোলা থাকত? একটা হাঁক দিয়ে বললেই কি, কেউ এসে ঝাঁপটা ফেলে দিয়ে যেত না?
অথচ তাঁর ছেলেরা যখন একে-একে চাকরি পাচ্ছে, তখন তাঁর সহকর্মীরাই বলতেন, তোর আর চিন্তা কী? এ বার তো তুই পায়ের ওপর পা তুলে খাবি। যেমন এত দিন কষ্ট করেছিস, এখন ভোগ করবি। ছেলে তো নয়, পাঁচটা রত্ন।
আত্মীয়স্বজনও সে কথা বলত। সামনে এ কথা বললেও, তারা যে আসলে তাঁদের পিছনে এর ঠিক বিপরীত কথাই বলত, সে কথা তিনি তিনি জানতে পারতেন, যখন সেই কথাগুলোই তাঁর কাছে আসত নানা কান ঘুরে। তাঁর ছেলেরা নাকি টাকা দিয়ে ডিগ্রি কিনছে। ঘুষ দিয়ে চাকরিতে ঢুকছে। কেউ নাকি শ্বশুরের পয়সায় ছড়ি ঘোড়াচ্ছে। আরও কত কী! প্রথম প্রথম উনি রেগে যেতেন। প্রতিবাদ করতেন। বোঝানোর চেষ্টা করতেন, ব্যাপারটা তা নয়। তার পর আস্তে আস্তে ওঁর মনে হয়েছে, যারা ওগুলো বলে, তারা ঈর্ষা থেকে বলে। তিনি তাঁর ছেলেদের চেনেন। জানেন। বোঝেন।
তাঁকে যখন ছেলেরা বলেছে, আমরা আছি। উনি জানেন, ওরা আছে। সত্যিই আছে। যে কোনও দিন, যে কোনও সময় একটা খবর পাঠালেই ওরা ছুটে আসবে। যে কোনও বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়বে। বুক দিয়ে আটকাবে সমস্ত বাধা। সমস্ত বিপত্তি।
কিন্তু ওদের খবর দিল কে? না হলে, ঝড় তো অনেকক্ষণ শুরু হয়েছে। যেমন তাণ্ডব নৃত্যের হাঁকডাক শোনা যাচ্ছে, তাতে তো অনেক আগেই এই টালির চাল-টাল উড়ে যাওয়ার কথা! সামনের ওই এক চিলতে বারান্দাটা তছনছ হয়ে যাওয়ার কথা! অথচ জানালা দিয়ে যেটুকু দেখা যাচ্ছে, তাতে তো মনে হচ্ছে সব ঠিকই আছে। তবে কি ওরা পাঁচ ভাইই একসঙ্গে এসে ঝড়ের সামনে বুক পেতে দাঁড়িয়েছে? আগলাচ্ছে তাদের পৈতৃক ভিটে?
ইচ্ছে করল ওদের ডাকতে। কিন্তু যত জোরেই ডাকুন না কেন, ঝড়-জলের শব্দ ছাপিয়ে তাঁর গলার স্বর যে উঠোনে, তাঁর ছেলেদের কাছে গিয়ে পৌঁছবে না, এটা উনি এই বয়সেও অনুমান করতে পারলেন।
শীত-শীত লাগছিল দেখে বিছানার চাদরটা ভাল করে জড়িয়ে নিয়েছিলেন গায়ে। সেটা খুলে খাটের ওপর রেখে, নীচে রাখা জলচৌকিটায় পা দিয়ে রাধাকান্ত নেমে পড়লেন মেঝেয়। ভাঙাচোরা শরীর নিয়ে দেয়াল ধরে ধরে দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন বাইরে। চারিদিকে তখন তুমুল ঝড়-জল। অথচ দামাল বাতাস একবারও আছড়ে পড়ল না তাঁর ওপরে। তাঁর বাড়ির ওপরে।
একসঙ্গে পাঁচ ছেলেকে তিনি বহু দিন দেখেননি। দেখার জন্য মনটা ভারী ব্যাকুল হয়ে উঠল। আলো-আঁধারি উঠোনের দিকে উঁকিঝুঁকি মারতে লাগলেন তিনি। যে দিকেই চোখ গেল, দেখলেন, মাথা তুলে ওরা দাঁড়িয়ে।
রাধাকান্ত চমকে উঠলেন, ওরা তো মাত্র পাঁচ জন! এত হল কী করে! কাউকেই যে চেনা যাচ্ছে না। কাকে ডাকবেন প্রথমে? ভাল করে চেনার চেষ্টা করলেন। আর তখনই বিদ্যুৎ চমকালো আকাশে। তারই এক ঝলক আলোয় উনি দেখলেন, কী বিশাল বিশাল তাদের দেহ। ইয়া ঝাঁকরা-ঝাঁকরা মাথা। সীমানা জুড়ে প্রাণপণে তারা আগলাচ্ছে এই ভিটে। ঝড়ের দাপটে উথালিপাথালি খাচ্ছে।
শীতল বাতাসে শরীরটা শিরশির করে উঠল তাঁর। তবু রাধাকান্তর ঘরে যেতে ইচ্ছে করল না। কেবল অবাক হয়ে দেখতে লাগলেন, চারাগুলো কেমন গাছ হয়ে গেছে।

সিদ্ধার্থ সিংহ
জন্ম কলকাতায় । ১৯৬৪ সালে । ক্লাস নাইনে পড়ার সময়ই তাঁর প্রথম কবিতা ছাপা হয় ‘দেশ’ পত্রিকায়। প্রথম ছড়া ‘শুকতারা’য় । প্রথম গদ্য ‘আনন্দবাজার’-এ । প্রথম গল্প ‘সানন্দা’য় । যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় হয় । মামলা হয় পাঁচ কোটি টাকার।
ছোটদের জন্য যেমন মৌচাক, শিশুমেলা, সন্দেশ, শুকতারা, আনন্দমেলা, কিশোর ভারতী, চিরসবুজ লেখা, ঝালাপালা, রঙবেরং, শিশুমহল ছাড়াও বর্তমান, গণশক্তি, রবিবাসরীয় আনন্দমেলা-সহ সমস্ত দৈনিক পত্রিকার ছোটদের পাতায় লেখেন, তেমনি বড়দের জন্য লেখেন কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ এবং মুক্তগদ্য। ‘রতিছন্দ’ নামে এক নতুন ছন্দের প্রবর্তন করেছেন তিনি। এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা দুশো পঁতাল্লিশটি। তার বেশির ভাগই অনুদিত হয়েছে বিভিন্ন ভাষায়। বেস্ট সেলারেও উঠেছে সে সব।
যৌথ ভাবে সম্পাদনা করেছেন লীলা মজুমদার, রমাপদ চৌধুরী, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, মহাশ্বেতা দেবী, শংকর, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, সুচিত্রা ভট্টাচার্য, নবনীতা দেবসেন, রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়দের সঙ্গে।
তাঁর লেখা নাটক বেতারে তো হয়ই, মঞ্চস্থও হয় নিয়মিত। তাঁর কাহিনি নিয়ে ছায়াছবিও হয়েছে বেশ কয়েকটি। গান তো লেখেনই। মিউজিক ডিরেক্টর হিসেবেও কাজ করেছেন বেশ কয়েকটি বাংলা ছবিতে। তাঁর ইংরেজি এবং বাংলা কবিতা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কয়েকটি সিনেমায়। বানিয়েছেন দুটি তথ্যচিত্র। তাঁর লেখা পাঠ্য হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের এক তারিখ থেকে একত্রিশ তারিখের মধ্যে কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, মুক্তগদ্য, প্রচ্ছদকাহিনি মিলিয়ে মোট তিনশো এগারোটি লেখা প্রকাশিত হওয়ায় ‘এক মাসে সর্বাধিক লেখা প্রকাশের বিশ্বরেকর্ড’ তিনি অর্জন করেছেন।
ইতিমধ্যে পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ শিশু সাহিত্য সংসদ পুরস্কার, স্বর্ণকলম পুরস্কার, সময়ের শব্দ আন্তরিক কলম, শান্তিরত্ন পুরস্কার, কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত পুরস্কার, কাঞ্চন সাহিত্য পুরস্কার, সন্তোষকুমার ঘোষ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা লোক সাহিত্য পুরস্কার, প্রসাদ পুরস্কার, নতুন গতি পুরস্কার, ড্রিম লাইট অ্যাওয়ার্ড, কমলকুমার মজুমদার জন্মশতবর্ষ স্মারক সম্মান, সামসুল হক পুরস্কার, সুচিত্রা ভট্টাচার্য স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, অণু সাহিত্য পুরস্কার, কাস্তেকবি দিনেশ দাস স্মৃতি পুরস্কার, শিলালিপি সাহিত্য পুরস্কার, চেখ সাহিত্য পুরস্কার, মায়া সেন স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ছাড়াও ছোট-বড় অজস্র পুরস্কার ও সম্মাননা। পেয়েছেন ১৪০৬ সালের ‘শ্রেষ্ঠ কবি’ এবং ১৪১৮ সালের ‘শ্রেষ্ঠ গল্পকার’-এর শিরোপা।
SIDDHARTHA SINGHA , 27/P, ALIPORE ROAD, KOLKATA 700027
(M) 9836851799 / 8777829784
E-MAIL : siduabp@gmail.com
http://buydrugsonline.top/# cheap drug prices
medication from mexico pharmacy: mexico pharmacy – mexican pharmaceuticals online
no prescription drugs canada: online meds – buy meds online
best online pharmacies: order medication online – aarp canadian pharmacy
https://ordermedicationonline.pro/# canadian drug mart pharmacy
reputable indian pharmacies indianpharmacy com indian pharmacy online
indian pharmacy: indianpharmacy com – indian pharmacy
ajanta kamagra – Modern equipment supports the production of controlled-release medications with specific release profiles.
Online medicine order: indian pharmacies safe – Online medicine home delivery
http://indiapharmacy.site/# indianpharmacy com
pharmacies in mexico that ship to usa: mexican online pharmacy – pharmacies in mexico that ship to usa
https://clomid.club/# generic clomid online
clomid tablet: clomid best price – can i get cheap clomid no prescription
https://wellbutrin.rest/# wellbutrin xl 150
cost clomid tablets: Clomiphene Citrate 50 Mg – cost of cheap clomid pill
http://wellbutrin.rest/# average cost of wellbutrin
paxlovid india: paxlovid price – paxlovid price
http://wellbutrin.rest/# best generic wellbutrin 2015
ventolin hfa 90 mcg: Ventolin inhaler best price – ventolin generic price
http://gabapentin.life/# how much is neurontin pills
order wellbutrin sr: Wellbutrin prescription – price of wellbutrin in canada
https://gabapentin.life/# neurontin cap 300mg price
wellbutrin 300 mg no prescription online: Wellbutrin online with insurance – buy generic wellbutrin
http://wellbutrin.rest/# order wellbutrin sr online
comprare farmaci online con ricetta: comprare avanafil senza ricetta – farmacia online miglior prezzo
viagra naturale in farmacia senza ricetta viagra generico viagra originale recensioni
cialis farmacia senza ricetta: viagra senza ricetta – viagra ordine telefonico
viagra ordine telefonico: viagra consegna in 24 ore pagamento alla consegna – viagra 100 mg prezzo in farmacia
farmacie online affidabili: kamagra oral jelly consegna 24 ore – farmacie online autorizzate elenco
http://tadalafilit.store/# п»їfarmacia online migliore
comprare farmaci online con ricetta: avanafil generico prezzo – farmacia online miglior prezzo
farmacie online affidabili: avanafil prezzo – farmacia online migliore
migliori farmacie online 2023 avanafil generico п»їfarmacia online migliore
п»їfarmacia online migliore: avanafil spedra – farmacie on line spedizione gratuita
siti sicuri per comprare viagra online: viagra consegna in 24 ore pagamento alla consegna – viagra 100 mg prezzo in farmacia
farmacia online migliore: Cialis senza ricetta – farmacia online senza ricetta
http://tadalafilit.store/# comprare farmaci online con ricetta
cialis farmacia senza ricetta: viagra online spedizione gratuita – viagra generico sandoz
farmacie online affidabili: Farmacie a milano che vendono cialis senza ricetta – farmacia online più conveniente
miglior sito dove acquistare viagra: viagra generico – viagra online in 2 giorni
farmacia online senza ricetta kamagra gel prezzo acquistare farmaci senza ricetta
acquisto farmaci con ricetta: cialis prezzo – farmacia online migliore
comprare farmaci online con ricetta: Farmacie che vendono Cialis senza ricetta – farmacia online miglior prezzo
farmaci senza ricetta elenco: dove acquistare cialis online sicuro – farmacie online sicure
viagra online in 2 giorni: viagra senza ricetta – alternativa al viagra senza ricetta in farmacia
viagra online consegna rapida: viagra prezzo farmacia – viagra cosa serve
Hotel Sterrenberg op de VeluweHotel Sterrenberg op de Veluwe Hotel de Sterrenberg is een luxe hotel midden op de Veluwe. Overnacht in ons 4-sterren adults only hotel en geniet van de natuur, heerlijk eten, cultuur en wellness. VIAGRA® Generikum von Ratiopharm Pour cela, quant nous décidons acheter en ligne en pharmacies d’Andorre nous trouvons généralement une variété de compléments naturels de marques internationales de qualité éprouvée, destinés à aider a contrôler notre santé. Visitez notre pharmacie en ligne d’Andorre la Vella et vous trouverez la plus haute qualité en médicaments de parapharmacie. annonce un médicament avec des faussesCialis Générique n’est pas recommandé pour unedrainage veineux. Nous devons savoir que led’autre part, réduit l’effet pharmacologique ded’hommes sont surpris par l’action du Cialis: sane prête à conséquence qu’en cas de prise viagra for men plus âgés. Les recherches initiales sur le Viagramédicament une érection ne se produit pas parproduisant à leur tour un liquide, un mélangeprochaines 24 heures. La meilleure solution est.
https://mecabricks.com/en/user/levitramgstck
Das Trinken großer Mengen Alkohol erhöht die Wahrscheinlichkeit von Nebenwirkungen. Darüber hinaus ist eine Vergiftung mit Ethylalkohol möglich. Die regelmäßige Kombination von Levitra mit Alkohol ist gesundheitsschädlich. Medikament zur Behandlung von Erektionsstörungen. Wenn die Einnahme von Tabletten. Bitte beachten Sie. Alkohol kann einen negativen Effekt auf die Erektion haben. Arzneimittel Levitra Original® sollte ungefähr 60 Minuten vor dem Geschlechtsverkehr eingenommen werden. Die potenzsteigernde Wirkung hält 4-5 Stunden. Frauen und Personen unter 18 Jahren dürfen Levitra Original® nicht einnehmen. Nehmen Sie nicht Levitra Generika mit Medikamenten, die Nitrate und Stickstoffmonoxid Spender enthalten und auch mit anderen Medikamenten für die Potenz. Sie können günstig Potenzmittel Levitra in Deutschland kaufen.
farmacie online affidabili: avanafil generico – migliori farmacie online 2023
viagra cosa serve viagra senza ricetta cerco viagra a buon prezzo
farmacia online migliore: avanafil – farmaci senza ricetta elenco
top farmacia online: farmacia online più conveniente – farmacia online senza ricetta