কুমার দীপ-এর পাঁচ কবিতা
ব্রাত্যবেদ
এখন আমার অবস্থাটা‐
সেই বাঁশিওয়ালা যুবকের মতন
যে কি না বাঁশি বাজাতে বাজাতে যখন নদীতীর
আর নানা গাছ-গাছালির নিচ দিয়ে হেঁটে যেতো
তার লম্বা চুলগুলো বাতাসের আলিঙ্গনে অবিচল
মেঘতরঙ্গ হয়ে উড়তো।
এখনও সেই ঢেউমুগ্ধ নদীতীর
আর অনিন্দ্য সবুজের ভেতর দিয়েই সে হাঁটে
হয়তোবা বাঁশিও বাজায়- মনে মনে
তথাপি তার চুলগুলি আর ওড়ে না
উড়তে পারে না;
বাতাস নেই, তা কিন্তু নয়
এমনকি তার মাথাজুড়ে বংশগত কোনো টাকও পড়েনি
তবুও চুলগুলো ওড়ে না
ক্যানো না, চুলগুলোকে সে আর লম্বা হতে দ্যায় না
কাটতে থাকে, কাটতে থাকে
কাটতেই থাকে…
বাতাসে চুল ওড়াউড়ি- সকলের পছন্দ নয়
তাছাড়া- চুল ওড়ানোর জন্য কেবল
বাঁশি আর বাতাস থাকলেই চলে না
থাকতে হয় বিশেষ কোনো যোগ্যতাও;
যা কিনা-
কারো কারো জন্য কোনদিনই অর্জনযোগ্য নয়।
শীত আবাহন
বসন্তকে আহ্বান জানায় সকলেই; বর্ষাকেও
শরৎ-পদ্যে মুখরিত কবিতার পাতা-পত্রাদি
রূপের স্বতন্ত্রকলা উধাও, তবু হেমন্তরূপে
বিমোহিত জীবনানন্দ কলমে আঁকেন জ্যোৎস্না ;
মানব-শরীরকে জ্বলন্ত তাওয়ায় রেখে রেখে
রুটির ধরনে ভাজে যে বোশেখ, তারই বিরহে
দুবাহু বাড়ায়ে দাঁড়ায়ে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ।
অথচ, এমন শুভ্র, সুনিপুণ উষ্ণতাপিয়াসী;
মানুষে মানুষে নৈকট্যের নির্বিকল্প সূত্র যার
করতলে; তার জন্যে গাঁথা নাই পঙ্ক্তির হার !
এসো শীত, কুয়াশা-কাঁথায় মোড়া হিমেল সকাল
তোমার মিঠেল রোদে পিঠ রেখে, ফুরবো এ-কাল।
ছুরি হাতে মেয়েটি
খুব ধারালো ছুরি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে মেয়েটি
যেদিকে যাওয়ার কথা ছিলো — পারছি না
যেদিকে তাকানোর কথা ছিলো — পারছি না
একটা বই নিয়েছি হাতে– চোখ রাখতে পারছি না
এদিক-সেদিক তাকাতে চাচ্ছি,
ইতি-উতি করতে চাচ্ছি– পারছি না
দুুরু দুরু বুক
ছুরিটা তাহলে আমার দিকেই তাক করা আছে ?
যেদিকে যেতে চেয়েছি‐ পারছি না
যার দিকে তাকাতে চেয়েছি‐ পারছি না
যে বইটি হাতে নিয়েছি… পারছি না
সবাই এদিক-সেদিক করছে, ফুচকা-চটপটি খাচ্ছে,
বই কিনছে, হাসা-হাসি করছে
দুরু দুরু বুকে
আমিই কেবল ঘামছি দরদর করে
মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি !
মেয়েটি ওভাবে, অমন খাপখোলা তরবারির ধরনে
চোখে-মুখে… সমস্ত শরীর জুড়ে
চকচকে, খুব ধারালো
একগুচ্ছ ছুরি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে !
ছুরিবিদ্ধ আমি
রক্তাক্ত ঝরে যাচ্ছি মাটিতে
আহ, অমন অপরূপ ধারালো ছুরিবিদ্যা সাথে
ওভাবে কি ঘুরতে আছে, মেয়ে !
ভালোবাসা
একটি বৃত্ত আঁকতে চাই
তোমাকেই বিন্দু ধরে নিয়ে।
গাণিতিক কোনো সূত্র নেই;
সমীকরণসূচিত পুষ্প হতে পারে
সেরকম কোনো শর্তও নেই যে জানা,
তবু,
অসীম ব্যাসার্ধে বাঁধা সেই পৃথিবীর
জ্যামিতি আমার হৃদয়ে দিয়েছে হানা।
তাই…
তোমাকেই বিন্দু ধরে নিয়ে
একটি বৃত্ত আঁকতে চাই।
জানি, সে বৃত্ত আঁকতে গিয়ে
বিন্দুতেই হতে পারি লয়
মধ্যপথেই খোয়াতে পারি
জীবনের সিন্ধু সমুচ্চয়।
সেরকম রাধা যদি হও
সেরকম রাধা যদি হও
তোমাতেই বাঁধা হবে রাত
হাত তুললেই রাতের যতেক কালো
আলো হবে জ্যোৎস্না ছাড়াই
আড়াই প্রহর ধরে দাঁড়াবে সময়
গো-ময় আঙিনার ওপাশে
আভাসে উঠবে ভেসে সুগন্ধি গোলাপ
প্রলাপের দিনগুলো হয়ে যাবে মধুমাখা স্মৃতি
গীতিময় হয়ে উঠবেই ছন্নছাড়া কথাগুলো
ব্যথাগুলো মুহূর্তেই সঞ্জীবনী সুধা
ক্ষুধা পালিয়ে গিয়ে তৃপ্তি হয়ে ফিরবে
ভিড়বে সোনার নাও, মন হবে নদী
যদি তুমি সেরকম রাধিকাই হবে
দিশাহীন দ্বন্দ্বগুলো ছন্দময় কাব্য হয়ে রবে।
তবে, তোমাকেই হতে হবে সেরকম রাধা
বাঁধা যাবে হৃদয়ের অবিচ্ছেদ্য তার
অক্ষয়-অনন্ত পারাপার।
Hello. Great job. I did not imagine this. This is a fantastic story. Thanks!