কবিতা : সালমা বেগ

প্রেম

আমাদের প্রেম আষাঢ়ে বিরামহীন বৃষ্টি শ্রাবণে অঝোর ধারা
রাতে ফোটা শিউলী নয় ভোরে যে লুটায় হয়ে দিশাহারা
আমাদের প্রেম নক্ষত্রের আলো রাতের আঁধার ভাঙা তারা
জীবনের আলো হয়ে জ্বলে প্রণয় হৃদয় হরা।
আমাদের প্রেম কচু পাতায় বৃষ্টির পানি নয় যায় না টোকায় ঝরে
প্রেম ইটে চাপা ঘাস নয় নিরালোক ছায়ায় সে যাবে মরে।
আমাদের প্রেম অনুপম আরণ্যক প্রাকৃতিক ভালোবাসা,
পুরাতন প্রাচীরে গজানো বৃক্ষচারা নয় স্বর্গ হতে এসে হৃদয়ে বেঁধেছে বাসা।

এ প্রেম মহাকালের স্বাক্ষী অনন্তের কাব্যশৈলী দিয়ে লেখা
জীবনের স্রোতে যে প্রেম দেখায় দিগন্তের শেষ-পদরেখা;
কাব্যের রহস্য খুলে অনুপম করেছে শপথ
প্রণয়ের বিরুদ্ধে চৌদিকে যখন শত্রুর রথ
প্রেম বর্ষার পানির মতো অবিরাম ছুটে এসে
হৃদয়ের সমস্ত আঁধার অসঙ্কোচে ধুয়ে যাবে ভালোবেসে।

মায়াবী আলো

মলিন একটি ঝরা পাতা যদি ভুলে ছুঁয়ে দাও;
মনে হয় ভালোবাসা মাড়িয়ে অনন্ত সুখ পাও।
শ্রাবণ-বৃষ্টিতে যদি নিজেকে ভেজাও;
মনে হয় রাধা-কৃষ্ণ লীলা করে অহং দেখাও।
ঘাসের উপর শিশিরের মুক্তো যদি ছুঁয়ে দাও;
মনে হয়ে আমায় বিস্মৃত হয়ে পরিযায়ী সুখ খুঁজে পাও।
ভরা জ্যোৎস্নার সৌন্দর্যে যদি যাও ভিজে,
মনে হয় দস্যু এসে কেড়ে নিলো কী-যে।
প্রেমালিঙ্গনে নিজের সীমা যাই ভুলে,
যখন বিদ্রোহী কেউ অনুপম ফুল নিতে চায় তুলে
প্রেমালিঙ্গনে নিজের সীমা যাই ভুলে
গোধূলির রঙ ছুঁয়ে যখন বিদায়ী সূর্য যায় ডুবে,
অনুপম মহিমায় চন্দ্রমুখ তখন উদিত হয় পুবে।
সবুজ দেখেছি তোমার দু’চোখে
মনিময় আলো ছুঁয়ে সবুজ দেখেছি তোমার দু’চোখে
সে সবুজ কেন মলিন চৈত্রের খড়তাপ দুঃখে!
অনার্যের দু’চোখ সাজাই মায়াময় অনুভবে
সে দ্যুতির আড়ালে থেকেছো কোন কালে বলো কবে?
জীবনে মায়াবী আলো হয়ে এসেছো যখন
জোয়ারের স্রোত আসে নদীতে তখন

অপেক্ষা

আমি যাবো
যখন আমার মন চায় তখনই যাবো।
পড়ন্ত বিকাল, গোধূলির লগ্নে যাবো।
সমস্ত শরীরে অস্থিরতা নিয়ে
সকালের আলো গায়ে মেখে যাবো।
প্রিয় ফুল খোঁপায় গেঁথে
বাহারি ফুলের তোড়া নিয়ে যাবো
ইলিশেগুড়ি বৃষ্টিতে ভিজে
পূর্বাকাশে রংধনুর সাতরঙে সেজে যাবো,
বিদ্যুতের ভিষণ গর্জনে ভয় পেয়ে
লতানো গুল্মের মতো তোমায় আঁকড়ে ধরবো,
বৈশাখী তাণ্ডব হয়ে তোমার শরীরে ঝড় তুলব।

ঝড় শেষে হৃদয়ের সবুজ অঞ্চলে যত্নে তোমায় জড়াবো।
ক্লান্তিতে দু’চোখ মুদে এলে আবেশে তোমার সাথে
ভালবাসার কথা বলে যাবো।

পিপাসিত আমি তৃষ্ণা মেটাবো চুম্বনে
হাতে হাত রেখে একাকার হবো আলিঙ্গনে।

আমার বসন্ত দিন

আঙ্গুরলতাটি সোহাগে জড়িয়ে রাখো
আঁখি জল মুছে বুকের পাঁজরে ঢাকো
তোমার হাসির জন্য দিতে পারি জীবন আমার
বিষণ্ণ মুখ দেখবে কি তখন সজীব খামার?
বিষাদ কাজল দেখে যদি পৃথিবী আঁধারে ঢাকে
জ্যোস্নালোকিত আকাশে নক্ষত্ররাজি আড়ালে থাকে।

তুমি হাসো যদি নদীতে জোয়ার আসে
বন্ধ্যা নদীটি প্লাবনে সহসা জাগে, জলবৈভবে ভাসে;
তুমি হীনতায় বেদনা যখন জেগে ওঠে দুঃসহ প্রলয়ে
অনুপম স্বপ্ন-মহিমায় রাত্রি কাটাই প্রণয়ে;
দুরন্ত সাহস জাগে আসে চকিতে
নবযৌবন
বসন্তে বিভোর বনাঞ্চল পত্র-পুষ্পে রাঙে মন।

জোনাক আলো

আমায় পুড়িয়ে যদি স্বর্গসুখ পাও
ব্যথাতুর হৃদয়টা আবার পোড়াও;
বনের কোকিল ডাকে ভোরে পাখি গায়
পাখির ক্রন্দন মনে বেদনার ধ্রুপদ শোনায়।
এ ঘরে মাটির প্রদীপ নিঃশেষ জ্বলে
পূর্ণশশী ওদিকে ছড়ায় আলো মাঠে খেলাচ্ছলে।
নিজেকে পুড়িয়ে প্রদীপের কী গভীর-গাঢ় সুখ!
বিনিদ্র রাতের কষ্টাশ্রুতে ভেসে যায় শুধু বুক।
অনুপম আলো চাই প্রতিদিন বর্ষায়-ফাল্গুনে
অকারণ অশ্রু ঝরে তার জন্য শুধু কাল গুনে;
উদাস দু’চোখে খুঁজি আলো চমকিত হাসি
তার আলো মেখে গায়ে বলি ভালোবাসি-ভালোবাসি।
ঝিঁঝির কোরাস নূপুর বাজায় কী-যে লাগে ভালো
অনুপম যখন জোনাক হয়ে জ্বালে সান্ধ্য আলো।

সালমা বেগ

প্রকাশিত বই : হৃদয়ে রক্তক্ষরণ, মাটি সর্বংসহা, এ প্রহরে বৃষ্টি ও প্রহরে রোদ, জল হয়ে যাই জলে

About S M Tuhin

দেখে আসুন

কবিতা । শিশির আজম

কবিতা শিশির আজম মুক্ত মানুষের কেচ্ছা বসে থাকা ছাড়া কোন কাজ নেই দেখছি গনগনে দুধের …

2 কমেন্টস

  1. Ad usum internum — Для внутреннего употребления.
    https://batmanapollo.ru

  2. Долгие выбор могут быть типичным саботированием. Послушай старших, лучше сходить к доступному психологу чем не сделать выбор.Психолог сейчас.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *