কবিতা : রফিক উল ইসলাম

রফিক উল ইসলাম

দাঁড়িয়েছিলুম একা

কুড়িয়ে পাওয়া দিন সুন্দরের কাছে যাবে।
ঘরময় তার ছায়া!
চৌমাথার মোড়ে যে আমি দাঁড়িয়েছিলুম একা
তাকে আজ অচেনা মনে হল।
শরীর থেকে উইপোকা ঝরে পড়ল, পথ হারাচ্ছি
অবিরাম বৃষ্টিতে গলে যাচ্ছি!

আমি আমার হাত ফসকে উড়ে যাব
বসব অন্য কোনো ডালে।
শিস দিতে দিতে
আবার হেঁটে যাব সুন্দরের কাছে।

শরীর থেকে বয়স ঝরে পড়ল
অবিরাম বৃষ্টিতে গলে যাচ্ছি…

বুদ্ধমূর্তির নীচে

বুদ্ধমূর্তির নীচে দাঁড়াতে ভয় পায় যুবতী ও মেঘ!

সারা সকাল
দুপুর
আমি ভয় পাওয়া ওই যুবতীর পা ছুঁয়ে থাকি।
সে আমাকে শীতের কম্বল এনে দেয়, মনে পড়ে
জ্বরজ্বর সমুদ্রযাপন।
জন্মান্তরে যাবার সময় পথে পাওয়া অশোকফুল
তাকে উপহার দিয়েছি,
ওষ্ঠে ভেঙেছি সারারাত মদ।

বুদ্ধমূর্তির নীচে দাঁড়াতে ভয় পায় যুবতী ও মেঘ!

ভোর

হুটোপুটি থেকে কুড়িয়ে নিচ্ছি ভোর। ভোর নাকি
বাল্যকাল
কুয়াশাখচিত নক্ষত্রের দিকে উড়ে চলে গেল!

বিছানা ছাড়তে মায়া হয়েছিল খুব?
মায়ার ভিতরে ভ্রম,
ভ্রমের ডালপালা কীভাবে ঘর ভেঙে দেয়
দেখোনি তুমি!

একটি কথা-বলা-পুতুল মেয়ের ঘর
আলো করে আছে,
ওই আলো দেখে ভোর থমকে গেছে
মেয়ের শিয়রে!

অনাগত আকাশ ঝুঁকে ঝুঁকে সেতু হয়ে যাচ্ছে।

তিনফোঁটা বৃষ্টির ভার

তিনফোঁটা বৃষ্টির ভার, যদি ডালপালা নুয়ে পড়ে
আমাকে ফোঁটা দুই দিয়ে দিতে পারো।

সংলগ্ন ছায়াটিকে বলি, গ্রহণ করো
যাবতীয় দু-ফোঁটার ভাষা। গ্রহণ করো আর
নির্মিত হয়ে ওঠো। যেন ভারহীন উড়ে যেতে যেতে
পুষ্পের স্তাবকতাও অসহ্য মনে হয়!

কথা বলব না বলব না করেও এত কথা!
দুপুর গড়িয়ে রাত। রাত্রিকে তো সব বৃষ্টির কথা
বলা যায় না। বলা যায় না তোমাদের নুয়ে পড়ার
কথাও। কীভাবে তোমাদের তিনফোঁটা থেকে
দু-ফোঁটার ভাষা জড়ো করে আর এক পৃথিবী
নির্মিত করে চলেছি,
সেটুকু অকথিত থেকে যাক।

ছায়া নয়, ওই পৃথিবীটুকুই আমি সঙ্গে নিয়ে যাব।

কখনো বৃষ্টির দিকে, কখনো রোদ্দুরের

কখনো বৃষ্টির দিকে, কখনো পড়ে পাওয়া
রোদ্দুরের দিকে
ফিরে যাচ্ছ তুমি। মধ্যপথে একা আমি দাঁড়িয়ে,
তীব্র বাদামি রঙের একটি তেজি ঘোড়ার অপেক্ষায়।
বাসস্থান বদল করে
এখন থেকে ঘোড়ার পিঠেই থাকব, এ-কাঁধে রোদ্দুর,
আর ও-কাঁধে বৃষ্টির পশলা নিয়ে। তোমার কখন যে
কী মতিগতি, দুটি খোলা তলোয়ার সঙ্গে রাখলেই
তো পারো! এ-কাঁধে গেঁথে দিলেই রোদ্দুর, আর
ও-কাঁধে গেঁথে দিলে অঝোর ধারায় বৃষ্টি
নেমে আসবে। কোথাও ফিরতে হয়না তোমাকে।

তুমি আমার বাঁ দিকের কাঁধে তলোয়ার চালিয়ে দাও।
দেখো কেমন ঝলসানো রোদ্দুর!
তুমি আমার ডান দিকের কাঁধে তলোয়ার গাঁথো,
দেখো কেমন ঝমঝম করে অসময়ের বৃষ্টি
তোমাকে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে…

This image has an empty alt attribute; its file name is 23579pppp-Copy.jpg

রফিক উল ইসলাম

জন্ম: আগস্ট ১৯৫৪, পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়।
বাংলাভাষার প্রায় সবকটি উল্লেখযোগ্য পত্রপত্রিকাতেই তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর বেশ কিছু কবিতা।

তাঁর প্রকাশিত ১২টি কবিতাগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য :
জলের মত সুখে আছি / মৈত্রেয় রাত্রির পথে / আমাদের বৃষ্টিপাতের মাঝখানে / সোনালি শিবির / জিয়ারত / অবসরের পর সেলফি / অঘোরে ঘুমিয়ে চন্দ্রকণা ইত্যাদি ছাড়াও প্রকাশিত হয়েছে তাঁর শ্রেষ্ঠ কবিতা এবং কবিতাসংগ্রহও।

বিশিষ্ট এই কবি ও গবেষকের ২০টিরও অধিক গবেষণা ও সংকলনগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ১০০টিরও অধিক সংকলনগ্রন্থে মুদ্রিত হয়েছে তাঁর কবিতা।

জাতীয় কবিতা উৎসব, ঢাকা, টাঙ্গাইল এবং দরিয়ানগর কবিতা উৎসবে আমন্ত্রিত কবি হিসাবে বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ সফর করেছেন।
কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন নির্জনতাপ্রিয় এই কবি ও গবেষক।

About S M Tuhin

দেখে আসুন

কবিতা : রনি অধিকারী

কবিতা রনি অধিকারী ১ নারীর নাম নদী এই পথ মিশে যায় নদী জল অথৈ সমুদ্দুর …

31 কমেন্টস

  1. tadalafil liquid where to buy cialis without prescription

  2. I believe you have remarked some very interesting points, appreciate it for the post.

  3. what is hydroxychloroquine used for arthritis https://keys-chloroquinehydro.com/

  4. order modafinil 100mg online cheap provigil buy provigil generic

  5. what Is Safer Cialis Or Viagra?

  6. how Long Till Cialis Starts Working 100%?

  7. Monitor Closely 1 cannabidiol will increase the level or effect of bosentan by decreasing metabolism buy levitra without prescription In this study, we use NSG mice to examine the distribution of distant metastatic spread in 57 mice from seven PDOX models of TNBC and to analyze CTC shedding in 37 of these mice

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *