

মঞ্জীর বাগ

মহেঞ্জোদরো
চাঁদের আলোয় ভেসে যেতে যেতে
আলো যেন এক মায়ানগরীর ঘুমের ভেতর আমাকে এনে
মহাকালের বুকের পাঁজরের বাঁশির সুরের মাঝে
গান অথবা সূর ভেবে স্থান খুঁজে দেবে ভেবে
আধ জাগা নগরীর স্নানাগারের জলের সামনে
দাঁড় করিয়ে
ইতিহাসের পাতায় মিশে গেল
আমার এই নগর দেখা বাকি ছিল।
মৃত স্বপ্নেরা স্তুপাকৃতি হয়ে যে অতীত গান গাইছে
তার সুর হাজার বছর ধরে মিশে যাচ্ছে
প্রাকৃত সভ্যতায়।
সভ্যতাকে যদি বিচ্ছিন্ন ফল হিসাবে ধরি তবে
দেখা সম্পূর্ন হয় না। সভ্যতা এক ক্রমবিকাশ
যেমন নদী বয়ে চলেছে সৃষ্টির আদিকাল থেকে
তেমন মানুষ হেঁটে চলেছে পথ, জীবনের পথ
পথের এক অবলম্বন চাই। জীবন পথের সাথে হাঁটে
এই যে মহেঞ্জোদরো আধজাগা চোখে চেয়ে আছে
এইখানেই কলরব ছিল, উষ্ণতা ছিল, গান ছিল
এক রমনীয় সকালে শিশু দুধ মুখে দিয়ে খাদ্যের উষ্ণতা খোঁজে
আমাদের খাদ্য বস্ত্রের সাথে উষ্ণতা ও নিরাপত্তা প্রথম প্রয়োজন
এই মহাসত্যই বুকে করে মহাকাল সভ্যতার দিকে চেয়ে আছে
এই ঘুমন্ত নগরীর কোনো কিছু মৃত নয়, কোনো কিছু জীবিত নয়, স্বর্ণময় স্মৃতি
মহাসত্য এক নৌকা ভাসিয়ে বয়ে যেতে হয়
এটিই জীবন, না হলে সবই মহেঞ্জোদরো

প্রিয় ধ্বনিও কবি
আপনজনেরা কবিকে একটা পাঞ্জাবী দিয়েছিল
যুঁইফুল সাজানো মঞ্চে বসে কবি
শুভেচ্ছার পাতা খুলে মধুময় আশিস বলে গেল, আমাদের শম্ভুদা, আমাদের শম্ভুদা,
কবির গায়ের পুরোনো জামাটি প্রায় ত্বকের মতো
সেটি টানাটানি করেও খোলা গেল না
তোমরা চুপ করো, দেখছোনা প্রিয় ধ্বনিরা আসছে,
মেসোপটেমিয়া থেকে মৎস্যকন্যা ডিঙি করে এলো। ওরা পিরামিডের গর্ভদেশে যাবে
চাঁদ উঠলে সুমেরনদী থেকে কুবুপাখিরা গান গায়।
কবির চালে চাঁদ দাওয়ায় চাঁদ
কবি কে পাঞ্জাবী পরালেও বোতাম পরাতে পারোনি
কবির বুক বন্ধ করা য়ায় না
কবির বুক টাঁড় মাঠের মতো দিগন্ত

নির্জনতা
এ নির্জনতায় আছি। ঘাড়ের কাছে মৃত্যু শ্বাস নিচ্ছে। পৃথিবীর প্রান্ত ছুঁয়ে মৃত্যু কি আমার দরজায় এসে কড়া নাড়বে। আমি কি তার অপেক্ষা করছি অবচেতনে। মৃত্যু কি দেহের বিনাশ। মনের মৃত্যু হলে কি দেহ বেঁচে থাকে? পরম আকাক্ষিত জীবন পরম আকাক্ষিত মৃত্যু দুজনেই পরম প্রিয়। দুজনের সঙ্গে পরিপূর্ণতা। জীবনকে উপভোগ করতে গেলে সঙ্গম মুহুর্তে মৃত্যুকে চুম্বন করতে হয়। মৃত্যু সেই প্রেমিকের মতো যার সঙ্গে আনন্দস্নান মুহুর্তে বিচ্ছেদ ঘনীভূত হয়ে আছে। যে সম্পর্কে বিচ্ছেদের আশঙ্কা নেই তার তো মৃত্যু ঘটেছে পৌনপুনিকতায়।
যে জীবনকে ভালো বাসে, ছুঁয়ে নিতে চায় প্রতিশ্বাস হাতের হাতের তালুতে মৃত্যুকে লুকিয়ে রাখতে হবে। কবির জীবনে যেমন বৈধ নারী ও অনুপ্রেরণা কবির আলোছায়া রঙ তুলিতে ভরে দেয়। বহুমাত্রিকতা আনে। তেমন জীবন ও মৃত্যু পাশে হাঁটুক।
পরম আকাক্ষিত জীবন এক বার বাঁচার মতো বাঁচি

পাখি
তোমাকে ভিজতে দেখলেই মনে হয়
বূকের মাঝে রাখি
বৃষ্টি ঝরছে
যেমন তোমার চোখের ছোট ছোট ধারা
অবিশ্রান্ত ধারাপাতে নেমে আসে
মাটি ছোঁয়া বিলম্বী গাছের শ্রদ্ধাবনত পাতা
বৃষ্টিতে তোমার বুকের পালক ভিজে,
হৃদিওম দিয়ে ফিরিয়ে দিই শুকনো তাত
অভিমানে ভেঙে যেতে যেতে কখন যে মিশে যাও কাজশেষ বিকেলের পুকুরের ঘাটে
পড়ন্ত বিকেল রোদ এক চিলতে কলম
তোমার ভেঙে পড়া খোঁপায় গুঁজে
টুকরো দুঃখ যেন শুকনো তাল পাতার ভূর্জপত্র
রাতের আকাশের চাঁদতারা পেতে ঘুমিয়ে পড়ো
লেখা না লেখা কথকতা গান জড়ো করে
ঘুমের মধ্যে তাতওমে জড়িয়ে ধরে
পদ্মপাতায় লেখা গানও জীবন
তুমি ঘুমোও খুকুমনি,
ক্লান্তি নূপুর খুলে
তোমায় অনেকটা পথ যেতে হবে

গান
পথ জানে কিছু মানুষ পথে বের হবে বলেই
জীবনের পথে হাঁটে
হাঁটার গানেই তাদের মুক্তি
জীবনের গান গায় যারা
তাদের ভয় পায়
ক্ষমতার ডুকডুগি বাজানো শাসক রাক্ষস
তার গায়ের গন্ধে মাটি লেগে আছে
তার হৃদয় ভালোবাসায় ধোয়া
স্বপ্ন তাদের চোখে
স্বপ্ন দেখে বলেই সাদা পাতায়
শব্দের ছবি লেখে
শব্দের ছবির নাম কবিতা
কবিতা আছে বলেই
মানুষটি ক্ষমতার অলিন্দে থেকেও
স্বচ্ছ জলের মতো
আমি তাকে গাছের মতো দেখি
শীতলতায় বসি, শ্বাস নিই
হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হলেই
চেয়ে দেখি মানুষটি কত দূরে
আগ্রাসী জলস্রোতের মতো ভেঙে দেওয়া নেই
সবুজ ক্ষেতের মতো আশা জেগে আছে
কাছে গেলে বন্ধুত্বের চন্দন ঘ্রাণ
স্নেহের শীতলতার ছায়া হৃদঘ্রাণ সৌরভ
তোমাকে কি নামে ডাকি জানা নেই
শুধু পথ চেয়ে থাকি অমৃতগান

রঙ
চাঁদ, দোলের চাঁদ, বড় ভয় করে তোমায়
তোমার পূর্ণ গোলক আলোর ছটায় এক
পাগল বের হয়ে আসে, ঢুকে পড়ে আমার ভেতর
দ্রাক্ষালতার মতো তার চুল;
ঢুকে পড়তে চায় পলাশের বনে;
আমি বৃন্দাবনের বৃন্দগান দেখি
আগুনের আঁচ পাই
পোড়া গন্ধে ভরা যমুনা তটে ও ভালো লাগে ভালোবাসাবাসি গান,
রাধার পরণের বাস ছিঁড়ে গেছে,
এখনও গান অপেক্ষা করে,
সময়ের নদীজলে গানঘ্রাণ ভেসে গেলেও
পলাশ, আজই হোরি

চাঁদগান
আমার আঙ্গুলে লেখা থাকে তোমার রঙ
পলাশের পাঁপড়িতে গুঁড়ো গুঁড়ো রেনুর মতো ভালোবাসা
দোলের দিনে ছোঁয়াছুয়ির খেলায় ছুঁয়ে দিলে আমার লাব্ ডুব্
পলাশের সাথে পথ হাঁটছে রঙ
বসন্তের আকাক্ষা চাঁদ সিঁড়ি বেয়ে অপেক্ষায়
পাঁপড়ির আগুনরঙে তাপ লুকিয়ে থাকে
তৃষ্ণা আঙুল ঘোরাফেরা করে সবুজ উপত্যকায়
রঙ দিওনা বলে, দরজা বন্ধ করলে, ও শুধুই
তোমার আঙুলের অপেক্ষায় থাকি
জলের ওপরে চাঁদের গান, নিশীথ চুমু যেন
বসন্তের বাতাসে গান
নদীর জলে চাঁদ আলো, অনন্ত এসো
বসন্তের পলাশে আবীর লেখে শান্তিনিকেতন
চাঁদ নদী গান লেখা ফাগ ও আগুন

মৃত্তিকা ঘ্রাণ
ব্যঞ্জনের মতো সম্পর্কের ও নিজস্ব ঘ্রাণ থাকে
ঘ্রাণ নিয়ে আমি ভাবি খুব
মার কথা মনে পড়লেই, সোঁদা মাটি ঘ্রাণ
মাটিকে আমার মা বলে বোধহয়
বহু দিন চাপা সম্পর্কে থাকলে বাসটে ঘ্রাণ
নিজস্ব গায়ের গন্ধটা আমার জানা নেই
প্রেমিক নামক জটিলতার গায়ে মিশে থাকে
তার স্ত্রী,খুচরো প্রেমিকা আর ফিপ্টিন পার্সেন্ট আমার ঘ্রাণ
আমার দুপা বেয়ে নেমে আসছে ঋতুস্রোত
এখনও আমি শস্যময়
এ মুহূর্তে আমি পৃথিবীর মতো
এ মুহূর্তে আমি মাটিঘ্রাণ
মোনালিসা নামে ছায়াময় মেয়েটি
লালকুর্তায় ঈষৎ শিথিল স্তনদ্বয় ঢেকে
আকাশ কে ডাকে
তার শরীরের খাঁজে খাঁজে
বৈধ অবৈধ টেপাটেপি গন্ধ
তার স্পর্শ কাতর শীৎকার এঁকেছে দ্য ভিঞ্চি
অল্প তৃণ শোভিত ত্রিভুজ ভূমি চাষ করে বিভিন্ন কৃষক
চাষই একমাত্র সত্য
শরীরে ভরে যাচ্ছে পলিমাটি
সবুজতা এসো, বপন করি ধান
উন্মুক্ত অমৃত ভাণ্ডারে মুখ দেয় আমার সন্তান ও মাহারা ছাগ শিশু
আমার কাম জাগে না, মিলনের আকাক্ষা জাগে খুব
সারা মাঠজুড়ে জেগে আছে তৃষ্ণা
আমিই মৃত্তিকা
ওম্ নাদে ভরে যায় আমার ভুবন
নাভি ভেদ করে জাগে ব্রহ্ম কমল

জন্মদিনের গান
উষ্ণ আঙুলের রেখায় লেখা আছে ঠৌঁটের কাঁপন
কতজন্মের ঘোর বেয়ে নেমে আসে
নীর ধারা গান
রাত্তিরে হিমের মতন পরিপক্ক ধানের ওমে
লেখা হয় জন্মান্তরের গান
জন্মান্তরের কথা বললেই, মনে পড়ে যায়
এক মাঝির নৌকা ভ্রমণ।
সময়ের নৌকায় সওয়ার আমরা দুজন
সে দাঁড় বাইছে, আমি তার বাহু ধরে
পরনের শাড়ি স্বচ্ছ জলের মতন
স্বচ্ছতা ছুঁয়ে যাচ্ছে বুক
দাঁড় হাতে সে, হৃদয়ঘ্রাণ খুঁজছে
কত রাত বেয়ে নৌকায় আমরা
মুণ্ডেশ্বরী দামোদর
ছায়া মাখা ফসলের খেতে চাঁদ
স্বপ্নের ভেতর আমরা
মহেন্দ্রমাঝির দাওয়ায়, দেড়তলাবাড়ির উঠোনে
চাঁদ ডাকছে
আমি ডাকছি তোমায়
জ্যোৎস্না ভরা নদী জলে আধবুক
জ্যোৎস্না আমার আবরণ
শরীরহীন শরীরের ঘ্রাণ আমার আভরণ
নদ, দেখো
তোমার লেখার কাগজের ওপর শুয়ে আছি আমি
তোমার বুকের ভিতর

মায়ের শাড়ি
কতদিন খোলা হয় নি আলমারিটা
মা চলে যাওয়ার পর আমি ওর নক্সার ওপর হাত বোলাই
স্মৃতি আমার চোখ ঝাপসা করে দেয়
চলে যাওয়া আমি সইতে পারি না যে
আমার চড়ুই সই ছড়ানো মুড়ির প্রাতরাশ সারতে আমার জানালায় প্রতিদিন,
তাকে দেখিনা আর সেই কালো কুকুরটা যার কপালে সাদা তিলকের মতো দাগ,
যার জন্যে আমি বিকেলের বেঁচে যাওয়া ভাত নিয়ে অপেক্ষায়
তার জন্যে আমার অপেক্ষা শেষ হয় না এখন
আমাকে বহুদিন আগে এক গ্রীষ্মের বিকেলে
ভালোবাসা ফেলে চলে গেছে
আমি তার অংশ নিয়ে বাঁচি
কতদিন, মনে নেই খোলা হয়নি স্মৃতি আলমারি
ডালা খুলতেই মা ঘ্রাণ
একটা নতুন শাড়ি, মার পরা হয়নি কখনও
গায়ে ফেলতেই আঁচলের নক্সা থেকে মা চুমো খেল
চলে যাওয়া স্মৃতিরা এসো
তোমাদের জন্য ভাত বেড়েছি
এক এক গ্রাস রেখেছি
কারোর চলে যাওয়া সইতে পারি না যে


মঞ্জীর বাগ
পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত
Hi there! This is my 1st comment here so I just wanted to give a
quick shout out and tell you I really enjoy reading your blog
posts. Can you suggest any other blogs/websites/forums that go over the same topics?
Appreciate it!
ютуб