

নাহারফরিদ খান

জাগে স্বপ্নের শহর
ধরনীর বুকে বিছানো রোদের সোনালী শরীর
আকাশের র্নিমল নীলে যাযাবর মেঘেদের ভীড়
শালিক, খঞ্জনার সুখের ওড়াওড়ি, প্রাণ চঞ্চল
বেওয়ারিশ বাতাস অলিন্দে যুবতীর ওড়ায় অঞ্চল।
সবুজ পাতারা কেমন হেসে নৃত্যছন্দে লুটোপুটি
কৃষ্ণচূড়ার রাঙ্গারূপ বিলায় আনন্দ মুঠিমুঠি
মন্থর বিকেল কেন যে বিষন্নতার গান গায়
সময় প্রত্নতত্ত্ব হৃদয় খুড়ে সুচারু অতীত জাগায় ।
অলক্তরাঙ্গা গোধূলী আসে মোহময়ী রূপে
লাজবতী সন্ধ্যা ডাকে গোধূলীকে চুপেচুপে
নির্সগের সাথে চাঁদের প্রণয়ে থাকে বিনিদ্র রজনী
স্মৃতিমন্থন শেষে অশ্রুজলে ভেজা জাগে অবনী ।
বিজন রাত কেবলই কাঁদায়, উথলে ওঠে কষ্টপ্রহর
ভৈরবীরাগে জীবন জাগে , জাগে স্বপ্নের শহর ।

তোমার পরশে
যদি কাছে এসে হাতে রাখো হাত
তাপদগ্ধ হয়ে যাবে হৈমগিরি
যদি চোখে রাখো চোখ
অপলক ঝরে যাবে সময়
ভাষাহীন হয়ে যাবে ঠোঁট ।
যদি কপালে রাখো হাত
শান্তির পরশ পেতে পেতে
নিদ্রায় ভেসে যাবে চরাচর ।
যদি অধরে রাখো অধর
গোধূলীর সব রং মাখবে অধর
অমৃত রবেনা কোথাও ।
যদি হৃদয়ে হৃদয় রাখো
পৃথিবীর কোথাও রবেনা
মরুভূমি, শুধু ফুটবে ফুল ।

কুড়ানী
নাম তার কুড়ানী, আস্তাকুঁড় থেকে কুড়িয়ে আনাতো
তাই নাম রাখে ছমিরন কুড়ানী । পাপ না পূন্যের ফসল
জানেনা সে, শুধু জানে একটা মানুষ তাকে বাঁচাইছে সে ।
নিজের সন্তানের মতো বড় ভালোবাসে,পান থেকে চূন
খসলেই বস্তিবাসীরা মুখ খিস্তি করে কুড়ানীকে ,
কুড়ানীও কম যায়না , দিনে দুপুরে খুলে ধরে
বস্তির ইতিহাস । ছোটবেলা থেকে শুনে শুনে এখন
বুঝেছে মুখ না খুললে মুখ রাখাই দায়, ইদানিং কুড়ানীর
কথার ঘায়ে বিষাক্ত থাবা, বিষাক্ত জীবনে কথা মিষ্টি হয়
কি করে ! জন্মের সময়তো কেউ মধু দেয়নি মুখ
ছুঁড়ে দিয়েছিল আস্তাকুড়ে- মরনের মুখে ।অজানা
র্গভধারিনীর উদ্দেশ্যে থু থু ছিটায় যত্রতত্র,যে পুরুষ
দেয়নি তাকে পিতৃত্বের অধিকার সেই কাপুরুষের উদ্দেশ্যে
জানায় পৃথিবীর সবটুকু ঘৃণা আর যে অসহায় ভীরুনারী
তার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে না পেরে আত্নজাকে ফেলে
আস্তাকুড়ে, তার উদ্দেশ্যে শুধু থুথু ফেলে ।

কোথায় হারালো ধ্রুপদী প্রেম
বোধশূন্য মাথা নিয়ে ঘুরছি আজকাল
মনে হয় পাখির গান ছাড়াই শুরু হয় সকাল।
এলোমেলো ভাবনার আর্বতে ঘূর্ণায়মান জীবন
প্রসন্ন সকাল, বিষন্ন বিকেল উন্মনা করেনা মন
অপার সমুদ্র আর হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকেনা
সবুজ অরন্য আর ফুল প্রজাপতি মুগ্ধতা আনেনা
চন্দ্রালোকিত প্রহর এখন আর স্বপ্নাচ্ছন্ন করেনা
রূপালী বৃষ্টি স্মৃতি মুগ্ধতায় আরতো কাঁদায়না ।
হৃদয়ের নীলাকাশে স্বপ্নের ঘুড়িগুলো আর ওড়েনা
ভালবাসা হৃদয়ের কন্দরে উষ্ণতা ছড়ায় না
তাহলে কোথায় হারালো পুষ্পিত হৃদয় ;ধ্রুপদী প্রেম !

কবির ভালোবাসা
উজ্বল নিয়ন সন্ধ্যা পেরিয়ে যৌবনবতী রাতে
সোনালী শিশিরে ডুবিয়ে মগ্নতা কবি দুলে দুলে যায়
জীবনের মোহনঘরে । পৃথিবীর বৈকুন্ঠে মেলে দেয়
ভালবাসা মন ।রোদের কোলাজ, বাতাসের অসংলগ্নতা
এসবই নিত্য আয়োজন,মেঘেদের স্বেচ্ছাচারিতা,জলমগ্ন
নদীর অথৈ জলের কাহন কবি জানে, জলের পতনেও
সৌন্দর্য্য থাকে কবি তাও জানে ।মানব সম্পূর্ণ মানবীবে
জানতে চায় প্রজাপতি হয়ে, হৃদয়ের মোহনমন্দিরে রাখে
তারে যেন মগ্ন পূজারী ।কবিও প্রাচীন প্রেমিকের মতো
প্রজাপতি হয়ে ওড়ে, বিষপানে এতো নেশা তবু যেন
তৃষ্ণাহরা, ব্রীড়াবনত তরুনী ঠোঁটে ফোটে কথা মজ্ঞুরী
মহুয়ামাতাল জ্যোস্না ছলাকলায় ছন্দে আনন্দে নাচে কবিতা ।


নাহারফরিদ খান
জন্ম : পঞ্চাশের দশকে চট্টগ্রামে
পৈতিক নিবাস বৃহত্তর বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর
প্রকাশিত গ্রন্থ
কবিতা
কখনো কাঁদিনি আমি । নীলিমায় নীল নেই । বিবর্ণ গোধূলী
হৃদয় এবং আকাশ । সন্তাপ । মেহুলী । সে কেমন নারী
বিম্বিত জলছবি । নির্বাচিত ১০১ কবিতা । নির্বাচিত কবিতা
গল্প
দহন ৭১ । অতল অন্ধকারে । গন্তব্য জানা নেই
ফুলজান কাহিনী । দোলনচাঁপার কান্না । অসময়ে যেতে নেই
ছড়া
এলেবেলে ছড়া । রকমারী ছড়া । বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ
নাটক
দহন ৭১ (প্রচারিত)
নীরব পথের যাত্রী (প্রচারিত)