তাজিমুর রহমান

পথ

মাঝরাতে যে পথগুলো ধীরে ধীরে আমার অস্তিত্বে
টোকা মেরে ছড়িয়ে পড়ে
তাদের জন্য কোন গন্তব্য রাখিনি
ভাসানের মতো সঁপে দিয়েছি দরিয়া ঝড়ে
দরিয়া কতদূর চেনা হয়নি আজো
শুধু মাস্তুল থেকে জেনে নিয়েছি তার অনিঃশেষ যাত্রাপথ

যে পথে লীন হয়ে আছে সভ্যতার কনসার্ট
তবে কি আমিও এ পথের অংশ হয়ে যাব
ভাবতে ভাবতে ফিরে যাচ্ছি উৎসের দিকে
কত দূর যেতে হবে জানি না !

কেবল পথ সমর্পিত হলে বুঝতে পারি
অনেকগুলো রেখা এসে নীরবে মিশে যায়
উপনিষদের পাতায়

অচেনা এক

প্রতিটি ক্ষণ মৃত্যুকণা খুঁটে খুঁটে চড়ুইমন,
অক্ষিবলয় ডুবে থাকে অন্ধকার আবিলতা। ডুব ডুব
পানকৌড়ি, খুঁজে ফিরি দিগন্তের রেখা ভেঙে
তার গোপন অভিসার…

দেখি, প্রবাহিত ছন্দে ক্রীড়ারত অচেনা এক জ্যোৎস্নাকুমারী।

আত্মজন্ম, গোপনতা

ভুল ছিল না সময়ের। মুঠো থেকে ক্রমাগত
পিছলে যাচ্ছে মুঠি। যমুনার কোণ ছুঁয়ে রাত্রি
কাঁদে, বৃষ্টিপাত…

বৃষ্টি জন্ম দেয় প্রজন্ম, ছেঁড়া শালপাতার
বিছানা জেগে থাকে গভীর স্বপ্নে। কবির কলম
জানে ওই শালপাতার বোধ আর প্রজন্মের
সন্ধিক্ষণ। শুধু আমরা জেনে উঠিনি
গোধূলীর আত্মজন্ম, গোপনতা…

নিজস্ব মুদ্রায়

অভয় দিয়ে আমাকে অতন্দ্র করেছিলে বলে
আমি হেঁটে যেতে চেয়েছিলাম দিকচরের দিকে
অথচ সমুদ্র কোমাচ্ছন্ন ছিল ভাববিহ্বলতায় !
পাখির ডানায় যে মেঘ ডেকেছিল তার হদিস পায়নি
শুধু জড়িয়ে রেখেছিলাম থেরাপির রঙিন জল

দুশো তেরো নম্বর বেডের হাতলে
লেখা ছিল যে স্বপ্ন
তাকে অক্ষত রাখার ক্ষমতা ছিল না, তবু
চন্দ্রমার আলো মেখে প্রতিদিন ভালোবাসা দিয়েছি
হাতের উপর হাত রেখে বলেছি নতুন সকালের কথা
যদি কখনও মোরগের ডাকে বেজে ওঠে
তুলসীতলার গান কিংবা আজানধ্বনি

আর ভাঙ্গা মসজিদ লাগোয়া মন্দিরের পথে
যে ফুলওয়ালী প্রতিদিন হেঁটে যেত তাকেও
বলেছি তোমার কথা
তোমার আত্মজদের জন্য তার হাতে তুলে দিয়েছি লাবণ্যরোদ।
জানিনা গার্হস্থ্যবিজ্ঞানে এর কোন মূল্য আছে কিনা
কেবল শীত এলেই বারান্দার ফুলগুলি আজও
নিজস্ব মুদ্রায় মাথা দোলায়…

তাজিমুর রহমান

জন্ম-২৫ ডিসেম্বর ১৯৭০ । দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ডায়মন্ড হারবার রেডক্রস হাসপাতালে।
বাল্যকাল কেটেছে ‘বাংলা’ নামে গ্রামে। দশক হিসেবে নব্বইয়ের কবি ।

প্রকাশিত কবিতার বই
আর এক শূন্যের ভিতর(কবিতা পাক্ষিক)
দহনের বর্ণমালা(সূচীপত্র)
মাধুকরী তুমি কোন পথে(পত্রলেখা)
দ্বিতীয়ার চাঁদ ও স্বস্তিক চিহ্ন (সিগনেট প্রেস, আনন্দ পাবলিশার্স)
শিরোনামহীন একা (দি সী বুক এজেন্সী)

পুরস্কার / সম্মাননা
সুহাসিনী রায় স্মৃতি সম্মাননা’,
বাংলাদেশ থেকে কবি সাযযাদ কাদির সম্মাননা ২০১৯ উল্লেখযোগ্য