কবিতা
ঝিলম ত্রিবেদী


১
পরিচয়
মেলিয়া সরব পাখা পাখি উড়ে গেল আঁধারে…
তোমার ক্ষীরের নদী, তোমার মুখের কম্পন
তিল কেঁপে উঠলেই পড়ে আসে সেদিনের রোদ
ধীর পায়ে এসে বসে শিশুর নরম লেপ তোষক
ধীরে ধীরে ভাঁজ করো আর তুমি সুর গড়ো মনে
কে যেন আসিয়াছিল একদিন প্রতিরোধ নিয়ে
চৌহদ্দির পাড়ে বসেছিল একা একা খুউব
তুমি তারে কয়েছিলে, এ রাতি অযুত তারাতুর
সব প্রতিশোধ আর সব প্রতিরোধ ভেসে যায়
সে-ও তো শুনিয়াছিল তোমার অসম্ভব পদ
সুর আর সুর আর চারিদিকে কিছু নেই কারো
নীড়ের স্তব্ধতায় শির রেখে তোমার আঁচলে
হেসেছিল, দুলেছিল, শুনেছিল শরীরের স্নান
ঠাণ্ডা শীতল বুক, চোখে জনমের ঘুম আসে
হাতপাখা হাওয়া দাও, চুলে দাও মায়ার বিকুলি
আহা সে রাত্রি-ভোর, আহা তোমাদের পরাভব
প্রেম থেকে উঠে আসে বৃদ্ধের সব শৈশব
তোমাকে আশিস দিয়ে ফিরে যায় অপার আঘাতে
তুমি দোর ধরে থাকো, নয়নে গ্রাম্য ওশ-ফোঁটা
ছোট ছোট ঢেউ ওঠে কিশোরীর ইজেরের স্রোতে
সাদায় সাদায় ভরে ওঠে দুধ-রতির ভাসান
কে সেই অন্ধলোক, কে বা এসে শুয়েছিল সেদিন
টুকরো টুকরো তব স্বপনের বিসারিত কাঁখে
গোয়ালের গায়ে কার পড়েছিল চাষাড়ের পা
আঁখির কাজল দিয়ে তার নাম লেখা আছে গাঁয়ে
আজ কতদিন পরে ছেলেকে গল্প বলে মা-
“পাখিঅলা এসেছিল একদিন দুপুরের মত
শঙ্খের আলপনা এঁকেছিল গর্ভবকুলে
তারপর তুই এলি, আমি তোর মা, আমি মা!”
মেলিয়া সরব পাখা পাখি উড়েছিল আকাশে
ধোয়া তুলসীর বীজ আনন্দে বুঁদ হয়ে আসে
কে বা সে পুরুষ, কেহ জানে নাই, জানবে না কভু
শিশুর নামের পাশে মায়ের নামটি রেখো শুধু…

২
রাজকুমারি
নগরের প্রান্ত থেকে পুবদিকে ছুটে চলে তারা
মরশুমি চোখ, দু’টি চোখে যেন শীতের মুকুল
আলগা মুখশ্রী, পায়ে পায়ে বাঁধা আছে চিঠি
ছুটে চলে ছুটে চলে ছুটে চলে অপার অদিতি
দূরে ঐ মন্দির, দূরে দূরে ঘণ্টাধ্বনি
হংসের উষ্ণতা ছড়িয়েছে সাদায় সাদায়
পথে পথে কত পথ ছড়ানো ছিটানো পড়ে আছে
আজ শুধু ঈশ্বর, মন ঈশ্বর হতে চায়
রাজকুমারির বুকে শ্বাস নেয় খুচরো পাথর
পাহারা ভুলেছে তার সব হাসি, আজ সে হাসছে
ঐ দ্যাখো তৃণদল, ঐ যে ফকির এক বসে
কুঞ্জবনের ছায়ে আহা মৃদু শীতের বাতাস
কুলকুল কাঁপে জল, রেবানদী কতদিন পরে
তোমাকে দেখছে তার কুমারি হাতের সরু চুড়ি
ঠুনঠুন ঠুনঠুন আজ বড় রোদের বেদন
সে বেদনা মেখে পড়ে আছে কার খাতার পাতারা
আসছে রাজকুমার, গাছের বেদীর মত চোখ
কবে সে-ই নদীকূলে দেখা হয়েছিল দু’জনের
রাত্রির সাথে এসে দুপুরের মিশে যাওয়া সময়
মনকেমনের মত বেজেছিল নীল প্রান্তর
মুখে যে লজ্জা আছে, ও মুখে শীতল হাতছানি
হাতে নিয়েছিল সে যে রাজকুমারির স্পন্দন
এলোচুল এলোচুল, তুমি কি তাহার কথা জানো
যে আমাকে ছুঁয়েছিল, দূরদেশী রাখাল পুরুষ
পাঁজরে গভীর জল, জলে ভাসে ময়ূরের পালক
একবার দেখে যারা প্রেমে পড়ে, তুমি সেই লোক
দু’হাতে আঁধার মাখো, সঞ্চয়ে তুলে রাখো নূপুর
মূর্তি গড়েছ বুঝি, আমার হৃদয় দেখে দেখে
সে আজ আসছে, কতদিন পরে, দেউল সাজাও
ওলো ওলো সই তুই পথের কিনারে চেয়ে দেখ
যে পথ আমার বুকে ভেসে আছে আমলকীপাতা
সে পথে আসবে আজ কুমারের গোপন অধর
আমি নিভন্ত মেয়ে, ঘরে পড়ে থাকি একলা
চুলও বাঁধি না রোজ, পাছে উড়ে যায় প্রজাপতি
আজ সব সাজ খুলে এসেছি মন্দিরের পারে
একা বসে আছি আমি, সিঁড়ির নীরব অছিলায়
আসছে আসছে সে, শুনতে পাচ্ছে কুমারি
কৌমার্যের আজ পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে
নিশান উড়বে রেবানদীটির অধীরতা নিয়ে
‘প্রেমিক আসবে আজ’- কম কথা?- বলো ঈশ্বর!

৩
অনঙ্গ ও বান্ধুলিকথা
ক্রমে বিকেল নেমে আসে…
সে বসে থাকে, দেখে সন্ধে, দেখে রাত্রির চোখ
সে অবাক হয়, ভাবে, এ আবার কেমনতরো লোক
মাটিতে ছড়িয়ে জল, মাখে মাটি, দু’হাত লাগিয়ে
তাকায় তাহার দিকে, তারপর মনে মনে গড়ে
সে তাকিয়ে থাকে কভু শিল্পী কভু শিল্পের দিকে
বাইরে রাত্রি নামে, বাহিরে আঁধার গোলাপি
এ’সময় কারো কোন চঞ্চলতা থাকে না কোথাও
ধীরে সুস্থে ফিরে আসে নদীও নদীর কাছে কাছে
মেয়েটি লজ্জাশীল, পরিমিত, ঈষৎ প্রগাঢ়
গাছ ভাবে, পুতুলের বিয়ের দেয়ালা মনে পড়ে
ছোট ছোট বাচ্চা সব, বিকেলের মধু খেতে এল
আর সে বিনুনিবালা কবে যেন দেহের দোয়াতে
ডুবিয়ে নীলের তুলি বিয়ে দিল পাশের পাড়ায়
প্রিয়তমা পুতুলের ঘুনসির প্রভূত রাত্তির…
আবার সে ফিরে আসে, শিল্পীকে দেখে মন দিয়ে
চিবুকের ভাঁজ দেখে, চোখের দ্রাঘিমা দেখে রাখে
ঠাহর হয় না কিছু, কার হাত গড়ছে মুরতি
ও যে কে, তাহার কাছে বসে বসে গড়ে চলে মুখ
ছেলেবেলা, দুলিপাড়া, আহা তার করুণ বন্ধু
নরম নরম হাতে চুপ করে রেখে যেত কুল
টোপায় টোপায় তার রস ভরে উঠিত যে ঘরে
সে ঘরে ঠোঁটের ‘পরে ঠোঁট জুড়ে এনেছিল কে
কী যেন পাঠশালায় পড়ত ও সুরের পিয়াসি
নদীর ঘাটের পারে বাঁধা ছিল কপালের টিপ
সেখানে জ্যোৎস্না হলে মাঝিরা গাঙের জলে নায়ে
বক্ষে কাজল রাখে যাতে কারো নজর না লাগে
সে কাজলে নাম লিখে রেখে এলে একদিন রাতে
সকালে নদীর পাড় একা একা, ধিমে ধিমে হাসে…
মন পড়ে থাকে তার পুরোনো বালিকা রোদ্দুরে
আজ সতেরোর ধারে দাঁড়িয়ে তাহার মনে পড়ে
এ’সব অতল কথা, কথা বুঝি অতলকে পায়
কথা শুরু হলে সব অনুভব জলে ভেসে যায়
শিল্পী প্রশ্ন করে, মুখে মোর কী দেখো বন্ধুনি
দেখো তো চিনতে পারো, মাটি কার মুখ ধরে আছে
সে দেখে অবাক হয়ে, এ’তো তার মুখ, তার মুখই
তবে কি শিল্পী তাকে প্রেম করে? খুব ভালোবাসে!
বিকেলে রোদের মত শিল্পী ও প্রেমিকা দু’জন
মুখোমুখি বসে রয়, বসে রয়, বসে থাকে দু’জন
আজকে অন্ধকার ছুঁয়ে বলি, ভালোবাসি তোমায়
তোমার তরুণ মুখ দেখে ঠিক ‘মা’ মনে হয়
দু’জনে একলা খুব, একা একা গল্প করছে
আমি দূর থেকে যেন দেখতে পাচ্ছি দু’টিকে…

৪
তুঙ্গভদ্রা
তুরঙ্গ তুমি জানো, অশ্বারোহী পাতাদের কথা
সঘন গহিন সন্ধ্যা, তপ্ত স্নিগ্ধ চারিপাশ
এখনও নামেনি জল, এখনও আসেনি সে করুণ
তুরঙ্গ তুমি জানো, আমি তার দেউটি-রং মন
অখিল আন্ধার করে, ক’রে আসে নির্জনতা
করে রাখি তার কর, কোকিল লজ্জা পেয়ে বলে-
নিচুস্বর কণ্ঠে যার, সেই মেয়ে নারিকেলপাতা
এসেছে কলার ভেলা, বুকে তার রেখেছে অধর
হীরে মানিকের মত জ্ব’লে ওঠে দোকান বাজার
পম্পাপতীর দোরে ধূপ জ্বলে বিরহীর মত
সুগন্ধে তান ওঠে মারোয়ার নীবিবন্ধনে
কত জল কত জল, এ-দেশ জলের কথা জানে
বিপণীতে বেজে ওঠে রুপোলি মাছের মত নথ
কানে তার সৌরভী, সুরভিত বন্যার দুল
লাল লাল, নীল নীল, হলুদ হলুদ কুঁড়ি ফোটে
চুনি পান্নায় মোড়া রূপকথা, ওর কথা বলে
নারীর অবুঝ মুখ, গরিব গরিব নাগরিক
ছুঁয়ে ছেনে বুঝে নেয় সংসারে টান পড়ে না কি
তারপর কিছু চুড়ি, তারপর গলার মালায়
পুঁতির পুঁতির রাত গেঁথে দেয় দোকানি-মানুষ
চুলার হৃদয় জ্বলে, জ্ব’লে ওঠে শিব, রান্নাঘর
মন্দিরে মন্দিরে শাঁখ বাজে এ-জন্মভর
বিকিকিনি করে জন, পরিজন, স্বজন, বন্ধু
সকলে মিলায় স্তোত্র পাঠ আর শিবরঞ্জনে
চন্দন চন্দনা মৃদু মুখ চায় অপলক
বাজুতে জমেছে গাঢ় বেদনার মত কিছু শোক
বিদ্যুন্মালা তার চুলের গভীর খুলে দেয়
অর্জুন লাজ পায়, লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় চোখ!
নরম আদর থেকে শুরু হয় এই পথ চলা
পশ্চিম দিক থেকে ভেরি বেজে ওঠে কুহকিনী
দু’জনে মুগ্ধ তারা, দু’জনেই দোঁহেতে বিলায়
আকণ্ঠ পান করে, বেঁচে থাকবার সব দায়
পূর্ণিমা, শশী, তারা, ছোট ছোট পাহাড় জানছে
আজ রাত ভরা রাত, আজ রাতে ঘুম নেই কারো
ফিরিয়া যাইবে ধীরে রাজকুমারীর মত মেয়ে
সাধারণ, চালে-ডালে, ভালো সে বেসেছে তাহাকেই
ফিরিয়া ফিরিয়া চায়- ‘আবার আসিব তরুলতা’…
সরোবরতীরে হবে আমাদের আবার সুদেখা
বিদ্যুন্মালা তার অর্জুন প্রেমিকের শুধু
তুঙ্গভদ্রা জানে, ইতিহাস ভোলে না যে কিছু…

৫
প্রেম-পর্যায়
সন্ধে নামলে আরতি বসবে মন্দিরে
রক্ত-বসন ঋষির মতন একা
তনুটির কাছে জড়ো হবে উৎফুল্ল
জনগণ, কিছু জনগণ রাত-পোড়া
টাঙানো শিকলি সাজানো আলোর দ্বন্দ্ব
মহিয়সী পেট, আলুর-চালের খিচুড়ি
আরও আছে আজ, বিবস্ত্র ধূপ-গন্ধ
গুগ্গুল-জ্বালা টিমটিমে হরিনাভি
কারা যে মানুষ, কারা নয়- তা তো বোঝাই যায় না আঁধারে
মিশে থাকে শুধু শরীরে শরীর, মিশে থাকে ছেঁড়া কাঁথাতে
ছোট-খাটো চোখ, জিভের আগায় তেঁতুল-টকের টংকার
এ্যাগনায় বসে বালখিল্যরা, বাবার পিঠের সওয়ারি
দূরে প্রান্তর, মাঠ বলি তারে
দূরে মাঠ আর প্রান্তর
কুয়াশার মত বালক-বালিকা
শিশিরের মত শৈশব
মেতেছে জুয়ায়, মজেছে আদর ওড়ানোর উদ্ভাসে
মরে আছে যারা, তাদের কি আর, ঠাকুর মারতে পারে!
এসো এসো সব, শুরু কলরব, এসো এসো চা ও কেটলি
আহা সই সই, বলো চই চই, পাশেই স্বর্গ রেখেছি
বস না রে মন, নিকুঞ্জ-বন, বস না ফুলের আড্ডা
ঢং ঢং বাজে আকাশের-পারা, মন্দির আর লজ্জা
পাশরি সকলি জীবনের গীতি, সকলি দিয়েছি ওঁর পায়ে
পবিত্রতর তরুণী-পাখির মনকেমনের নিরাময়
চলিছে পূজার আয়োজন আর জ্বলিছে পুজোর অঙ্গ
এখানে এসেই মিশে গেছে সব, অলীক জলের ছলছল
নদীময়ী দেশ, মফস্বলের, হৃদয়ে জমছে আজকে
রাত্রি গোপন, প্রেমের মরণ, ঈশ্বর তুমি- আর কে!


ঝিলম ত্রিবেদী
জন্ম- ১৯৮৪, ডিসেম্বর মাস। দর্শন নিয়ে পড়াশোনা, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে।
লেখায় প্রবেশ ২৮ বছর বয়সে।
অনুভূতির গভীরে তাঁর লেখার শিকড়। তাঁর কবিতার প্রতিটি চরণ, আমাদের আয়নার সামনে দাঁড় করায়। বিষয়-বৈচিত্র্যে, ভাষার প্রয়োগে, শব্দের ব্যবহারে ঋদ্ধ তাঁর লেখা পাঠ, এক অনন্য অভিজ্ঞতা। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখেন
প্রকাশিত কবিতার বই
নিরুদ্দেশ সম্পর্কিত ঘোষণা : পত্রলেখা, কোলকাতা : ২০১৫
বৃষ্টি পড়া বাড়ি : প্রতিভাস প্রকাশনা, কোলকাতা : ২০২০

লিখে যাবেন নিরন্তর– প্রত্যাশা তার, তার শুভার্থীদেরও

কবির আরও কবিতা
what is tadalafil https://cialismat.com/
generic cialis online fast shipping buy tadalafil
tadalafil blood pressure cialis without prescription
tadalafil drug where to buy generic cialis online safely
tadalafil cialis cialis tadalafil
tadalafil price walmart tadalafil generic
tadalafil order online no prescription https://cialisusdc.com/
It’s amazing in favor of me to have a site, which is good designed for my know-how.
thanks admin
Hey, thanks for the article post.Thanks Again. Awesome.
https://cialisbusd.com/ cheap cialis pills for sale
tadalafil generic where to buy cialis without a prescription
buy cialis https://extratadalafill.com/
tadalafil drug tadalafil goodrx
cheap generic cialis for sale prescription tadalafil online
https://cialisicp.com/ what is tadalafil
what is tadalafil buy tadalafil
tadalafil without a doctor prescription cialis cost
tadalafil brands tadalafil goodrx
cost of cialis where to buy generic cialis online safely
https://cialismat.com/ tadalafil dosage
buy cialis what is tadalafil
hydroxyclorquin plaquenil for sale
order modafinil 100mg sale provigil 200mg for sale
provigil 100mg canada buy generic provigil 100mg modafinil 100mg generic
what Is The Normal Cost Of Cialis For Bph?
what Are Effects Of Taking 40 Mg Of Cialis?
where To Buy Generic Cialis?
buy provigil without prescription
when Do You Take Cialis Before Sex?
when Will Cialis Be Off Patent?
I believe you have observed some very interesting points, thanks for the post.