চন্দ্রশিলা ছন্দা

আমার আমি

তপ্ত রৌদ্রে পুড়ছো একা
নরক আগুনে জ্বলো
কাউকে কিছু বলো না তো
একাই চলছো, চলো।
কে বা তোমার আপন ছিল
কেই-বা বন্ধু ভাই!
তোমার চেয়ে প্রিয় আপন আর
তো কেহই নাই।
আগলে নেবে, ছায়া দেবে সব ধারণা ভুল
কান্না এলে দুচোখ মোছে তোমারই আঙুল।

ঘনঘোর

রাতকানা রোগে আক্রান্ত নই অথচ
রাত বাড়লেই এলোমেলো ধাপ ফেলি
মসৃণ পথেও
পা এবং পথের দূরত্ব ঠাওর হয় না,
সন্ধ্যা নামলেই ভয় হয় রাজপথকে
এই হয়তো ফসকে যাবে পা!
ঝাপসা চোখ।
ভালো মন্দ, পাপ পূর্ণ ভাবার আগেই
বাড়িয়ে দেয়া হাতটি ধরি ঘনঘোর অন্ধকারে
কবি মানে নিক্ষিপ্ত হওয়া আগুনে এবং
অনন্ত আঁধারে একা পথ চলা
কবি মানে নিষিদ্ধ ‘ক’
মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আশরাফ ফায়াদে
নির্বাসিত অথবা আত্মনিমগ্ন আল মাহমুদ,
কবি মানে প্রেম, বিমুগ্ধতায় বুঁদ।

প্রতিবন্ধী মানুষ

পূর্ব পুরুষ ছিলেন নীলচাষি
রক্তে তাদের বিশুদ্ধ দাসবৃত্তি
চারপাশে পিচ্ছিল সমুদ্র
সচেতন প্রতিটি ধাপ
তবু পিছলে পড়ি, তবু করি পাপ!
এ পাপ আমার নয়,
তিন আঙুলের ফাঁকে টুঁটি চিপে ধরা
কলমের অপরাধ!
কলমের ধৃষ্টতায় স্তম্ভিত আমি
বাঁধ ভাঙা সত্যের জোয়ারে সোচ্চার সে
এক এবং অদ্বিতীয় যখন কলম অপ্রতিরোধ্য
আমার মাথা কয়েক হাত উঁচুতে উঠে যায়;
দাস জীবনের চাইতে উত্তম ঔদ্ধত্য
অপরাধ।

বিক্ষোভ অভিশাপ

প্রতিদিন চোখ খুলে নবজন্মের রসাস্বাদন করি।
পাখির ঠোঁটে দেখি ছিনিয়ে আনা
একটুকরো সূর্যালোক
মৌমাছির খুনসুটিতে পাপড়ি মেলা
ভোর দেখি মুগ্ধ চোখে!
দিন শেষে ঢলে যায় মৃত্যুর কোলে।
স্বঘোষিত আধিপত্যবাদের মস্তক হয়ে ওঠা
কতিপয় বুলডগের মুঠোয় পৃথিবীর ট্রাম্প কার্ড।
থকথকে মরণ আসুক আজ তাদের ফুসফুসে!
দুহাত ভরে যাক তাদের কিলবিল ভাইরাস!
যারা ভেঙেছিল প্রজাপতির ডানা
ঘরের ছাদে, পাবলিক বাসে
পায়ে পিষেছিল উঠোনের কচি সবুজ ঘাস
লাগামহীন পাপে ডুবে এনেছিলে অভিশাপ
সেই সব ভয়ানক দানবের সাথে অসম্ভব প্রায় সুন্দরের বসবাস!
যে হাতে পুড়িয়েছিলে পৃথিবীর ফুসফুস
নির্বাক আমাজন
ভেঙেছিলে মানুষের ঘর পাখির বাসার মতো
উজাড় করেছিলে সংখ্যালঘু
ঠোঁটের কষায় কাঁচা দুধের ঘ্রাণে আহ্লাদিত
শত শত ফুল যেভাবে হত্যা করেছিলো
যে হাতে খুন করেছিলো সেজদায় পড়ে থাকা
অগণিত মুসলিম!
খেলেছিলে পরমাণু নিয়ে ভয়ানক খেলা
এখন তোমাদের প্রায়শ্চিত্তের পালা
অতএব বাশার আল আসাদ কাঁদো
দু’হাত মুখে চাপা দিয়ে কাঁদো!
আকাশের রঙ বদলে ফেলা বিকৃত শকুনি
নত কর তোর চোখ, ঢেকে ফেল দুহাতে, অঝরে কেঁদে ভাসা নাফের নীল জল!
নিজেদের পাপের দুর্গন্ধে ডুবতে ডুবতে
নাক মুখ চেপে ধরে কাঁদ শয়তানের দোসর
ক্ষমা চেয়ে নে অসহায় বাদুড়ের কাছে
লজ্জিত হ আক্রমণাত্বক অক্টোপাস এবং সাপ ব্যাঙ কুমিরের কাছে
আর যত আছে শুয়োরের পালে বাটপার চোর,
তোদের কপালেও যেন আর না আসে একটিও ভোর!
বিশ্বস্ত দুহাতে চেপে ধর সমগোত্রীয়র গলা!
যত আছে রাঘব বোয়াল সিণ্ডিকেট প্রতিবন্ধী
আছে কথা কপচানো সুশীলের ছদ্মবেশে সুবিধাভোগী সর্বগ্রাসী
এখন আলিঙ্গন করে বল একে অপরকে খুব ভালোবাসি।
দিনের পৃষ্ঠায় থমথমে ভৌতিক অন্ধকার
জনমানুষ শূন্য হাট বাজার, ট্রেনের কামরা, স্টেশন, লঞ্চঘাট, বাসটার্মিনাল
সমস্ত বায়ুমন্ডল পুড়ছে চাপা দীর্ঘশ্বাসে
লজ্জায় মিইয়ে গেছে চৈত্রের চাঁদ।
লক্ষাধিক প্রাণের বিনিময়ে কি শোধ হবে
মানুষের সহস্র বছরের অপরাধ!
তোদের দু-হাত আজ তোদেরই বিচার করুক!
হাত দুটি হোক দুটো তাজা বোমা!
বেছে বেছে ধ্বংস হোক জ্ঞান পাপী গণ্ডমূর্খের দল
প্রকৃতি যেন তোদের না করে ক্ষমা।

চন্দ্রশিলা ছন্দা

জন্ম ১৬ অক্টোবর ১৯৭০, চাঁপাই নবাবগঞ্জ
পিতা- অধ্যাপক নওয়াব আলী । মাতা- হামিদা আখতার বানু

প্রকাশিত বই

কবিতার বই
ছিঃ (২০১৪, সহজ প্রকাশ)
ভালোবাসা দ্রোহে ভালোবাসা মোহে (২০১৫, চন্দ্রশিলা প্রকাশন)
স্পন্দনে তুমি(২০১৫,চন্দ্রশিলা প্রকাশন )
দেহভাস্কর্য (২০১৬, শৈলী প্রকাশন)
পুড়ছে দেখো জলের শরীর(২০১৮, শৈলী প্রকাশন)

কিশোর কবিতার বই
পরির সাথে এ মন মাতে (২০১৭, আদিগন্ত প্রকাশন)

গল্পের বই
বিভাজিত বৃত্তে (২০১৮, আইডিয়া প্রকাশন)

কিশোর গল্পের বই
তিতলির ভালো কাজ ( ২০১৮. শৈলী প্রকাশন)