কবিতা : এলিজা খাতুন

This image has an empty alt attribute; its file name is ALIZA-PIC-KOBITA.jpg

এলিজা খাতুন

This image has an empty alt attribute; its file name is MANGROVE.jpg

ব্যবধান

শ্রাবণের জানালায় হাত বাড়াও তোমরা
বৃষ্টি ছোঁও, আকাশ দ্যাখো
রান্নাঘর থেকে ভেসে আসা গুরুপাকের ঘ্রাণ আর
সঙ্গীতে ভেসে যায় তোমাদের শৈল্পিক হৃদয়

আমার শুধু হৃদয় ভাসে না; ভেসে যায় সবটুকু
চোখ ভেসে যায়, বুক ভেসে যায়
টাটি-বেড়ার ঘর-দুয়ার ভাসে
ক্ষুধা ভাসে জলে হাবুডুবু উনুনে
উপেক্ষা ভাসতে থাকে চলমান স্রোতে

আকাশের হাতে কী এমন নীল? আমি দেখেছি
প্রহারে প্রহারে বিক্ষত কালশীরে নীল !

অভূতপূর্ব প্রাসাদের গল্প শুনি তোমাদের মুখে
সেসবের দেয়ালে বিচিত্র কারুকাজ
আমি দেখি মজুরের পিঠে বিন্দু বিন্দু ঘামের নকশা

আফসোস করেছো, ভুলক্রমে আমাকে সভায় আমন্ত্রণ
করেছে বলে; সেই সুবাদেই চোখে পড়েছিল
মাথার উপরে ঝাড়বাতির ঝলকানি! কয়েকবার
উপরমুখো তাকাতেই উপচে পড়ছিলো তোমাদের দম্ভ

আমার তো বহুযুগের দেখা, ন্যায্য পাওনা থেকে
বঞ্চিত কৃষকের ক্রোধ জমে জমে তার চোখের চাহনিতে
কত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জ্বলে উঠতে পারে !

তার দৃষ্টি-তীব্রতায় ফসলের গায়ে কেমন আগুন লাগে!
এর কাছে তোমাদের ঝাড়বাতি বড় ক্ষীণ !
লাল-রক্ত-চক্ষু শাসনে প্রতারণার দাপাদাপি ছাড়া
কী এমন করেছো তোমরা !

আমার আছে- খেটে খাওয়ার, বাঁচতে চাওয়ার
আশা বাঁধার অগাধ অনবকাশ

কান্নার নয়, স্থবিরতার নয় …
অপ্রাপ্তি আর বিদ্রোহের যতক্ষণ না পুনর্মিলন ঘটবে
আত্মশক্তির দেয়ালে যতক্ষণ না হতাশার রং ছিটে পড়বে
আমার গন্তব্য থাকবে সম্মুখেই

মাটি দাও, সবুজের মজুর হবো

কর্তব্যের গিরোয় বাঁধা স্বপ্নের পুঁটলি
কাঁধে ঝুলেছে সেই বুঝতে পারা বয়স থেকে

তখন থেকে জল-মাটি ঘেঁটে ঘেঁটে
কাদা সানি, কাদা তুলি
বেড়ার গায়ে খাবল ভরে কাদার মন্ড ছুঁড়ি
কঞ্চির হাড়-পাঁজর ঢাকি, দেয়াল তুলি

উঠোনের সমতা আনতে
চাক চাক মাটি ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো করি
দুরমুশ-এর ভীষণ ঘা’য়ে
বহুকাল ধরে ক্ষত-বিক্ষত মজুর আমি
দু’খানা হাত পেলবতাহীন কড়কড়ে সেই কবে থেকে!

আজ কোথায় সে ঘর! কোথায় উঠোন?
মাঠ বিল ক্ষেত কোনোখানে আর অবশিষ্ঠ আছে!
ঝমঝম বৃষ্টি পড়ার এতটুকু মাটি!
আর কতটুকু আছে!
শস্যের স্বর্ণালী থোকায় বাতাসের হাসি খেলা দোল!

আমার লাঙ্গলখানা জলে জং ধরা
ঘাসের কাঙাল-হাড় জেগে ওঠা বলদ জোড়া’র
কান্না-কাজল চোখ, গোলপাতা-চাল ক্ষয়ে ডাঁটা ডাঁটা

আমার সবটুকু নীল মেঘের আড়ালে
সব সোনা মাটি নোনা সমাধীতে
বৈদ্যুতিক তার-জালের দখলে প্রিয় আকাশ

স্বপ্নগোঁজা সমূহ চারা
প্রগাঢ় সবুজ বৃক্ষ হওয়ার আকাঙ্ক্ষাতে
ইট-পাথরের শরীর ফুঁড়ে তবু সে উর্ধগামী !

প্রতীক্ষা

যেদিন তোমার আসার কথা ছিলো
গলিপথের যতদূর দেখা যায়
দাঁড় করিয়েছি বিশ্বাসের লাইটপোস্ট

স্বপ্নের কপালে পরিয়েছি চুয়া-চন্দন
জানালার ওপাশে দিগন্ত-ঘুড়ির সাথে উড়িয়েছি
নিজেকে, অন্তর্গত ক্ষত বেদনা ক্ষোভ ঠেলেঠুলে
ভাসিয়েছি কুয়াশার ভেলায়
জানি, তুমি ব্যথাতুর অন্ধকার-মুখ দেখতেই পারো না

তোমার আসার কথা ছিলো সেদিন
অথচ গোধূলীর ঘোড়ায় চেপে এসে গেছে বিষন্নতা

যখন প্রথম এসেছিলে তুমি অকস্মাৎ
সময়ের সঞ্চিত কালো মেঘ গলে গলে
ঝাঁপসা দুচোখে দেখতে পাই নি ঠিকভাবে
তোমাকে স্পর্শ করতে পারিনি অন্ধকার-আমি

আমাকে গাঢ় করে তুলেছে ঋতু-ঋণ, বিরুদ্ধ সময়
আমাকে ব্যবহার করেছে নৈরাজ্যের অদৃশ্য চাবুক
আমাকেই আড়াল করে বেড়ে চলেছে শ্রেণী ব্যবধান
আমাকে সাক্ষী করে শুষে নিতে থাকে মাটি-বুকের দুধ

এবার চোখ দিয়ে নয়, দেখবো হৃদয় দিয়ে
বিশ্বস্ত লাইটপোস্টের নিচে
আমি-অন্ধকার একাকি দাঁড়িয়ে সেই কবে থেকে !

পরিত্রাণ হয়ে এসো হে নিশ্চয়তার আলো !
আমাকে পৌঁছে দাও শিউলি-সকালে

অথবা খড়কুটো হয়ে এসো; ধুপ ধরাবো

যে কথার সময় এখন

পাথরপ্রাণে কে রেখে গেছে আগমনি ছাপ
জলের বদলে কে দিয়েছিল কচি ডাবের জল
সেসব কথা এখন নয়

পায়রা ওড়ানো উৎসবে কে এসেছিল
কার আসার পথে ঝরেছিলো ফুলবৃষ্টি
সেসব কথা এখন নয়
ফুল দোলাতে কে উঠেছিলো শিরীষের ডালে
মনের কোথায় জমে আছে দুল হারানো দুঃখ
সেসব কথা এখন নয়

বেলির শাখায় ফড়িংএর ডানা
পাতার গালে রোদের আদর; কে কবে দেখিয়েছে
কে তুলেছে পায়ের পাতায় বিঁধে যাওয়া ভুল কাঁটা
সেসব কথা এখন নয়

বুক-পাঁজরে এখন ধু ধু কালের হাঁচড়-পাঁচড়
আজ আমাদের সমস্ত রং ক্ষণস্থায়ী বিরহে কাঁদুক

আজকে রাতের বৃষ্টি বাদল
ফসল-ক্ষেতে আনে যদি কিছু দানার স্বপ্ন
এখন তবে কথায় কথায় ভাঙার সময়
কাস্তের চোখে নেমে আসা ঘুম

ঠোঁট ফাঁড়া হাসি

এ পাড়ায় পিঁপড়ের চলার মতো চলে “এরা”
আর এদের সাথে ছায়ার মতো
নিঃশব্দে অভাব হেঁটে বেড়াচ্ছে
পোয়াল গাদার পাশে, ঘুঁটে মাচার নিচে
উই পোকার ঢিবির মতো বসে আছে অভাব
ঘরের খুঁটি, চালের বাতায় অভাব ঢুকে
ঘুণ পোকার মতো কুরে কুরে বের করে
গুঁড়োনো জীবন

এরা লিফ্ট বেয়ে শপিংমলে ওঠেনা
এরা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, অনথন, থাই স্যুপ চেনেনা
এরা জন্মদিনের পার্টিতে
লাল জলের বোতলের খবর রাখেনা
এমনকি এদের আনাচ-কানাচে ঘুরে বেড়ানো
অভাবের খবরও এরা রাখে না
এরা মধ্যরাতে ষলা-পরামর্শে মাতে না !

এদের পাঁচ-ছ’টি ছেলেপুলের পর
আরো কয়েকটি জন্মায়
এদের ঘরে তবু উপচে পড়ে আনন্দ-শরবত
চাক চাক ফাটা মাটির মতো ঠোঁট ফেড়ে হাসে এরা
এদের কালি পড়া কোটরের ভেতর
চক চক করে মায়া জ্বলে
সমস্ত দিনের অতি বাস্তব সংহাতের পর
বেহালার তারের মতো জেগে থাকা বুকের হাড়ে
এরা হাসি বাজাতে পারে
উঁকি দিয়ে দিয়ে পাত্তা না পাওয়া অভাবেরা
পাড়া-বিমুখ হয়

This image has an empty alt attribute; its file name is MANGROVE.jpg

এলিজা খাতুন

জন্ম : ২ ফেব্রুয়ারী ১৯৮১, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী

প্রকাশিত গ্রন্থ

কবিতা
নৈঃশব্দ্য ছোঁয়া জল
মধ্যরাতের খামে
ভাঙনকাল
শ্রাবণ জানালা
আরাধ্য পথের দিকে

গল্প
বর্গামাটি
ভাটির টানে
আগুন গোঁজা মাটি

পুরস্কার / সম্মাননা
উতল হাওয়া সম্মাননা, কোলকাতা

About S M Tuhin

দেখে আসুন

কবিতা : রনি অধিকারী

কবিতা রনি অধিকারী ১ নারীর নাম নদী এই পথ মিশে যায় নদী জল অথৈ সমুদ্দুর …

25 কমেন্টস

  1. why Does The Cialis Ads Use Twin Bathtubs?

  2. what Is The Lead Time For Cialis?

  3. provigil cheap provigil us modafinil medication

  4. i Took 20mg Of Cialis. How Long Before I Can Take Another One?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *