কবিতা
অর্ণব আশিক

১
মৃত্যু অনিবার্য, ভালোবাসাও তাই
চূড়ান্ত ভালোবাসা বলে কিছু নেই
কিছুটা আবেগ কিছুটা পাওয়ার আকাঙ্খা
দূর থেকে চাঁদ দেখার মতো
এই হলো ভালোবাসা।
ভালোবাসা মানে সারা জীবন কষ্ট
না পাওয়ার কষ্ট, পেয়ে হারানোর কষ্ট
তবুও ভালোবাসে মনুষ
না জেনেও মৃত্যুকে যেমন।
মৃত্যু অনাবিল ভালোবাসা জীবনের।
মৃত্যুই শুধু
তাড়াতে তাড়াতে নিয়ে যায় মানুষকে
পরিপূর্ণ জীবনের দিকে
অপূর্ব বাঁচোয়া হয়ে, ভালোবাসা যেমন।
মৃত্যু অনিবার্য, ভালোবাসাও তাই।

২
ভোরের ঘ্রাণ
কুসুমিত হয়ে জেগে ওঠে ভোর
পাতায় পাতায় বৃষ্টির পরশ
ধানশালিখের নাচানাচি রঙে ও মাধুর্যে
ধানের চারার মতো নড়ে উঠে প্রাণ।
এভাবেই দিনের শুরু খুলে বোধের মোড়ক
ভেজা ধান বাতাসের শরীরে সোঁদা ঘ্রাণ
মেঘের চাতালে ছিটেফোঁটা অন্ধকার বিহঙ্গের ছবি
ধানকাটা শেষ, জমির আইলে খুটে খায় চড়ুই শালিক
ধ্যানমগ্ন সাদা বক বসে থাকে বোষ্টমীর বেসে
বুকের জমিনে তার বর্ষার ঘ্রাণ।
ভোরের বাংলা, বাংলার প্রাণ।

৩
ইচ্ছে ঘুড়ি
তোমার দুঃখগুলো সব কিনে নিতে চাই
যত ভালোবাসা তত দুঃখ
আমাদের গহীন জুড়ে পড়ে থাক
খুদকণার মতো
অনাথের মতো
শূন্যে উড়িয়ে দিই বেদনার খই।
সময়ের ঝুড়িতে শুয়ে আছে
দুঃখ গুলি তোমার
আমি শুধু পৌঁছে দিতে চাই
সারাটা সময় জুড়ে
ভালোবাসা এক অনন্ত উপহার।

৪
বাৎস্যায়ন
বহমান নদী সুন্দর, চলমান নারীও তাই
দূর থেকে পাহাড় সুন্দর, নারীও
কাছে গেলে সব পাহাড় মাটি -পাথরের টিলা,
ঝরাপাতার আস্তরে মোড়ানো
সব নদীই স্রোতস্বিনী তরতরিয়ে বহমান
কাছে গেলে অভিন্ন বাঙময় সব নারীই
নদীর বাঁক সুন্দর, কাছে গেলে ভিন্নতর কিছু নেই।
তবুও নদীতে যাই অবগাহন করি জলে
তবুও পাহাড়ে যাই ঝরাপাতার মর্মর মাড়িয়ে
নদীতে ডুবতে ডুবতে সাতার কাটি,
পাহাড়ে উঠতে উঠতে নেমে যাই খাদে
ঝরনার শুষ্ক পথে শুনি
কোকিলের গান, ঘুঘুর প্রেমময় ডাক
তবুও নারীর কাছে যাই, নারী আমাকে টানে
পাহাড়ের কাছে যাই পাহাড় আমাকে টানে
আহা কোকিল! আহা ঘুঘু!
আহা নদীর ঘোলা জল, ঝর্ণা প্লাবিত পাহাড়
আহা নারী!
কে জানতো বাৎস্যায়নে গভীর মূদ্রার হিসাব এমন।

৫
পোড়া ধূপের গন্ধ
চাবিটা হারিয়ে গেছে
অবিশ্বাসের গন্ধ চোখের ধূসরতায় স্থির
ভালোবাসায় মিশে আছে কিছু অসহায়তা
অসহ্য বিস্তীর্ন হাহাকার
কোথায় কোন শব্দ হলে বুঝি
অদ্ভুত দোটানায় ঝুলন্ত
আমার হৃদয়।
চাবিটা খুঁজছি শুধু খুঁজছি
বুকের ভেতর লাফ দেয় ঘুমন্ত বেড়াল
গেরস্থালী চেপে সুস্পন্দন
গোলাপের ডাল নড়ছে নড়ছেই
একফোটা আকাশ বুকে রেখে
জানালার পর্দা জোছনায় ভিজে
বেসিনের ট্যাপ খোলা জল পড়ছে পড়ছেই…
তুমি নেই
এত নৈঃশব্দ্য এত নির্জনতা
ঝিঁঝিঁ ডাকে হারানো চাবির থোকায়
ভাঙা রামধনু রঙ টুকরো টুকরো
পোড়া ধূপের গন্ধ
অদম্য আগ্রহের ইচ্ছে বাড়ায়।


মোঃ হুমায়ূন কবীর । লেখক নাম অর্ণব আশিক
জন্ম : ১ জানুয়ারি ১৯৫৫ টবগী, বোরহানউদ্দীন, ভোলা । স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর বাংলা সাহিত্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা।
কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধে নিরন্তর নিবেদিত প্রাণ । প্রকাশিত বই-র সংখ্যা ১০ (দশ)