“অযান্ত্রিক এর সময় থেকে ঋত্বিকের অল্প অল্প মদ্যপানের শুরু। সিনেমাগুলোর বাণিজ্যিক অসফলতার কারণে বাড়তে লাগল হতাশা আর সেই সঙ্গে মদ্যপানের মাত্রা। ১৯৬২ সালে বানালেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র সিজর্স, ১৯৬৩ সালে ডকুমেন্টরি ওস্তাদ আলাউদ্দীন খান। এই সময় বগলার বঙ্গদর্শন নামে একটি সিনেমার কাজ শুরু করলেও আর শেষ করতে পারেননি। কোমল গান্ধার ফ্লপ হওয়াটা ছিল কফিনের শেষ পেরেক। ১৯৬৫ সালের দিকে বাংলা মদ ধরলেন, এমনকি গোসল করাও ছেড়ে দিলেন। তাঁর এমন জীবনযাত্রার ফলে অতিষ্ঠ হয়ে তাঁর স্ত্রী ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যেতে বাধ্য হলেন। মদ্যপান নিয়ে একটা মজার ঘটনা প্রচলিত আছে। এক রাত্রে ঋত্বিক ফিরছেন, ঠিক হেঁটে ফেরার অবস্থায় নেই তখন আর। ট্যাক্সি, অগত্যা, পকেটে পয়সা না থাকা সত্ত্বেও।
‘ভাড়া, স্যার…’
‘আমার কাছে টাকা নেই। তুমি এক কাজ কর – এখান থেকে সোজা ১/১ বিশপ লেফ্রয় রোডে চলে যাও। সেখানে গিয়ে দেখবে, একটা ঢ্যাঙা লোক দরজা খুলবে। ওকে বোলো, ঋত্বিক ঘটক ট্যাক্সি করে ফিরেছে, সঙ্গে টাকা ছিল না। ও টাকা দিয়ে দেবে।’
সেই দীর্ঘকায় ব্যক্তি, যা শোনা যায়, সেইবার, এবং এরপর বার বার, ভাড়া মিটিয়ে দিয়েছিলেন। ঋত্বিক তাঁকে উত্ত্যক্ত করতেন, কিন্তু মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করতেন, ‘ভারতবর্ষে সব থেকে ঠিকঠাক ক্যামেরা বসাতে জানে ঐ ঢ্যাঙা লোকটাই।’ তারপর অবিশ্যি যোগ করতেন, ‘আর হ্যাঁ, আমি খানিকটা জানি।’
দীর্ঘকায় ব্যক্তিটি, যার মতে সিনেমার সম্ভাব্য কোনো বিষয় নিয়ে লিখতে বাদ রাখেননি ঋত্বিক, ছিলেন আরেক কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়।”
ঋত্বিক ঘটক সিনেমার বিপ্লবী
অরিন্দম গুস্তাভো বিশ্বাস
ঠোঁটে পাতার বিড়ি আর হাতে বাংলা মদের বোতল। মাথাভর্তি উদ্ভ্রান্তের মতো এলোমেলো চুল, ক্ষুরের স্পর্শাভাবে গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। পরনে ধূলিমলিন পাজামা-পাঞ্জাবির সঙ্গে কাঁধে একটা শান্তিনিকেতনী ঝোলা। চোখে কালো ফ্রেমের চশমা, সে চোখে কৌতুক মেশানো ধারালো দৃষ্টি। ‘তিনি কে’ এই প্রশ্ন কেউ করলে কোনোরকম হেঁয়ালি না করেই সরাসরি জবাব দিয়ে দেবেন – ‘আমি এক মাতাল। ভাঙ্গা বুদ্ধিজীবী, ব্রোকেন ইন্টেলেকচুয়াল।’ এই হলো কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের লেন্সের ভেতর দিয়ে নিজেকে দেখার উপলব্ধি।
পুরো নাম ঋত্বিক কুমার ঘটক। জন্মেছিলেন ঢাকায়, ১৯২৫ সালের ৪ নভেম্বর। বাবার নাম সুরেশ চন্দ্র ঘটক, মা ইন্দুবালা দেবী। পরিবারের মধ্যে আগে থেকেই শিল্প-সাহিত্যের চর্চা ছিল। বাবা সুরেশ চন্দ্র ঘটক একজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হলেও কবিতা ও নাটক লিখতেন। খ্যাতিমান লেখক মনীশ ঘটক ছিলেন ঋত্বিকের বড় ভাই। ঋত্বিক ঘটক ১৯৪৬ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে আই.এ এবং ১৯৪৮ সালে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে এমএ কোর্স শেষ করলেও পরীক্ষাটা আর দেওয়া হয়ে ওঠেনি তাঁর। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং সর্বোপরি ১৯৪৭ এর ভারত ভাগের ফলে ঘটক পরিবার কলকাতায় চলে যেতে বাধ্য হয়। নিজের জন্মভূমি ত্যাগ করে শরণার্থী হবার মর্মবেদনা ঋত্বিক কোনোদিন ভুলতে পারেননি। তাঁর জীবন-দর্শন নির্মাণে এই ঘটনা ছিল সবচেয়ে বড় প্রভাবক যা পরবর্তীকালে তার সৃষ্টির মধ্যে বারংবার ফুটে ওঠে।
গল্প-কবিতা লিখে ঋত্বিকের সাহিত্যচর্চার শুরু হয়েছিল দেশভাগের সময়টাতেই, কলকাতায় গিয়ে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়লেন থিয়েটার [ভারতীয় গণনাট্য সংঘ (আইপিটিএ)] এবং রাজনীতির [কম্যুনিস্ট পার্টি(সিপিআই)] সঙ্গে। ভারতীয় গণনাট্য সংঘ ছিল ভারতের প্রথম সুসংগঠিত নাট্য আন্দোলন যেটা তাদের প্রদর্শিত নাটকের মাধ্যমে সামাজিক অবিচার ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। এই সংঘের পশ্চিমবঙ্গ শাখার সঙ্গে ঋত্বিক কাজ করা শুরু করেন ১৯৪৮ সালে। একই বছরে লেখেন তাঁর প্রথম নাটক ‘কালো সায়র’ এবং অভিনয় করেন বিজন ভট্টাচার্যের ১৯৪৪ সালের নাটক ‘নবান্ন’তে। ধীরে ধীরে গল্প-কবিতার চেয়ে থিয়েটারের দিকে আগ্রহ বাড়তে থাকে ঋত্বিকের, তাঁর যুক্তি ছিল, ‘গল্প পড়ার চেয়ে মানুষ নাটক বেশি দেখে’। নিজের সৃষ্টিকে বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার ইচ্ছাটা শুরু থেকেই ঋত্বিকের মধ্যে ছিল প্রবল। তাঁর লেখা নাটকগুলোর মধ্যে আছে কত ধানে কত চাল, ইস্পাত, জ্বলন্ত, নেতাজীকে নিয়ে, সাঁকো এবং সেই মেয়ে। অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দিজেন্দ্রলাল রায়ের চন্দ্রগুপ্ত, রবীন্দ্রনাথের ডাকঘর, বিজন ভট্টাচার্যের কলঙ্ক, শেক্সপিয়রের ম্যাকবেথ ও দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ। এরপর ক্রমে তিনি নাটক লেখা ও অভিনয়ের পাশাপাশি নির্দেশনাও দিতে থাকেন, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জ্বালা (১৯৫১) ও দলিল (১৯৫২)। দলিল নাটকে দেখা যায় যে, দেশভাগের ফলে পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গ দু’ভাগ হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ দুঃখ ভারাক্রান্ত ও বিচলিত। জ্বালা ছিল ঋত্বিকের নির্দেশনায় সর্বশেষ নাটক যেটা তিনি পরিচালনা করেন ১৯৫৭ সালে। মৌলিক নাটক লেখা ছাড়াও তিনি বের্শোল্ট ব্রেখ্ট-এর দ্যা লাইফ অফ গ্যালিলিও (গ্যালিলিও চরিত) ও দ্যা ককেশিয়ান চক সার্কেল (খড়ির গণ্ডি), নিকোলাই গোগোল-এর গভর্নমেন্ট ইন্সপেক্টর (অফিসার, ১৯৫৩) এবং ম্যাক্সিম গোর্কির দ্যা লোয়ার ডেপথস (নিচের মহল) বাংলায় অনুবাদ করেন।
২.
সিনেমার সঙ্গে ঋত্বিকের সংশ্লিষ্টতা থিয়েটারের প্রায় সমসাময়িক। ১৯৪৮ সাল থেকেই কিছু উৎসাহী বাঙালি যুবকরা কলকাতার প্যারাডাইস ক্যাফে নামের একটা চায়ের দোকানে ফিল্ম ও ফিল্ম মেকিং নিয়ে আড্ডা দেয়ার উদ্দেশ্যে মিলিত হতেন। এই আড্ডাবাজদের দলেই ছিলেন ঋত্বিক ঘটক ও মৃণাল সেনের মতো ফিল্ম মেকাররা। ১৯৪৭ সালে চলচ্চিত্র সমালোচক চিদানন্দ দাশগুপ্ত ও সত্যজিৎ রায় মিলে প্রতিষ্ঠা করেন ‘কলকাতা ফিল্ম সোসাইটি’। কলকাতা ফিল্ম সোসাইটির কার্যক্রমের ফলেই এইসব নতুন ফিল্ম মেকারদের প্রথমবারের মতো পরিচয় ঘটে ইউরোপিয়ান ও সোভিয়েত ফিল্মের সঙ্গে। ১৯৫২ সালে কলকাতাসহ ভারতের চারটি শহরে অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। এটি ছিল একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা এবং এই উৎসবেই ভারতীয় দর্শকরা প্রথমবারের মতো ইতালির নিওরিয়্যালিস্ট ফিল্ম ভিত্তোরিও ডি সিকার বাইসাইকেল থিভস এবং আকিরা কুরোসাওয়ার জাপানি ফিল্ম রশোমন এর মতো ফিল্মগুলো দেখার সুযোগ পান।
এসব দেখেশুনে ঋত্বিকের মনে হলো যে ফিল্ম নাটকের থেকেও শক্তিশালী মাধ্যম, এর মাধ্যমে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব। তাই তিনি এবার ফিল্মের দিকে ঝুঁকে এলেন। ঋত্বিকের এই বার বার শিল্পমাধ্যম পরিবর্তনের ব্যাখ্যা তিনি নিজেই দিয়েছিলেন এভাবে, ‘ছবি লোকে দেখে। ছবি দেখানোর সুযোগ যতদিন খোলা থাকবে, ততদিন মানুষকে দেখাতে আর নিজের পেটের ভাতের জন্য ছবি করে যাব। কালকে বা দশ বছর পরে যদি সিনেমার চেয়ে ভালো কোনো মিডিয়াম বেরোয় আর দশ বছর পর যদি আমি বেঁচে থাকি, তাহলে সিনেমাকে লাথি মেরে আমি সেখানে চলে যাব। সিনেমার প্রেমে নেশায় আমি পড়িনি। আই ডু নট লাভ ফিল্ম।’
এখন প্রশ্ন হতে পারে, তিনি ফিল্ম ভালোবাসেন না কিন্তু শিল্পচর্চার মাধ্যমে অধিক মানুষের কাছে পৌঁছানোর তাঁর এই তাগিদের উদ্দেশ্যটা কী? এই বিষয়ে ঋত্বিকের মতামত হলো, ‘প্রতিবাদ করা শিল্পীর প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব। শিল্প ফাজলামি নয়। যারা প্রতিবাদ করছে না তারা অন্যায় করছে। শিল্প দায়িত্ব, আমার অধিকার নেই সে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার। শিল্পী সমাজের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা। সে সমাজের দাস। এই দাসত্ব স্বীকার করে তবে সে ছবি করবে।’
তাই ঋত্বিকের দৃষ্টিতে সিনেমা কেবল বিনোদনের মাধ্যম হয়ে থাকে না, সেটা হয়ে ওঠে প্রতিবাদের হাতিয়ার। আইজেনস্টাইনের ব্যাটলশিপ পতেমকিন, পুদোভকিনের মাদার এবং বুন্যুয়েলের নাজারিন এর মতো সিনেমা দেখে যার দীক্ষাগ্রহণ, তিনি শিল্পের মাধ্যমে তাঁর দর্শনটা ছড়িয়ে দেবেন এটাই স্বাভাবিক।
৩.
নিমাই ঘোষের ১৯৫০ সালের বাংলা সিনেমা ছিন্নমূল এর মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে অভিষেক ঘটে ঋত্বিক ঘটকের। চলচ্চিত্রটিতে তিনি একইসঙ্গে সহকারী পরিচালক এবং অভিনেতা হিসেবে কাজ করেন। বাংলা সিনেমায় বাস্তবতা প্রদর্শনের চলচ্চিত্রিক ধারা সৃষ্টির ক্ষেত্রে এটি একটি উল্লেখযোগ্য সিনেমা। দেশভাগের ফলে পূর্ববঙ্গ থেকে শরণার্থী হয়ে কলকাতায় চলে আসা একদল কৃষকের গল্পই এই ছবির বিষয়বস্তু। এই সিনেমায় শিয়ালদহ রেলস্টেশনকে লোকেশন হিসেবে ব্যবহার করা হয়, এখান দিয়েই দেশভাগের পরবর্তী সময়ে শরণার্থীরা শহরে প্রবেশ করত।
১৯৫১ সালে ঋত্বিক ঘটক প্রথমবারের পরিচালকের দায়িত্ব পান। বেদেনী নামের এই সিনেমাটির নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৯৫০ সালের দিকে, কিন্তু স্টুডিওতে আগুন লেগে যাওয়ায় পরবর্তীতে মূলত অর্থনৈতিক কারণে সিনেমাটির শুটিং বন্ধ হয়ে যায়। নির্মল দে’র পরিচালনায় এটি নির্মিত হচ্ছিল তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাগিনী নামের ছোটগল্প থেকে। পরিচালকের দায়িত্ব পাওয়ার পর ঋত্বিক এর গল্প ও চিত্রনাট্য নতুন করে লেখেন এবং নাম দেন অরূপ কথা। সুবর্ণরেখা নদীর তীরে প্রায় ২০ দিন ধরে শুটিং করা হয় কিন্তু ক্যামেরার যান্ত্রিক ত্রুটির ফলে ফিল্ম এক্সপোজ না হওয়াতে সিনেমাটি আর আলোর মুখ দেখেনি।
ঋত্বিকের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ১৯৫২ সালে নির্মিত নাগরিক। এটিই ছিল খুব সম্ভবত বাংলা আর্ট ফিল্মের প্রথম উদাহরণ। দুর্ভাগ্যবশত এটি রিলিজ হয় দীর্ঘ ২৪ বছর পরে, ঋত্বিকের মৃত্যুর পর।
দেশভাগ পরবর্তী সময়ে পূর্ববঙ্গ থেকে চলে আসা একটি রিফুজি পরিবারের জীবনধারণের যুদ্ধই নাগরিক এর গল্প। সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র রামু। বাবা-মা আর বড় বোনকে নিয়ে একটি নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে রামুর বসবাস। বোনকে বিয়ে দেবার ব্যর্থ চেষ্টা চলে বার বার। শিক্ষিত রামু স্বপ্ন দেখে চাকরি করে জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য আনার, প্রেমিকা উমাকে নিয়ে ঘর বাঁধতে চায় তার ঘরের দেয়ালে টাঙানো ক্যালেন্ডারের ছবিটির মতো কোনো এক জায়গাতে। কিন্তু হায়! সেই চাকরি যে সোনার হরিণের মতো, তার পেছনে রামু দৌড়ে চলে অবিরাম। অবশেষে ব্যর্থ ভগ্ন রামু তার পরিবারকে নিয়ে বস্তির উদ্দেশ্যে নিরুদ্দেশ যাত্রা করে, সঙ্গে করে নিয়ে যায় আশা আর বেঁচে থাকার স্বপ্নটাকে।
প্রথম সিনেমার জন্য এ ধরনের গল্পকে বেছে নেবার পেছনে খুব সম্ভবত ছিন্নমূল এর একটা প্রভাব ছিল। চল্লিশ দশকের মধ্যবিত্ত বাঙালির জীবনচিত্র, যুবসমাজের বেকারত্ব, প্রান্তিক জীবনের প্রেম-ভালোবাসা, শরণার্থী জীবনের দুঃখ-যন্ত্রণা, বিয়ের মেয়ে দেখার হীনম্মন্য প্রক্রিয়া, নাগরিক জীবনের অনিশ্চয়তা ইত্যাদি ফুটে ওঠে নাগরিক সিনেমাতে। নিজের প্রথম চলচ্চিত্র সম্পর্কে ঋত্বিক বলেন, ‘নাগরিকের চিত্রনাট্য ১৯৫০-৫১ সালের রচনা। তখনকার দিনে বাংলাদেশে (উভয় বঙ্গে) বাস্তববাদী ছবি মোটেও হতো না। সেদিক থেকে একটা ভালো বিষয় নিয়ে ছবি করার চেষ্টা করেছিলাম। চলচ্চিত্রটি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় বাংলার মধ্যবিত্তের জীবন যন্ত্রণার প্রথম বস্তুনিষ্ঠ শিল্পরূপ। এক টুকরো নিশ্চিন্ততার সন্ধানে দৃঢ় প্রত্যয় নাগরিকের জীবন পথপরিক্রমা এটির বিষয়বস্তু।
৪.
১৯৫৫ সালে ঋত্বিক তিনটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। আদিবাসী ওরাওঁ সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রা নিয়ে ওরাওঁ, বিহারের আদিবাসীদের জীবন নিয়ে আদিবাসীও কা জীভন গ্রোত, এবং বিহারের দর্শনীয় স্থানগুলো নিয়ে বিহার কি দর্শনীয় স্থান। বিহার থেকে ফিরে তিনি সুরমা দেবীকে বিয়ে করেন। তিনিও ছিলেন একজন থিয়েটার কর্মী এবং থিয়েটারের মাধ্যমেই তাদের পরিচয় হয়েছিল। এর কিছুদিন পর সলিল চৌধুরীর সাহায্যে ঋত্বিক বোম্বের ফিল্মিস্থান স্টুডিওতে একটি চাকরি নেন। প্রথমদিকে তিনি হৃষীকেশ মুখার্জির সঙ্গে থাকতেন এবং তাঁর পরিচালনায় নির্মিত মুসাফির (১৯৫৭) সিনেমার জন্য চিত্রনাট্য লেখেন। ঋত্বিকের জীবনে শ্রেষ্ঠ বাণিজ্যিক সাফল্য আসে তাঁর চিত্রনাট্য থেকে ১৯৫৮ সালে নির্মিত বিমল রায়ের মধুমতি সিনেমার মাধ্যমে। পুনর্জীবনের ধারণা নিয়ে তৈরি হওয়া প্রথমদিকের সিনেমার মধ্যে এটি একটি। পরবর্তীকালে তিনি আরও কিছু ছবির জন্য চিত্রনাট্য লেখেন যার মধ্যে রয়েছে স্বরলিপি (১৯৬০), কুমারী মন (১৯৬২), দ্বীপের নাম টিয়ারং (১৯৬৩), রাজকন্যা (১৯৬৫) ও হীরের প্রজাপতি (১৯৬৮)। প্রবন্ধ ও চিত্রনাট্য লেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও বোম্বের বাণিজ্যিক ধাঁচের সিনেমার জন্য নিয়মিত চিত্রনাট্য লেখার চাহিদার চাপ ঋত্বিকের জন্য অসহ্য হয়ে উঠছিল। তাই বোম্বের নিশ্চিত আয়ের চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে ঋত্বিক আবার ফিরে আসেন কলকাতায়।
ঋত্বিকের দ্বিতীয় ছবি অযান্ত্রিক মুক্তি পায় ১৯৫৮ সালে। সুবোধ ঘোষের একটি ছোটগল্প থেকে তিনি এটা নির্মাণ করেন। একজন মানুষ ও যন্ত্রের মধ্যে সৃষ্ট সম্পর্ক নিয়েই তৈরি এই সিনেমাটি। একটি ছোট্ট পাহাড়ি গ্রামের ট্যাক্সিচালক বিমল। এ জগতে আপন বলতে তাঁর আছে শুধু ১৯২০ সালের লক্কড়-ঝক্কড়মার্কা একটা পুরনো শেভ্রোলে ট্যাক্সি, যাকে সে আদর করে নাম দিয়েছে জগদ্দল। জগদ্দলকে সে যন্ত্র বলে মেনে নিতে নারাজ, তাই সে বলে, ‘জগদ্দলও যে একটা মানুষ, সেটা ওরা বোঝে না।’ জানা যায়, যে বছর বিমলের মা মারা যায়, সে বছর থেকেই জগদ্দল বিমলের সঙ্গে আছে। জগদ্দল যেন তাঁর মায়ের মত, অসময়ে-দুর্দিনে বিমলকে আগলে রাখে। কিন্তু যন্ত্রেরও দিন ফুরায় একদিন, মানুষের মতোই থেমে যায় তার হৃৎস্পন্দন। অসহায় বিমলের সামনে দিয়ে জগদ্দলকে ভেঙেচুরে ঠেলাগাড়িতে করে নিয়ে যায় লোহালক্কড় ব্যবসায়ীরা। এসময় ফ্রেমে গোরস্তানের ক্রুশ দেখিয়ে যেন যন্ত্রের শবযাত্রার কথাই বোঝাতে চেয়েছেন ঋত্বিক। আশা-ভরসাহীন বিমলের সামনে যখন হতাশার অন্ধকার, তখনই ঋত্বিক তার বৃত্ত সম্পূর্ণ করেন। বিমলকে অবাক করে দিয়ে একটি শিশুর হাতে ভাঙা গাড়িটার পরিত্যক্ত হর্নটি বেজে ওঠে। এই ঘটনাটি সামনে এগিয়ে যাবার প্রত্যয় ব্যক্ত করে, একটি নতুন শুরুর কথা ঘোষণা করে যেটা শেষ দৃশ্যে বিমলের অভিব্যক্তিতে সঞ্চারিত হয়।
ঋত্বিক এই সিনেমাতে জড়বস্তুকে একটি চরিত্র হিসেবে ব্যবহার করেন, এমন উদাহরণ এর আগে খুব বেশি নেই। ট্যাক্সি ড্রাইভার বিমলের যে চরিত্র ঋত্বিক নির্মাণ করেন তার সঙ্গে পরবর্তীতে মিল পাওয়া যায় সত্যজিৎ এর অভিযান (১৯৬২) সিনেমার ট্যাক্সিচালক নারা সিং ও মার্টিন স্করসেসির ট্যাক্সি ড্রাইভার (১৯৭৬) এর ট্রাভিস বিকেল চরিত্রের। অযান্ত্রিক ১৯৫৯ সালের ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয়। সেখানে ছবিটি দেখার অভিজ্ঞতা বিখ্যাত সমালোচক জর্জেস সাডৌল বর্ণনা করেন এভাবে, ‘অযান্ত্রিক কথাটার অর্থ কি? আমার জানা নেই এবং আমার বিশ্বাস ভেনিস ফেস্টিভ্যালের কারোরই এটা জানা ছিল না। আমি পুরো গল্পটাও বলতে পারব না, কারণ সেখানে কোনো সাবটাইটেল ছিল না। কিন্তু এতদসত্ত্বেও আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো শেষ পর্যন্ত সিনেমাটি দেখেছিলাম।’ সত্যজিৎ রায় এ ছবিটি দেখে ঋত্বিককে বলেছিলেন, ‘ঋত্বিকবাবু, সিনেমাটা সময় মতো রিলিজ করলে আপনি পথিকৃৎ হতেন।’
একই বছর ঋত্বিক মুক্তি দেন তার তৃতীয় চলচ্চিত্র বাড়ী থেকে পালিয়ে। মূল গল্প শিবরাম চক্রবর্তীর। ঋত্বিকের প্রতিটি ছবিতেই শিশু ও নারী চরিত্রগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। এবার তিনি গোটা সিনেমাটাই একজন শিশুর চোখ দিয়ে আমাদের দেখালেন। ছোট্ট ছেলে কাঞ্চন, চোখে এলডোরাডোর স্বপ্ন। বাবার ভয়ে ট্রেনে চড়ে পালিয়ে যায় কলকাতায়। বিভিন্ন ধরনের মানুষ দেখে তার স্বপ্নের সঙ্গে সেই নগরের কোনো মিল সে পায় না। চারিদিকে সে দেখে শুধু অভাব, হতাশা আর দুঃখ। এসবের কারণ বুঝতে না পেরে তাই চানাচুরওয়ালা হরিদাসের কাছে তার সরল জিজ্ঞাসা, ‘এ শহরে এত দুঃখ কেন?’। অবশেষে অভিজ্ঞতার ঝুলি ভরে এই নগরখাঁচা থেকে সে বাড়িতে ফিরে যায়। পথ চেয়ে থাকা বাবা-মা তাকে বরণ করে নেন পরম মমতায়। পরিবারের সঙ্গে কাঞ্চনের পুনর্মিলনের ফলেই ঋত্বিকের বৃত্ত পূর্ণ হয়।
৫.
১৯৫৯ সালে কত অজানারে নামের একটি সিনেমার কাজ অনেকদূর সম্পন্ন করেও অর্থনৈতিক কারণে সেটা আর শেষ করতে পারেননি ঋত্বিক। এর পরের বছর শক্তিপদ রাজগুরুর কাহিনী অবলম্বনে তিনি নির্মাণ করেন তার পরবর্তী চলচ্চিত্র মেঘে ঢাকা তারা। তাঁর পরিচালিত ছবিগুলোর মধ্যে এটিই ছিল সর্বাধিক ব্যবসাসফল। দেশভাগের পর পূর্ববঙ্গ থেকে চলে আসা এক রিফুজি পরিবারের জীবন সংগ্রাম এই সিনেমার মূল বিষয়। এই সিনেমার প্রোটাগনিস্ট নীতা, পরিবারের বড় মেয়ে। বাবা একটা স্কুলে পড়ান, মা গৃহিণী। বেকার বড় ভাই শঙ্কর বিখ্যাত গায়ক হবার স্বপ্নে বিভোর। ছোট বোন গীতা চায় স্বাচ্ছন্দ্য আর ছোট ভাই মন্টু নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছুই বোঝে না। পরিবারের মূল রোজগেরে সদস্য নীতা, অভাবের ভয়ে তাঁর মা তাকে বিয়ে দিতেও নারাজ। নীতা তবু স্বপ্ন দেখে তার প্রেমিক সনৎকে নিয়ে, বড় ভাই শঙ্করকে নিয়ে। ঘটনার পরম্পরায় নীতার বাবা শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন, প্রেমিক সনৎ বিয়ে করে ফেলে ছোট বোন গীতাকে, মন্টু কারখানায় অ্যাক্সিডেন্ট করে পড়ে থাকে হাসপাতালে। মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণায় নীতার জীবনীশক্তি ফুরিয়ে আসতে থাকে কিন্তু তবুও সে সংসারের হাল ছাড়ে না, রোগাক্রান্ত অবস্থায় নিজ বাড়িতেই স্বেচ্ছানির্বাসিত অবস্থায় বেঁচে থাকে নীতা। একদিন সংসারে সুখের দিন আসে, শঙ্কর বিখ্যাত গায়ক হয়ে ফেরে, বাড়িতে নতুন শিশুর আগমনের সংবাদ পাওয়া যায়। কিন্তু এই সুখের সময় নীতাকে কেউ মনে রাখে না, পরিবারের কাছে সে করুণার পাত্র হয়ে পড়ে। অবশেষে পাহাড়ের উপরে একটি হাসপাতালে নীতাকে ভর্তি করায় শঙ্কর। সেখানে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এসে নীতা চিৎকার করে শঙ্করকে জানায়, ‘দাদা, আমি কিন্তু বাঁচতে চেয়েছিলাম।’ পাহাড় থেকে পাহাড়ে ধ্বনিত হয় নীতার বেঁচে থাকার আকুতি। সিনেমার প্রথম দৃশ্যে নীতার স্যান্ডেল ছিঁড়ে যাওয়ার মতো শেষ দৃশ্যে অন্য একটি মেয়ের স্যান্ডেল ছিঁড়ে যাওয়া ঘটনাটি আবহমানতাকে প্রকাশ করে এবং ঋত্বিকের বৃত্ত সৃষ্টি সম্পন্ন হয়।
নীতা চরিত্রের মধ্যে দিয়ে ঋত্বিক মূলত বৃহত্তর বঙ্গদেশকেই বুঝাতে চেয়েছেন, বাঙালি সমাজ যাকে দেশভাগের মাধ্যমে বলি দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু হার না মানা ঋত্বিক তবু স্বপ্ন দেখান এক নতুন আরম্ভের। এক সাক্ষাতকারে ঋত্বিক বলেছিলেন, ‘মানুষের অবক্ষয় আমাকে আকর্ষণ করে। তার কারণ এর মধ্য দিয়ে আমি দেখি জীবনের গতিকে, স্বাস্থ্যকে। আমি বিশ্বাস করি জীবনের প্রবহমানতায়। আমার ছবির চরিত্ররা চিৎকার করে বলে আমাকে বাঁচতে দাও। মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও সে বাঁচতে চায়- এ তো মৃত্যু নয়, জীবনেরই জয় ঘোষণা।’
সিনেমার দর্শনের ব্যাপারে ঋত্বিক বলতেন, ‘সিনেমা কোনো গূঢ় ব্যাপার নয়। আমি মনে করি, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই সিনেমা নির্মাণ শুরু হয়। কারও যদি নিজস্ব কোনো দর্শন না থাকে, তার পক্ষে কোনো কিছু সৃষ্টি করা সম্ভব নয়’। ঋত্বিকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তাঁর সিনেমাগুলোতে স্পষ্ট, দেশভাগের ফলে শরণার্থী হবার যে যন্ত্রণা তাঁর মধ্যে ছিল সেটা তিনি নানাভাবেই প্রকাশ করতে চেয়েছেন। ঋত্বিকের নিজের ভাষায়, ‘বাংলা ভাগটাকে আমি কিছুতেই গ্রহণ করতে পারিনি – আজও পারি না। ইতিহাসে যা হয়ে গেছে তা পাল্টানো ভীষণ মুশকিল, সেটা আমার কাজও নয়। সাংস্কৃতিক মিলনের পথে যে বাধা, যে ছেদ, যার মধ্যে রাজনীতি-অর্থনীতি সবই এসে পড়ে, সেটাই আমাকে প্রচণ্ড ব্যথা দিয়েছিল।’
৬.
ঋত্বিক যে সাংস্কৃতিক মিলনের কথা বলেছেন সেটা তিনি চিত্রায়ণ করেছিলেন তাঁর পরের সিনেমাতে যার নাম কোমল গান্ধার। নির্মাণ করেছিলেন ১৯৬১ সালে। কোমল গান্ধার উত্তর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একটি রাগ বিশেষ। এই রাগের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ীই সিনেমার এই নামকরণ। এ ছবির মূল সুর দুই বাংলার মিলনের। আজীবন দেশভাগের যে যন্ত্রণা ঋত্বিককে সহ্য করতে হয়েছে এ যেন তারই নৈবেদ্য। একই পাড়ার নাটকদলের সদস্যরা বিভক্ত হয়ে দুইটি আলাদা দল গঠন করে। ‘দক্ষিণাপথ’ দলে আগত নতুন সদস্য অনুসূয়া এবং ‘নিরীক্ষা’ দলের ভৃগু এই সিনেমার প্রধান চরিত্র। তারা দুজনেই ছিন্নমূল, দেশভাগের ফলে পূর্ববঙ্গ থেকে বিতাড়িত। স্বপ্নভঙ্গ ও নতুন করে স্বপ্ন দেখা এই আশা-নিরাশার দোলাচলে ভৃগু ও অনুসূয়ার অবস্থানই চলচ্চিত্রের বিষয়। মুর্শিদাবাদের কাছে পদ্মার তীরের যে রেললাইনটা অবিভক্ত বাংলায় যোগচিহ্নের মতো ছিল সেটা এখন কেমন যেন বিয়োগ চিহ্ন হয়ে গেছে, সেখান থেকে দেশটা কেটে দু’টুকরো হয়ে গেছে। সেই সীমান্তে দাঁড়িয়ে ভৃগু-অনসূয়ার স্মৃতি রোমন্থন, কিন্তু বাস্তবতা হলো তাঁরা আর কোনোদিন সেখানে ফিরে যেতে পারবে না, ওটা বিদেশ। কোমল গান্ধার এর বাইরের ব্যাপারটা একটি নাট্য আন্দোলন হলেও এখানে প্রকৃত বিষয়টা অতীত ও বর্তমানকেই নির্দেশ করে। সাতচল্লিশের দেশভাগের প্রতীকী রূপ বহন করে কোমল গান্ধার। তাই শেষে দেখা যায় যে, যৌথ উদ্যোগে একটি নাটক মঞ্চস্থ করার চেষ্টা কিছু সুবিধাবাদী, ঈর্ষাতুর মানুষের চক্রান্তে ভেস্তে যায়। ঋত্বিকের ভাষায় যেভাবে সাংস্কৃতিক মিলনের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায় রাজনীতি-অর্থনীতির মতো বিষয়গুলো। কিন্তু আশাবাদী ঋত্বিক হাল ছাড়েন না। বহু বাধা-বিঘœ পেরিয়ে ভৃগু আর অনুসূয়ার মিলনের মাধ্যমে ঋত্বিক আমাদের একটা স্বপ্নময় আরম্ভে ফিরিয়ে নিয়ে যান।
কোমল গান্ধার যেমন সাংস্কৃতিক মিলনের কথা বলে, তেমনভাবে ঋত্বিকের পরের ছবি সুবর্ণরেখা বর্ণনা করে দেশভাগের কুফলসমূহ। ১৯৬২ সালে তৈরি হলেও মুক্তি পেয়েছিল ১৯৬৫ সালে। দেশভাগের ফলে ছিন্নমূল হয়ে কলকাতা চলে আসে ঈশ্বর ও তাঁর ছোট বোন সীতা, আরেক শরণার্থী হরপ্রসাদের মতোই আশ্রয় নেয় নবজীবন কলোনিতে। ছোট্ট সীতার চোখে নতুন বাড়ির স্বপ্ন। বোন সীতাকে যেন অভাবে মরতে না হয় এই কামনায় ঈশ্বর চাকরি নেয় সুবর্ণরেখা নদীর ধার ঘেঁষা ছাতিমপুরে। সেখানে সঙ্গে করে আরও নিয়ে যায় মা হারিয়ে যাওয়া ছোট্ট ছেলে অভিরামকে। বহু বছর কেটে যায়, ঈশ্বরের জীবনে অভাব কেটে যেতে থাকে, সীতা-অভিরাম বড় হয়। একটা সময় সীতা ও অভিরাম পরস্পরকে বিয়ে করতে চায়, কিন্তু জাতের পার্থক্যের কারণে বেঁকে বসে ঈশ্বর। তাই সীতা-অভিরাম পালিয়ে যায় কলকাতায়, তাদের ছেলে বিনুর জন্ম হয়। কিন্তু সীতার কপালে বেশিদিন সুখ সয় না, দুর্ঘটনায় মারা যায় অভিরাম। অনন্যোপায় সীতা পতিতাবৃত্তি বেছে নিতে বাধ্য হয়। আর ঘটনাক্রমে তাঁর প্রথম খদ্দের হিসেবে মাতাল অবস্থায় হাজির হয় বড় ভাই ঈশ্বর। আত্মহননের মাধ্যমে সীতার জীবনের সমাপ্তি ঘটে কিন্তু থেকে যায় ছেলে বিনু। তাকে সঙ্গে করেই আবার নতুন বাড়ির সন্ধানে যাত্রা শুরু হয় ঈশ্বরের, ঋত্বিকের বৃত্তরচনা সম্পন্ন হয়।
মেঘে ঢাকা তারা, কোমল গান্ধার ও সুবর্ণরেখা এই তিনটি সিনেমাকে একত্রে ‘পার্টিশন ট্রিলজী’ বা ‘দেশভাগ ত্রয়ী’ বলা হয়ে থাকে। তিনটি মুভিতেই রবীন্দ্রসঙ্গীতের একটি বড় ভূমিকা আছে। একটি সাক্ষাৎকারে ঋত্বিক বলছিলেন, ‘রবীন্দ্রনাথকে ছাড়া আমি কিছুই প্রকাশ করতে পারি না। আমার জন্মের অনেক আগেই তিনি আমার সমস্ত অনুভূতি জড়ো করে ফেলেছিলেন। তিনি আমাকে বুঝেছিলেন এবং সেসব লিখেও ফেলেছিলেন। আমি যখন তাঁর লেখা পড়ি তখন আমার মনে হয় যে সবকিছুই বলা হয়ে গেছে এবং নতুন করে আমার আর কিছুই বলার নেই।’
৭.
অযান্ত্রিক এর সময় থেকে ঋত্বিকের অল্প অল্প মদ্যপানের শুরু। সিনেমাগুলোর বাণিজ্যিক অসফলতার কারণে বাড়তে লাগল হতাশা আর সেই সঙ্গে মদ্যপানের মাত্রা। ১৯৬২ সালে বানালেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র সিজর্স, ১৯৬৩ সালে ডকুমেন্টরি ওস্তাদ আলাউদ্দীন খান। এই সময় বগলার বঙ্গদর্শন নামে একটি সিনেমার কাজ শুরু করলেও আর শেষ করতে পারেননি। কোমল গান্ধার ফ্লপ হওয়াটা ছিল কফিনের শেষ পেরেক। ১৯৬৫ সালের দিকে বাংলা মদ ধরলেন, এমনকি গোসল করাও ছেড়ে দিলেন। তাঁর এমন জীবনযাত্রার ফলে অতিষ্ঠ হয়ে তাঁর স্ত্রী ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যেতে বাধ্য হলেন। মদ্যপান নিয়ে একটা মজার ঘটনা প্রচলিত আছে। এক রাত্রে ঋত্বিক ফিরছেন, ঠিক হেঁটে ফেরার অবস্থায় নেই তখন আর। ট্যাক্সি, অগত্যা, পকেটে পয়সা না থাকা সত্ত্বেও।
‘ভাড়া, স্যার…’
‘আমার কাছে টাকা নেই। তুমি এক কাজ কর – এখান থেকে সোজা ১/১ বিশপ লেফ্রয় রোডে চলে যাও। সেখানে গিয়ে দেখবে, একটা ঢ্যাঙা লোক দরজা খুলবে। ওকে বোলো, ঋত্বিক ঘটক ট্যাক্সি করে ফিরেছে, সঙ্গে টাকা ছিল না। ও টাকা দিয়ে দেবে।’
সেই দীর্ঘকায় ব্যক্তি, যা শোনা যায়, সেইবার, এবং এরপর বার বার, ভাড়া মিটিয়ে দিয়েছিলেন। ঋত্বিক তাঁকে উত্ত্যক্ত করতেন, কিন্তু মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করতেন, ‘ভারতবর্ষে সব থেকে ঠিকঠাক ক্যামেরা বসাতে জানে ঐ ঢ্যাঙা লোকটাই।’ তারপর অবিশ্যি যোগ করতেন, ‘আর হ্যাঁ, আমি খানিকটা জানি।’
দীর্ঘকায় ব্যক্তিটি, যার মতে সিনেমার সম্ভাব্য কোনো বিষয় নিয়ে লিখতে বাদ রাখেননি ঋত্বিক, ছিলেন আরেক কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়।
৮.
১৯৬৬ সালে ঋত্বিক পুনের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে যোগ দেন এবং পরে ভাইস প্রিন্সিপাল হন। এখানে শিক্ষকতা করার সময় তিনি ফিয়ার ও রঁদেভূ নামের দুইটি সিনেমার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ঋত্বিক তার এই শিক্ষকতা জীবনকে চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের উপরেই স্থান দিয়েছেন। তাঁর ভাষ্য, ‘আমি মনে করি, আমার জীবনে যে সামান্য কয়েকটি ছবি করেছি সেগুলো যদি পাল্লার একদিকে রাখা হয়, আর মাস্টারি যদি আরেক দিকে রাখা হয় তবে মাস্টারিটাই ওজনে অনেক বেশি হবে। কারণ কাশ্মীর থেকে কেরালা, মাদ্রাজ থেকে আসাম পর্যন্ত সর্বত্র আমার ছাত্রছাত্রীরা আজকে ছড়িয়ে গেছে। তাদের জন্য আমি যে সামান্য অবদান রাখতে পেরেছি সেটা আমার নিজের সিনেমা বানানোর থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
এরপর ১৯৬৯ সালের দিকে অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় ঋত্বিককে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ব্যবসায়িক ব্যর্থতার কারণে এই সময়কালে কোনো পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে না পারলেও তিনি কিছু তথ্যচিত্র ও শর্টফিল্মের কাজ করেন। এর মধ্যে আছে সায়েন্টিস্টস্ অফ টুমরো (১৯৬৭), ইয়ে কিঁউ (১৯৭০), পুরুলিয়ার ছৌ নৃত্য নিয়ে পুরুলিয়ার ছৌ (১৯৭০), লেনিনের ১০০তম জন্মদিন উপলক্ষে আমার লেনিন (১৯৭০), বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে দুর্বার গতি পদ্মা (১৯৭১) এবং আরও পরে ভাস্কর রামকিঙ্কর বেইজকে নিয়ে তথ্যচিত্র রামকিঙ্কর (১৯৭৫, অসমাপ্ত)। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য সাহায্য সংগ্রহে ঋত্বিকের সক্রিয় অংশগ্রহণের কথাও শোনা যায়।
ঋত্বিক পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে ফিরে আসেন ১৯৭৩ সালে। একজন বাংলাদেশি প্রযোজকের প্রযোজনায় অদ্বৈত মল্লবর্মণের উপন্যাস থেকে তৈরি করেন তিতাস একটি নদীর নাম। তিতাস নদীপাড়ের জেলেদের জীবন নিয়ে এই সিনেমার গল্প। ছোটবেলা থেকেই কিশোর আর সুবলের পথ চেয়ে থাকে বাসন্তী। দূর গ্রামে গিয়ে রাজার ঝিকে বিয়ে করে কিশোর কিন্তু তাঁর অন্তঃসত্ত্বা বৌকে উঠিয়ে নিয়ে যায় ডাকাতের দল। বৌয়ের শোকে বদ্ধ পাগল হয়ে গ্রামে ফেরে কিশোর। বাসন্তী বিয়ে করে সুবলকে কিন্তু ঘটনাক্রমে সুবল মারা যায় বৌভাতের পরের দিন। দশ বছর পরে রাজার ঝি তাঁর অচেনা স্বামীর খোঁজে ছেলে অনন্তকে নিয়ে তিতাসের তীরে আসে। ঘটনার আবর্তে কিশোর আর রাজার ঝি দুইজনেই মারা যায়। অনাথ অনন্তের দায়িত্ব নেয় নিঃসঙ্গ বাসন্তী, কিন্তু সেও অনন্তকে ধরে রাখতে পারে না। এদিকে কিছু সুবিধাবাদী মানুষের ষড়যন্ত্রে মালো সমাজের একতা নষ্ট হয়ে যায়, তারা ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে। শুকিয়ে যেতে থাকে তিতাসের জল, জেলেদের উপর নেমে আসে চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়। নদী শুকিয়ে চর জেগে ওঠে, নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় মালোপাড়া। কিন্তু শেষ দৃশ্যে দেখা যায়, চরে গজিয়ে ওঠা নতুন ঘাসের মধ্যে দিয়ে ভেঁপু বাজাতে বাজাতে ছুটে আসছে একটি শিশু। নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখিয়ে সিনেমাটি শেষ হয়। ঋত্বিকের ভাষায়, ‘একটি সভ্যতাকে কি চিরতরে ধ্বংস করে ফেলা যায়? না, যায় না। এর শুধু রূপান্তর ঘটে। এটাই আমি এই ফিল্মের মাধ্যমে দেখাতে চেয়েছিলাম।’
৯.
একজন কম্যুনিস্ট হিসেবে ঋত্বিক তার সিনেমার মাধ্যমে সমাজের অরাজকতা আর অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন প্রতিনিয়ত। তাঁর কোনো ছবিতেই আমরা উচ্চবিত্তের গল্প দেখতে পাই না। তিনি চিরকাল বঞ্চিতজনের পাশে দাঁড়িয়েছেন, শোষিত মানুষের সমর্থনে উচ্চকণ্ঠ থেকেছেন। ক্রমাগত অসুস্থতা আর অতিরিক্ত মদ্যপানে শরীর ভেঙে পড়ার পরও তাই ঋত্বিক হাল ছাড়েন না। তাঁর সিনেমার চরিত্রগুলোর মতোই নতুন দিনের স্বপ্ন দেখেন। তিনি বলেন, ‘আমি আজও মরে যাইনি। আমি আজও হার স্বীকার করিনি। আমি নীরবে সে সুযোগের অপেক্ষায় আছি। আজ না পারি কাল, কাল না পারি পরশু প্রমাণ করে দেব। আজ আমি সংগ্রামী মানুষের পাশে এসে দাঁড়াবার ক্ষমতা রাখি। তাদের আমি ভুলে যাইনি। অভাব, অনটন, অপবাদ কিছুই আমাকে পথভ্রষ্ট করতে পারবে না তার জন্য যে মূল্যই দিতে হয় আমি প্রস্তুত।’
ঋত্বিকের এই জীবন দর্শনের প্রতিফলন তাঁর শেষ ছবি যুক্তি তক্কো আর গপ্পো। ১৯৭৪ সালে নির্মিত এই সিনেমাটি ঋত্বিকের আত্মজীবনীমূলক চলচ্চিত্র। মূল চরিত্র একজন মাতাল বুদ্ধিজীবী নীলকণ্ঠ বাগচী, যে তাঁর বন্ধুদের মতো সস্তা জনপ্রিয়তার লোভে নিজেকে বিক্রি করে দেয়নি। তাকে মদের নেশা থেকে ফেরাতে না পেরে তাঁর স্ত্রী দুর্গা ছেলে সত্যকে নিয়ে কাঞ্চনপুর নামের একটা জায়গায় শিক্ষিকার চাকরি নিয়ে চলে যায়। নীলকণ্ঠের সঙ্গে পরিচয় হয় যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা বঙ্গবালার। ঘরবাড়িহীন নীলকণ্ঠ আর তাঁর ছাত্র নচিকেতার সঙ্গী হয় বঙ্গবালা। তাঁরা তিনজন কলকাতা শহরের স্টেশনে, রাস্তায় ইতস্তত উদ্দেশ্যহীন সময় কাটাতে থাকে। পরিচয় হয় চাকরিসন্ধানী বৃদ্ধ জগন্নাথ ভট্টাচার্য এবং ছৌ নৃত্যের নামকরা পঞ্চানন ওস্তাদের সঙ্গে, কিন্তু তাদের জীবনেও শুধু হাহাকার। অবশেষে নীলকণ্ঠ কাঞ্চনপুরে তার স্ত্রীর কাছে যাওয়ার জন্য পদব্রজে রওনা হয়, জীবনের নকশাটাকে পাল্টাতে চায়। কাঞ্চনপুর পৌঁছাবার পরে নীলকণ্ঠ তাঁর স্ত্রীকে এই সিদ্ধান্ত জানায় এবং পরদিন সকালে প্রথম সূর্যের আলোয় তাঁর ছেলে সত্যের মুখ দেখে সেই যাত্রা শুরু করার আশা ব্যক্ত করে। কাছের শালবনে কিছু নকশাল ছেলেদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। পরদিন সকালে তাদের উপরে পুলিশ আক্রমণ করলে অতর্কিত গুলি লেগে মারা যায় নীলকণ্ঠ। মৃত্যুর পূর্বে স্ত্রীকে মনে করিয়ে দিয়ে যায় মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মদন তাঁতির কথা, নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য যে তাঁতি সমাজের সঙ্গে বেঈমানি করেনি, ভুবন মহাজনের টাকায় যে তাঁত চালায়নি। শেষ দৃশ্যে নীলকণ্ঠের বয়ে নিয়ে যাওয়া লাশের পেছনে সবার হেঁটে চলার মাধ্যমে ঋত্বিক যেন নীলকণ্ঠের সেই কাক্সিক্ষত যাত্রারই সূচনা করেন।
নীলকণ্ঠ চরিত্রে অভিনয় করেন ঋত্বিক স্বয়ং। সিনেমাটি ঋত্বিকের আত্মজীবনীমূলক হলেও এটা ১৯৪৭ এর দেশভাগ, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ আর নকশালবাড়ি আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে সময়ের একটি নির্মোহ-নির্মম সমালোচনাও বটে। এ ছবিতে ব্যবহৃত সঙ্গীত দুই বাংলার প্রতিনিধিত্ব করেছে। তাই আমরা রবীন্দ্রনাথের গান যেমন পাই তেমনি দেখি বাউল গানের ব্যবহার। এছাড়া পুরুলিয়ার ছৌ নৃত্যের অসাধারণ চিত্রায়ণ সংস্কৃতির একটা দিককে তুলে ধরে। সুবর্ণরেখাতে যেমন বাড়িতে ফেরার তাগিদ দেখা যায়, এই সিনেমাতেও তেমন রাজনৈতিক অশান্তি ও সাংস্কৃতিক বিভাজন পার হয়ে একটি স্থিতিবস্থায় ফেরার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। বর্তমান অস্থিতিশীল অবস্থায় তাই ঋত্বিক বার বার নীলকণ্ঠের মুখ দিয়ে বলিয়ে নেন উইলিয়াম ব্লেকের ‘দ্যা টাইগার’ কবিতা থেকে অনুপ্রাণিত কিন্তু কিঞ্চিৎ পরিবর্তিত সংলাপ, ‘আমি পুড়ছি, ব্রহ্মাণ্ড পুড়ছে, সব পুড়ছে।’
১০.
তিতাস একটি নদীর নাম ফিল্মের শুটিং করার সময় যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এছাড়া মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানে তাঁর জীবনীশক্তি দ্রুত ফুরিয়ে আসে। ঋত্বিক ঘটক মারা যান ১৯৭৬ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি, কলকাতায়। তাঁর মৃত্যু সংবাদে সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, ‘হৃদয়ে ও আত্মায় ঋত্বিক ছিলেন একজন আপাদমস্তক বাঙালি পরিচালক, তিনি ছিলেন আমার থেকেও বৃহত্তর বাঙালি।’
চল্লিশ দশকের শেষভাগ থেকে সত্তর দশকের শুরু পর্যন্ত বাংলার উত্তাল সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঋত্বিকের সিনেমাগুলোতে প্রতিনিয়ত ফুটে ওঠে। ঋত্বিকের জীবদ্দশায় তিনি দুইবার বাংলাকে ভাগ হতে দেখেছিলেন ১৯৪৭ সালের ব্্িরটিশ সরকারের চাপিয়ে দেয়া দেশভাগ এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ। নিজের সিনেমাগুলোতে তিনি সমালোচনার দৃষ্টিতে ব্যক্তি পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত দেশভাগ পরবর্তী বাংলার পরিচয়কে বারংবার প্রশ্নবিদ্ধ করেন। ১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্মের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এতসব রাজনৈতিক বিভক্তি ও সীমানা ভাগাভাগির মধ্যেও তাঁর সিনেমাগুলোর মাধ্যমে আজীবন বাংলাদেশের একটি সাংস্কৃতিক পরিচয়ের সন্ধান করে গেছেন।
ঋত্বিক ছিলেন সিনেমার বিপ্লবী। সিনেমা বানানো তাঁর কাছে শুধু শিল্প ছিল না, ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের এবং দুঃখী মানুষের প্রতি তাঁর সমর্থন প্রকাশের মাধ্যম। রঙিন কোনো অবাস্তব চমক তিনি দেখাতে চাননি, বরং নিজের চোখে যা প্রত্যক্ষ করেছেন সেটাই দর্শককে দেখাতে চেয়েছেন। নিজে ভেবেছেন, আমাদেরও ভাবাতে চেয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনে অভাব-অনটন, ঝড়-ঝঞ্ঝা ছিল, কিন্তু তিনি নিজের দর্শনের সঙ্গে আমৃত্যু আপস করেননি। কাজের স্বীকৃতি সীমিত হলেও তিনি তাঁর সৃষ্টির তাড়না থেকে বিচ্যুত হননি কখনও। স্ত্রী সুরমা ঘটককে তিনি বলতেন, ‘লক্ষ্মী, টাকাটা তো থাকবে না, কাজটা থাকবে। তুমি দেখে নিও আমি মারা যাওয়ার পর সব্বাই আমাকে বুঝবে।’ আজ আমরা জানি, ঋত্বিক ঘটক ভুল বলেননি।
http://canadiandrugs.store/# is canadian pharmacy legit
safe online pharmacy Top mail order pharmacies canadian meds without a script
pharmacies in mexico that ship to usa: mexican pharmacy online – buying prescription drugs in mexico
Pretty! This was a really wonderful post. Thank you for providing this info.
prescription price checker: buy drugs online safely – canada prescription drugs
https://canadiandrugs.store/# canadian pharmacy meds review
buying prescription drugs in mexico: mexican medicine – mexican online pharmacies prescription drugs
WOW just what I was searching for. Came here by searching for %keyword%
Online medicine order: india pharmacy mail order – india pharmacy mail order
canada cloud pharmacy canada pharmacy online recommended canadian pharmacies
http://indiapharmacy.site/# Online medicine order
canadian drug store prices: online pharmacy usa – mexican pharmacy list
Thank you for some other great article. Where else may just anyone get that kind of information in such a perfect method of writing? I have a presentation next week, and I am at the look for such information.
https://claritin.icu/# generic ventolin
Paxlovid buy online: cheap paxlovid online – paxlovid pharmacy
https://clomid.club/# buying cheap clomid without insurance
how to buy wellbutrin over the counter: generic for wellbutrin – purchase wellbutrin xl
http://paxlovid.club/# paxlovid pharmacy
order wellbutrin sr online: Buy Wellbutrin XL 300 mg online – buy wellbutrin xl
Hello! I could have sworn I’ve been to this site before but after reading through some of the post I realized it’s new to me. Nonetheless, I’m definitely glad I found it and I’ll be bookmarking and checking back often!
paxlovid covid https://paxlovid.club/# paxlovid price
https://gabapentin.life/# drug neurontin 200 mg
ventolin prescription australia: buy Ventolin inhaler – ventolin mexico
http://paxlovid.club/# п»їpaxlovid
neurontin brand name 800mg best price: cheap gabapentin – neurontin 200 mg price
https://clomid.club/# where to get clomid without dr prescription
can i order generic clomid online: clomid best price – cheap clomid without rx
https://wellbutrin.rest/# wellbutrin 75 mg cost
acquistare farmaci senza ricetta Avanafil farmaco farmacie on line spedizione gratuita
farmacie online autorizzate elenco: Farmacie a milano che vendono cialis senza ricetta – farmacia online migliore
https://kamagrait.club/# farmacie online affidabili
farmacia online più conveniente: farmacia online miglior prezzo – migliori farmacie online 2023
acquisto farmaci con ricetta: kamagra – farmacia online senza ricetta
I am actually thankful to the owner of this web site who has shared this wonderful post at here.
farmacia online migliore kamagra gel prezzo comprare farmaci online con ricetta
https://kamagrait.club/# farmacie online sicure
farmacia online piГ№ conveniente: farmacia online miglior prezzo – farmacie online sicure
п»їfarmacia online migliore farmacia online spedizione gratuita farmaci senza ricetta elenco
acquisto farmaci con ricetta: kamagra oral jelly – comprare farmaci online con ricetta
http://avanafilit.icu/# farmacia online piГ№ conveniente
farmacie on line spedizione gratuita: Farmacie che vendono Cialis senza ricetta – farmacia online più conveniente
comprare farmaci online con ricetta kamagra oral jelly consegna 24 ore farmaci senza ricetta elenco
acquisto farmaci con ricetta: kamagra – comprare farmaci online con ricetta
comprare farmaci online con ricetta: kamagra – migliori farmacie online 2023
I used to be recommended this website by way of my cousin. I am not positive whether this submit is written via him as no one else realize such designated approximately my problem. You are amazing! Thank you!
https://avanafilit.icu/# farmaci senza ricetta elenco