উৎকৃষ্ট কবিতা বিষয়ে আত্মকথন

আমিনুল ইসলাম

কবিতা নানা রকমের হয়। তবে কবিতাকে উৎকৃষ্ট হতে হলে কতগুলো সাধারণ চাহিদা মেটাতে হয় যেসব না হলে কবিতার আবেদন বেশিদিন থাকে না। উৎকৃষ্ট কবিতাকে আকাশের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। আকাশ কখনো মনোরম, কখনোবা ভয়ংকর। কখনো অপরিসীম নীলের বাগান; কখনো মেঘে ঘনঘটায় আকীর্ণ। কখনো প্রখর তাপে ঝলসিত শূন্যতা; কখনোবা শারদীয় স্নিগ্ধতায় মনোরম ঘুড়ি ওড়ানোর প্রাঙ্গণ। কখনো তারাভরা রাতের ঝিকিমিকি; কখনোবা ধূসরতার আবছায়া। কখনো পূর্ণিমায় ধোয়া রূপকথার রাজ্য, কখনোবা অন্ধকারে ভরা ভয়ের সাম্রাজ্য। কবিতা অনেকটা তেমনি। কবিতারও নানারূপ। কবিতা নানারকম। আবার একই কবিতার শরীরে নানারূপ থাকতে পারে। কবিতা কে বনভূমির সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। প্রাণে আর বৈচিত্র্যে ভরপর কবিতা। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে কিছু পাতা ঝরে যায়, কিছু গাছের মৃত্যু ঘটে কিন্ত তারপরও বনভূমি সবুজ প্রাণময়তা ধরে থাকে। ধরে রাখে রহস্যের গহনতা এবং সৌন্দর্যের বাহার।
উৎকৃষ্ট কবিতার প্রথম ও প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সৃষ্টি হিসেবে তা হবে প্রাণবন্ত। কবিতার প্রাণ থাকতেই হবে। কবিতা শুধু শব্দের ইমারত নয়। শুধু প্রকরণ-চাতুর্য কবিতা নয়। প্রকৃত কবিতার গুণ হচ্ছে তা পাঠকের আবেগ-অনুভূতি-সুখানুভূতি-দুঃখবোধ-রাগ-ক্ষোভ-উল্লাসকে ছুঁয়ে যাবে নিবিড়ভাবে এবং গভীরভাবে। আর সেজন্য কবিতাকে হতে হবে প্রাণরসে সমৃদ্ধ। বুদ্ধিমত্তার হাতে গাথা নীরস শব্দমালা মনে ধাঁধার সৃষ্টি করে কিন্তু তা পাঠকের মন ছুঁয়ে যেতে পারে না। যে-সৃষ্টি নিজেই প্রাণহীন, সে তো পাঠকের প্রাণকে স্পর্শ করতে পারবে না কখনোই। একারণে কবিতায় কল্পনা, বুদ্ধি, জ্ঞান, প্রকরণ-সচেতনতার সঙ্গে প্রয়োজন হৃদয়ের দান। যে-কবিতায় কবির হৃদয়ের বিনিয়োগ নেই, তা উৎকৃষ্ট কবিতায় উন্নীত হতে অসমর্থ। তাই উৎকৃষ্ট কবিতায় কম বা বেশি রোমান্টিক মনের ছোঁয়া ও ছায়া থাকে, তা সে কবিতা রোমান্টিক হউক, আধুনিক হউক, অথবা হউক উত্তরাধুনিক। প্রখ্যাত শিল্পী বশীর আহমদ গীত একটি গানের স্থায়ী হচ্ছে,
‘‘ সুরের বাঁধনে তুমি যতই কণ্ঠ সাধো / তাকে আমি বলবো না গান / সে তো শুধু নিষ্প্রাণ সা রে গা মা পা ধা নি সা / নেই তাতে হৃদয়ের দান।’’
অনুরূপভাবে শব্দের বাঁধনে আর প্রকরণ-কৌশলে যা-ই রচিত হউক, তা প্রকৃত কবিতা হবে না যদি তাতে না থাকে হৃদয়ের দান।
শক্তিমান কবি হোন অনেক রকমের কবিতা এবং অনেক কবিতার স্রষ্টা। তার কবিতার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হতে পারে প্রকৃতিলগ্নতা। প্রকৃতি মানে অফুরন্ত প্রাণের উৎস, অনিঃশেষ সজীবতার ভান্ডার। একজন শক্তিমান কবির কবিতা প্রকৃতির মতই সচ্ছল ও প্রাণবন্ত। তার কবিতা আকাশে উড়ে যেতে চায়। উড়ে যায়। বাতাসে ভেসে বেড়ায়। স্রোতে ভাসে। কিন্তু মৃত্তিকার সাথে সম্পর্কেও টানে ফিরে আসে মাটির উঠোনে। আবার একবিংশ শতাব্দীর একজন কবির কবিতা সরাসরি প্রকৃতিঘেঁষা নাও হতে পারে। কারণ, তিনি একবিংশ শতাব্দীর কবি। তার কবি কবিতা সে অর্থে প্রকৃতির প্রতিচ্ছবি নয়। জটিল জীবনের নানাদিক ফুটিয়ে তুলতে তিনি প্রকৃতির অনুষঙ্গ ব্যবহার করেন। আধুনিক মানুষ হিসেবে তার মানসিক পরিভ্রমণ এবং কাব্যিক যাত্রা হতে পারে বিশ্বময়। অধিকন্তু, বিশ্বায়ন ও আকাশ মিডিয়া তাকে নিয়ে যায় পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আর প্রান্ত; মাটি ছেড়ে উড়ে যায় তার মন নক্ষত্রলোকে; আকাশের নীলিমায়। আবার আপন ভূগোল ও মৃত্তিকার টানে বারবার ফিরে আসে মাটিতে। মাটির সঙ্গে সম্পর্কহীন কোনো সৃষ্টির আবেদন স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ, মাটির মানুষের রুচি ও সৌন্দর্যচেতনার ওপর মাটির প্রভাব কোনো না কোনোভাবে শেষ পর্যন্ত থেকেই যায়। উৎকৃষ্ট কবিতা এক ডানাওয়ালা বৃক্ষ।
বৃক্ষের শেকড়ে অন্তহীন ইলাস্টিসিটি
সে পেয়েছে স্বাধীনতার অবাধ আকাশ
অথচ বিচ্ছিন্নতার উস্কানি নেই ডগায়।
অদ্ভুত এই বৃক্ষের ডানায় শেকলছেঁড়া-জোর
কিন্তু রসসঞ্চারী ওই জড়গুলো ছিন্ন হওয়ার নয়।
তাই জলমাটির শিথিলবাঁধনে বারবার ফিরে আসা ।
প্রকৃত কবি নিবিড়ভাবে সংবেদনশীল। তার বসবাস যেখানেই হোক , তার অন্তরে ও অনুভবে নিবিড় ছোঁয়া দিয়ে যায় প্রকৃতি। মাটিলগ্ন ও প্রকৃতিঘেঁষা হওয়ায় তার কবিতায় প্রকৃতি আসে ঘুরেফিরে। আধুনিক নাগরিক বিষয় হোক, কিংবা বিজ্ঞানসংশ্লিষ্ট বিষয় হোক, অথবা হোক– রাজনীতি বা প্রেম, প্রকৃতির অনুষঙ্গ যোগে তিনি তাকে কবিতা করে তোলেন। ফলে তার কবিতা অত্যাধুনিক হয়েও প্রকৃতির সবুজ সচ্ছলতায় ঋদ্ধ হয়ে ওঠে। মাটির সোঁদাগন্ধ শরীরে নিয়েই তার কবিতা ডানা মেলে বাতাসে কিংবা উড়ে চলে আকাশের উঠোনে। তার কবিতায় মানুষ ও প্রকৃতি একাকার হয়ে ওঠে। তার একটি প্রেমের কবিতাÑ অর্ধেকটা প্রেমের, অর্ধেকটা প্রকৃতির; তার একটি রাজনীতির কবিতা– অর্ধেকটা রাজনীতির , বাকিটা প্রকৃতি ও পরিহাসের। একজন অত্যাধুনিক শহরের মানুষ আধুনিক জীবনের সরঞ্জামাদি ব্যবহার করেও প্রকৃতি থেকে সম্পূর্ণ বিছিন্ন থাকতে পারেন না। মাঝে মাঝে হলেও তাকে সমুদ্রে যেতে হয়; আকাশের মেঘের দিকে তাকাতে হয়; বনভোজনে গিয়ে সবুজ গাছপালার স্পর্শ নিতে হয়। আধুনিক কিংবা উত্তরাধুনিক কিংবা নাগরিক কবিতার শরীরপ্রাণেও নানাভাবে নানারূপে এবং নানামাত্রায় প্রকৃতির উপাদান ও উপকরণ জড়িয়ে থাকে। প্রকৃতি কখনো যোগান দেয় প্রাণরস, কখনোবা সৌন্দর্যের অলংকার। তাই আধুনিক সময়ের কবির মন বিশ্বময় ঘুরে বেড়ালেও শেষ পর্যন্ত ফিরে আসে মাটির উঠোনে, আপন শেকড়ের কাছে। তিনি প্রকৃতির বন্দনাভাষ্য রচেন না বটে; তবে তার সৃষ্টি পুষ্ট হয়ে ওঠে মাটির মমতারসে। একজন শক্তিমান কবির কবিতায় প্রকৃতি-সংশ্লিষ্টতা একটি মুখ্য বিবেচনা হিসেবেই চোখে পড়ে।
শিল্পের দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যেতে পারে– কবিতা হচ্ছে সুন্দর করে কথা বলা; কোনোকিছুকে নান্দনিক সৌন্দর্যে উপস্থাপন করা। রোমান্টিক কবিগণ পৃথিবীর সুন্দর সুন্দর জিনিস– চাঁদ, ফুল, পাখি, সূর্যাস্তের লালিমা, প্রভাতের রক্তাভা, শেষবিকেলের সোনালি দিগন্ত– প্রভৃতির স্তুতি রচনা করে এসেছেন মুগ্ধ ভাষায়। সুন্দরের গায়ে যোগ করেছেন আর সৌন্দর্য। আধুনিক কবিগণ জীবনের নেতিবাচক ও প্রথাগতভাবে অসুন্দর দিকগুলোরও মহিমা রচেছেন অভূতপূর্ব ভাবনায় ও ভালোবাসায়। উপস্থাপনার শৈল্পিক সৌন্দর্য লেগেছে নেতিবাচক ও অসুন্দর বিষয়সমূহের গায়ে। পাঠকের কাছে সেসবের জন্য সৃষ্ট হয়েছে অভিনব আবেদন । আধুনিক কবির হাতে ‘নষ্ট নারীরা’ হয়ে উঠেছে ‘আলোকিত গণিকাবৃন্দ’ (শহীদ কাদরী) ; জীবনের ক্লেদগ্লানি হয়েছে ‘কুসুম’ বা ‘ক্লেদজ কুসুম’(শার্ল বোদলেয়ার); আধুনিক জীবনের পক্ষে কবি বলে উঠেছেন,‘ধর্ম-গাধার পৃষ্ঠে এখানে শূন্য পুণ্য-ছালা।’ (কাজী নজরুল ইসলাম); তার কাছে কাকের চোখদুটো হয়েছে, ‘বিয়ারের ফোঁটা’ (আল মাহমুদ) এবং কাক হয়েছে,‘বিমর্ষ বিটনিক’(আল মাহমুদ)। চুপিসারে জেলপ্রকোষ্ঠে চলাচলকারী কুৎসিত কালো বিড়াল কবির ভাবনায় ও উপস্থাপনায় হয়ে উঠেছে প্রিয়ার মতো সুন্দরী ও আকর্ষণীয়া:
‘‘যেন শত বৎসরের অতিদূরে ব্যবধান ঠেলে
এসেছে নাগরী এক গাত্রবর্ণ পাল্টে নিয়ে তার
ঘাঘরা, জুতোর ফিতে, আর গূঢ় দড়ি খুলে ফেলে
কালোপড়ে নীলাম্বরী মেলে দেয় দারুণ বাহার।’’
(কবি ও কালো বিড়ালিনী/আল মাহমুদ)।
সৌন্দর্য সৃষ্টি করা গেলে কবিতার অর্থ নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলে। আকাশের নীলিমা কি অর্থ ধারণ করে এই নিয়ে ভাবে না কেউ; বরং সেই নীল সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে দুচোখ জুড়িয়ে নিতে ভালোবাসে। সৌন্দর্যের নিজস্ব ভাষা আছে। যে সুন্দর, যা সুন্দর, তার কথা না বললেও চলে। কোনো কথা না বলেও সে বহুকথা বলতে পারে। নিঃশব্দ তাজমহল কত কথাই তো বলে যায়! তা শোনে প্রেমিক-প্রেমিকার হৃদয়। তাই তো সুন্দরের জন্য এত সাধনা। তাই তো পৃথিবীব্যাপী এত এত কসমেটিক কোম্পানি! এত এত বিউটি পার্লার! কবিতাও মাঝে মাঝে তেমন সৃষ্টি হয়ে ওঠে শক্তিমান কবির হাতে। প্রথাগত পন্থায় হোক কিংবা অভিনবত্বে হোক– সৌন্দর্য সৃষ্টি একটি মুখ্য বিষয়। যিনি সৌন্দর্য সৃষ্টি করতে অপারগ, তিনি কবি নন, শিল্পী নন। একটি কবিতার মাঝে একটু নান্দনিক সৌন্দর্য সৃষ্টি করা গেলে সেই সৌন্দর্যটুকই পুরো কবিতাটিকে উৎরে দিতে পারে। সৌন্দর্যের জয় সর্বত্র এবং সবসময়। এ সৌন্দর্য রচিত হয় শব্দে, কথায়, উপমায়, চিত্রকল্পে, উৎপ্রেক্ষায় এবং কল্পচিত্রে। এ সৌন্দর্য কখনো মূর্ত, কখনো বিমূর্ত, কখনোবা দুটোর সংমিশ্রণ।
কবিতায় সৌন্দর্য সৃষ্টির কাজটি মূলত করে থাকে চিত্র এবং চিত্রকল্প । চিত্র মূলত চেয়ে দেখার জিনিস। যেমন আমরা মাঠ দেখি, ঘাট দেখি, নদী দেখি। চিত্র একবার দেখলেই তা সম্পূর্ণ দেখা হয়ে যেতে পারে। আবার তা বারবার দেখেও না ফুরাতে পারে। নদীকে আমরা দেখি। কিন্তু তাকে দেখা কখনো ফুরোয় না। ‘ আকাশে হেলান দিয়ে আলসে পাহাড় ঘুমায় ’(কাজী নজরুল ইসলাম) অথবা ‘‘হেমন্ত-গায় হেলান দিয়ে গো রৌদ্র পোহায় শীত।’’(কাজী নজরুল ইসলাম), কিংবা ‘ শুয়েছে ভোরের রোদ ধানের উপরে মাথা পেতে/অলস গেঁয়োর মতো এইখানে কার্তিকের ক্ষেতে ’ (অবসরের গান/জীবনানন্দ দাশ) চরণগুলোতে ফুটে ওঠা প্রকৃতির ছবিকে শুধু ছবি বলে মনে হয় না; মনে হয় এর মধ্যে লুক্কায়িত রয়েছে প্রাণের প্রতিচ্ছবি। মনে হয় এসব প্রকৃতিলগ্ন চরণ জীবনকে প্রতীকায়িত করতে চায় কিছুটা দূরে থেকে। এসব ছবির মধ্যে ছবি আছে, প্রাণ আছে, স্রোত আছে, আনন্দের উচ্ছ্বলতা আছে, বেদনার রঙ আছে, অনুভূতিশূন্য ঔদাসীন্য আছে। চিৎকার আছে, বোবাকান্না আছে। আলো আছে, অন্ধকার আছে। প্রকাশ আছে, আড়াল আছে। তৃপ্তির ঢেঁকুরের গন্ধ আছে, হতাশার দীর্ঘশ্বাস আছে। পরিহাস আছে, স্যাটায়ার আছে। শক্তিমান কবির হাতে শব্দের আঁচড়ে আঁকা ছবি শুধু দুচোখ ভরে দেখার বিষয় নয়, একইসঙ্গে তা অনুভবের বিষয়, কল্পনা দিয়ে ছুঁয়ে দেখার বিষয়। সেভাবে দেখা গলে এবং দেখতে পারা গেলে ছবি শুধু ছবি থাকে না; মনে হয়, “ছবি যেন শুধু ছবি নয়।”
বাস্তবের ছবি এবং কবিমনের কল্পনাÑদুয়ের যোগ হচ্ছে চিত্রকল্প। চিত্রকল্প হচ্ছে চিত্র যোগ চিত্রের মধ্যে লুকিয়ে থাকা মেসেজ। সেটা সুনির্দিষ্ট কোনো মেসেজ হতে পারে, আবার তা নানাবিধ অর্থও ধারণ করতে পারে। আমরা আকাশের দিকে তাকিয়ে আকাশ দেখি। সে আকাশ এক একজনের কাছে এক এক অর্থ বা সৌন্দর্য প্রকাশ করে থাকে। কোনোটাই চূড়ান্ত সত্য নয়, কোনোটাই মিথ্যা নয়। একজন শক্তিমান কবি কবিতায় এমনসব চিত্র ও চিত্রকল্প তৈরী করতে পারেন– যেসব বারবার দেখেও দেখা শেষ হয় না, বারবার বুঝেও তা সম্পূর্ণরূপে জানা হয়ে যায় না। আকাশের মতো, নদীর মতো, সমুদ্রের মতো– তা পাঠকের জন্য অনিঃশেষ সৌন্দর্য, আকর্ষণ ও অর্থব্যঞ্জনার ইঙ্গিৎ ধারণ করে রাখে। চিত্রকল্প মানে হচ্ছে ছবির ভেতর ছবি, আকাশের ওপারে আকাশ; চিত্রকল্প মানে হচ্ছে ভিড়ের ভেতর নৈঃসঙ্গ, রঙের মধ্যে অনুভূতি; চিত্রকল্প মানে বৃক্ষের ছবিতে বেদনার ডালপালা। চিত্রকল্প যা দেখায় তা সত্য, যা লুকিয়ে রেখে ইঙ্গিৎ করে তা বৃহত্তর সত্য। চিত্রকল্পের মধ্যে শরীরের ভাষা থাকে; একইসাথে থাকে না-বলা কথার অভিব্যক্তি। চিত্রকল্প প্রতীক নয়, তবে কখনো কখনো প্রতীকের ভাষাও ফুটে ওঠে চিত্রকল্পের অধরে।
‘‘দীনেশচন্দ্রের হাতে কুড়িয়ে নিচ্ছি
পউষের রোদমাখা দিন
হাস্নাহেনাশাসিত সাঁঝ
আর চুম্বনখচিত বটতলার জোছনা
শুকনোফুলের গন্ধমাখা একটি চৈত্রদুপুরের কংকাল
এবং তার পায়ের কাছে প্রস্তরীভূত
শ্রাবণরাতের একগুচ্ছ মেঘ
পড়ে আছে যেন কারও করস্পর্শের প্রত্যাশায়!
আর হাওয়ায় ওড়ে
শিমুলতুলার মতো একজোড়া গ্রন্থিচ্যুত মন।’’
একটি উৎকৃষ্ট কবিতার আবেদন এমন হয় যে– তা কালকে ধারণ করে কালকে অতিক্রম করে যায়; একটি নির্দিষ্ট ভূগোলে জন্মলাভ করেও সে আন্তঃভৌগোলিক সত্তা হয়ে ওঠে। তার ভেতরে থাকে খাপ খাওয়ে নেয়ার ক্ষমতা, আত্ম-নবায়নের ঐশ্বর্য। সেটাই প্রকৃত সৃষ্টি যা নিজেকে নবায়ন করে নিতে পারে। নবায়নযোগ্যতা না থাকলে একটি সুন্দর জিনিস বা সৃষ্টির কিছুদিন পর তার আকর্ষণ-ক্ষমতা হারিয়ে নিরানন্দ অস্তিত্ব হয়ে ওঠে। মানুষ পুরাতন হতে চায় না, বুড়িয়ে যেতে চায় না। সৌন্দর্যসচেতন মানুষ পোশাক-পরিচ্ছদ আর অলংকারে নিজেকে নতুন সৌন্দর্যে সাজিয়ে নিয়ে চলে আজীবন। বয়স হয়, শীরে বয়সের ছাপ পড়ে, কিন্তু সেসবকে অতিক্রম করতে চলে নানাবিধ ও নিত্য নতুন কৌশল এবং নেয়া হয় সাজসজ্জার সাহায্য । কবিতা-নাটক-উপন্যাস-চিত্রশিল্প-ভাস্কর্য এসবই পুরাতন জিনিস। কিন্তু যুগে যুগে শক্তিমান নতুন কবি-নাট্যকার-উপন্যাসিক-শিল্পী-ভাস্কর নতুন আইডিয়া এবং সৌন্দর্য সহযোগে নতুন সৃষ্টি উপহার দেন। আকাশে যেমন নতুন চাঁদ ওঠে, নদীতে যেমন নতুন জোয়ার আসে, বসন্ত যেমন নতুন ফুল ফোটে, তেমনিভাবে আমরা পাই নতুন কবিতা-উপন্যাস-নাটক-চিত্রকর্ম-ভাস্কর্য-সিনেমা-সংগীত। বিষয় তো প্রায় অপরিবর্তিত– প্রেম, ভালোবাসা, প্রকৃতি, বন্ধুত্ব, ঘৃণা, বিশ্বাসঘাতকতা, বিশ্বস্ততা, আনন্দ, বেদনা, বিরহ আর মিলন। সেইসব পুরাতন জিনিস বা বিষয়কে তারা নতুন আঙ্গিকে, নতুন রূপে, নতুন রসে ও প্রাণে উপহার দেন। শব্দের ব্যবহার, উপমা-চিত্রকল্প-কল্পচিত্র-উৎপ্রেক্ষার অভিনবত্ব এবং বলার ভঙ্গি পুরাতনকে নতুন করে তোলার কাজ করে থাকে। আকাশের মতো, নদীর মতো, সমুদ্র-সৈকতের মতো, চাঁদনীরাতের মতো, বনভূমির মতো সেসব সৃষ্টি নতুন সৌন্দর্য ও আকর্ষণ নিয়ে পাঠকের মনের দ্বারে কড়া নাড়ে। তার মনে ‘‘তুমি কেমন কনে গান করো হে গুণী/আমি অবাক হয়ে শুনি কেবল শুনি!’’ কিংবা “এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লীজননী!”– জাতীয় আনন্দিত প্রতিক্রিয়া জাগে। এক ব্যক্তি সৃষ্টি করে, পাঠ করে বহুজন, তারা মনে কর– এ তারই মনের কথা, তারই বেদনার বহিঃপ্রকাশ, তারই আনন্দের উদ্বোধন, তারই ভাবনার রূপায়ন, তারই ভালো লাগার রঙ, ভালো না-লাগার ছায়া। কখনো বিষয়ের সর্বজননীয়তা, কখনোবা শৈল্পিক সৌন্দর্যের সর্বজননীয়তা– একটি সৃষ্টিকে কালোত্তর মহিমা দান করে। উৎকৃষ্ট কবিতা যেন বনভূমি, কখনো তার গহনতা, কখনো রঙের প্রগাঢ়তা, কখনো বৃক্ষের বৈচিত্র্য, কখনো বৃক্ষের শাখায় বেজে ওঠা বাতাসের কোরাস, কখনো গভীর ছায়ার বিস্তারিত প্রশান্তি, কখনোবা একটি হরিণীর একজোড়া চোখের উঁকিঝুকি– ভালো লাগার প্রধান কারণ হয়ে ওঠে। কবিতাতে কখনো প্রেম, দেশপ্রেম, রাজনীতি, আঞ্চলিকতা, ক্ষোভ, দুঃখ, সুখ, কখনোবা শব্দ, কখনো উপমা, কখনো চিত্রকল্প, কখনো উৎপ্রেক্ষা, কখনোবা ছন্দের অনুরণন, কখনো ভাষার গতি, কখনো প্রকাশ ও আড়ালের আলো-আঁধারি, কখনো পুরাতন বিষয়কে নতুনকে উপস্থাপনের অভিনবত্ব– পাঠকের ভালো লাগার কারণ হয়।
কবিতা শুধু চোখই জুড়ায় না, একইসাথে মনকে নান্দনিক রসে ভরেও তোলে। সে রস আনন্দের হতে পারে, বেদনার হতে পারে, কিংবা অনন্দ-বেদনার মিশ্রিত রসও হতে পারে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন শিল্পসাহিত্যের প্রধান কাজ নান্দনিক রস সরবরাহ করা। নান্দনিক রস না থাকলে কবিতা-উপন্যাস-নাটক কিংবা অন্য যে কোনো সৃষ্টি অচিরেই ফুরিয়ে যায়। কথার যাদু, ভাবের অভিনবত্ব, অলংকারের অনন্যতা-একটি কবিতাকে রসঘন শিল্প করে তোলে। পাঠকের মন সে-রসের সরোবরে বার বার ডুব দিতে চায়, ডুব দিয়ে জুড়িয়ে নিতে চায় নান্দনিক পিপাসা। কথার রসের কারণেই শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং সৈয়দ মুজতবা আলী পাঠকের মন জয় করেছেন স্থায়ীভাবে এবং ব্যাপক মাত্রায়। অনিঃশেষ ও অভূতপূর্ব বীব রসের সঞ্চারের কারণেই নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা এবং আবেদনের স্থায়িত্বে শুরু থেকে অদ্যাবধি শীর্ষস্থান দখল করে রেখেছে। নান্দনিক রস বহু প্রকারের । সব রস সকলের ভালো লাগবে না। কিন্তু যতদিন নান্দনিক রসের যোগান থাকবে, ততোদিনই একটি সৃষ্টি সবুজ সজীবতায় টিকে থাকবে। রসের পেয়ালা পান করে তৃপ্ত হতে চায় পাঠক, রসের নদীতে ভেসে যেতে চায় তার রসপিয়াসী মন। প্রাণবন্ত খেজুরগাছের মতো বছরের পর বছর শৈল্পিক উপভোগের এবং নিবিড় তৃপ্তির রস সরবরাহ করে যায় একটি মানসম্মত কবিতা।
উৎকৃষ্ট কবিতার একটি প্রধান কাজ হচ্ছে পাঠকের জন্য সম্মোহন সৃষ্টি এবং সেই সম্মোহনকে অনিঃশেষ করে রাখা। প্রথমবার পাঠ করে পাঠক বলবেন– ভালো লাগলো; দ্বিতীয়বার পাঠ করে বলবেন– ভালো লাগলো; তৃতীয়বার পাঠ করে বলবেন– ভালো লাগলো। অতঃপর সময়ের ব্যবধানে যখন আবার পড়বেন তখনও তার মনে হবে– বাহ বেশ নতুন স্বাদ তো! কবি কি বলতে চেয়েছেন– তা বোঝা গেল কি গেল না কিংবা কতটুকু বোঝা গেল আর কতটুকু বোঝা গেল না, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। বুঝা আর না বুঝার, জানা আর না জানার মাঝামাঝি তা আকর্ষণ ধরে রাখবে। আমরা বিদেশী ভাষার উৎকৃষ্ট কোনো গান ততোটা বুঝতে নাও পারি। কিন্তু সেটি যদি তেমন শিল্পীর কণ্ঠে শুনি, অর্থ ততোট না বুঝলেও ভালো লাগায় ঘাটতি হয় না। বরং সে ধরনের গান আমরা বার বার শুনি, বছরের পর বছর শুনি। উৎকৃষ্ট কবিতাও সেই সম্মোহন ধারণ করে রাখে নিজের ভেতর। কবি যখন বলেন,
“লোটা ও কম্পলে আর কাজ নেই। রেখে দিই সূফীর পোশাক;
তবে আর নদী নয়। বুক ভাঙে সমুদ্রের টানে
হাঙর কামট এসে এ শরীর ছিঁড়ে খুঁড়ে খাক;
ঢেউ হোক জপমালা, এক নাম, নামের আহবানে
তোমার চুম্বন টানে সবখানে, বলো কোথা কূল ও কিনার?
শেষহীন নীলিমায় মিশে আছো, কেন খুঁজি উষ্ণ পদতল?
লোভের চুমকি হয়ে জ্বলে ওঠে মহাকাশে সহস্র দিনার
নিজের চোখের জলে ডুবে যাওয়া আমি এক শুভ্র শতদল।’’
(আমার অন্তিমে আমি / আল মাহমুদ)
তখন কবির উদ্দিষ্ট কে বা কি, স্রষ্টা নাকি কোনো মানবী, তা নিয়ে পাঠকের মাথা ঘামানোর জরুরত পড়ে না, উপমা, চিত্রকল্প, কল্পচিত্র ও উৎপ্রেক্ষা সহযোগে নির্মিত অনিঃশেষ সৌন্দর্য আর সম্মোহন পাঠকের পাঠের মূল্য দিয়ে যায় অফুরন্তভাবে। পাঠ পুনরাবৃত্তিতে ভালো লাগা আর বারবার মুগ্ধ হওয়া এর বেশি আর কি দাবি থাকতে পারে পাঠকের কবিতার কাছে?
কবিতা হচ্ছে বুঝা আর না বুঝার মাঝামাঝি শিল্প। কবি কিছুটা বলেন, বাকিটা পাঠক তার মতো করে বুঝে নেন, কিংবা আবিস্কার করেন। কবিতা রহস্যময় সৃষ্টি। দুর্বোধ্যতা নয়, রহস্যময়তা হচ্ছে কবিতার প্রাণ। চেনা চেনা অথচ অচেনা। জানা জানা অথচ অনেকখানি আজানা। উৎকৃষ্ট কবিতা হয় সমুদ্রের মতো গভীর অথচ স্বচ্ছ, ড্রেনের পানির মতো অগভীর ও ঘোলাটে নয়। ভালো কবিতা আকর্ষণ সৃষ্টি করে; পাঠকমন ডুবুরী হয়ে ডুব দেয় অথবা হাওয়ার পাল তুলে নৌভ্রমণে পাড়ি দেয় অথবা সমুদ্রের সৈকতে দাঁড়িয়ে মুক্ত হাওয়ায় ভরে নেয় তপ্তপ্রাণ। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই তার আবেদন নিঃশেষে ফুরিয়ে যায় না। তাছাড়া পাঠকবিশেষে তার আবেদন ভিন্ন হয়ে ওঠে। কারণ উৎকৃষ্ট কবিতা আবেদন, অর্থময়তা ও সৌন্দর্যের বহুমাত্রিক ও বহুরৈখিক আবেদন ধারণ করে রাখে। আবার ভালো কবিতাকে আকাশের সঙ্গেও তুলনা করা যায়। আকাশের শেষ নেই। আকাশের কোনো সুনির্দিষ্ট ও চৌহদ্দিঘেরা সংজ্ঞা নির্ধারণ করাও সম্ভব নয়। বিজ্ঞানের আবিস্কার মানুষকে নিয়ে গেছে চাঁদে। মানুষ ঘুরছে অন্যান্য গ্রহের আশেপাশে। নানাবিধ ছবি তুলে পাঠাচ্ছে ভূ-উপগ্রহ। কিন্তু তাতে করে আকাশের কতটুকুইবা জানা হচ্ছে। অথচ আকাশের রহস্যময়তা দুর্বোধ্যতার কালো মোড়কে আবৃত নয়। যতদূর চোখ যায়, যতদর যেতে পারে মহাকাশযান কিংবা দূরবীনের চোখ, ততোদূরই আকাশ পরিস্কারভাবে দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়ে ওঠে। চাঁদ-সূর্য-নক্ষত্র-গ্রহ-উপগ্রহ-ছায়াপথ সবকিছুই চোখের সীমানায় তার অস্তিত্ব মেলে ধরে। আকাশের নীলিমায়, রঙধুনুর রঙে, ছায়পথের আলো-আঁধারিতে, জোছনার যাদুবাস্তবতায়– আমাদের মন ভরে যায়। তারপরও আকাশ তার আবেদন ও আকর্ষণ ধরে রাখে। আমার প্রতিদিন আকাশ দেখি, প্রতিদিনই তাকে দেখে ভালো লাগে। আবার কবিতা একধরনের আালো-আঁধারিও। কবিতা দুপুরের মতো শতভাগ উন্মোচিত নয়; সে অন্ধকার রাত্রির মতো সবটুকু দুর্বোধ্যতায় আচ্ছাদিতও নয়। সে জোছনারাতের বনভূমি। দূর থেকে বেশিরভাগই অচেনা, অজানা; যত কাছে যাওয়া যায়, ততোই চেনাজানা হয়ে ওঠে। কাছ থেকে দূরে সরে এলে আবারও সে অচেনা হয়ে যায়। উৎকৃষ্ট কবিতার প্রতিটি শব্দের শব্দার্থ জানা, অথচ অনেক শব্দ মিলে ধারণ করে ভিন্ন অর্থ, পরিহাস, ব্যঞ্জনা, তীর্যকতা, বহুমাত্রিকতা। পঙক্তির ভাঁজে ভাঁজে জড়িয়ে থাকে মেঘে-ঢাকা আলোর উদ্ভাস, ডিজিটাল ক্যামেরায় ধারণের অতীত সৌন্দর্যের ছটা। চিত্র হয় পরিচিতি ভূগোল কিন্তু অর্থ ছুঁতে চায় অদেখা গন্তব্য। সবকিছু মিলিয়ে জানা-অজানার, চেনা-অচেনার, বুঝা-না-বুঝার এবং ভালোলাগা-খটকালাগার মতো রহস্যময়তা সৃষ্টি হয়ে থাকে। কিন্তু সবচেয়ে বড়কথা হচ্ছে এ ধরনের কবিতা একধরনের আনন্দ দেয়, পাঠে উদ্বুদ্ধ করে এবং পাঠকের জন্য অনির্বচনীয় আকর্ষণ ধরে রাখে। ব্যাখ্যা করতে গেলে ভাষায় কুলায় না; বুঝা যায় কিন্তু সবটুকু বলা যায় না। মনের মধ্যে একধরনের আনন্দ-বেদনার অনুভূতি সৃষ্টি করে; অনুভবের আঙিনায় একধরনের আলো ফুটে ওঠে। সে অনুভূতি, সে-আলোর উদ্ভাস গদ্যের ভাষায় সবটুকু তুলে ধরা সম্ভব হয় না। মূলত উৎকৃষ্ট দীর্ঘাকৃতির কবিতায় এধরনের আলো-আঁধারি ও অনিঃশেষ আকর্ষণ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। তবে ক্ষুদ্রায়তন কবিতাতেও রহস্যের আলো-আঁধারি সৃষ্টি করা সম্ভব যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’।
হাজার অনুভূতি, লক্ষ অনুভব ও অনন্য স্বজ্ঞার ফসল একজন শক্তিমান কবির কবিতা। জীবনঘনিষ্ঠ অনুভূতি, হৃদয়-ছোঁয়া অনুভব, মনন-উৎসারিত স্বজ্ঞা, মাটিছোঁয়া গন্ধ, আর প্রকৃতির সবুজ স্পর্শ তার কবিতার ভাঁজে ভাঁজে, দু’চরণের মধ্যে সৃষ্ট শূন্যস্থানে অনিঃশেষ ঐশ্বর্যের মণিমুক্তো হয়ে ছড়িয়ে থাকে সঙ্গোপনে। সেসব নিয়ে তার কবিতা জোছনারাতের মতো স্বপ্নচারী। উড়ে যেতে চায় আকাশে; জুড়িয়ে নিয়ে আসতে চায় প্রাত্যহিকতায় তপ্ত-ত্যক্ত অস্তিত্ব। সেসব অনুভূতি-অনুভব-স্বজ্ঞা-কল্পনার ষোল আনা পাঠোদ্ধার অসম্ভব। গভীর সংবেদনশীল মন নিয়ে সেসব অনুভব করে নিতে হয়, কল্পনা দিয়ে কল্পনাকে ছুঁয়ে দেখতে হয়। ধরা-অধরা এবং জানা-অজানার মাঝামাঝি শরতের শাদাকালো মেঘের মতো ভালো লাগার আকাশে উড়ে বেড়ায় তার কবিতা। গভীর-নিবিড় কবিতার অর্থ বিশ্লেষণ করতে গলে ভাষা অপর্যাপ্ত মনে হয়। সে-কবিতাকে ব্যাখ্যায় বাঁধতে গেলে ভো-কাটা ঘুড়ির মতো হাতছাড়া হয়ে যেতে বসে। ‘ধরণী দিয়াছে তার/ গাঢ় বেদনার / রাঙা মাটি-রাঙা ম্লান ধূসর আঁচলখানি / দিগন্তের কোলে কোলে টানি। ‘তোর রূপ সই গাহন করে জুড়িয়ে গেল গা’, ‘কচি লেবু পাতার মতো নরোম সবুজ আলো’, ‘ঊটের গ্রীবার মতো কোনো এক নিস্তব্ধতা এসে’, ‘ঘাসের উপর দিয়ে ভেসে যায় সবুজ বাতাস’, ‘জ্যোৎস্নারাতে বেবিলনের রানীর ঘাড়ের ওপর চিতার উজ্জ্বল চামড়ার/ শালের মতো জ্বলজ্বল করছিলো বিশাল আকাশ’, ‘আমারি কামনার শেওলায় একটি দুর্দমনীয় শামুকের চলাফেরা/ অনুভব করছি’, ‘লোভের চুমকি হয়ে জ্বলে ওঠে মহাকাশে সহস্র দিনার’, ‘চতুর্দিকে খনার মন্ত্রের মতো টিপটিপ শব্দে সারাদিন/ জলধারা ঝরে।’, ‘সঙ্গমসুখী রাতের পাখিরা শব্দ করে/ আমাদের প্রতি জানালো তাদের অবোধ ঘৃণা’, ‘তার দুটি মাংসের গোলাপ থেকে নুনের হাল্কা গন্ধ আমার / কামনার ওপর দিয়ে বাতাসের মতো বইতে লাগলো।’, ‘ইস্পাহানের হলুদ আপেল বাগান আমার হাতে তুলে দিয়েছে/তার সুপঙ্ক দুটি সোনালি ফল/তোমার ব্লাউজের বোতাম খোলো, দ্যাখো কি উষ্ণ আমায় ভরে গিয়েছো তুমি।’ ‘বিকেলরঙের সময় অনুরোধের হাতে জড়িয়ে ধরে পা।’, ‘আমার দিকে চেয়ে হাসে যাবতীয় জলমাতৃক উপহাস’, ‘আমি আড়াল হলেই বেড়াগুলো কদমগাছ হয়ে ওঠ ‘, ‘ভোরের আলোতে ডাস্টবিনে রাজসাক্ষী পরিহাসের মুখ’, ‘বেহুলাদুপুর তুমি অক্সিজেনে মেখে ধুপ-ছায়া।’, ‘হৃদয় ছড়িয়ে আছে আসমুদ্র সে অব্যয়ীভাব।’, ‘যে-ব্যথা ইস্তানবুলে রচে আছে গভীর হুজুন’, ‘আমার শরৎ দিন বিলি কাটে আকাশের চুলে।’,– প্রভৃতি চরণ ও চিত্রকল্প কবির প্রাতিস্বিক অনুভব-অনুভূতির রঙে-রসে-গন্ধে এতটাই নিবিড় যে গদ্যের ভাষায় অনুবাদ করতে গেলে ভাষায় কুলায় না; কিন্তু ভালো লাগায় ভরে ওঠে মন। এমন অনির্বচনীয় অনুভূতি– এমন প্রাতিস্বিক অনুভব যখন আলো-আঁধারির ভাষা নিয়ে কবিতার চরণ হয়, তখন সৃষ্টি হয় উৎকৃষ্ট কবিতা। দুচারটি যাদুচরণ বা ম্যাজিক লাইনস্ একটি কবিতাকে অভিনব আবেদনে বরিত এবং স্বকীয় মহিমায় প্রতিষ্ঠিত হতে সহায়তা দেয়।


আমিনুল ইসলাম
জন্ম : ১৯৬৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার টিকলীচর গ্রামে।
তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে সমাজকর্ম বিষয়ে অনার্সসহ এমএ এবং নর্দান ইউনিভার্সিটি থেকে গভর্নেন্স স্টাডিজ বিষয়ে এমএস ডিগ্রী অর্জন করেন। চাকরিজীবনে তিনি ভারত, মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, মায়ানমার, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেছেন।
প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ
কবিতা
তন্ত্র থেকে দূরে : ২০০২ । মহানন্দা এক সোনালি নদীর নাম : ২০০৪ । শেষ হেমন্তের জোছনা : ২০০৮ । কুয়াশার বর্ণমালা : ২০০৯ । পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি : ২০১০ । স্বপ্নের হালখাতা : ২০১১ । প্রেমসমগ্র : ২০১১ । জলচিঠি নীলস্বপ্নের দুয়ার : ২০১২ । শরতের ট্রেন শ্রাবণের লাগেজ : ২০১৩ । কবিতাসমগ্র : ২০১৩ । জোছনার রাত বেদনার বেহালা : ২০১৪ । তোমার ভালোবাসা আমার সেভিংস অ্যাকউন্ট : ২০১৫ । প্রণয়ী নদীর কাছে : ২০১৬ । ভালোবাসার ভূগোলে : ২০১৭ । অভিবাসী ভালোবাসা : ২০১৮ । বাছাই কবিতা : ২০১৯ ।
ছড়া
১.দাদুর বাড়ি : ২০০৮
২. ফাগুন এলো শহরে : ২০১২
৩. রেলের গাড়ি লিচুর দেশ : ২০১৫
প্রবন্ধ
বিশ্বায়ন বাংলা কবিতা ও অন্যান্য প্রবন্ধ : ২০১০
সম্মাননা/পুরস্কার
রাজশাহী সাহিত্য পরিষদ সাংগঠনিক সম্মাননা : ২০০৪
বগুড়া লেখক চক্র স্বীকৃতি পুরস্কার : ২০১০
শিশুকবি রকি সাহিত্য পুরস্কার : ২০১১
নজরুল সংগীত শিল্পী পরিষদ সম্মাননা : ২০১৩
এবং মানুষ সাহিত্য পুরস্কার : ২০১৭
দাগ সাহিত্য পুরস্কার : ২০১৮

লেখকের আরও লেখা
buy tadalafil generic cialis tadalafil
canada generic tadalafil cheapest tadalafil cost
cheap generic cialis for sale tadalafil online
cheap generic cialis for sale tadalafil cialis
cialis at canadian pharmacy https://cialismat.com/
best price usa tadalafil best price usa tadalafil
tadalafil without a doctor prescription https://cialisedot.com/
cialis cost cheap cialis pills for sale
where to order tadalafil tablets cost of cialis
where to buy generic cialis online safely side effects for tadalafil
canada generic tadalafil https://cialisvet.com/
https://cialisbusd.com/ cost of cialis
buy generic cialis online with mastercard tadalafil cost walmart
tadalafil is not for consumption in united states tadalafil tablets usp 20 mg
figral sildenafil 100mg generic sildenafil citrate 20 mg
where to buy cialis without prescription tadalafil online with out prescription
lowest viagra price generic viagra online pharmacy
where to buy cialis without prescription tadalafil generic
cialis tadalafil 80mg generic tadalafil online
ivermectin 9 mg tablet buy stromectol
cialis without prescription cost tadalafil generic
sildenafil headache online sildenafil
ivermectin coronavirus ivermectin 3mg pill
where to buy tadalafil on line tadalafil blood pressure
sildenafil tadalafil combination mambo 36 tadalafil 20 mg reviews
brands of generic tadalafil para que sirve las tabletas cialis tadalafil de 5mg
ivermectin buy australia stromectol tab price
figral sildenafil 100 mg sildenafil vs sildenafil citrate
tadalafil lowest price cialis
ivermectin 0.08 stromectol 3 mg tablets price
ivermectin cost canada ivermectin india
ivermectin buy australia cost of ivermectin 3mg tablets
where can i buy stromectol ivermectin cream
ivermectin cost uk ivermectin syrup
cost of ivermectin ivermectin 24 mg
ivermectin 0.5% stromectol 6 mg dosage
where to buy ivermectin pills buy ivermectin for humans australia
ivermectin 5 mg ivermectin humans
stromectol order ivermectin 5ml
ivermectin 3mg ivermectin buy uk
stromectol sales ivermectin for humans
viagra buy viagra brands
oral ivermectin cost ivermectin 8 mg
buy stromectol pills stromectol lotion
cialis no prescription where to buy cialis cheap
supplements containing sildenafil sildenafil best price
cialis 10mg tadalafil citrate
tadalafil online no prescription tadalafil tablets uses
does generic viagra work viagra online
is tadalafil available at cvs tadalafil pregnancy
unc student store pharmacy cooperative pharmacy store locator
canadian compounding pharmacy canada king pharmacy
viagra 800mg cheap viagra pills online
tadalafil 5 mg best price tadalafil 40 mg dosage
online pharmacies canadian canadian pharmacy tampa
to buy cialis generic cialis with effexor
viagra levitra generic levitra reviews
rx unlimited pharmacy mexican pharmacies
sildenafil 100 mg best price sildenafil gel india
pharmacy rx community pharmacy
how long does it take for ivermectin to work ivermectin praziquantel for dogs
ivermectin for guinea pigs petsmart ivermectin treatment for lyme disease
ez rx pharmacy dog pharmacy online
cialis pills online cialis asia
what possible side effect should a patient taking tadalafil report to a physician quizlet generic tadalafil 20mg
viagra india generic generic viagra over the counter usa
Everything is very open with a precise clarification of the issues. It was truly informative. Your site is extremely helpful. Thank you for sharing!|
cialis soft tabs 20mg cialis with dapoxetine or viagra with dapoxetine better
levitra 10mg para que serve which is better viagra or cialis or levitra
viagra ou levitra levitra vs viagra reviews
viagra 200mg online where can i get sildenafil 100mg
cialis professional vs cialis super active cheap generic cialis in the us
citizens rx pharmacy dilaudid online pharmacy
I like it when people come together and share thoughts. Great website, stick with it!
canadian pharmacy online legit reliable canadian pharmacy online
canadian pharmacy without vancouver canada pharmacy
Allegra online pharmacy oxycodone
reputable online pharmacy canada import drugs canada
xanax canadian online pharmacy mail order pharmacy canada
It’s hard to find experienced people for this topic, however, you seem like you know what you’re talking about! Thanks
wegmans online pharmacy pharmacy
Indocin canadian pharmacy council
hydroxychloroquine malaria plaquenil and alcohol
global pharmacy canada complaints Levaquin
provigil 200mg pills provigil 200mg generic provigil tablet
canada drugs fax number big sky pharmacy canada
canadian pharmacy certified canada pharmacy online rx express pharmacy navarre fl
where Can I Buy Cialis Or Viagra Pills Yoday In Colorado?
modafinil price provigil 200mg over the counter
how Often Can You Take Cialis 20 Mg?
t5bwo
qfiyq
y1yu
0t7h0
p3jxy
y3ge
where At On Cialis Do I Cut It In Half?
mcl2z
3cq4u
jtcj
what If I Take 40mg Of Cialis?
oral provigil 100mg provigil cheap order provigil pill
how Long Does Cialis Work?
canadian online pharmacies ratings
mexican pharmacy
canadian pharmacy online without prescription
discount drugs canada
canadian pharmacies that ship to us
bestpharmacyonline.com
mail order prescription drugs from canada