আশুতোষ সরকারের কবিতা ‘নো ম্যানস- ল্যান্ড


আশুতোষ সরকার

নো ম্যানস- ল্যান্ড


তুরাগ পাড়।
হাজারো মুসলিম জনতা ডাকছে পরওয়ারদেগার।
অশ্রুজলে সিক্ত। মন-প্রাণ তাদের নিবিষ্ট চিল্লায় ;
বিশ্বাস তাদের সেই আদি কারণ পরম করুণাময় আল্লায়
অনড়। বিশ্বব্যাপী মুসলিমের দুর্দশায় ব্যাকুল
সহমর্মী মুসলিম বেরাদরগণ। তাই আকুল
হয়ে ডাকছে-‘ প্রভু,
দয়া করো মুসলিম জাহানে। তোমার নির্দেশ মতো আমরা কভু
ছাড়বো না এই ভ্রাতৃত্বের রজ্জু। তুমি
রক্ষা করো মুসলিম উম্মাহকে। নিরাপদে রাখো তাদের পবিত্র স্বদেশভূমি।’
অপরাপর জাতিগোষ্ঠী যারা আছে পড়শীর ন্যায়
সারা দেশে ; তুরাগ পাড়ের সেই প্রার্থনায়-
আসেনি তাদের কথা ; তাদের কল্যাণ প্রার্থনা করে কোন বয়ান
দেয়নি কেউ। কারো করুণ নয়ান
হয়নি সিক্ত তাদের জন্য। তাদের জন্য প্রভুর দরবারে কোন চাওয়া নেই।
জানা গেলো- মোনাজাতের নিয়মই এই।

ঢাকেশ্বরী মন্দির।
ভক্তগণ সমাগত ; জোড় কর। এ অঙ্গন পবিত্র ভূমি-হৃদয় সন্ধির।
কিছুক্ষণ আগে-
পূজা হয়েছে শেষ। ভক্তগণ আর্দ্র-চিত্ত; শুদ্ধস্বত্ত্ব ভক্তি অনুরাগে।
প্রধান পুরোহিত যিনি-
গৈরিকবসনধারী, মুক্ত পুরুষ। তিনি
সবিনয়ে উঠে
সমবেত ভক্ত পানে চেয়ে কৃতাঞ্জলিপুটে
বললেন-‘ ভ্রাতাগণ, আসুন প্রার্থনা করি ঈশ্বরের কাছে
এ বিশ্বে যেখানে যত হিন্দুজন আছে-
সকলেই থাকে যেন থাকে ভালো
তাদের জীবনে যুক্ত যত অন্ধকার-যত আছে কালো
দূর হয়ে যাক।
বৈরী স্বজন বা পড়শী থেকে আজ তারা প্রত্যশিত পরিত্রাণ পাক।
মুসলিম, বৌদ্ধসহ এদেশে পাশাপাশি একসাথে বাস করে যারা
সেই তারা
এলো না সে প্রার্থনায় আদৌ। চাওয়া হলো না তাদের জন্য ঈশ্বরের দয়া।
‘সব্বেবত্তা সুখিনা ভবন্তু সব্বেসন্তু নিরাময়া’-
নিরর্থক হলো।
‘প্রার্থনা শেষ’ – বললেন ধর্মগুরু। ‘ভ্রাতৃগণ, ধীরে ধীরে গৃহপানে চলো।’

রামুর বৌদ্ধমঠ।
মঠ্যাধ্যক্ষ ঋষিজ। শ্রমণগণ শ্রবণ করছেন পবিত্র ত্রিপটক পাঠ।
পাশে উপবিষ্ট-ধ্যানী বুদ্ধ
যিনি ঈশ্বর না মানলেও, মানতেন-মুক্তির জন্য দরকার চিত্ত-পরিশ্রুত, শুদ্ধ।
‘বিরত হও সে-সব হতে যা পাপ-কর্ম
জানিও অহিংসা পরমঃ ধর্ম।’
গ্রন্থ পাঠ শেষে
ভিক্ষু-কোন এক ভদ্র মহাথেরো- দাঁড়ালেন এসে
শ্রমণদের কাছাকাছি। বললেন-‘এক্ষণে প্রার্থনা হবে। ‘
বলো সবে
বিশ্বের যেখানে আছে যত বৌদ্ধজন
সকলের শান্তি হোক- সকলেই মুক্তি লাভ করুক। তাদের পাপ-চঞ্চল মন
পবিত্র হোক। দুঃখী আছে যারা
তথাগতের কৃপায় আত্মিক শান্তি-সুধা লাভ করুক তারা।’

দেশে আছে আরো যত অবৌদ্ধ প্রাণ
হিন্দু-মুসলিম-ক্রিশ্চান
তাদের দুঃখ মোচনের কোন কথা উচ্চারিত হলো না ভিক্ষুর মুখে
শুধু বৌদ্ধর সুখে
সুখী হতে আসেন, যান মঠ্যাধ্যক্ষ জনাব মহাথেরো
এর চেয়ে শ্রেয়তর
কোনো বিকল্প চাওয়া কোনদিন ঠাঁই পায়নি তাঁর মনে।
নিরাপদে শান্তিতে থাকুক শুধু বৌদ্ধজনে।

হোলি সানডে।
বড়ো একটা ডোনেশন এসেছে চার্চের সোশাল ওয়েলফেয়ার ফান্ডে।
বিলাতে হবে বিলাতি সে পাউন্ড
তজ্জন্য বানাতে হবে খাত, তৈরি করতে হবে গ্রাউন্ড।
যে-ভাবেই হোক, ক্রিশ্চান হয়েছে যারা
পাবে তারা
এই সব কড়কড়ে নোট।
অথবা যারা ক্রিশ্চান হতে রাজি, ঈশ্বর-পুত্র যিশুকে দেবে ভোট
মুক্তি দাতা হিশেবে ; তাদের ঘরে
থরে থরে
সাজানো থাকবে এ যাদুর কাগজ। এরূপ সিদ্ধান্তের পর-
ফাদার বললেন- ‘গেট রেডি। নাউ দিস ইজ দ্য টাইম ফ’ প্রেয়ার।’
‘সদাপ্রভু কৃপাময়, কৃপা করো তুমি তাদের
অন্তর যাদের
পূর্ণ হয়ে আছে তোমার পুত্র কেন্দ্রিক বিশ্বাসে;
যাদের প্রতিটা নিঃশ্বাসে
মিশে আছে ঈশ্বর-ঈশ্বরপুত্র-পবিত্র আত্মা বিষয়ক সত্য
(যার নাম ত্রিত্ব)
তুমি স্বর্গ হতে হে সদাপ্রভু করো আশীর্বাদ
সুখী হয়ে পৃথিবীতে, মৃত্যুর পরে পায় যেন তারা তোমার প্রেমের প্রসাদ।
ভাগ্যবান ক্রিশ্চান ছাড়া
আসেনি অন্যের কথা সে প্রার্থনায়। মতিচ্ছন্ন হতচ্ছাড়া
মানব-সন্তানগুলোর তরে
কাঁদেনি যাজকের প্রাণ। ফিরে চললেন প্রার্থনা শেষ করে।

অতএব উপপাদ্য হলো এই
বিশ্বে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, ক্রিশ্চান আছে ; শুধু, কোথাও কোন মানুষ নেই।

About S M Tuhin

দেখে আসুন

কবিতা : রনি অধিকারী

কবিতা রনি অধিকারী ১ নারীর নাম নদী এই পথ মিশে যায় নদী জল অথৈ সমুদ্দুর …

31 কমেন্টস

  1. buy generic cialis online with mastercard https://cialiswbtc.com/

  2. I pay a quick visit day-to-day some web sites and information sites to read posts, but
    this blog offers feature based posts.

  3. tadalafil online tadalafil without a doctor prescription

  4. prescription tadalafil online buy cialis

  5. tadalafil order online no prescription lowest price cialis

  6. why Doesnt Cialis Or Viagra Work?

  7. viagra Or Cialis Which Is Better?

  8. order modafinil provigil 100mg generic buy generic modafinil 200mg

  9. levitra overnight delivery lba1 Journal of Clinical Oncology 32, no

  10. 007 Appendix Table 2 buy viagra canada HealthDay Pfizer Inc

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *