আবিদ আজাদের কবিতা : শিল্পের বাগানবাড়ি
আমিনুল ইসলাম
কবিতার ইতিহাস তার টেকনিকের ইতিহাস এই আপ্তবাক্য মনে রেখে বর্তমান সময়ে আবিদ আজাদের কবিতা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই মনে আসে কবিতার গঠনসৌষ্ঠব ও প্রাণরসের কথা। আকৃতির দিক থকে একটি কবিতা একটিমাত্র চরণেও রচিত হতে পারে; আবার তা সহস্র চরণের দীর্ঘ অবয়ব বিশিষ্ট সৃষ্টিও হতে পারে। কবিতার আকৃতির সঙ্গে তার সার্থকতার বা উৎকর্ষের কোনো কার্যকারণ সম্পর্ক নেই। কবি সরস্বতীর নাপিত নন। স্বয়ংসিদ্ধতায় বেড়ে ওঠা কোনো কবিতা-বৃক্ষকে ছেঁটেছুটে বনসাই বানানো তার কাজ নয়; কৃতিত্বও নয়। আবার ব্যাখ্যাকারের মন নিয়ে নিবিড় কাব্যভাবনাকে ফেনায়িত পঙক্তিমালায় পরিবেশন করাও তার কাজ নয়। তার হাতে কোনো গজফিতা কিংবা বাটখারা থাকবে না; তেমনি তিনি বেহিসাবীর মন নিয়ে বেসামাল প্রগল্ভও হবেন না। কবিতা ডিপফ্রিজের রাখা গুঁড়ো দুধ নয়; তা রাস্তার ধারের সকালবেলার ঘোলবিক্রেতার ঘোলও নয়। কবিতার বিষয় ও ভাবনা স্বয়ংক্রিয়তার ঠিক করে দেবে কবিতার অবয়ব-আকৃতি। অথচ কবিতার আকৃতি একটু বড় হলেই আজকাল ‘গেল! গেল! সব গেল!’- নেতবিাচক চিৎকার শোনা যায়। কয়েক বছর আগে বিষয়টি লক্ষ করে কবি কামাল চৌধরী শ্লেষমিশ্রিত ভাষায় রচেছেন ‘ নাপিত-সমাজ ’ শিরোনামের একটি ক্ষুদ্রায়তন কবিতা। কবিতাটি পাঠ করা যায়।
‘এতদিন যা লিখেছি, দেখছি আাজ তার দাড়ি-গোঁফ গজিয়ে গেছে
বন্ধুরা বলছে, কাটো, কাটো
আমাদের নাপিত-সমাজে একদিন সিজার্স ব্রান্ডের
সিগারেট ফোঁকা ছাড়া
অন্য কিছুর সঙ্গে বিরোধ ছিল না
তবু এই অসম দ্বৈরথে ছোটবেলার মতো পাছায় ইট বিছিয়ে
বসে যাচ্ছি
যেকোনো গাছের তলায়
বাহ্বা দিচ্ছে কাঁচি, অভয় দিচ্ছে ক্ষুর
কাটো, কাটো, হে কবিতা তোমারও রক্তপাত চাই।’
(নাপিত-সমাজ : পান্থশালার ঘোড়া)
তবে আকার-আয়তন যা-ই হোক, কবিতা হতে হলে তাতে প্রাণ থাকতে হবে। প্রাণরস থাকতে হবে। “যে-সৃষ্টি নিজেই প্রাণহীন, সে তো পাঠকের প্রাণকে স্পর্শ করতে পারবে না কখনোই। একারণে কবিতায় কল্পনা, বুদ্ধি, জ্ঞান, প্রকরণ-সচেতনতার সঙ্গে প্রয়োজন হৃদয়ের দান। যে-কবিতায় কবির হৃদয়ের বিনিয়োগ নেই, তা উৎকৃষ্ট কবিতায় উন্নীত হতে অসমর্থ। তাই উৎকৃষ্ট কবিতায় কম বা বেশি রোমান্টিক মনের ছোঁয়া ও ছায়া থাকে, তা সে কবিতা রোমান্টিক হউক, আধুনিক হউক, অথবা হউক উত্তরাধুনিক। প্রখ্যাত শিল্পী বশীর আহমদ গীত একটি গানের স্থায়ী হচ্ছে, ‘‘সুরের বাঁধনে তুমি যতই কণ্ঠ সাধো/ তাকে আমি বলবো না গান/ সে তো শুধু নিষ্প্রাণ সা রে গা মা পা ধা নি সা / নেই তাতে হৃদয়ের দান।” অনুরূপভাবে শব্দের বাঁধনে আর প্রকরণ-কৌশলে যা-ই রচিত হউক, তা প্রকৃত কবিতা হবে না যদি তাতে না থাকে হৃদয়ের দান।” প্রকৃত কবিতা সৃষ্টিশীল প্রতিভায় সচ্ছলতার অধিকারী স্রষ্টার সহজাত মেধা ও শ্রমের সাবলীল সৃষ্টি। মগজে নিয়ে সহজাত কাব্যচিন্তার অভাব জোর করে শব্দ নিয়ে খেলার কৌষ্ঠকাঠিন্যময় ফসল আর যাই হোক, কবিতা নয়।
আবিদ আজাদ ছিলেন সুজলা সুফলা উর্বর মৃত্তিকার সৃষ্টি-উর্বর সন্তান। তাঁর কাব্যমেধা ছিল সহজাত। সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল কাব্যশৈলী সংক্রান্ত নিবিড় জ্ঞান। একথা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই যে পরিপূর্র্ণ অর্থেই বৃহত্তর বাংলা এক ঊর্বর ভূমি। ষড়ঋতুর পরিচর্যায় আর হাজারো নদ-নদীর দানে সমৃদ্ধ বাংলার মাটিতে জন্মে অসংখ্য রকমের গাছপালা-শস্যাদি। বাংলার সাংস্কৃতিক উঠোনে ধারাবাহিকভাবে জন্মলাভ ঘটে শত কবি-শিল্পী-কথাশিল্পী-নাট্যকারের। আবিদ আজাদ বাংলার উর্বর উঠোনে জন্ম নেয়া তেমনি এক শক্তিমান কবির নাম। তাঁর হাতে অন্যান্য ধরনের সৃষ্টিসহ রচিত হয়েছে বহু কবিতা। তাঁর কবিতা বৈচিত্র্যে ভরপুর, পাশাপাশি শিল্পগুণে সমৃদ্ধ। এক সহজাত কাব্যপ্রতিভা নিয়ে তিনি কবিতা লিখে গেছেন একের পর এক। ফলে তাঁকে কষ্টকল্পনার কষ্ট করতে হয়নি। একই কারণে তাঁর কবিতা গীতল, মোলায়েম, সুন্দর ও উপভোগ্য। তাঁর সৃষ্টির মাঝে অক্ষমের জোরাজুরি নেই, পাঠক-ঠকানো উপরচালাকি নেই। সহজাত কাব্যপ্রতিভার সাথে আধুনিক কবিতার বিস্তারিত পাঠ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাধনা তাঁকে শক্তিমান কবি হয়ে উঠতে সফল সহায়তা দিয়েছে। আরেকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য, তিনি দশকের অন্ধগলিতে পথ হারাননি। তিনি প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে দশকের অন্ধগলি একপাশে ফেলে রেখে উৎকৃষ্ট কবিতার প্রশস্ত পথ ধরে হেঁটেছেন-যার পায়ের নিচে ঊর্বর পুরাতন মাটি, মাথার উপর বাধাহীন আকাশ এবং দুপাশ খোলা হাওয়া। মাটির আত্মীয়-গন্ধ,আকাশের উদার সৌন্দর্য এবং মুক্তহাওয়া-নির্গত বিশুদ্ধ অক্সিজেন তাঁর কবিতার মধ্যে ঠাঁই নিয়ে তাদের করে তুলেছে প্রকৃতির মতো সচ্ছল ও সুন্দর। সে সৃষ্টির মধ্যে আছে শ্রান্তি-হরণিয়া গাছের ছায়া, নদীর স্রোত, বনভূমি ছুঁয়ে আসা প্রান্তরের হাওয়া।
কবি হিসেবে আবিদ আজাদের একাধারে অনেক কবিতা লিখেছেন এবং উৎকৃষ্টমানের অনেক কবিতা লিখেছেন। পরিমাণের ব্যাপকতা ও গুণগত উৎকর্ষের এমন সুসমন্বয় কম কবির হাতেই ঘটে থাকে। আবিদ অনেক কবিতা লিখেছেন এবং অনেক রকমের বিষয় নিয়ে কবিতা লিখেছেন; কবিতা নিয়ে বহু ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করেছেন। বিস্মিত হতে হয় দেখে যে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর হাতে ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে। ভালোবাসার কবিতা, রাজনীতির কবিতা, প্রকৃতির কবিতা, স্বপ্নের কবিতা, দুঃস্বপ্নের কবিতা, গণমুখী কবিতা, একান্ত ব্যক্তি-অনুভবের কবিতা, স্বদেশপ্রেমের কবিতা, স্বাধীনতার কবিতা, মুক্তিযুদ্ধের কবিতা, রাজনৈতিক ভন্ডামি বিরোধী কবিতা, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী কবিতা, স্মৃতিস্নাত কবিতা, ব্যক্তি-স্মরণের কবিতা, জীবনের কবিতা, মৃত্যুভাবনার কবিতা, বিজ্ঞানচেতনার কবিতা-এমন আরও প্রকারভেদ চিহ্নিত করা সম্ভব। তিনি অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কবি। তিনি যা দেখেছেন, যা বুঝেছেন, যা সঠিক বলে জেনেছেন, যা বিশ্বাস করেছেন, তা-ই কবিতায় তুলে ধরেছেন নান্দনিক সৌন্দর্যে এবং সুগভীর পরিচ্ছন্নতায়। তিনি রাজনীতির কবিতা লিখেছেন, কিন্তু দলবাজি তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। তিনি মুক্তিযুদ্ধের কবিতা লিখেছেন, কিন্তু মিথ্যা আবেগকে প্রশ্রয় দেননি। তিনি ভন্ডামির বিরুদ্ধে কবিতা লিখেছেন, কিন্তু কোনো ব্যক্তিবিশেষকে কটাক্ষ করেননি এবং শিল্পের সৌন্দর্য ক্ষুণ্ন হতে দেননি। তিনি প্রেমের কবিতা লিখেছেন, বিচ্ছেদ-যন্ত্রণার কবিতা লিখেছেন কিন্তু স্থূল আবেগকে জয়ী হতে দেননি। তাঁর কবিতায় নারী-বিদ্বেষ নেই, ধর্ম-বিদ্বেষ নেই। তিনি পুরুষ হলেও তাঁর কবিতায় পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের ছাপ নেই। তিনি প্রতীকী কবিতা রচেছেন, পরাবাস্তব কবিতা রচেছেন, রোমান্টিক কবিতা রচেছেন, ন্যারেটিভ কবিতা রচেছেন, দীর্ঘায়তন কবিতা রচেছেন, স্বল্পায়তন কবিতা রচেছেন কিন্তু কোনো ইজমের দাসত্ব করেননি। প্রত্যক্ষত অন্যকোনো কবির অনুসৃতি নেই তাঁর কবিতায়। তিনি সাম্রাজ্যবাদবিরোধী কবিতা লিখেছেন কিন্তু স্থূল ভাষা ও কাঁচা আবেগ পরিহার করেছেন। তাঁর প্রেমের কবিতা, প্রকৃতির কবিতা, সমাজভাবনার কবিতা, পরিহাসধর্মী কবিতা-সকল প্রকার কবিতার ভাষা ও গঠনশৈলী নান্দনিক সৌন্দর্যে উজ্জ্বল ও উপভোগ্য। বিষয় ভাবনায় তাঁর গভীরতা বিস্ময়কর এবং একইসাথে তাঁর প্রকাশভঙ্গি প্রাতিস্বিকতায় অনন্যসুন্দর। তিনি অনেক বড় ও ব্যাপক কোনো বিষয়কে একটি ক্ষদ্রায়তন কবিতায় তুলে ধরতে এবং একটি সূক্ষ্ণ অনভূতিকে দীর্ঘায়তন কবিতা করে তুলতে সমানভাবে সমর্থ। উভয় ক্ষেত্রেই তাঁর হাতে রচিত সৃষ্টি শৈল্পিক সৌকর্যে মানোত্তীর্ণ। একদিকে তিনি সহজ স্বাচ্ছন্দ্যে ও প্রবল সাবলীলতায় কবিতা লিখেছেন, অন্যদিকে কবিতায় প্রাণের গভীরতা অক্ষুণ্ন রেখেছেন। তাঁর কবিতা কৌষ্ঠকাঠিন্যময় নয়, তরলও নয়। তাঁর কবিতা দুর্বোধ্য নয়, সহজ পদ্যও নয়। তিনি যুৎসই শব্দ নির্বাচনে সুদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন কিন্তু শব্দ নিয়ে অহেতুক জোরাজুরি করেননি, শব্দের ধাঁধা সৃষ্টি করেননি। কবি হিসেবে এটি তাঁর গভীর শক্তিমত্তার পরিচয়বাহী।
কবি হিসেবে আবিদ আজাদের একটি বিরাট বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে তিনি একজন সহজাত প্রতিভার অধিকারী কবি। গুণী চিত্রশিল্পী যেমন তুলির দু’একটি সহজ আঁচড়ে অত্যুৎকৃষ্ট মানের ছবি এঁকে দিতে পারেন, আবিদ আজাদ তেমনিভাবে সাধারণ শব্দে ও সহজ বাক্যে অসাধারণ কবিতা সৃষ্টিতে সমর্থ। তাঁকে কষ্টকল্পনা কিংবা কাঠামোগত উপর-চালাকির আশ্রয় নিতে হয়নি। তিনি পরিচিত চিত্র সহযোগে নতুন চিত্রকল্প সৃষ্টি করেছেন। আবার তাঁর এ সমস্ত সহজ- সৃষ্টির আবেদন বারবার পাঠেও ফুরিয়ে যায় না।
‘যে বাড়িতে থাকো তুমি
ইচ্ছে করে একদিন খুব বিকেলবেলায় এসে ভীষণ আদর করে
বাড়িটাকে কোলে তুলে নিই
ইচ্ছে করে দুহাত ধরে মাথার ওপর তুলে নাচাই
কোমর ধরে দুলুনি দিই দুলুনি দিই
ঘুম পাড়িয়ে রাখি আমার একলা হুহু বুকের কাছে
ইচ্ছে করে হাসাই ওকে পাঁজাকোলের শিশুর মতো ভীষণ হাসাই।’
(তোমার বাড়ি/ ঘাসের ঘটনা)
এই কবিতা বাংলা সাহিত্যে একেবারে নতুন এবং অতুলনীয়ভাবে সুন্দর। একটি বাড়ির কল্পচিত্রে তিনি গভীর-নিবিড় ভালোবাসার ছবি এঁকে দিয়েছেন অভূতপূর্ব শৈল্পিক সৌন্দর্য ও হৃদয়িক মমতার উপকরণের সুসমন্বিত ব্যবহার ঘটিয়ে। ভালোবাসার মানুষটি যে বাড়িতে বসবাস করে, সেই বাড়িটিকে কোলে নিয়ে আদর করার দৃশ্যকল্প একইসাথে অভূতপূর্ব এবং অনন্যসুন্দর। এই কবিতার আবেদন ফুরিয়ে যাওয়ার নয়। ফুরিয়ে যায়নি। ফুরিয়ে যাবে না।
আবিদ আজাদের কবিতার অন্যতম গুণ হচ্ছে তাদের শরীরে জড়িয়ে থাকা মমতার আস্তরণ। আবিদ আজাদ ভালোবাসা ভরা বিশালায়তন হৃদয়ের কবি। অনিঃশেষ মায়া ও মমতার ভান্ডার তাঁর হৃদয়-মন। তিনি বিষয় নির্বাচনে বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার আশ্রয় নিয়েছেন; কিন্তু যখন সেসবকে কবিতা করে গড়ে তুলেছেন, তখন সেসব সৃষ্টির পরতে পরতে, ভাঁজে ভাঁজে, শরীরে ও প্রাণে সহজ স্বাভাবিকতায় জড়িয়ে গেছে- মিশে গেছে- লেপ্টে গেছে- তাঁর ভালোবাসাভরা হৃদয়ের মায়া ও মমতা। আবিদ আজাদের কবিতা মানেই গভীর আন্তরিকতার স্পর্শমাখা ছবি। সেসব সৃষ্টির কোথাও উপেক্ষা নেই, সস্তা চালাকি নেই, অবজ্ঞা নেই, মিথ্যারঙ নেই। আল মাহমুদের কবিতার সর্বত্র যেমন বলিষ্ঠ সোনালি পৌরুষের ছাপ, আবুল হাসানের কবিতার সর্বত্র যেমন আন্তরিক বেদনার নিবিড় ছোঁয়া, আবিদ আজাদের কবিতার শরীরে ও প্রাণে তেমনি গভীর মমতার রেশমী আস্তরণ। আবিদ আজাদ ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কবি, অনেক ভালোবাসার কবি, অনেক দেশপ্রেমের কবি। আর সেজন্যই তাঁর কবিতা এতটা হৃদয়ছোঁয়া- এতটা অন্তরঙ্গ । তাঁর কবিতা পড়ামাত্র ভালো লাগার অনুভূতি ছুঁয়ে ফলে পাঠকের মৃন্ময় ভাবনা, চিন্ময় অস্তিত্ব। বুদ্ধি ও আবেগ, মেধা ও চেতনা, অভিজ্ঞতা ও কল্পনা প্রভৃতিকে একসঙ্গে স্পর্শ ও উদ্দীপ্ত করতে পারার মধ্যে আবিদ আজাদের কবিতার শক্তি নিহিত।
‘এইবেলা রৌদ্রে তোমাকে বিছিয়ে দিয়ে যাই
এইবেলা গ্রীষ্মের আলোছায়ার ভিতরে
তোমাকে একটু ছড়িয়ে দিয়ে যাই
এইবেলা শীতের কুয়াশায় তোমাকে একটু জাগিয়ে দিয়ে যাই
বসো, একটু নরোম হয়ে বসো,
নতুন পাতার মতো গোছ-গাছ হতে-হতে ফের
হাওয়ায় একটু এলোমেলো হয়ে বসো
এইবেলা একটু রোদের দিকে আর
একটু ছায়ার দিকে কাত হয়ে থাকো
এইবেলা তোমাকে সামন্য তোলপাড় করে দিয়ে যাই।’
(এইবেলা : আমার মন কেমন করে)
আবিদ আজাদ তাঁর অনুভবের আন্তরিকতায় দারুণভাবে সত্যনিষ্ঠ এক কবি। তিনি নিজের বিশ্বাস নিয়ে কখনো লুকোচুরি করেননি কবিতার সাথে অথবা কবিতার পাঠকের সাথে। নদী যেমন তার আপনগতিতে সহজ-অটল, সূর্য যেমন তার আলো-বিকিরণে স্বভাব-আপোষহীন, আবিদ আজাদ তেমনি তাঁর অন্তরের বিশ্বাসে অন্তরঙ্গ-অবিচল। তিনি সাহসীও বটে। উপলব্ধির সত্য, অনুভবের সত্য, বিশ্বাসের সত্য, অভিজ্ঞতার সত্য- কবিতায় উপস্থাপনে তাঁর নির্ভীকতা সহজেই চোখে পড়ে। তাঁর কোনো ইজম-ম্যানিয়া বা দলান্ধতা কিংবা গোষ্ঠীপ্রীতি ছিল না বলে কবিতা ছাড়া আর কারো কাছে তিনি দায়বদ্ধ ছিলেন না। এটি তাঁর আপন-সততায় সাহসী হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ ছিল। তিনি ভালোবাসার কবিতা লিখেছেন, বিচ্ছেদের কবিতা লিখেছেন, পরিহাস ও স্যাটায়ার-ধর্মী কবিতা লিখেছেন। সব ধরনের কবিতাতেই তাঁর আন্তরিক সততার সোনালি ছাপ এমবোস ছবির মতো সেঁটে গেছে। একজন মধুকণ্ঠী গায়ক মেলাডিয়াস সুরের গান গাইলে স্বাভাবিক প্রত্যাশা মতোই সেখানে তার কণ্ঠের মিষ্টতা উপভোগ্যতায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে; আবার তিনি যদি কোনো রাগপ্রধান গান করেন, তার কণ্ঠের যাদু সে-গানকেও মিষ্টতার মাধুর্যে ভরে তোলে। তার কণ্ঠে রাগপ্রধান গানও- এমনকি সাধারণ শ্রোতার কাছেও, উপভোগ্য হয়ে ওঠে। আবিদ আজাদের প্রেম-ভালোবাসার কবিতা তো বটেই, তাঁর প্রতিবাদের এবং পরিহাসের কবিতাগুলোও তাঁর সহজাত আন্তরিকতার নিবিড় স্পর্শে মোলায়েম ও পরিশীলিত। তিনি সাহিত্যাঙ্গনের নাপিত-সমাজ সম্পর্কে সম্যক অবহিত ছিলেন; তাদের পাল্টা আঘাততও করেছেন । তবে তা করেছেন স্বভাবসুলভ মোলায়েম ভাষায়। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘ তুমি ভুলে যেও না, আমি কবি- আঘাত করলেও ফুল দিয়ে আঘাত করি। অসুন্দর, কুৎসিত সাধনা আমার নয়। আমার আঘাত বর্বরের কাপুরুষের আঘাত মতো নিষ্ঠুর নয়।’’ আিবিদ আজাদ দু’একটি কবিতায় যেখানে এমনকি কোনো গালিবাচক বিশেষণ ব্যবহার করেছেন, ব্যবহারগুণে তাও হয়ে উঠেছে উপভোগ্য, নান্দনিক ব্যঞ্জনায় মনোরম এবং কাব্যালংকার হিসেবে অপরিহার্য। তিনি তাঁর পরিহাসে-স্যাটায়ারেও উজ্জ্বল প্রাতিস্বিকতার সাক্ষর রেখেছেন। তাঁর আঘাত কুৎসিতের সাধনা হয়নি, বর্বরের অপকর্ম হয়নি। সেসব ফুলের মতো মোলায়েম ও সুগন্ধসঞ্চারী সৃষ্টিতে উন্নীত হয়েছে। তাঁর ‘আমার অক্ষমতার গল্প’ কিংবা ‘এখন যে কবিতাটি লিখব আমি’ কবিতাগুলো তারই উৎকৃষ্ট প্রমাণ।
‘সেই কবিতাটি যখন পড়বে কোনো বজ্জাত অধ্যাপক
আমি জানি তার মনে পড়বে তার হওয়ার কথা ছিল পুলিশ
কিন্তু তিনি হয়ে গেছেন অধ্যাপক-
সেই কবিতাটি যখন পড়বেন কোনো এক পত্রিকার সম্পাদক
আমি জানি তখন ঘুমের মধ্যে তার মাথার ভিতর থেকে
বেরিয়ে আাসবে একটি ছায়ামূর্তি
আর তার মনে পড়বে তার হওয়ার কথা ছিল
সওদাগরি অফিসের একাউন্টেন্ট
কিন্তু তিনি হয়ে গেছেন সম্পাদক’
(এখন যে কবিতাটি লিখব আমি : আমার স্বপ্নের আগ্নেয়াস্ত্রগুলি)
আবিদ আজাদ শব্দের ব্যবহারে এবং চিত্রকল্প সৃষ্টিতে উজ্জ্বল অভিনবত্ব ও ঈর্ষণীয় সক্ষমতার সাক্ষর রেখেছেন। বিশেষত চিত্রকল্প সৃষ্টিতে তাঁর তুলনা অন্তত তাঁর দশকের কবিদের মধ্যে নেই। চিত্রকল্পের পর চিত্রকল্প সাজিয়ে তিনি কবিতাকে করে তুলেছেন অজস্র দৃশ্য ও কল্পচিত্রের নান্দনিক সমাহার। তবে তাঁর চিত্রকল্প শুধু চোখ দিয়ে দেখার বিষয় নয়, একইসঙ্গে অন্তর দিয়ে- বুদ্ধি দিয়ে- সেসবের শৈল্পিক ব্যঞ্জনা উপভোগ করাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর চিত্রকল্প মানে সংবেদনশীল পাঠকের জন্য গভীর-নিবিড় মর্মচিত্র। বাহ্যিকভাবে নয়নাভিরাম দৃশ্যের মধ্যে তিনি পুরে দিতে পারেন অনেক বেদনা; বিচ্ছেদের দৃশ্যকল্পের মধ্যে প্রবাহিত করে দেন অনিঃশেষ মাধুর্য। তাঁর কবিতা তথ্য দেয় বটে, কিন্তু সরবরাহকৃত তথ্যের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে সরবরাহের কৃৎকৌশল। কবিতার অর্থের চেয়ে অনেক বেশি উপভোগ্য হয়ে ওঠে কবিতায় প্রবাহিত নান্দনিক রসের মাধুরী এবং উদ্ভাসিত শৈল্পিক সৌন্দর্যের বর্ণালী। পাঠক কবিতা পাঠ করতে করতে একসময় সেই মাধুরী ও বর্ণালীর নন্দনকাননে নিজেকে হারিয়ে ফেলেন এবং সেখান থেকে কাব্যার্থের উঠোনে যেতে চায় না মুগ্ধমন।
ক.
সবুজ পাতার স্লিভলেস-পরা হে লাল গোলাপ,
আমাকে তোমার পায়ের গোড়ালি দের্খিয়ে-দেখিয়ে
আবার পাগল করো
আমি বসে-বসে দেখি তোমার আহিল্লোলিত কোমরের কাছে
নাচের ছাত্রীর মতো বসে আছে ভোর।
(হে গোলাপ : আমার মন কেমন করে)
খ.
মুক্তিযুদ্ধ, তুমি আমার সেই অক্ষমতার গল্প যা
আমি কাউকে বলি না
কেবল সেই অক্ষমতাকে একটা নিঃসঙ্গ নৌকোর দুলুনির মতো
বুকের মধ্যে চেপে রেখে
আমি আমার নিজের মাতৃভূমির মতোই কুয়াশাময় হয়ে
বসে থাকি নিজের ভিতরে।
(আমার অক্ষমতার গল্প : আমার অক্ষমতার গল্প)
আবিদ আজাদ আপোষহীনভাবে সৌন্দর্যানুরাগী শক্তিমান কবি। উপমা, উৎপ্রেক্ষা, চিত্রকল্প ও কল্পচিত্র সহযোগে সৌন্দর্য ও ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করা তাঁর নেশা এবং এ কাজে তাঁর সক্ষমতা ও সাফল্য দুই-ই ঈর্ষণীয়। তিনি কখনো একটি-দুটি, কখনবো অজস্র উপমা, উৎপ্রেক্ষা, চিত্রকল্প ও কল্পচিত্রের সমাবেশ ঘটিয়ে কবিতার শরীরপ্রাণ সৃষ্টি করেছেন। কখনো কখনো কিছু অতিকথন ঘটেছে, কিন্তু উপমা, উৎপ্রেক্ষা, চিত্রকল্প ও কল্পচিত্রের অভিনবত্ব ও মনোহারিত্ব পাঠকের মনে আকর্ষণ ধরে রেখেছে ধারাবাহিক অব্যর্থতায়। মাতাল করা- মাতোয়ারা করা- অভিভূত করা- শত শত উপমা-উৎপ্রেক্ষা-চিত্রকল্প-কল্পচিত্রের স্রষ্টা আবিদ আজাদ। সৌন্দর্যের প্রভা বিকিরণে, নান্দনিকতার রস সরবরাহে, অর্থের ব্যঞ্জনা সৃষ্টিতে এবং হৃদয়-হরণিয়া মাধুর্যের অফুরন্ত সঞ্চয় নির্মাণে সেসব কাব্যালংকার সোনালি সফলতায় উত্তীর্ণ। কবিতাপাঠের সময় পাঠকের মন এসব উপমা, উৎপ্রেক্ষা, চিত্রকল্প ও কল্পচিত্রে এসে মুগ্ধতায় আটকে যেতে যায়। কখনো কখনো কবিতার বক্তব্যের চূড়ায় পৌঁছানোর চেয়ে এসব সৌন্দর্যের ভাঁজে ও খাঁজে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুগ্ধতার সবখানি উপভোগ করতে লোভী হয়ে ওঠে মন। যেসব পাঠকের আবিদ আজাদের কবিতা এখনও সেভাবে পড়া হয়ে ওঠেনি, তাদের জন্য বেশ কটি কবিতা থেকে উদ্ধৃতি দেয়া যায়।
ক.
নৌকার গলুইর মতো একা, হে আমার ছেলেবেলা, রাজহাঁস
তোমাদের ভিতরে সিল্কের সেই পুকুরের জল
আজো ডানা ঝাড়ে নাকি? ঝরে নাকি পাখার সাদায়
শেফালির গন্ডদেশ রাঙা করা বালকের হাত?
(ফেরাও অথবা ভেঙে ফেলো : ঘাসের ঘটনা)
খ.
যে শহরে আমি নেই আমি থাকব না সে শহরে যুদ্ধ শেষের
ভাঙা একটা এয়ারপোর্টের মতো বেঁচে থাকবে তুমি
তোমাকে ঘিরে সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে
স্কার্টপরা বুড়ি বার্মিজ মহিলার মতো ভৌতিক নির্জনতা
(যে শহরে আমি নেই আমি থাকব না : বনতরুদের মর্ম)
গ.
বিষণ্নতায় ধোয়ামোছা দিন, চিবুক নোয়ানো ঝোরা
ঝরছে হাওয়ায় শজিনার বনে পল্লব-পলিথিন
আমার স্মারক নীলিমাপ্লুত ফণিমনসার চূড়া-
অবসর ওগো অবসর ওগো বিপুল সুদূর দিন।
(গতপ্রেমিক : ঘাসের ঘটনা)
ঘ.
বাড়ি মানে-রেলিঙে স্তনের ওপর ভার রেখে মেয়েমানুষের মতো
ঘুরে দাঁড়িয়ে থাকা জ্যোৎস্না
বাড়ি মানে-রেলিঙে স্তনের ওপর ভার রেখে মেয়েমানুষের মতো
ঝুকে থাকা আলুথালু ছায়া
বাড়ি মানে-মুখের কাছে এলোমেলো চুল
ছুটছে হাওয়া
যেন কেউ আসবে,
ফিরে আসবে..
(বাড়ি মানে : বনতরুদের মর্ম)
ঙ.
আমি আমার ছেলের এই ‘না-না-না’ বলে-ওঠা অস্বীকারের মধ্যে
হঠাৎ আমার অস্তিত্বে কেঁপে-ওঠা দুলুনির মতো শব্দ শুনতে পাই
শুনতে পাই ব্রাশফায়ারের সাদা লিফলেটের মতো উড়তে থাকা
ঝাঁক-ঝাঁক বকের পালকের বাতাসে ভেসে যাওয়ার শব্দ
শুনতে পাই জ্যোৎস্না রাত্রির ভিতর দিয়ে শীতের এক নদীর
কিনার ধরে এগিয়ে চলা নৌকো আর জলের শরীরের শব্দ
(আমার অক্ষমতার গল্প : আমার অক্ষমতার গল্প)
চ.
আমার অটোগ্রাফ নিতে এসেছে বাগানের এক ডজন স্মার্ট জিনিয়া
ওরা খিলখিল করতে-করতে একজন আরেকজনের গায়ে হেলে পড়তে-পড়তে বলল,
‘আমরা একগাছের বান্ধবী সবাই,
এবারই ভর্তি হয়েছি ভার্সিটিতে, একই ডিপার্টমেন্টে;
আমাদের সবার জন্যে একটা কিছু লিখে দিন,
খুব মজা করতে-করতে আমরা হোষ্টেলে ফিরে যাব ষ্টাফবাসে।’
কী লিখব আমি এই বারোটি ঝলমলে জিনিয়ার আরক্ত খাতায়?
(আমার অটোগ্রাফ নিতে এসেছে : আরো বেশি গভীর কুয়াশার দিকে)
আবিদ আজাদ আমৃত্যু রাজধানী শহরে বসে কবিতা লিখেছেন। ফলে তাঁর কবিতায় আধুনিক জীবনের তথা নাগরিক উঠোনের অনুষঙ্গ এসেছে ব্যাপক মাত্রায়; কিন্তু কবিতার ভাঁজে ভাঁজে খাঁজে খাঁজে পাহাড়-সমুদ্র-নদী-হাওর-আকাশের তারা-সন্ধ্যার গোধূলি-গ্রামের স্মৃতি খচিত হয়ে তাদের করে তুলেছে আধুনিক শিল্পের বাগানবাড়ি। একারণেই আবিদ আজাদের কবিতা কংক্রিটের নীরস উঠোন হয়ে যায়নি, তা হয়েছে গাছপালাশোভিত আধুনিক অট্টালিকা।
‘বাড়িটা সম্পূর্ণ তৈরী হতে আরো কিছু দিন যাবে;
বারান্দার থামগুলি সিমেন্টের সবল কোমর
ধরে দাঁড়িয়েছে সবে, লোহার পাঁজর ধরে প্রাণ,
আমি ভাবি কবে এই থামগুলি ডানা মেলে উড়ে যাবে দূরে
সুনসান মেঘ দেখে-দেখে কবে শোঁ শোঁ স্বর তুলে
নিরুদ্দেশ হয়ে যাবে বৈশাখের চিলের মতন।
আমি ভাবি ছোট-ছোট ভেন্টিলেটরের দল কবে
সুন্দর পাখির ঝাঁক হয়ে লাফিয়ে উঠবে হাওয়ায়-হাওয়ায়-
দেয়ালের কাছে কাছ থেকে মুক্তি চেয়ে নিয়ে ছাদখানি
পুলকে-পুলকে ভেসে যাবে চন্দ্রডোবা ভোরে;
জ্যোৎস্নার ঝরনার সাথে দোল খাবে বাধাবন্ধহারা
জানালার ব্যাকুল কপাট;
হাতে বোনা বাগানের গাছপালা ভুলিয়ে আনবে সব রকমারি পাখি,
রাশি রাশি লাল নীল রঙের ফড়িং
প্রজাপতিদের চালে কম্পমান হালকা দিন লতার অরব কমনীয়।’
(ভবিষ্যৎ বাড়ি : ঘাসের ঘটনা)
আবিদ আজাদ আমৃত্যু কবিতার এই অনন্যসুন্দর বাড়ি নির্মাণের কাজ করে গেছেন। তিনি তাঁর সৃষ্টি নিয়ে যে স্বপ্ন ব্যক্ত করেছেন কাব্যজীবনের শুরুতে, তা-ই আগাগোড়া ফলে উঠেছে তাঁর হাতে। তাঁর অকাল মৃত্যুর পর আমরা দেখতে পাই আধুনিকতার উপকরণে তৈরী তাঁর কবিতার বাড়ি সবুজের সচ্ছলতায় প্রাণবন্ত ও পাখির কাকলিতে মুখর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্বমহিমায়। সে-বাড়িতে প্রবেশ করলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়, ইচ্ছে করে তার বাতায়নে বসে থেকে, তার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে, তার বারান্দায় পায়চারি করে, অনেকক্ষণ কাটিয়ে দিতে। সে-বাড়ির নির্মাণ কারুকাজ দেখে চোখ জুড়ায়, তার প্রশস্ত প্রাঙ্গণে প্রবাহিত আলো-হাওয়া মনে শান্তির সুনিবিড় পরশ বোলায়, তার গাছপালায় ছন্দে-তালে উচ্চারিত কথাকাকলি শুনে মন ভরে যায়। ব্যালকনিতে বসে, উঠোনে পায়চারী করে হৃদয় জুড়ায় অনুভব ছোঁয়া জোছনার প্রশান্ত পরশে। কিন্তু কংক্রিটসর্বস্ব ক্ষুদ্রায়তন ফ্ল্যাট যার ভাবনার আবাসন, বিচরণের সবটুকু ঠিকানা, তার কাছে এই বাগানবাড়ি বাহুল্যে ব্যর্থ, আতিশয্যে অনুত্তীর্ণ।
কোনো বড় কবিরই কালোত্তীর্ণ ভূগোল-পেরুনো কবিতার সংখ্যা শত শত নেই; ডজন ডজন নেই। থাকে না। তার প্রয়োজনও হয় না। মহাকাল বেছে বেছে কিছু সৃষ্টিকে তার মহাফেজখানায় তাকে তুলে রাখে স্রষ্টার নামসহ। বাকি সবকিছুর জন্য মেঝে, ধুলো, বিস্মৃতির রিসাইকেল বিন। আবিদ আজাদ একজন বড় মাপের কবি। তিনিও তাঁর নির্বাচিত কিছু সৃষ্টিসম্ভারসহ ঠাঁয় পাবেন মহাকালের মহাফেজখানায়। একথা বাংলা একাডেমি না বুঝলেও আমরা কবিতার পাঠকরা বুঝি।
আমিনুল ইসলাম
জন্ম : ২৯ ডিসেম্বর ১৯৬৩ চাঁপাইনবাবগঞ্জ ।
নব্বইদশকের কবি-প্রবন্ধিক-নজরুল গবেষক।
প্রকাশিত গ্রন্থ
কবিতা
তন্ত্র থেকে দূরে-(২০০২); মহানন্দা এক সোনালি নদীর নাম-(২০০৪); শেষ হেমন্তের জোছনা(২০০৮); কুয়াশার বর্ণমালা (২০০৯); পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি-(২০১০); স্বপ্নের হালখাতা(২০১১); প্রেমসমগ্র-(২০১১); . জলচিঠি নীলস্বপ্নের দুয়ার-(২০১২); শরতের ট্রেন শ্রাবণের লাগেজ-(২০১৩); কবিতাসমগ্র-(২০১৩); জোছনার রাত বেদনার বেহালা : (২০১৪) ; তোমার ভালোবাসা আমার সেভিংস অ্যাকউন্ট ( ২০১৫) প্রণয়ী নদীর কাছে (২০১৬), ভালোবাসার ভূগোলে(২০১৭); নির্বাচিত কবিতা ( ২০১৭); অভিবাসী ভালোবাসা ( ২০১৮) , জলের অক্ষরে লেখা প্রেমপত্র (২০১৯) ( বাছাই কবিতা ( ২০১৯), প্রেমিকার জন্য সার-সংক্ষেপ ( ২০২০), হিজলের সার্কিট হাউস(২০২১)।
ছড়া
১.দাদুর বাড়ি-(২০০৮); ২. ফাগুন এলো শহরে-(২০১২) ৩. রেলের গাড়ি লিচুর দেশ (২০১৫)।
প্রবন্ধ
বিশ্বায়ন বাংলা কবিতা ও অন্যান্য প্রবন্ধ-(২০১০)।
গবেষণা
নজরুল সংগীত : বাণীর বৈভব ( বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত)
পুরস্কার/সম্মাননা
(১) রাজশাহী সাহিত্য পরিষদ সাংগঠনিক সম্মাননা ২০০৪;
(২) বগুড়া লেখক চক্র স্বীকৃতি পুরস্কার ২০১০ ;
(৩) শিশুকবি রকি সাহিত্য পুরস্কার ২০১১ ;
(৪) নজরুল সংগীত শিল্পী পরিষদ সম্মাননা ২০১৩
(৫) এবং মানুষ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭ ;
(৬) দাগ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৮
(৭) কবিকুঞ্জ পদক ২০২১;
(৮) পূর্বপশ্চিম সাহিত্য পুরস্কার ২০২১।
Im thankful for the blog. Keep writing.
Pretty! This was an extremely wonderful post. Thanks forsupplying this information.my blog post :: seeds require long
buy prescription drugs from india: best india pharmacy – best online pharmacy india
online pharmacy canada: buy drugs online – mexican pharmacies online
http://mexicopharmacy.store/# best online pharmacies in mexico
Hello. impressive job. I did not anticipate this. This is a impressive story. Thanks!
Fantastic article post.Really thank you! Awesome.
flccc ivermectin prophylaxis ivermectin for sale humans dr pierre kory ivermectine
Everyone loves what you guys are usually up too. This sort ofclever work and reporting! Keep up the wonderful works guys I’ve added youguys to my blogroll.
Very informative article post.Really looking forward to read more. Want more.
mexico drug stores pharmacies: mexican pharmacy online – buying prescription drugs in mexico online
I really like what you guys are usually up too. This type of clever work and exposure! Keep up the superb works guys I’ve added you guys to my personal blogroll.
world pharmacy india: Online medicine order – buy medicines online in india
Looking forward to reading more. Great article.Thanks Again. Really Great.
https://canadiandrugs.store/# canadian online pharmacy
medicine in mexico pharmacies mexican pharmacy п»їbest mexican online pharmacies
I value the article post.Really thank you! Really Cool.
I do accept as true with all the concepts you’ve presented for your post. They are very convincing and will definitely work. Still, the posts are very brief for newbies. Could you please extend them a little from next time? Thank you for the post.
canadian world pharmacy: accredited canadian pharmacy – canadian pharmacy review
I loved your blog.Really looking forward to read more. Great.
medications without prescription: buy drugs online – the generics pharmacy online delivery
http://ordermedicationonline.pro/# true canadian pharmacy
Excellent blog you have got here.. Itís difficult to find good quality writing like yours these days. I seriously appreciate individuals like you! Take care!!
neurontin capsules 300mg: prescription drug neurontin – neurontin 300 mg cost
http://clomid.club/# how can i get clomid without rx
Hi there, I enjoy reading all of your post. I like to write a little comment to support you.
F*ckin¦ remarkable things here. I am very satisfied to look your article. Thank you a lot and i am having a look forward to touch you. Will you kindly drop me a e-mail?
Девушки легкого поведения из Москвы готовы подарить вам незабываемые моменты. Эксклюзивное объявление: мне 18 лет, и я готова подарить тебе невероятный минет в машине. Ощути магию настоящего наслаждения! дешевые шлюхи москвы. Эскорт-леди ждут вашего звонка. Узнайте, что такое настоящее удовлетворение в компании соблазнительниц из столицы.
Usually I do not read post on blogs, but I wish to say that this write-up very forced me to check out and do so! Your writing style has been amazed me. Thanks, quite great post.
Oi , tudo vai bem ? É claro que você está compartilhandoinformações com propriedade , isso é excelente , continue escrevendo!
What’s up, just wanted to tell you, I liked this article.It was practical. Keep on posting!
Thanks for sharing, this is a fantastic article.Really looking forward to read more. Awesome.
buy ventolin tablets uk: buy Ventolin inhaler – ventolin best price
http://gabapentin.life/# neurontin price comparison
Some truly good information, Gladiolus I found this. “The past is a guide post, not a hitching post.” by L. Thomas Holdcroft.
Appreciate you sharing, great article post. Great.
where to buy generic clomid without prescription: Buy Clomid Online – how can i get generic clomid for sale
https://paxlovid.club/# buy paxlovid online
It’s hard to come by knowledgeable people on this topic, but you sound like you know what you’re talking about! Thanks
Major thankies for the article post. Will read on…
What’s up, after reading this amazing post i am as well cheerful to share myfamiliarity here with mates.
paxlovid https://paxlovid.club/# paxlovid generic
Hey there just wanted to give you a quick headsup and let you know a few of the images aren’t loading properly.I’m not sure why but I think its a linking issue.I’ve tried it in two different internet browsers and bothshow the same outcome.
can i get generic clomid without a prescription: Buy Clomid Online – cheap clomid pills
nba christmas buty gull glitter long sleeve kjole stylish professional rucksack magliette psg jordan nike kyrie flytrap 2 rouge ultra boost 2.0 limited oro medal realtorjane
https://paxlovid.club/# paxlovid for sale
Thanks a lot for the blog.Really looking forward to read more. Want more.
Модернизация апартаментов — наша специализация. Исполнение ремонтных услуг в сфере жилья. Мы предлагаем модернизацию жилого пространства с гарантированным качеством.
ремонт бойлера бровары
It is really a nice and helpful piece of info. I’m satisfied that you simply shared this useful info with us. Please keep us up to date like this. Thank you for sharing.
I think this is a real great blog post.Really thank you! Will read on…
https://wellbutrin.rest/# best generic wellbutrin
ventolin online australia: Ventolin inhaler – no prescription ventolin hfa
Im grateful for the article.Really looking forward to read more.
http://paxlovid.club/# paxlovid buy
Hi there to every one, it’s really a pleasant for me to visit this website, it contains valuable Information.
Fantastic blog post.Thanks Again. Awesome.
ventolin cap: Ventolin HFA Inhaler – ventolin 200 mcg
A big thank you for your blog article.
https://paxlovid.club/# paxlovid buy
Thanks for the post.Really thank you! Really Cool.
gel per erezione in farmacia: sildenafil 100mg prezzo – pillole per erezione immediata
https://farmaciait.pro/# migliori farmacie online 2023
farmacie online sicure: kamagra – farmaci senza ricetta elenco
viagra generico prezzo piГ№ basso sildenafil 100mg prezzo viagra acquisto in contrassegno in italia
viagra online spedizione gratuita: viagra prezzo – viagra 100 mg prezzo in farmacia
pillole per erezioni fortissime: viagra consegna in 24 ore pagamento alla consegna – viagra consegna in 24 ore pagamento alla consegna
Hey very interesting blog!
comprare farmaci online con ricetta: farmacia online miglior prezzo – farmacia online più conveniente
farmacia online migliore: farmacia online migliore – comprare farmaci online all’estero
farmacia online piГ№ conveniente farmacia online spedizione gratuita farmacie online affidabili
http://avanafilit.icu/# comprare farmaci online con ricetta
comprare farmaci online con ricetta: cialis prezzo – п»їfarmacia online migliore
farmacie online autorizzate elenco: avanafil prezzo in farmacia – farmacia online migliore
viagra subito: sildenafil prezzo – viagra online spedizione gratuita
https://samye-luchshie-prostitutki-moskvy.top
farmacia online miglior prezzo: farmacia online migliore – farmacia online miglior prezzo
migliori farmacie online 2023: farmacia online miglior prezzo – farmacia online più conveniente
farmacia online migliore: kamagra gel – farmacia online miglior prezzo
whoah this blog is wonderful i really like reading your articles. Stay up the good work! You understand, a lot of people are hunting around for this info, you can help them greatly.
farmacia online miglior prezzo Tadalafil generico farmacie online autorizzate elenco
comprare farmaci online con ricetta: comprare avanafil senza ricetta – acquistare farmaci senza ricetta
https://avanafilit.icu/# farmacia online miglior prezzo
comprare farmaci online con ricetta: kamagra oral jelly – farmaci senza ricetta elenco
top farmacia online: cialis generico consegna 48 ore – farmacia online più conveniente
comprare farmaci online con ricetta: dove acquistare cialis online sicuro – farmacia online miglior prezzo
farmacia online: farmacia online spedizione gratuita – farmacia online più conveniente
farmacie online autorizzate elenco: kamagra gold – comprare farmaci online con ricetta
It’s truly very complicated in this active lifeto listen news on Television, thus I just use internet for that purpose, and take thenewest information.
Thanks-a-mundo for the blog article.Much thanks again. Want more.
farmacie on line spedizione gratuita cialis prezzo п»їfarmacia online migliore
farmacia online migliore: comprare avanafil senza ricetta – farmacia online senza ricetta
Good day! I know this is kinda off topic but I was wondering if you knew where I could find a captcha plugin for my comment form?I’m using the same blog platform as yours and I’m having problems finding one?Thanks a lot!
http://tadalafilit.store/# п»їfarmacia online migliore
farmacia online migliore: avanafil prezzo – acquisto farmaci con ricetta