অন্ধকার সিরিজের দশটি কবিতা

কুমার দীপ

১০
তুমি এখন
নাচের রাণী
অন্ধকারে
আমি শুনছি সুর
কাছে কোথাও
নদীও নেই
তবু ক্যানো যাচ্ছি ভেসে
অথৈ সমুদ্দুর ?
১১
অন্ধকার সমুদ্রে ডুবে যাচ্ছি
হাত ছিটোচ্ছি, পা ছিটোচ্ছি
আলো জ্বলছে না।
এরও হয়তো অর্থ আছে
অর্থ যদি না-থাকেও
কী-ই-বা কার আসে ?
ডুবেই যদি যাই
সামান্য এই অনর্থটুকু
এইটুকু তো ভাসতে পারে
আমার হয়ে;
আমি না-হয় ফড়িং হয়ে
ফিরবো নতুন ঘাসে !
১২
কারা য্যানো
নূপুরধ্বনি বাজিয়ে চলেছে
সঙ্গীবিহীন অন্ধকারে
এদিকে আসছে কি ?
বাজছে শুধু
আসছে কি না, কে বলতে পারে !
নূপুর, তুমি ফিরে যাও
বজ্র ডেকে আনো
সকল মেঘই চূর্ণ হয়
এমন আঘাত হানো।
১৩
শ্রাবণ, তোমার ঘুঙুরগুলো খুলেই রাখো
অন্ধকারটা ভেঙে যাচ্ছে
কেঁদে যাচ্ছে
নীরবতা ছাই ওড়াচ্ছে খুব
শ্রাবণ, তোমার ঘুঙুরগুলো
মাথার কাছে
কেঁদে যাচ্ছে;
এখন না-হয় বুকেই থাকো- চুপ
সকাল হলে-
কেউ যদি না-আসে
আমি-ই না-হয়
শিশির হবো ঘাসে।
শ্রাবণ, তোমার ঘুঙুরগুলো
খুলেই রাখো তবে,
সুরগুলো নয়, একদিন তো
নৈঃশব্দ্যই নিবিড় সঙ্গী হবে।
১৪
এইতো ভালো
অন্ধকারকে জড়িয়ে বুকে
সারাটা রাত
মুখ লুকিয়ে নিজের মুখে
নিরুপদ্রব
আলো হলে
কতো উচাটন
আপত্তিই-বা কতো
কখনও আবার তাপের বশে
পুড়িয়ে দেওয়া
শ্মশানসোনার মতো।
১৫
আলোর দামে আঁধার কিনে আনি
শ্রাবণের এই রাতের শেষাশেষি
আলো ছাড়াই পথকে বুকে টানি
অন্ধকারই গোপন জানে বেশি।
১৬
অন্ধকারে
বেদনারা বৃক্ষ হয়
ডালপালা ছাড়ে
ফুল দেয়, ফল হয়
নতুন জীবন আঁকে।
অন্ধকার পুরনো হলে
ভালোবাসাগুলো
স্রােতহীন নদীর মতো
সঙ্কুচিত হতে থাকে।
১৭
মানুষ মূলত অন্ধকারের পূজারী
আলোর পোশাকে
আদিগন্ত অন্ধকারকেই
বুকে ধরে রাখে।
সত্যের আড়ালে মিথ্যাকেই
শুদ্ধ বলে জানে
কথা নয়, রূপকথার মায়াই তাকে
খুব বেশি টানে।
শুধু চাঁদ নয়
পৃথিবীরও আলো নেই কোনো
সমস্ত শরীরজুড়ে তার
অন্ধকারই লেপ্টে থাকে ঘন।
১৮
সবার উপরে
আঁধার সত্য
তার উপরে কিছু নাই
হৃদয়ের একতারাতে
এ-কথাই লিখে রাখে
সনাতন সাঁই।
১৯
শেষাবধি-
অন্ধকারই সত্য বটে
অন্ধকারই ধ্রুব;
অন্ধকারের
গুহার ভেতর
অন্ধ রূপেই শোবো।


কুমার দীপ
জন্ম : ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮ (বাবার নোটবুকে লেখা ২৬-এ মার্চ ১৯৭৮)। ভুরুলিয়া, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (১৯৯৯) ও স্নাতকোত্তর ।
প্রকাশিত গ্রন্থ
কবিতা
কোথাও কোনো মানুষ নেই (২০১০, চিহ্ন)।
ঘৃণার পিরিচে মুখ (২০১৫, দেশ পাব.)।
রটে যাচ্ছে আঁধার (২০১৭, বেহুলা বাংলা)।
মাতাল রাতের চাঁদ (২০২০, দেশ পাব.)
কালান্ধ নূপুরের ধ্বনি (২০২০)
প্রবন্ধ
নান্দনিক শামসুর রাহমান (২০১২, শব্দকোষ )
আধুনিক বাংলা সাহিত্য : পাঠ ও প্রতিকৃতি (২০১২, নন্দিতা)।
অনন্য শামসুর রাহমান ( কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৫, সোপান)।
বাংলা কবিতায় ঐতিহ্য ও অন্যান্য অনুষঙ্গ (২০১৬, অনুপ্রাণন)।
গল্প
ভালোবাসার উল্টোরথে (২০১৪, মূর্ধন্য)
সম্পাদিত পত্রিকা
অর্চি (কবিতাকাগজ)
শামসুর রাহমানের কবিতার শৈল্পিক বিন্যাস নিয়ে রচিত ‘নান্দনিক শামসুর রাহমান’ বইটি অনার্স ও মাস্টার্সের সিলেবাসে রেফারেন্স বই হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে অন্তর্ভূক্ত।
বাগেরহাট অংকুর সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক পেয়েছেন ‘অংকুর সম্মাননা ২০১৪’ এবং গীতিকবিতার জন্য স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক – ডেইলি স্টার কর্তৃক পেয়েছেন ‘সেলিব্রেটিং লাইফ এ্যাওয়ার্ড’ ২০১৫ ও ২০১৬।