অন্তরঙ্গ কাব্যভাষার কবি সুহিতা সুলতানা : আমিনুল ইসলাম

অন্তরঙ্গ কাব্যভাষার কবি সুহিতা সুলতানা

আমিনুল ইসলাম

সাংসারিকতার মাপকাঠিতে বিচার করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এবং অধিকাংশ কবির ক্ষেত্রে কবিতা লেখা একধরনের মজুরীবিহীন কায়িক-মানসিক শ্রম। বেগার খাটলে তবু এক বেলা খাবার জোটে কিন্তু কবিতা লিখে ততটুকু পাওয়ারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। তারপরও এত এত মানুষ কবিতালেখার কাজটি করে থাকেন। কেন? আমি নিজিই-বা কেন কবিতা লিখি? এ-প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মনে হয়েছে, মানুষ শক্তিশালী  সুনির্দিষ্ট ভাষার অধিকারী সংবেদনশীল প্রাণী। মানবভাষার প্রকাশক্ষমতা অন্য যেকোনো প্রাণীর ভাষার প্রকাশক্ষমতার চেয়ে হাজারগুণ বেশি। লক্ষগুণ বেশি। আবার মানুষের  হৃদয়-মনে জমা হয় অসংখ্য আনন্দ-বেদনার অনুভব ও অভিজ্ঞান। মানুষের মধ্যে যারা একটু কম সংবেদনশীল অথবা শিল্পকারাখানা-কৃষি-রাজনীতি-চাকরি নিয়ে মহাব্যস্ত, তাদের আপন অন্তরে সঞ্চিত অনুভব-অভিজ্ঞানের দিকে ফিরে তাকানোর সময় হয় না। কিন্তু যেসকল অতি সংবেদনশীল মানুষ তেমন ফুরসৎ পান, তাদেরকে সেই অন্তরঙ্গ বেদনার মুখোমুখি হতেই হয়। তাদের ওপর চাপ সৃষ্ট হয়, চাপ হ্রাস করতে সেগুলো প্রকাশের আলোয় আনতে হয়। কিন্তু কখনো কখনো এমন হয়, কোনো বিমূর্ত বিষয় নিবিড় ও সূক্ষ্ণ অনুভব-অনুভূতি হয়ে ধরা পড়ে মনে। সেটা কখনো আনন্দের, কখনো বেদনার, কখনো সুখানুভূতির, কখনো-বা বেদনার স্পর্শমাখা। কখনো আলো হয়ে, কখনো অন্ধকার হয়ে- মনের মধ্যে বাসা বেঁধে থাকে সেসব বিমূর্ত বিষয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেসব কারও সাথে শেয়ার করার মতো স্পষ্ট হয়ে ওঠে না। সেসব নিয়ে গদ্য লেখাও যায় না। আবার এদের কোনোভাবে প্রকাশ না করা পর্যন্ত মনের ভেতর এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করে। এদের প্রকাশের আলোয় আনার সবচেয়ে ভালো মাধ্যম কবিতা। কারণ কবিতা মানেই আলো-আঁধারি; কবিতা মানেই খানিকটা প্রকাশ, বাকিটা আড়াল। প্রকৃতি ও জীবন থেকে মূর্ত বিষয় নিয়ে  উপমিত করে, চিত্রকল্প-কল্পচিত্র রচে বিমূর্ত বিষয়গুলোকে দৃষ্টিগ্রাহ্যরূপে প্রতিভাসিত করে তুলতে হয়। মাঝে মাঝে এধরনের বিমূর্ত চেতনা দখল করে বসে মন। মনটা ছটফট করে। একধরনের আনন্দের আগুনে পড়তে হয়, একধরনের বেদনার বৃষ্টিতে ভিজতে হয়। কখনো-বা ঝড়ো হাওয়ার বেতসবন হয়ে ওঠে মন। মনের সেই অবস্থাকে প্রকাশ করতে হয়। যখন তা কবিতা আকারে প্রকাশ লাভ করে, তখন অসংজ্ঞায়িত অস্থিরতা থেকে মুক্তি মেলে মনের। কিন্তু সেই মুক্তি বেশিদিন স্থায়ী হয় না। ভেতরে নতুন  চেতনার চাপ সৃষ্টি আবারও। এভাবে চলতে থাকে যতদিন সক্ষম থাকে কবির শাণিত সংবেদনশীলতার রাডার।

উপরের কথাগুলো বললাম একজন কবি সুহিতা সুলতানার কবিতা পাঠের অনুভূতির বয়ান লিখতে বসে। বেশ কিছুদিন যাবত বাংলা কবিতার অঙ্গনের একটি সুপরিচিত নাম সুহিতা সুলতানা। আমি বহুদিন ধরেই তার কবিতা পড়ে আসছি। বাংলাদেশের বাইরে পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যপত্রিকাতেও তার কবিতা প্রায়শ  চোখে পড়ে। কবিতার ভুবনে তিনি একজন সচ্ছল কবি। ঢাকার বাইরে একটি শহরে বেড়ে ওঠা , অন্য একটি শহরে উচ্চশিক্ষালাভ ,অতঃপর রাজধানীতে বসবাস কর্মসূত্রে। কর্মসূত্রে রাজধানীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার অংশগ্রহণ এবং গুরুত্বপূর্ণ কবি-লেখকদের প্রায় সকলের সঙ্গে সুপরিচিতি। তিনি কোনো অর্থেই একেবারে আড়ালের কবি নন। কিন্তু সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি রাজধানীতে জেঁকে বসা কবিতা-কোলাহলে অংশ নেন না বললেই চলে। অনেকটা ভিড়ের মধ্যে এক কোণে আসন পেতে থাকা এবং কোলাহলের মধ্যে আপন অন্তরে ডুব দিয়ে অন্তরঙ্গ কথা শোনার মতো তার অবস্থা। রবীন্দ্রনাথের প্রার্থনা ছিল: ‘যার যাহা আছে তার থাক্ তাই,/ কারো অধিকারে যেতে নাহি চাই/ শান্তিতে যদি থাকিবারে পাই / একটি নিভৃত কোণে।’ রবীন্দ্রনাথের সে-প্রার্থনা মঞ্জুর হয়নি বলেই কাজী নজরুল ইসলামকে বিদ্রোহী কণ্ঠে প্রতিজ্ঞা শোনাতে হয়েছিল যে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল না থামা পর্যন্ত তাঁর বিদ্রোহ-বিপ্লব চলতেই থাকবে। পৃথিবীকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাওয়ার শপথ ছিল সুকান্ত ভট্টাচার্যের। তিনি ইতিহাস হয়েছেন কিন্তু পৃথিবীর সবখানি শিশুর বাসযোগ্য হয়নি। জ্ঞানে-বিজ্ঞানে –প্রযুক্তিতে মানুষের অগগ্রতি অব্যাহত রয়েছে। চিকিৎসা শাস্ত্র , যাতায়াত ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তির অবদানে যোগাযোগের অভূতপূর্ব এবং অচিন্তিতপূর্ব উন্নতি ঘটেছে। আজ ঘরে বসেই সারা দুনিয়া দেখা যায়; আজ মুঠোর মধ্যে একটি স্মার্ট সেলফোন নিয়ে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের মানুষের সঙ্গে মুখোমুখি সচিত্র সবাক যোগাযোগ করা যায়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যে উন্নয়ন ও অবদান, তাতে করে বর্তমান পৃথিবী মানবসৃষ্ট স্বর্গে উন্নীত হতে পারতো। কিন্তু তা হয়নি। মানুষের ধনলিপ্সাসহ নানাবিধ লিপ্সা ও লোভ, অন্যের ওপর প্রভুত্ব করার মোহ, ঈর্ষাকাতরতা, বিভদকামিতা, পারস্পারিক সহমর্মিতার অভাব, যন্ত্রতুল্য অসহানুভূতিশীল মন, অপ্রেম, সংকীর্ণতা শাসিত রাজনৈতিক হানাহানি ইত্যাদি পৃথিবী, রাষ্ট্র, সমাজ ও সংগঠনকে আকীর্ণ করে রেখেছে  স্বীকৃত অথবা অস্বীকৃত সামাজিক অসুস্থতায়। যারা হৃদয়হীনতার ব্যঞ্জনায় অসহমর্মী, তাদের পক্ষে সুখী থাকা হয়তো-বা সম্ভব, কিন্তু যারা এখনো অস্তিত্বে ধারণ করেন মহত সংবেদনশীলতা, তাদের মানসিক উৎকণ্ঠা ও যন্ত্রণার কমতি নেই। সুহিতা সুলতানা তেমনি মহত সংবেদনশীলতা ধারণ করেন তার মৃন্ময় প্রাণে- চিন্ময় অস্তিত্বে। দেশ ও দুনিয়ার দিকে চোখ বন্ধ করে দিন গুজরান তার নয়। তার হৃদয়-মন-মগজ খোলা থাকে। পৃথিবী, রাষ্ট্র, সমাজ, দল ও ব্যক্তি সবারই প্রবেশ ঘটে সেখানে। ফলে স্বার্থপরের নিশ্চিত দিবানিদ্রা ছুঁতে পারে না তার চোখের পাতা। কিন্তু তার সাথে কেউ নেই। থাকার কথাও নয়। তো এতসব নেতিবাচকতার জোয়ারে তার সংবেদনশীল ব্যক্তিগত বুকখানি কতটুকই-বা রচতে পারে! ফলে তার নিত্যজাগরূক সত্তা অন্তরঙ্গ দহনে দগ্ধ হয়ে কাটায় দিন এবং রাত। এটা অনিবার্য । এড়ানোর কোনো পথ নেই। দগ্ধ অনুভব থেকে হেঁটে এসে তিনি বেদনার্ত কণ্ঠে ধারণ করেন অন্তরঙ্গ সংক্ষুব্ধির উচ্চারণ, ‘এখন মানুষ ক্রীতদাসের বদলে ভেড়া হয়ে যাচ্ছে!’ সুহিতা সুলতানার এই উচ্চারণ মৃদকণ্ঠী , অপ্রগলভ কিন্তু শব্দনিয়ন্ত্রিত চাবুকের ঘায়ে লক্ষ্যভেদী। চমৎকার! একটি প্রতিতুলনা, একটি চিত্রকল্প, একটি বাক্য। অথচ সময়ের সবটুকু বেদনাকে ধারণ করতে চেয়েছে অক্ষুণ্ণ রেখে শিল্পের সবখানি সৌন্দর্য।

একজন ধূমপায়ী সিগারেটের আগুন, দহন, গন্ধ, নিকোটিন, স্বাদ সবকিছু মুখ ভরে ভেতরে নিয়ে সেসবকে অন্দরস্থ করে কেবল নাক দিয়ে উগরে দেয়  ধোঁওয়াটুকু। সে ধোঁয়ায় আগুন থাকে না, সিগারেট থাকে না, নেশা থাকে না, তৃপ্তি থাকে না; কিন্তু উৎপন্ন  ধোঁয়ার ক্ষীণ দৃশ্য ধারণ ও বহন করে  ধূমপায়ীকে অনেকখানি এবং নেশা ও সিগারেটের সবখানি। সুহিতা সুলতানার কবি-হৃদয়মন পৃথিবীতে, মনুষ্যসমাজে ও রাষ্ট্রে ঘটে যাওয়া ও ঘটমান সহস্র ঘটনা ও অঘটন ধারণ করে এবং  হজম করে তার সবকিছু; অতঃপর শুধু অনুভবে অন্তরঙ্গ দগ্ধতার ঘ্রাণমাখা উত্তাপটুকু ফেরত দেয় পাঠকের কাছে।  দক্ষ শিল্পীর সেই উত্তাপটুকু ধারণ করে অনুভব, বেদনা , স্বাদ ও আলোর সংশ্লেষিত অস্তিত্ব। সেই চিন্ময় অস্তিত্ব দর্শনের পথ ধরে মূলে প্রত্যাবর্তন করার মধ্যে রয়েছে সুহিতা সুলতানার কবিতাপাঠের প্রকৃত আনন্দ। সে আনন্দ অসোচ্চার ও অনিঃশেষ। সেই আনন্দের একচিলতে স্বাদ নিতে পাঠ করা যাক্ তার এক খণ্ড কবিতা:

জগৎ সংসারে উল্টে গেছে ভূগোল। দুর্বোধ্য ইন্ধনে
পিঁপীলিকার মতো পাখা গজিয়েছে মানুষের। পথও আজ দূর-
সম্পর্কের আত্মীয়। একাকী যেজন তার কাছে নদী, পথ, ঘর,
অরণ্য সবই একই রকম! মন বাসা বেঁধেছে শূন্যলোকে! তুমি
যখন আলপথ ধরে হাঁটতে থাকো বছরের পর বছর দুনিয়ার
সব মজদুরের বন্ধু হবে বলে; এ এক আজব খেলা, সেই কবে
উড়ে গেছে বিশ্বাস, বন্ধু বলতে বাঁশের বাঁশি। লাটাই থেকে
খসে গেছে সুতো, মার্বেলের মতো আবর্তিত হতে থাকে ঘুড়ি!
জীবন আটকে গেছে ফাঁদে, যা হবার কথা ছিল তা আর হলো
না! সে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠ নেবার মতো তালপাখা হাতে
অধিগ্রহণ;তৃষ্ণার্ত দেহ-মন হু হু করে বেজে ওঠে, অখণ্ড
ভূমির দাসত্ব নিদ্রার ওপর ভূমিশয্যা নেয়, জেগে ওঠো হে অন্ধ রাত্রি
[হাঁসকল ২০ / হাঁসকল]

গ্রহণ , ধারণ , আত্মস্থকরণ এবং অতঃপর পুনরুৎপাদন এই প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট সুহিতা সুলতানার কবিতা হয়ে উঠেছে অনুভবনিবিড় এক নতুন পৃথিবী। পুরাতন জীবনকে নতুন রূপ দান। এ পৃথিবীকে গভীরভাবে দেখার জন্য প্রয়োজন হয় গভীরচারী ও লক্ষ্যভেদী নিবিড় দৃষ্টি। বোধগম্য কারণেই সুহিতা সুলাতানার সৃষ্টির ভুবন সৌখিন পাঠকের জন্য নয়, গড়পড়তা পাঠকের জন্য তো  নয়ই। সুহিতা সুলতানা মানবিক বোধে উজ্জীবিত ও চিরজাগ্রত একজন কবি। বাতাসের নিবিড়তায় ছুঁয়ে চলা বেদনাগুলো ধরা দেয় সুহিতা সুলতানার শাণিত রাডারে। সে বেদনা স্বভাবে কখনো একান্ত, কখনো-বা সামষ্টিক। সামষ্টিক বেদনার কাব্যরূপের উদাহরণে ভরা তার কবিতার ভুবন। তবে তিনি সামষ্টিক বেদনাকে পরিবশেন করেছেন ব্যক্তিতার থালায়। ফলে তা বহন করেছে তার নিজস্বতার স্বাক্ষর।

খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে সহিতা সুলতানার কবিতা থেকে ব্যক্তি ও সমষ্টিকে সম্পূর্ণরূপে আলাদা করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তিনি যখন ব্যক্তিকণ্ঠে কথা বলেছেন, তখন তা সমষ্টির সমবেত কণ্ঠকে ধারণ করেছে পেছন থেকে; যখন সমষ্টিগত অনুভবের ছবি এঁকেছেন তখন বৃহত্তর ক্যানভাসের সেই ছবির অবয়বে পড়েছে ব্যক্তিমনের রঙ-তুলির আঁচড়। ফলে তার কবিতাকে সমষ্টিগততা ও ব্যক্তিতার বিভাজন রেখায় আলাদাভাবে নিশ্চিত মাত্রায় সনাক্ত করা কঠিন ব্যাপার। তারপরও যেখানে তার সামষ্টিক চেতনা  অনেকখানি স্পষ্ট , সেখানে তা অনেকখানি সনাক্ত করা যায়; কিন্তু যেখানে প্রাতিস্বিক বেদনা মুখ্য, সেখানে সেই বেদনার ধরন ও কারণ নির্ণয় করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। সাধারণত তিনি কোনো বিশেষ ঘটনাকে উপজীব্য করে কবিতা লেখেননি; কিন্তু কোনো বিশেষ ঘটনা থেকে অর্জিত মানসিক প্রতিক্রিয়ার নির্যাসটুকু মিশিয়ে কবিতা রচেছেন। তার কবিতায় এক্সপ্রেশনিজম, সিম্বলিজম, অ্যাবস্ট্রাক্ট এক্সপ্রেশনিজম এসবের কোনোটারই হুবহু অনুসরণ নেই কিন্তু সবগুলোর একটা অসেচতন ও প্রচেষ্টাহীন সংশ্লেষ তার কবিতা। তিনি ব্যক্তিগত বেদনাকে নৈর্ব্যক্তিকতার রঙ দিয়ে কিংবা বুকছোঁয়া ঘটনাকে দূরত্বচারী লক্ষণচিহ্ন দিয়ে শব্দের তুলিতে এঁকেছেন । একাকার ব্যঞ্জনায় উদ্ভাসিত হয়েছে বহুত্বের সমাবেশ ও মিলন। পড়তে গেলে পাঠকের চোখের ও মনের জন্য সৃষ্ট হয় বহুমুখী স্পেস। এই বিরল গুণ তার কবিতার শরীর-প্রাণে জুড়ে দেয় ফুরিয়ে না যাওয়ার ঐশ্বর্য।

ঘন অরণ্যে পাতায় কী লেখা ছিল? তুমি বৃক্ষ পূজোর বদলে
শেকড়সমেত উপড়ে ফেললে বৃক্ষের কংকাল! বহুবিধ পাখিদের
প্রণয় কান্না নিস্প্রাণ হয়ে টুপটাপ গড়িয়ে পড়ছিল হৃৎপিণ্ডের
ওপর! বস্তুত উড়ন্ত মেঘের আড়ালে শিকারি চিল স্বপ্নহীন করে
তোলে সারা আকাশ হারিকেনের ম্রিয়মান আলোয় যেটুকু দেখা যায়
তার আংশিক ঝুলেছিল জানালার কার্নিশে ! আমি যেদিন সমুদ্রের
মুখোমুখি বসেছিলাম অনন্ত সময় ধরে সেদিন অলসতার রং রাঙিয়ে
দিয়েছিল আমার পা। পৃথিবীর সব জল বৃক্ষ পাহাড় ক্রমাগত
পাখির পালকের ভেতরে নির্ভরতা খোঁজে
[হারিকেন ২ / হারিকেনজাল]

উৎকৃষ্ট কবিতার অন্যতম দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ভাষার সচ্ছলতা এবং সৃষ্টির প্রাণ। কবিতার ভাষার সম্পদ হচ্ছে পুরাতন-নতুন উপযুক্ত শব্দ, নতুনভাবে তৈরী সমাসবদ্ধ শব্দ, জুতসই উপমা, অভিনব চিত্রকল্প ও সাবলীলতা। প্রাণ হচ্ছে তার রসঘন আবেদন। কবিতার ইতিহাস মূলত টেকনিকের ইতিহাস বলে কাব্যভাষার প্রাতিস্বিকতা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। পূর্বের এবং সমসমায়িক কালের গুরুত্বপূর্ণ কবিদের কবিতা পাঠ, বহুমুখী চিন্তাশক্তি, ইতিহাসজ্ঞান, ভূগোল, নৃতত্ত্ব, অর্থনীতি, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা, আন্তর্জাতিক অঙ্গন, মিথ বিষয়ে তুলনামূলকজ্ঞান, রাজনৈতিক সচেতনতা এবং এসবকে অর্থবহ ও উপভোগ্য সংশ্লেষে একীভূত করার দক্ষতা একজন কবিকে নিজস্ব কাব্যভাষা অর্জনে সাহস ও সম্পদ জোগায়। পঠনপাঠনের সংকীর্ণ সীমাবদ্ধতা ও কূপমণ্ডূক মানসিক অবস্থান নিয়ে উৎকৃষ্ট কবিতা রচনা সম্ভব নয়। সুহিতা সুলতানার কবিতার মধ্যে তার ব্যাপক পঠনপাঠন, দেশি বিদেশি মিথ, ইতিহাস, ভূগোল, নৃতত্ত্ব, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, পুঁজিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, সাহিত্য-সংস্কৃতির জগতের ভণ্ডামি, নষ্টামি প্রভৃতির ছাপ দেখা যায়। তিনি পরস্পর বিরোধী বিভিন্ন প্রপঞ্চ ও বিষয়ের মাঝে শৈল্পিক যোগসূত্র রচনা করেন দক্ষহাতে। তিনি চলমান জগতের গভীর বেদনাকে অন্তরঙ্গতার আলোয় রাঙিয়ে দক্ষ আর্টিস্টের সাফল্যে শব্দের ছবি আঁকতে সিদ্ধহস্ত। সমাজতন্ত্রের ভেঙে পড়ার পর পুঁজিবাদ তার আসল দাঁতাল রূপ দেখিয়ে চলেছে ক্রমবর্ধমান মাত্রায়। পৃথিবীর ওপর চলছে নিদারুণ অত্যাচার। কিন্তু প্রতিবাদ করার কেউ নেই। যারা অত্যাচারিত, কেড়ে নেয়া হয়েছে তাদের প্রতিবাদের ভাষা, এমনকি কান্নার শব্দটুকুও। আজ অত্যাচারীরা ওয়াকওভার পেয়ে যাচ্ছে সর্বত্র। এটা মানবজাতির অন্তরঙ্গ অধঃপতন। সহিতা সুলতানা মানবজাতির এই অন্তরঙ্গ অধঃপতন  এবং আড়ালে সঞ্চিত বোবাকান্নাকে তুলে ধরেছেন কোলাহলমুক্ত ভাষায়। ক্ষোভ, হতাশা, কান্না, বেদনা, প্রতিবাদ এসব নিয়ে কবিতার রচনাকালে ভাষা প্রগলভ ও উদ্ধত হয়ে উঠতে চায়। সুহিতা সুলতানা তার ভাষাকে  প্রগলভতা ও ঔদ্ধত্যের কোলাহল থেকে দুরে রাখতে চেয়েছেন। রেখেছেন। পেরেছেন। এতে করে তার কবিতা হতে পেরেছে নিবিড়চারী এবং আবেগের নিভৃত তলদেশস্পর্শী । কবি হিসেবে এটা তার নিজস্বতা এবং একইসঙ্গে শক্তিমত্তা অবশ্যই।

সুহিতা সুলতানা প্রায় ক্ষেত্রেই সংক্ষুব্ধ হৃদয়-মন নিয়ে কবিতা রচেছেন। তার কবিতার মধ্যে ঘৃণা আছে, প্রতিবাদ আছে, পরিহাস আছে, শ্লেষ আছে, আক্রমণ আছে। তিনি কখনো পুরুষতন্ত্রকে, কখনো ধর্মান্ধতাকে, কখনো রাষ্ট্রীয় কোনো অর্গানের অনিয়ম-অন্যায়কে , কখনো প্রেমের নামে ভণ্ডামিকে, কখনো কোনো পরিচিত ব্যক্তিবিশেষের অন্যায় কর্মকাণ্ডকে নিশানা করে আক্রমণাত্মক অনুষঙ্গ ব্যবহার করেছেন। তবে তার আক্রমণ কিংবা প্রতিবাদ সবসময়ই পরোক্ষ, শালীন ও অনুদ্ধত। মাঝেমাঝে তিনি অন্তরে সৃষ্ট বেদনা ও ক্ষোভের কথা নিবিড় অপ্রত্যক্ষতায় উপস্থাপন করেছেন যা পড়ে ক্ষুব্ধতার কারণ, ধরন ও আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুকে সনাক্ত করা দুরূহ হয়ে ওঠে। এ-ধরনের কবিতাকে বিমূত চিত্রশিল্পের প্রতিবেশী বলা যেতে পারে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা হচ্ছে এই যে,  এ-ধরনের কবিতা লিখতে বোধের গভীরতা ও ভাষাকে ইচ্ছেমতো ব্যবহারের শাণিত ও সূক্ষ্ণ দক্ষতার প্রয়োজন হয়। সুহিতা সুলতানার বেশ কিছু কবিতায় তার অমন শাণিত ও সূক্ষ্ণ দক্ষতার ছাপ দৃশ্যগোচর হয়ে উঠেছে।

বৃক্ষের মগডালে হেলে পড়েছে চন্দ্র। দ্বিধাবিভক্ত সময়ের ওপর
চন্দ্রখণ্ড সবুজ পাতার ওপর লগ্ন হয়ে থাকে। অতঃপর তার
কালঘুম খেয়ে ফ্যালে অনন্ত নক্ষত্র, নৈশঃশব্দের মধ্যদুপুর
সময়ের ঘাড় বেয়ে উঠে আসে রক্তাক্ত তীর। দুঃস্বপ্ন ঘন হয়ে
পাশে বসে! ও মেঘ ও চন্দ্র অবিরাম নীল জাদুকর হাওয়ায়
উড়াতে থাকে রঙিন ফানুস! অতএব সরাইখানায় ঘুমিয়ে
থাকে স্বপ্নভুক মাতাল এক; ‘বুকে তার রক্তজবার মতো ক্ষত’
ঈগলের ডানায় ভর করে সে কি ফিরে আসে মধ্যরাতে?
[চন্দ্রখণ্ড / অনন্ত স্বপ্নের ভেতর]

সাম্প্রতিক কালের কবিতার ধরন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতীকী বা বিমূর্ত প্রকাশের কাছাকাছি অথবা বিষয়রিক্ত বলে কবিতার রজনৈতিক চেতনার ছাপ প্রায় ক্ষেত্রেই অনপুস্থিত থাকে। বাংলা কবিতা একসময় বামপন্থী রাজনৈতিক চেতনা চর্চার অন্যতম বড় প্লাটফর্ম ছিল। এখন সে অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। উত্তরাধুনিক কবিতায় পুঁজিবাদ কিংবা সমাজতন্ত্র কোনোটারই উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য নয়। অথচ রাজনীতি দখল করে আছে, বলা যায় গ্রাস করে রেখেছে মানুষের সমগ্র জীবন— মৃন্ময় অস্তিত্ব এবং চিন্ময় ভুবন। মানুষের বাকস্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, লেখালেখির স্বাধীনতা, প্রকাশের স্বাধীনতা সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করছে রাজনীতি, কোথাও প্রত্যক্ষভাবে, কোথাও পরোক্ষভাবে. কোথাও বেশি, কোথাও কম, কোথাও পরিশীলিত পদ্ধতিতে, কোথাও-বা আগ্রাসী পন্থায়  । চিন্ময় অস্তিত্বে নিয়ে রাজনীতির সর্বগ্রাসী প্রভাব ও ছাপ,  শিল্পসাহিত্য নিয়ে কাজ করার সময় সেসবকে রাজনীতির ছোঁয়ামুক্ত রাখা সম্ভব হয় কীভাবে, তা আমার বোধগম্য নয়। আমাদের নারীকবিদের মধ্যে তসলিমা নাসরিনের কিছু কিছু কবিতায় রাজনীতির গন্ধ পাওয়া যায়। সুহিতা সুলাতানা মূলত পরোক্ষ এবং অসোচ্চার ভাষায় কবিতা লেখেন। তার কবিতার কাছে রাজনীতি বিষয়ক কিছু চাওয়া যুক্তিগ্রাহ্যতার মধ্যে পড়ে না বলেলেই চলে। কিন্তু তার কিছু কিছু কবিতার শরীরের ভাঁজে রাজনীতির উপকরণ দেখতে পাওয়া যায়। বামঘেঁষা প্রগতিশীল রাজনীতির ঘ্রাণ নাকে এসে লাগে। যে কোনো নারীকবির রাজনৈতিক সচেতনতার বিষয়টিকে আমি ইতিবাচক ফ্যাক্টর হিসেবে দেখি। বর্তমান জমানায় পুরুষতন্ত্রের প্রধানতম হাতিয়ার রাজনীতি। মূলত রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে ধর্মীয় শক্তিগোষ্ঠীগুলোকে। এমতাবস্থায় রাজনীতির প্রতি নারীদের এবং নারীকবিদের উদাসীনতা অথবা অন্ধদৃষ্টি একটা আত্মঘাতী অবস্থান । সুহিতা  সুলতানা সেই উদাসীনতা ও অন্ধত্বকে অতিক্রম করে কবিতা লিখেছেন। তার এই অবস্থান সমর্থনযোগ্য।

… প্রতিশ্রুতি বলতে আসলে কিছু নেই! সংশয়
ক্রমবর্ধমান গতির সাথে তাৎপর্যহীন। একটি দুঃস্বপ্ন
ক্রমাগত অনুভূতিগুলোকে ভোঁতা করে দেয়। তীব্র আবেগ
জাদুর বলের মতো গড়িয়ে গড়িয়ে যায়। অনুসন্ধিৎসা বলতে
ফ্যাসিবাদের উত্থান,বিপর্যয় আর মর্মহীনতা। চূড়ান্ত সম্পর্ক
বলতেও সত্তার উপলব্ধিহীনতা। অতএব জীবন ও প্রেম আজ
পুঁজিবাদের শিকার। সেই থেকে অন্ধকার গা ঢাকা দিয়ে আছে।
[সংশয়/ অনিদ্রার খসড়া]

সুহিতা সুলতানার কবিতার ভাষায় ক্ষোভ থাকে, শ্লেষ থাকে, ঘৃণা থাকে, আক্রমণও থাকে কিন্তু সে-ভাষা বিস্ময়করভাবে অনুদ্ধত ও অপ্রগলভ। সে-ভাষা নিবিড়ভাবে চিত্রকল্পময়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিত্রকল্পসমূহ নতুনত্বে উজ্জ্বল ও সচ্ছল। প্রায় ক্ষেত্রেই তার কবিতা একবার পড়ে সবখানি বোঝা যায় না। কিন্তু যতখানি বোঝা যায়, তা পুনঃপাঠের আগ্রহ সৃষ্টি করে, উস্কানি দেয়। তার কবিতায় অক্ষমের চালাকি–উৎসারিত দু্র্বোধ্যতা থাকে না বলে পাঠককে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসতে হয় না। ফলে পাঠক আবার পড়ে। আবারও তার কোঁচায় জোটে বাড়তি আনন্দ, নতুন রস। সুহিতা সুলতানার সবচেয়ে বড় অর্জন নিজস্ব কাব্যভাষা যা আলো-আঁধারিময়, কোমলকণ্ঠী এবং প্রাণরসে সচ্ছল । তার কবিতা সহজবোধ্য নয়, দুর্বোধ্য নয়, অবোধ্যও তো নয়ই কিন্তু এই সবগুলো গুণের সংমিশ্রণে অনন্য শৈল্পিক অস্তিত্ব। সুহিতা সুলতানা মানবিক বোধে উজ্জীবিত ও চিরজাগ্রত একজন কবি। বাতাসের নিবিড়তায় ছুঁয়ে চলা বেদনাগুলো ধরা দেয় সুহিতা সুলতানার শাণিত রাডারে। সে বেদনা স্বভাবে কখনো একান্ত, কখনো-বা সামষ্টিক। তারা ভাষা পায় সুহিতার হাতে। তার সে ভাষা ঘনবদ্ধ, উপমা ও চিত্রকল্পে প্রাণবন্ত এবং প্রায়শ সংকেতময়তায় ঋদ্ধ। তিনি মাঝে মাঝে ইতিহাস, কিংবদন্তী ইত্যাদির আশ্রয় নেন এবং ব্যবহার করেন জুতসই শৈল্পিকতায়।

চলো যাই মেঘের কিনারে বসে পাখিদের উড়াউড়ি দেখি! জগত
সংসারে হারজিতের খেলায় যিনি এগিয়ে থাকেন তিনি কাঁচের
প্রতিবিম্ব থেকে ঋষি হয়ে উঠতে চান! ধ্রুপদমগ্ন সুর নির্বাসিত
মাটির উপকণ্ঠ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে হৃদয়ের কাছাকাছি তুমি তো
নরশ্রেষ্ঠ রামচন্দ্র নও, স্বামী বিবেকানন্দও নও অথবা পুরুবংশীয়
হস্তীরাজের পুত্রও নও তাহলে অসময়ে বিপর্যস্ত হবার কোনো মানে
নেই! অসংখ্য পাখির পালক অভীষ্ঠ সাধনের লক্ষ্যে নোতুন সঙ্কল্পে
মেতে উঠতে চাইলেও রাতের সরাইখানা পথ রুদ্ধ করে দাঁড়ায়
সম্মুখে। শুধু ডানার বিভ্রম হারেমখানার গল্পে মেতে ওঠে রাতভর!
মর্শিদাবাদের সকল পথ না-কি আজো পাখিকাব্যে মোড়ানো!
স্মৃতির আঙটায় ঝুলে আছে মসনভি, গজল, মর্সিয়া!
[পাখিকাব্য / হারিকেনজাল]

সুহিতা সুলতানা অভিনব উপমা এবং নতুন চিত্রকল্প নির্মাণে সিদ্ধহস্ত। তিনি জুতসই শব্দের ব্যবহারে কবিতাকে উপভোগ্য ও প্রাণসচ্ছল রূপ দিয়েছেন। তিনি গতানুগতিকতার অনুসারী নন বরং নতুনত্ব পিয়াসী। উদ্ধৃত কবিতাগুলোতে সেকথার স্বাক্ষর রয়েছে। অধিকন্তু ‘শিল্পের বাগানে সাপ শুয়ে আছে দ্যাখো!’, ‘জিভওয়ালাদের খুব কাছকাছি থাকে লাল টাই আর ঝলমলে রঙিন চশমা!’, ‘ধারাপাতের পৃষ্ঠা উড়ছিল মেয়েটির স্কার্ফ জুড়ে!’, ‘  হিংসা, জ্বরা আর সন্দেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে গন্তব্যের ওপর!’, ‘রবিবার ছুটির দিন থাকায় ব্রাহ্মণের রুচি তাকে পেয়ে বসলো;’,‘অনেক দ্বন্দ্ব ও অপেক্ষার ভেতরে অন্ধত্ব হামাগুড়ি দিয়ে হাঁটে!’, ‘প্রেমের গল্প বলতে বহুগামী পাখিদের ইতিহাস’,‘মধু ও পারদ মেখে তিনিও হতে চান পাখিদৃশ্য’,‘ শ্রেণিবিন্যাসের বাইরে সহিংসতার নিজস্ব কোনো শক্তি নেই।’, ‘গার্হস্থ্য দিনের শেষে মানুষও পাখি হতে চায়!’, ‘মধ্যরাতের চন্দ্রের আলো বিজ্ঞাপনের মতো মনে হলেও ভাষার তারতম্যে তা অফিস ফেরৎ কেরানীর মতন ধূসর!’, ‘ জীবনে যা কিছু অধিক তা ব্যালে নৃত্যের মতন।’, ‘শরৎ দুপুরে গ্রীলের আঙটায় ঝুলছিল কাশফুলের ঘ্রাণ’, ‘আমাদের শূন্যতার পাশে আজকাল গভীর তিক্ততা ঘন হয়ে বসে!’, ‘কেবল বিস্ময় ঝুলে থাকে ভাবনার ভেতরে!’,‘রহস্যের ভেতরে প্রেম গড়িয়ে গড়িয়ে যায়!’ ,‘ তুমি যখন চেনা শহরের ওপরে পা তুলে বসে থাকো তখন তোমাকে হলুদ পাতার নিচে বুনো রাজহাঁসের মতো মনে হয়;’  —অভিনবত্বে ও শৈল্পিক উপভোগ্যতায় সচ্ছল এমন পঙক্তি তার কবিতার ভেতরে প্রায়শ খুঁজে পাওয় যায়। তিনি শব্দ, উপমা, চিত্রকল্প ইত্যাদির ব্যবহারে কোথাও জোরাজুরি কিংবা কষ্টকল্পনার আশ্রয় নেননি। তিনি কল্পনাকে ব্যবহার করেছেন বাস্তবকে শিল্পের রঙে রাঙিয়ে উপস্থাপন করতে। তিনি স্বপ্ন দেখেছেন কিন্তু সেই স্বপ্ন রোমান্টিক আকাশচারিতায় মৃত্তিকার সঙ্গে সম্পর্কহীনতা রচেনি। শুধু ভঙ্গি দিয়ে ভোলানোর সস্তা চমকবাজিকে এড়িয়ে তিনি সেসব ব্যবহার করেছেন জুতসইভাবে। পরিমিতিবোধ ও সাবলীলতার  মেলবন্ধন  তাকে সফল সহায়তা দিয়েছে । সুহিতা সুলতানা কাব্যভাবনা ও কাব্যভাষা উভয় বিবেচনাতেই সচ্ছলতায় সমৃদ্ধ একজন প্রকৃত কবি।

This image has an empty alt attribute; its file name is 23579pppp-Copy.jpg

আমিনুল ইসলাম

জন্ম : ২৯ ডিসেম্বর ১৯৬৩ চাঁপাইনবাবগঞ্জ ।
নব্বইদশকের কবি-প্রবন্ধিক-নজরুল গবেষক।

প্রকাশিত গ্রন্থ

কবিতা

তন্ত্র থেকে দূরে-(২০০২); মহানন্দা এক সোনালি নদীর নাম-(২০০৪); শেষ হেমন্তের জোছনা(২০০৮); কুয়াশার বর্ণমালা (২০০৯); পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি-(২০১০); স্বপ্নের হালখাতা(২০১১); প্রেমসমগ্র-(২০১১); . জলচিঠি নীলস্বপ্নের দুয়ার-(২০১২); শরতের ট্রেন শ্রাবণের লাগেজ-(২০১৩); কবিতাসমগ্র-(২০১৩); জোছনার রাত বেদনার বেহালা : (২০১৪) ; তোমার ভালোবাসা আমার সেভিংস অ্যাকউন্ট ( ২০১৫) প্রণয়ী নদীর কাছে (২০১৬), ভালোবাসার ভূগোলে(২০১৭); নির্বাচিত কবিতা ( ২০১৭); অভিবাসী ভালোবাসা ( ২০১৮) , জলের অক্ষরে লেখা প্রেমপত্র (২০১৯) ( বাছাই কবিতা ( ২০১৯), প্রেমিকার জন্য সার-সংক্ষেপ ( ২০২০), হিজলের সার্কিট হাউস(২০২১)।
ছড়া
১.দাদুর বাড়ি-(২০০৮); ২. ফাগুন এলো শহরে-(২০১২) ৩. রেলের গাড়ি লিচুর দেশ (২০১৫)।
প্রবন্ধ
বিশ্বায়ন বাংলা কবিতা ও অন্যান্য প্রবন্ধ-(২০১০)।
গবেষণা
নজরুল সংগীত : বাণীর বৈভব ( বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত)

পুরস্কার/সম্মাননা

(১) রাজশাহী সাহিত্য পরিষদ সাংগঠনিক সম্মাননা ২০০৪;
(২) বগুড়া লেখক চক্র স্বীকৃতি পুরস্কার ২০১০ ;
(৩) শিশুকবি রকি সাহিত্য পুরস্কার ২০১১ ;
(৪) নজরুল সংগীত শিল্পী পরিষদ সম্মাননা ২০১৩
(৫) এবং মানুষ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭ ;
(৬) দাগ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৮
(৭) কবিকুঞ্জ পদক ২০২১;
(৮) পূর্বপশ্চিম সাহিত্য পুরস্কার ২০২১।

 

 

 

About S M Tuhin

দেখে আসুন

আমিনুল ইসলামের প্রেমের কবিতা : বহুমাত্রিক ও অনন্য । জোয়ানা জেসমিন

আমিনুল ইসলামের প্রেমের কবিতা : বহুমাত্রিক ও অনন্য জোয়ানা জেসমিন   একটি মানব মন একটি …

8 কমেন্টস

  1. Howdy would you mind stating which blog platform you’re working with? I’m planning to start my own blog in the near future but I’m having a difficult time making a decision between BlogEngine/Wordpress/B2evolution and Drupal. The reason I ask is because your design and style seems different then most blogs and I’m looking for something completely unique. P.S Apologies for getting off-topic but I had to ask!

  2. No matter if some one searches for his essential thing, thus he/she desires to be available that in detail, so that thing is maintained over here.

  3. I love your blog.. very nice colors & theme. Did you design this website yourself or did you hire someone to do it for you? Plz reply as I’m looking to create my own blog and would like to know where u got this from. thanks a lot

  4. Hi, I log on to your blogs daily. Your story-telling style is awesome, keep up the good work!

  5. Incredible! This blog looks exactly like my old one! It’s on a entirely different topic but it has pretty much the same layout and design. Excellent choice of colors!

  6. Экономичность и эффективность
    трубу из полиэтилена для водопровода с доставкой
    полиэтилен труба https://truba-pe.pp.ua.

  7. I love it when people come together and share thoughts. Great website, keep it up!

  8. Хостинг сайтов|Лучшие варианты хостинга|Хостинг сайтов: выбор специалистов|Надежный хостинг сайтов|Как выбрать хороший хостинг|Хостинг сайтов: какой выбрать?|Оптимальный хостинг для сайта|Хостинг сайтов: рекомендации|Лучший выбор хостинга для сайта|Хостинг сайтов: секреты выбора|Надежный хостинг для сайта|Хостинг сайтов: как не ошибиться с выбором|Выбирайте хостинг сайтов с умом|Лучшие хостинги для сайтов|Какой хостинг выбрать для успешного сайта?|Оптимальный хостинг для вашего сайта|Хостинг сайтов: важные критерии выбора|Выбор хостинга для сайта: советы профессионалов|Надежный хостинг для развития сайта|Хостинг сайтов: лучший партнер для вашего сайта|Как выбрать хостинг, который подойдет именно вам?
    Виртуальный хостинг Беларусь http://hostingbelarus.ru/.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *